এক মুঠো ভালোবাসা

ইঞ্জা ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ০৬:৫৭:৩৫অপরাহ্ন গল্প ২৩ মন্তব্য

সন্ধ্যা সাতটার পর অনিক অফিস শেষে তার ফ্ল্যাটে ফিরে এলো, সে একাই থাকে এই ফ্ল্যাটে, ওর বাবা মা ভাই বোন সবাই দেশেই থাকে, ওই একমাত্র এই দেশ মানে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের থাকে।
অনিক ফ্রেস হয়ে এসে নিজের জন্য অল্প কিছু খাবার রান্না করেখেলো, সে বাসী খাবার খেতে পারেনা সেই ছোটবেলা থেকেই, একি কারণে প্রতিবার সে অল্প কিছু রেডি করে খেয়ে নেয়, আজ রেডিমেড টরটিলা দিয়ে মিক্সড ভেজিটেবেল খেলো, খাওয়া সেরে প্লেট বাটি সব ডিসওয়াসিং মেসিনে অটোমেটিক সুইচ চাপ দিয়ে নিজে গিয়ে বসলো টিভি রুমে, কিছুক্ষণ অযথায় চ্যানেল চেইঞ্জ করে করে দেখলো এরপর উঠে গিয়ে নিজ রুমে গেলো শোয়ার জন্য, শুয়ে শুয়ে সেলফোন নিয়ে ফেইসবুকিং করা ওর অনেক বছরের অভ্যাস, আজও তাই করতে লাগলো, ও প্রথমেই নোটিফিকেশন গুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো, এরপর গেলো স্টাটাস গুলো দেখতে, কিছু কিছু পোস্টটে লাইক কমেন্ট করলো, একটু নিচে নামতেই ওর চোখ আটকে গেল ওর জুনিয়র বন্ধু তৌহিদের স্টাটাসে, তৌহিদ অনুরোধ করছে আমিরেকায় যত বন্ধু আছে তাদের সকলকে এই স্টাটাসের লিংকে যাওয়ার জন্য এবং জরুরি ভাবে রিপ্লাই করার জন্য।

তৌহিদের দেওয়া লিংকে ক্লিক করতেই এক লাইভ স্ট্রিমিং ভিডিও শুরু হয়ে গেল, ভিডিওর শুরুতেই অনিক চমকে উঠলো, ভিডিওটিতে সেই মেয়ে যার কারণে সে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলো, ওকে ভুলতে চেয়েও কখনোই ভুলতে পারেনি, ওর কারণেই কোন মেয়ে ওর কাছে আসতে পারেনি, সেই আনিকা রায়হান ছায়া ভিডিও লোড করেছে, আজ ছয় বছর পর ওকে দেখে অবাকই হয়েছে ও, ছায়া সেই আগের মতোই রয়ে গেছে, কোন চেইঞ্জ নেই।
অনিক মনোযোগ দিলো ভিডিওটি দেখার জন্য, ছায়া কান্না করছে দেখে যতদূর না মন খারাপ হলো, তারচেয়ে বেশি অবাক হলো, ছায়ার চোখ ফুলে ঢোল হয়ে আছে, বলছে প্লিজ হেল্প করুন, আমার বাবার নিউরোর সমস্যা, অপারেশন করতে হবে কিন্তু এই দেশে অনেক খরচা, বাবার ইন্সুইরেন্স না থাকায় সেই খরচা কুলানো আমার দ্বারা সম্ভব হচ্ছেনা, আমি প্রায় নিশ্ব, বাবাকে ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি হসপিটালে ভর্তি করিয়েছি আজ দুইদিন, প্লিজ হেল্প করুন এই ইহ জীবনে বাবা ছাড়া আমার কেউ নেই।
এতটুকুতেই ভিডিও শেষ, অনিক অবাক হলো ছায়ার ভিডিওটা দেখে, কি বলে মেয়েটা ওর বাবার জানাজা তো আমি নিজে থেকেই পড়ে দাফন করেছি, মনে আছে হার্ট এটাক হয়েছিলো উনার।

কিছুক্ষণ চিন্তা করলো অনিক, মনটা অস্থির হয়ে গেলো ওর, কি বললো ছায়া?
ওর বাবা ছাড়া আর কেউ নেই, তাহলে রওশন কই, যার জন্য অনিকের ভালোবাসাকে পায়ে পিষে চলে গিয়েছিলো?
রওশন আর অনিক, দুজনই এক সাথে ঢাকা ইউনিভার্সিটির বায়োকেমিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ফাইনাল ইয়ারে পড়তো, ছায়া মাত্র ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে, প্রথম দেখাতেই অনিক ছায়ার প্রেমে পড়ে যায়, প্রায় ছায়াকে ফলো করতো ও, বছর খানেক পর একদিন সুযোগ পেয়ে তার ভালোবাসার কথা জানাই ছায়াকে, ছায়া কিছু না বলে সরে যায় কিন্তু অনিক ছাড়েনা, অনিক বারবার প্রেম নিবেদন করতে থাকায় বিরক্ত ছায়া বলেই ফেললো একদিন, সে আর রওশন একে অপরকে ভালোবাসে, তখন অনিক প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ে, রেগেমেগে গিয়ে রওশনকে গিয়ে ধরে, কিরে ছায়া বললো তুই ওকে ভালোবাসিস?
হাঁরে দোস্ত, আমি শুনেছি ছায়ার কাছে, আসলে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি, তুই ওকে আর বিরক্ত করিসনা।
তোরা যে প্রেম করছিস আগে বলিসনি কেন, অনিক একগুঁয়ে ভাবে জিজ্ঞেস করলো।
দোস্তো বাদ দেনা প্লিজ।
তাই, ওকে ঠিক আছে, বলেই গটগট করে অনিক বেরিয়ে গেল, এরপর অনিক কখনোই আর ইউনিভার্সিটি যায়নি, শুধু ফাইনাল পরীক্ষা দিতে গেল কিন্তু চোখ নিচু করে গেল আর এলো, হটাৎ একদিন রওশন বাসায় এসে জানালো ছায়ার বাবা ইন্তেকাল করেছে, দুই বন্ধু এক সাথে গেল জানাজা পড়তে, দাফন করা পর্যন্ত ছিলো, দুই বন্ধু এক সাথে কবরস্থান থেকে বেরিয়ে দেখলো কয়েকজন মহিলা ঘিরে আছে ছায়াকে, ছায়া এক গাছ তলে বসা, ওদের দেখে ছায়া উঠে দাঁড়ালে অনিক রওশনকে বললো, দোস্তো আমি আসি।
দাঁড়া ছায়ার সাথে দেখা করে যা, বলেই অনিকের হাত ধরে ছায়ার দিকে এগুলো, অনিক মাথা নিচু করে এগুলো।

ছায়া, তুমি কি এখন বাসায় যাবে, দেখো কে এসেছে।
তুমি উনাকে নিয়ে বাসায় যাও, আমি আসছি, ছায়া চোখ মুছতে মুছতে বললো।
ঠিক আছে বলেই রওশন অনিককে টানলো সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য, অনিক না করলো।
কেন না, রওশন জিজ্ঞেস করলো।
আমার সময় নেইরে, আজ সন্ধ্যায় আমি আমেরিকা চলে যাচ্ছি, আনকেলের কথা শুনে এসেছি।
ছায়া অবাক চোখে তাকালো, সাথে সাথে রওশনও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, তুই আমেরিকা যাচ্ছিস, কই বললি না তো?
অনিক চুপ করে থাকলো।
কতদিনের জন্য যাচ্ছিস?
জানিনা।
মানে!
আমি ওখানেই সেটেল্ড করবো।
মানে কি, তুই চলে যাচ্ছিস আমাকে জানাবার প্রয়োজনই মনে করলিনা, ব্যাপার কি আমি কি তোর কেউ নই?
অনিক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, আসলে সময় পাইনি।
রওশনের চোখ ছলছল করে উঠলো, বুঝতে পারছি আমি তোর কেউ না, ঠিক আছে যা, তুই চলে যা, যা বলছি, যানা বলে ছোট একটা ধাক্কা দিলো অনিককে।
অনিক আর পিছন ফিরে তাকালোনা, এগিয়ে গিয়ে সামনে সিএনজি পেয়েই উঠে পড়লো।

.......... চলবে।
ছবিঃ গুগল।

 

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ