এক মুঠো ভালোবাসা (২৯তম পর্ব)

ইঞ্জা ৩১ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ০৯:২১:৪৩অপরাহ্ন গল্প ২৫ মন্তব্য

সেলফোনে রিং হচ্ছে দেখে অনিক রিসিভ করে স্পীকার অন করে দিয়ে হ্যালো বললো।

মি. অনিক, আপনাকে সাবধান করার পরও আপনি বেরুলেন কেন, সোহেল চৌধুরির উদ্বীগ্ন কণ্ঠে বললো।
দেখুন আপনি আমাকে আর্মস দিয়েছেন, সাথে এও বলেছেন আপনারা সার্বক্ষণিক ভাবে আমাকে পাহাড়া দেবেন, তাহলে ভয় কিসের?
ইউ আর ইম্পসিবল, বিরক্তির সাথে বললো সোহেল চৌধুরি, তা এখন কোথায় যাচ্ছেন?
অনিক কথাটি এড়িয়ে গিয়ে বললো, পরে কথা হবে মি. সোহেল বাই, বলেই ফোন ডিসকানেট করে দিয়ে ড্রাইভ করাতে মন দিলো।
রিয়ার ভিউতে খেয়াল করে দেখলো জিএমসি একটা পিছনে লেগে আছে অনেকক্ষণ ধরে, এই একি ধরণের গাড়ি সে দেখেছে বাংলাদেশ দূতাবাসের লোকজনকে ব্যবহার করতে, অনিকের ঠোঁটের কোণে দুষ্টামির হাসি, অনেক বছর পর ওর পিছনে ফেউ লেগেছে।
সামনের সিগনাল চেইঞ্জ হবে হবে করছে দেখে অনিক স্পীড বাড়িয়ে পেড়িয়ে এলো, ভিউ মিররে দেখলো ফেউ আটকে গেছে সিগনালে, অনিক স্পীড বাড়িয়ে সামনের সাইডওয়ে ধরে ঢুকে গেলো, জানে ওকে এখন আর কেউ খুঁজে পাবেনা।

অল্প সময়ের মধ্যেই অনিক পোঁছে গেলো পার্ক স্ট্রীটে, গাড়ি পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে ছায়াকে ফোন দিলো, কয়েকটা রিং হতেই ছায়া রিসিভ করে বললো, এসেছো?
হাঁ, কোথায় তুমি?
আমি উত্তর গেইটের কাছাকাছি ভিতরে আছি, পাইন গাছের নিচে।
অনিক অবাক হলেও মুখে বললো, আসছি।
ফোনটা পকেটে রেখে হাটতে শুরু করলো, উত্তর গেইট মানে অনিক যেখানে সেখান থেকে আধা কিলোমিটার দূরে, অনিক হেঁটেই প্রবেশ করলো পার্কে এরপর লম্বা পায়ে এগিয়ে গেলো উত্তরের দিকে।
দশ মিনিটের মতো লাগলো ওর পোঁছাতে, দূর থেকেই দেখেছে ছায়া বসে আছে পার্কের বেঞ্চে, অনিক কাছে গিয়ে বসে পড়লো বেঞ্চে।
হটাৎ এইখানে ডেকে আনলে, অনিক জিজ্ঞাসা করে তাকালো ছায়ার দিকে।
আসলে তোমার সাথে খোলামেলা ভাবে কথা বলতে চাইছিলাম, ছায়ার মুখ এখনো থমথমে হয়ে রয়েছে।
তাই, কি কথা?
তুমি গতরাতে কি বলেছো ভুলে গেছো?
কি বলেছি, তুমি তোমার কথা বলেই তো চলে গেলে রুমে।
আর তুমি?
আমি, আমি কিছুক্ষণ ড্রিংক্স করে রুমে গিয়ে ঘুমিয়েছি।

না, তুমি ঘুমাতে যাওনি, ভোর রাতে আমিই তোমাকে জোর করে রুমে দিয়ে এসেছি।
অনিক অবাক হয়ে তাকালো, চোখে জিজ্ঞাসা।
তুমি প্রচুর ড্রিংক্স করেছিলে, তোমার কোনো হুঁশ ছিলোনা, কিন্তু সেই হুঁশ হারা অবস্থায় আমাকে নিয়ে তোমার মনে যা আছে সব বলেছো।
অনিক নিশ্বাস বন্ধ করে শুনছিলো আর ভাবছিলো, কি সে বলেছে।
তুমি বলেছো, তুমি আমাকে চাও।
অনিক ভুঁশ করে নিশ্বাস ছাড়লো যেন।
দেখো তুমি সেই অনিক রয়ে গেছো এখনো, আমি মানি তুমি আমার জন্য, বাবার জন্য যা করেছো তা কখনো শোধ হওয়ার নয়, কিন্তু তুমি এইভাবে সেই ঋণ শোধ নিতে চেয়েও না।
অনিক মাথা নিচু করে শুনছে ছায়ার কথা গুলো।
জানি আমি তুমি কেন দেশ ছেড়েছিলে, এখন রওশন নেই বলে আবার কেন ফিরে পেতে চাইবে বলো?
অনিক চুপ করে রইলো।
এ খুব অন্যায় অনিক, খুব অন্যায়, আমার ভালোবাসা রওশনের জন্য, সেখানে আমি কাউকে সেই অধিকার দিতে চাইনা, তোমাকেও না।
অনিক হতাশ চোখে তাকালো ছায়ার দিকে।

আমি বাবাকে নিয়ে আগামীকালকের ফ্লাইটেই দেশে ফিরে যাচ্ছি, টিকেট করে নিয়েছি, আমি চাইনা তুমি আমাদেরকে বাধা দাও।
অনিক হতাশ চোখ নিয়ে তাকিয়ে বললো, তুমি জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার মনে কি আমার জন্য এক মুঠো ভালোবাসাও নেই?
একদম চুপ, আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা, প্লিজ আমাদেরকে যেতে দাও, আমার সাথে জবরদস্তি করোনা।
অনিক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, বাধা দিতে চাইলে আগেই বাধা দিতাম, কেউই আটকাতে পারতোনা, ভালোবেসেছি বলেই তোমার জীবনে কাঁটা হতে চাইনি, এখনো হবোনা।
ছায়া উঠে গেলো, হনহন করে এগিয়ে গেলো গেইটের দিকে, হাত দিয়ে চোখের অঝোর ধারাটি চাপা দিতে চাইলো।
অনিক পিছন থেকে তাকিয়ে রইলো ছায়ার গমন পথের দিকে, চোখে একরাশ শূন্যতা, বুঝার চেষ্টা করছে কেন পেয়েও হারালো আবার।
পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে সিগারেট ধরালো, কয়েকটা জোর টান দিয়ে কাঁশতে শুরু করলো, সিগারেট বিস্বাদ লাগায় উঠে পড়ে কাছের বিনে ফেলে দিয়ে এগুলো নিজের পথে।

অনিক গাড়ি পার্কিংয়ের সামনে এসে আকাশের দিকে তাকালো, ভারী মেঘ ঝমেছে, যেমন ঝমেছে আজ ওর মনে, ইচ্ছে করছে মরতে, জীবনটা আজ বিষাদে পরিপূর্ণ, যেখানে ঠেসে ধরেছে আজীবনের কান্না, রঙ গেছে উড়ে জীবনের, আর পাওয়ার কিছুই নেই।
তাকালো দূরে দাঁড়ানো ওর গাড়ির দিকে, আশে পাশে বেশ কয়েকটি গাড়ী আর মাইক্রো ভ্যান।
অনিকের পা চলতে চাইছেনা, সেলফোনে অনবরত রিং হচ্ছে শুনে পকেটে হাত দিয়ে বের করে রিসিভ করলো।
হ্যালো অনিক, আমি আফরিন বলছি।
হাঁ বলো, অনিক এগুলো গাড়ীর দিকে।
মি. লেভিন ফোন দিয়েছিলো, আপনি কই?
আমি পার্ক স্ট্রীটে, বলেই অনিক গাড়ীর দরজা খুলতে গেলো, হটাৎ পিছনে মাইক্রো ভ্যানের দরজা খোলার শব্দ হতেই পিছন ফিরে তাকালো এবং সাথে সাথেই জমে গেলো মুখোশ পড়া মানুষ দেখে, হাতে আগ্নেয় অস্ত্র তাক করা অনিকের দিকে।
অনিক দুহাত হাল্কা উঠালো সারেন্ডারের ভঙ্গিতে, আশেপাশে তখন আরও কিছু মুখোশ পড়া মানুষ অস্ত্র থাক করে ঘিরে ধরেছে।
কেউ একজন ওর হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে দূরে ছুড়ে দিলো, এরপর ইশারা করলো ভ্যানে উঠতে।
একজন অনিকের পিঠে ধাক্কা দিলো, সেই ধাক্কা খেয়ে অনিক উঠে পড়লো ভ্যানে, কেউ একজম ওর ঘাড়ে পিস্তল দিয়ে মারাতে অনিক জ্ঞান হারালো।

........ চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ