এক মুঠো ভালোবাসা (৩০তম পর্ব)

ইঞ্জা ২ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০২:২১:২৯অপরাহ্ন গল্প ২৯ মন্তব্য

অনিক ধীরে চোখ খুললো, কিন্তু চোখে প্রচন্ড আলোর ধাক্কা খেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো, সাথে সাথে ওর মুখের উপর বালতি ভর্তি পানির ঝাপটা খেয়ে মাথা ঘুরালো একদিকে, সাথে সাথে গুঁগিয়ে উঠলো ঘাড়ের ব্যাথায়।

চোখ খোল ইউ বাস্টার্ড (ইংরেজিতে) বলে কেউ গালি দিয়ে উঠলো।
অনিক ধীরেধীরে চোখ খুলে দেখতে চাইলো, মাথা কাজ করছেনা ওর, ও কোথায় তাও বুঝতে পারছেনা, কেউ একজন ধরাম করে ঘুষি মারলো ওর পেটে, এতেই ওর বুকের সব বাতাস বেড়িয়ে গেলো, মুখ বাঁধা থাকায় নাক দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো।
হাত পা বাধা, চেয়ারে বসিয়ে মারছে ওরা, অনিক মাথা ঝাড়া দিয়ে চোখ খুললো, সামনেই বসে আছে চ্যাং।
চ্যাং দুর্বোধ্য ফিলিপিনো ভাষায় কিছু একটা বললো, একজন এসে অনিকের মুখ খুলে দিলো।
তোমরা আমাকে মারছো কেন, অনিক চ্যাংকে জিজ্ঞেস করলো।
তোমাকে যে মেরে ফেলিনি এখনো সেই অনেক, চ্যাংয়ের শ্লেষাত্মক জবাব।
কিন্তু কেন?
চ্যাং উঠে এসে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চর মেরে বললো, তুই হারামজাদা জানিস না, ন্যাকা সাজছিস?
এখন বল তোর সাথে আর কে কে জড়িত?

অনিক বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে বললো, কে জড়িত, কিসে জড়িত?
বুঝলাম তুই সহজে বলবিনা, এখন আমার লোক তোর প্রতিটি নক তুলে ফেলবে, তোকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হবে, তোকে এতো অত্যাচার করবে ওরা, তুই বারবার মৃত্যু কামনা করবি, কিন্তু তোকে আমরা সহজে মারবোনা, এই ওর নখ তোলা শুরু কর।
একজন প্লাস নিয়ে এসে অনিকের পায়ের নখ তোলা শুরু করতে গেলে আরেকজন মুখে টেপ লাগিয়ে দিলো।
অনিকের নখ টেনে খোলার সময় অনিকের পুরা পৃথীবি যেন ঘুরে উঠলো, গুঁগিয়ে চিৎকার করতে চাইলো।
একজন এসে মুখের টেপ খুলে দিতেই অনিক চিৎকার করে বললো, আমি কিছু করিনি, আমাকে যেতে দাও।
আগে বল ফিলিপাইনের একশনে কারা ছিলো, চ্যাং আবার প্রশ্ন করলো।
আমি জানিনা।
আবার মুখে টেপ লাগিয়ে আরেকটা নক টেনে ছিড়ে ফেললো, অনিক চিৎকার করতে লাগলো কিন্তু টেপের কারণে গোঁগানোর মতো শব্দ হলো, এরপর জ্ঞান হারালো।
জ্ঞান ফিরলে অনিক চোখে কিছু দেখলোনা, কিছু সময় পর চোখ সয়ে এলে বুঝতে পারলো অন্ধকার এক কক্ষে ওকে ফেলে রাখা হয়েছে, অনিক উঠে দাঁড়াতে গেলো, পায়ের ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো।
বুঝতে চেষ্টা করলো ও কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলো, হাত ঘড়িতে দেখতে চাইলো কয়টা বাজে, হাতে ঘড়ি নেই, সাথে সাথে পরনেও কাপড় নেই, সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ফেলে রাখা হয়েছে ওকে।

ছায়া মেইন রোডে এসে টেক্সি পেলো, টেক্সিতে উঠে ঠিকানা বলে চুপচাপ বসে আছে, চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তেই ডান হাত দিয়ে মুছলো।
মনে মনে বলছে, আমাকে ক্ষমা করতে পারবেনা জানি কিন্তু জেনে শুনে তোমার ক্ষতি করতে পারবোনা আমি, আমি এতটুকু স্বার্থপর হইনি এখনো, আবার চোখ মুছলো ও।
তোমাকে বললে তুমি মানতে না, আমি জানি, আমি জানি তুমি মানতে না, তুমি যে সুপার হিরো কিন্তু যেখানে তোমায় সন্তানের সুখ দিতে পারবোনা সেখানে কিভাবে বলি আমিও তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি?
সেলফোনে কল হচ্ছে শুনে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলো আফরিনের কল, ছায়া সাউন্ড অফ করে দিয়ে ব্যাগে পুরে রাখলো।
এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।
মিস, হেই মিস।
ছায়া চমকে উঠলো।
টেক্সি ড্রাইভার বললো, তোমার ঠিকানায় এসে পড়েছি।
শূন্য চোখে বাইরে তাকালো ছায়া, এরপর ভাড়া মিটিয়ে নেমে গেলো।

বুকটা হাহাকার করছে আজ, ও জানে আজ ওর প্রিয় মানুষটিকে হারালো, বড় এক নিশ্বাস ফেলে লিফটে উঠে পড়লো, চোখ মুখ ভালো করে মুছে নিলো।
ফ্ল্যাটের সামনে এসে কলিংবেল চাপ দিলো, কিছু সময়ের মধ্যে দরজা খুলে দাঁড়ালেন অনিকের মা, হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন, এসেছো, আসো আমি চুলায় চা চড়িয়েছি, তুমি ঝটপট ফ্রেস হয়ে আসো।
জ্বি, বলেই ছায়া এগিয়ে গেলো নিজ রুমের উদ্দেশ্যে।
ফ্রেস হয়ে চা খেতে বসলো ছায়া, সাথে বাকিরাও বসলো, সবাই টুকটাক গল্প করছে চা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে, ছায়া চুপচাপ শুধু চা খেয়ে উঠে গেলো।
কি ছায়া কিছু খেলেনা, অনিকের মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
না আন্টি, কিছু খেতে ইচ্ছে করছেনা।
শরীর কি খারাপ?
না আমি ঠিক আছি।
এক কাজ করো, তুমি একটু রেস্ট করো।
জ্বি, বলেই ছায়া নিজ রুমের দিকে এগুলো, রুমে এসে দেখলো ওর সেলফোনে রিং হচ্ছে, সেলফোনটা নিতে নিতেই রিং অফ হয়ে গেলো, এগারোটা মিস কল আফরিনের, দেখে অবাক হলো ছায়া, দ্রুত কল ব্যাক করলো।

একটা রিং হতেই আফরিন রিসিভ করে বললো, হ্যালো ছায়া?
হাঁ আফরিন বলো।
আমি অনেক্ষণ ধরে কল করছি তোমাকে।
আমি ফোনের পাশে ছিলাম না।
অনিক কোথায়, বাসায় ফিরেছে কি?
না আসেনি।
আমি ওকে কল করেছিলাম, ও পার্কস্ট্রিটে ছিলো, কথা বলতে বলতেই হটাৎ কথা বন্ধ করে দিলো, ফোন কাটেনি কিন্তু কথা বলছেনা।
তো আমি কি করবো?
না না, ভাবলাম হয়তো ও ফিরে এসেছে, চিন্তায় পড়ে গেছি।
চিন্তার কি আছে, হয়ত কোথাও আছে, ফিরে আসবে।
হাঁ তাতো ফিরে আসবে, তা তুমি কেমন আছো?
আছি মোটামুটি, বড় এক নিশ্বাস ফেললো ছায়া।
ছায়া কি হয়েছে?
কি হবে?
তুমি কেমন যেন সাউন্ড করছো, শরীর ভালো তোমার?
না না তেমন কিছু না, আসলে টায়ার্ড ফিল করছি হয়ত, তুমি ভালো আছো, আন্টি কেমন আছে?
হুম আমরা দুজনেই ভালো আছি, তুমি আজ রেস্ট নাও, অনিক ফিরলে কল দিও।
ওকে।
তাহলে রাখছি, বাই।
বাই।

 

......... চলবে।

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ