এক মুঠো ভালোবাসা (২৭তম পর্ব)

ইঞ্জা ২০ মার্চ ২০২০, শুক্রবার, ০৯:২১:১২অপরাহ্ন গল্প ২৩ মন্তব্য

অনিক চোখে জল নিয়ে তাকিয়ে রইলো ছায়ার যাওয়া, বুক থেকে হাহাকারের নিশ্বাস বেরিয়ে এলো, কিছুক্ষণ দম ধরে বসে রইলো, এক পর্যায় উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ব্ল্যাক লেভেলের বোতল আর গ্লাস নিয়ে ফিরে এলো ড্রয়িংরুমে, লার্জ একটা পেগ নিয়ে সোজা সব পেটে চালান করে দিলো, এরপর গ্লাসে কিছু বরফ নিয়ে মদ ঢাললো।

অনিক অনিক, উঠো আমি রুমে দিয়ে আসছি, ফিস ফিস করে ছায়া বললো, ঘুম আসছিলোনা তাই উঠে এসে দেখি তুমি এখানে।
অনিক ধীরে মাথাটা তুলে তাকালো আর বললো, ছায়া, ও ছায়া একটু বসো, কথা বলি।
না এখন কোন কথা নয়, রাত সাড়ে তিনটা বাজে, পুরা বোতলই শেষ।
বসো, কঠিন গলায় বললো অনিক।
ছায়া চমকে কেঁপে উঠলো, এ কণ্ঠ সে অনেক বছর পর শুনছে, সেই ইউনিভার্সিটি লাইফে অনিকের কণ্ঠ এমন ছিলো, ছায়া জট করে সোফায় বসে পড়লো।

ছায়া, তুমি তো সব কথা বললে, জড়ানো কণ্ঠে অনিক বলে চলেছে।
তুমি কি একবারও ভেবেছো এতো বছর ধরে আমি কেন বিয়ে করিনি, কাঁপা হাতে সোফার নিচ থেকে অর্ধেক বোতলের ব্ল্যাক লেভেল আরেকটা বের করে কিছুটা গলায় ঢাললো, তুমি জানো আমি এখনো তোমায় ভালোবাসি, তুমি কি বলতে পারবে তোমার মনের কোনে আমি নেই, বলো তুমি, চুপ করে রয়েছো কেন?
ছায়া উঠে দাঁড়ালো, বললো অনিক তুমি এখন ঠিক নেই, তোমার সাথে আমি কাল কথা বলবো, উঠো এখন বলেই হাত ধরে উঠালো, অনিক ব্যালেন্স হারাচ্ছে দেখে একটা হাত নিজের কাঁদে নিয়ে এগুলো অনিকের কামড়ার দিকে।

অনিক উঠ বাবা, আজ এতো দেরি কেন তোর, অনিকের মা ডাকলেন।
অনিক ধীরে চোখ মেলে তাকালো।
তুই উঠে রেডি হয়ে আয়, তারপর ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি তোকে।
অনিক উঠে বসতে গেলো, মাথাটায় প্রচন্ড ভারি হয়ে রয়েছে, রিস্টওয়াচটা টেনে নিয়ে টাইম দেখে অবাক হলো, সকাল এগারোটা।
দ্রুত উঠে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে ড্রেস চেইঞ্জ করে নিলো, এরপর ডায়নিংয়ে এসে চেয়ারে বসে অবাক হলো ছায়াকে না দেখে।
মা ছায়াকে দেখছিনা?
ও রুমে আছে।
মা আমাকে লেবু পানি দাও তো?
কেনরে, রাতে কি ড্রিংক্স করেছিস?
হাঁ মা একটু করেছিলাম।

ব্রেকফাস্ট করে উঠে যাচ্ছিলো অনিক, ওর মা বললেন, তুই রুমে যা আমি আসছি একটু কথা আছে।
অনিক অবাক হলো, এরপর রুমে ফিরে গেলো।
কিছু সময়ের মধ্যে ওর মা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে পাশে বসলেন।
কি ব্যাপার মা, কোন বিশেষ কিছু বলবে?
হাঁরে বাবা, আসলে বলতে চাইছিলাম তোর তো বিয়ের বয়স শেষ হতে চলেছে, বিয়ে তা করবিনা?
অনিক চুপ করে রইলো।
একটা ছবি এগিয়ে দিয়ে বললেন, শুন ঢাকাতে তোর বাবার বন্ধুর মেয়ে, ফার্মেসিতে মাস্টার্স করেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে।
মা এইসব বাদ দাও তো, অনিক বিরক্ত হয়ে বললো।
কি বলিস এতো গুণী মেয়েকে না করছিস।
অনিক বিরক্ত হয়ে বললো, মা।
তাহলে আরেকটা মেয়ে হাতে আছে, আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে, আফরিন।
অনিক অবাক চোখে তাকিয়ে বললো, কি বলোনা মা, ও আমার সেক্রেটারি, মাথা খারাপ হয়েছে স্বগতোক্তি করলো।

কি বলিস এইটাও না, ওটাও না, তাহলে কি তুই বিয়েই করবিনা?
অনিক হাসলো, কে বলেছে বিয়ে করতে চাইনা?
তাহলে?
তোমার ঘরেই তো মেয়ে আছে?
অনিকের কথায় আশ্চর্য হয়ে বললেন, কার কথা বলছিস?
ছায়া।
অনিকের মা যেন একটা ধাক্কা খেলেন।
হয়ত তুমি বলবে ও বিধবা, কিন্তু মা তুমি কি জানো ওকে পাবোনা জেনেই আমি দেশ ছেড়েছি, ওকে পাবোনা জেনেই আমি এতো বছর বিয়ে করিনি, ওকে যদি বিয়ে নাই করতে পারি তাহলে বিয়ে আমি করবোনা।
অনিকের মা শক্ত হয়ে বসে রইলেন।
মা তুমি চাওনা তোমার ছেলে বিয়ে করুক?
অনিকের মা শুণ্য চোখে ছেলের দিকে তাকালেন, মনে প্রচন্ড ঝড় বয়ে যাচ্ছে?
মা কই কিছু বললেনা?
মেয়েটাও কি তোকে ভালোবাসে?
না মা, জানিনা।

অনিক রুম থেকে বেরিয়ে দেখে ছায়া লাঞ্চের ব্যবস্থায় ব্যস্ত, অনিক ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে গ্লাসে পানি নিয়ে খেলো।
কি রান্না করছো?
হাঁস আর রুই মাছ।
অনিক খেয়াল করলো, ছায়া মুখ কালো করে রেখেছে।
আমি বিকালে একটু বেরুবো, তুমি সাথে যেতে পারবে?
ঠিক আছে যাবো, বলেই তাকালো ছায়ার দিকে, মুখটা থমথমে হয়ে রয়েছে।
ব্যাপার কি, কি এমন হয়েছে ওর যে মুখটা কালো হয়ে রয়েছে, অনিক চিন্তায় পড়ে গেলো, গতরাতের কথা ও মনে করতে পারছেনা।
অনিল ড্রয়িংরুমে ওর বাবা ও রওশনের বাবার সাথে গল্পে যোগ দিলো।
ওদিকে অনিকের মা রুমে খুব চিন্তিত মনে বসে আছেন, ভাবছেন ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে, এক সময় উঠে ড্রয়িংরুমে এসে রাশেদ সাহেবকে ডেকে নিয়ে গেলেন কথা আছে বলে।

....... চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ