এক মুঠো ভালোবাসা (৩১তম পর্ব)

ইঞ্জা ৭ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ০১:১৯:৩৭অপরাহ্ন গল্প ২৩ মন্তব্য

স্যাতস্যাতে অন্ধকার রুমে পড়ে আছে অনিক, গভীর ঘুমে পড়ে আছে, রওশন ফিসফিস করে বললো, কেন এইভাবে পড়ে আছিস, হাত ধরে টান দিয়ে বললো, চল বন্ধু, আমার সাথে চল।

না বন্ধু, আমি যাবোনা এখন।
কেন যাবিনা, কি আছে এইখানে?
ছায়া আছে, তোর ছায়া, জবাবে অনিক বললো।
হটাৎ ধরাম করে দরজা খুললো কেউ, অনিকের ঘুম ভেঙ্গে গেলো, চোখটা পিটপিট করে তাকালো অনিক।
কয়েকজন ষণ্ডা টাইপের কালো মানুষ ঘরটাতে প্রবেশ করে অনিককে টেনে হিঁচড়ে উঠালো।
পানি, পানি দাও আমাকে।
ওরা চ্যাং-দোলা করে নিয়ে চললো কোথাও।
এদিকে ওর গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে, ফ্যাসফ্যাসে গলায় আবার বললো, পানি দাও।
ওরা ওকে এনে ধরাম করে ছুড়ে মারলো শক্ত ফ্লোরে, মাথাটা জোরেই ঠুকে গেলো, ওভাবেই জ্ঞান হারালো।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন ও নিজেকে চেয়ারে বসা অবস্থায় পেলো, মাথাটা সামান্য তুলে সামনে চ্যাংকে বসে থাকতে দেখলো রাজকীয় এক চেয়ারে।
প্লিজ আমাকে একটু পানি দাও, খেতে দাও, আমি খুদার্থ, অনিক মিনতি করলো।
কি ব্যাপার, তোমরা ওকে কিছু খেতে দাওনি, দাও দাও ওকে খেতে দাও। (ইংরেজিতে বললো)

এক চায়নিজ লোক অনিকের সামনে বাসি ব্রেড দিলো, সাথে এক গ্লাস পানি, অনিক তা পেয়ে গোগ্রাসে খেতে শুরু করলো, কিন্তু শুকনো ব্রেড গলায় গিয়ে আটকাতেই খক খক করে কাশতে লাগলো, গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে গটগট করে গলায় ঢাললো।
চায়নিজ লোকটা এসে বাকি ব্রেড আর পানির গ্লাসটা ছিনিয়ে নিলো ওর কাছ থেকে।
অনিকের চোখে মুখে ঘৃণা আর কষ্ট ঝরে পড়ছে।
মি. অনিক, তুমি যদি বলো ফিলিপাইনে আমার ব্যবসা গুলো কে ধবংস করেছে, আমার ভাইকে কারা মেরেছে, তাহলে আমি তোমাকে ভালো করে খেতে দেবো।
অনিক চ্যাংয়ের চোখে চোখ রেখে বললো, আমি এসবের কিচ্ছুই জানিনা।
চ্যাং উঠে এসে সপাটে চড় কষলো।
অনিকের গাল জ্বালা করে উঠলো।
তুই জানোস না মানে, তুই না জানলে তোর লোক এয়ারপোর্ট থেকেই ফিরে গেলো কেন?
অনিক অবাক হলো, চ্যাং এইসব কেমনে জানলো?
তুই হয় আজ স্বীকার করবি, নাহয় তোকে আমি জমের দুয়ারে পাঠাবো, দাঁতে দাঁত ঘষে চ্যাং বললো।

আমাকে ছেড়ে দাও চ্যাং, সত্যি আমি কিছু জানিনা।
তাহলে তোর লোক ফিলিপিন এয়ারপোর্টে এসে কেন ফিরে গেলো আর ওরা ফ্লাইটে উঠে ফিরে যাওয়ার পর কেন আমার গোডাউনে হামলা হলো, এতে নিশ্চয় তোর হাত আছে?
আমার লোক গিয়েছিলো, কিন্তু জরুরী এক সমস্যা ফেইস করাতে তাদের ফিরে আসতে বলেছিলাম, কিন্তু তোমার ওখানে কারা কেন হামলা করলো আমি জানিনা, ফর গড সেইক প্লিজ আমাকে যেতে দাও।
চ্যাং ফিলিপিনো ভাষায় কি যেন বললো কাউকে, কয়েক এসে অনিককে চেয়ারের সাথে বেঁধে ফেললো, আরেকজন অসংখ্য তার লাগানো একটা মেসিন অনিকের পিছনে এনে রাখলো।
অনিকের মুখ ভয়ে নীল হয়ে গেলো, মুখে বললো, প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও, প্লিজ ছেড়ে দাও।
কেউ একজন ওর মুখে মোটা রাবার ডুকিয়ে দিলো, পিছনের জন ওর মাথায় কিছু একটা লাগিয়ে দিয়ে মেসিনের সুইচ অন করে দিলো।
অনিকের পুরা শরীরে ইলেক্ট্রিক শক বয়ে যেতে লাগলো, অনিক চেয়ারে বসা অবস্থায় কাতলা মাছের মতো মোচড় দিতে লাগলো।

কি ব্যাপার তোমার ছেলে কই, এখনো এলোনা, অনিকের বাবা জিজ্ঞেস করলেন।
আমিও তো তাই ভাবছি, ফোনটাও বন্ধ পাচ্ছি, এতো দেরি করছে কেন ও, অনিকের মা চিন্তিত হলেন।
আচ্ছা আমি করছি, দেখি পাই কিনা, অনিকের বাবা সেলফোন থেকে ট্রাই করলেন, ফোন বন্ধ পাচ্ছেন দেখে হতাশ হয়ে বললেন, নাহ বন্ধ ওর ফোন, ছায়া, ও ছায়া এদিক আসো তো মা, বলেই অনিকের বাবা ডাক দিলেন।
ছায়া তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললো, আনকেল ডাকছিলেন, ডিনার রেডি করবো?
না না ডিনার নয়, অনিক এখনো আসলো না, একটু খবর নাও তো ও কোথায় আছে?
আনকেল কার কাছে খবর নিবো, আফরিনও বললো ফোনে পাচ্ছে না।
আহ কি মুসকিল, ছেলেটা গেলো কই?
ছায়া, ওর অন্য কোন বন্ধু বান্ধবের ফোন নম্বর জানো, অনিকের মা জিজ্ঞেস করলেন?
আমি তো জানিনা, হয়তো আফরিন বলতে পারবে, আমি ওর কাছে জিজ্ঞেস করছি।
তাই করো মা, অনিকের মা বললেন।
ছায়া রুমে গিয়ে সেলফোনে আফরিনকে কল দিলো, কয়েকটা রিং হতেই আফরিন হ্যালো বললো।
আফরিন, তোমার কাছে লেভিনের নাম্বার আছে, অনিক এখনো ঘরে ফিরে নাই, সবাই চিন্তা করছে।
আচ্ছা আমি খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি তোমাকে, রাখছি বলে আফরিন ফোন ডিসকানেট করলো।
ছায়া সেলফোন নিয়ে রুমের বাইরে এসে ড্রয়িং রুমে গেলো, সেইখানে সবাই বসে ছিলো।

আনকেল আফরিন কথা বলে জানাচ্ছে, ছায়া অনিকের বাবাকে জানালো।
একটু পরই আফরিন কল ব্যাক করলো, ছায়া রিসিভ করলে জানালো, লেভিনও পাচ্ছেনা ওকে, গেলো কোথায় অনিক?
ছায়া চিন্তিত মনে জবাব দিলো, এতক্ষণ কখনো করেনি ও, মনে মনে বললো, নিশ্চয় রাগ করে কোথাও বসে আছে।
ছায়া শুনছো, ছায়া?
হাঁ শুনছি।
এখন রাখছি, অনিক ফিরে এলে জানাবে।
ঠিক আছে, রাখছি।
ওকে, বাই।
ফোন ডিসকানেট করে ছায়া তাকালো অনিকের বাবার দিকে, আনকেল ওরাও জানেনা।
ছেলেটা কি যে করে, টেনশনে পড়ে গেলাম, অনিকের বাবা চিন্তিত হলেন।
ওর কিছু হয়নি তো, অনিকের মা উদ্বীগ্ন হলেন।
না না ওসব চিন্তা করছেন কেন ভাবী, নিশ্চয় ও কোন কাজে আটকে গেছে, ফোনে হয়তো চার্জ নেই, রওশনের বাবা অভয় দিলেন।
আন্টি রাত তো অনেক হচ্ছে, ডিনার রেডি করি, ছায়া জিজ্ঞেস করলো?
তোমরা খেয়ে নাও, অনিক এলে খাবো।
নারে মা, অনিক আসুক, সবাই এক সাথে খাবো, রওশনের বাবা বললেন।
ঠিক আছে, বলেই ছায়া নিজ রুমের দিকে এগুলো, ও নিজের জিনিষপত্র ঘুছাতে গেলো।

সব গুছানো প্রায় শেষ, কলিংবেলের শব্দ শুনে তাড়াহুড়ো করে ব্যাগটা বন্ধ করে দরজা খুলে উঁকি দিলো, সাথে সাথে অবাক হলো পুলিশ অফিসারের ড্রেস পড়া একজন মানুষ, সাথে আরেকজন বাংলাদেশির মতো লোককে দেখে, ছায়া দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে এলো চিন্তিত মনে।
সরি এতো রাতে আপনাদের বিরক্ত করছি, ইংরেজিতে পুলিশ অফিসারটির ক্ষমা প্রার্থনা।
জ্বি কোন সমস্যা, অনিকের বাবার উদ্বীগ্ন জিজ্ঞাসা?
ভিতরে আসতে পারি, বাঙ্গালী ভদ্রলোকটি বললেন।
জ্বি আসুন প্লিজ, উনাদেরকে পথ দেখিয়ে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলেন অনিকের বাবা, উনাদের বসতে দিয়ে ছায়াকে বললেন, মা উনাদের পানি দাও তো।
ছায়া দ্রুত পানি নিয়ে ফিরে এলো, উনারা পানি পান করে গ্লাস ফেরত দিয়ে তাকালেন অনিকের বাবার দিকে, পুলিশ অফিসার ইংরেজিতে সবার পরিচয় জানতে চাইলে অনিকের বাবা সবার পরিচয় দিলেন।
মি. সোহেল চৌধুরি বাংলাদেশ এম্বেসির প্রেস মিনিস্টার আর আমি মার্শাল চিফ কুইন্স সিটি, নিজেদের পরিচয় দিয়ে উনি সোহেল চৌধুরিকে বললেন, আপনিই বলুন প্লিজ।
আসলে আমরা এসেছি জরুরী এক বিষয়ে, আপনাদেরকে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।
মানে কি, অনিকের মা অধৈর্য্য হলেন।
আহা মিসেস রাশেদ, একটু ধৈর্য্য ধরে আমাদের কথা শুনুন।
আচ্ছা বলুন প্লিজ।
মি. অনিক আজ বিকেলে কিডন্যাপ হয়েছেন।

....... চলবে।

ছবিঃ গুগল।

জনস্বার্থে আমার এই ছবি এখন থেকে আমার প্রতি লেখাতেই থাকবে।

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ