এক মুঠো ভালোবাসা (২য়)

ইঞ্জা ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ০৮:২৭:৩৩অপরাহ্ন গল্প ২১ মন্তব্য

 

 

সন্ধ্যা সাতটার কিছু পরেই অনিক ওর ফ্যামিলি সহ এয়ারপোর্টে হাজির হলো, রাত সাড়ে নয়টায় ওর ফ্লাইট, গাড়ী থেকে নেমেই অবাক হলো অনিক, ওর প্রিয় বন্ধু রওশন গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে লাগেজ ট্রলি নিয়ে।
তুই এইখানে, অনিকের চোখ ছলছল করে উঠলো।
দাঁড়া আগে লাগেজ গুলো নামিয়ে নিই, জবাবে বললো রওশন, দ্রুত পিছনের বনেট থেকে ব্যাগ গুলো নামিয়ে ট্রলিতে তুলতে শুরু করলো।
রওশন তুই রাখ, ড্রাইভার নামাবে।
রওশন কোন কথা কানে না নিয়ে সব নিজেই নামিয়ে ট্রলিতে তুলে ট্রলি ঠেলে এগিয়ে নিলো দরজা পর্যন্ত, অনিক পিছন পিছন গিয়ে ট্রলি ধরে ফেলে ছোট ভাইকে বললো, তোরা আব্বু আম্মুকে নিয়ে ভিতরে অপেক্ষা কর আমি আসছি বলেই রওশনের হাত ধরে সামনের দিকে হাটতে লাগলো এয়ারপোর্টের শেষ মাথায় গিয়ে দাঁড়ালো ওরা, অনিক পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে রওশনকে সাধলো।
রওশন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কিরে তুই সিগারেট খাওয়াও ধরেছিস, তোর না এইসব পছন্দ ছিলোনা?
অনিক নিজে সিগারেট ধরিয়ে লম্বা একটা টান দিলো।
তুই অনেক চেইঞ্জ হয়ে গেছিসরে নিক।
তাই, আরেকটা টান দিয়ে ধুয়া উড়ালো অনিক।
হটাৎ রওশন ঝপ করে ঝড়িয়ে ধরলো অনিককে, ফুঁফিয়ে কান্না করতে লাগলো আর অনিকের চোখ পাথর হয়ে গেলো, কোনো নড়াচড়া নেই।
দোস্তো আমি অজান্তেই তোর মনে কষ্ট দিয়ে ফেললামরে, আমাকে মাফ করে দে।
তুই কোন দোষ করিস নাই বন্ধু, কেন এইসব কথা বলছিস?
না বন্ধু বল তুই মাফ করে দিয়েছিস, তুই মাফ না করলে আমি বাঁচবোনারে।
অনিক হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বন্ধুকে সরিয়ে দিয়ে বললো, কি যাতা বলছিস, এমন কথা কখনোই মুখে আনবিনা।
কি করবো বল, আমি জানি তুই অনেক রাগ করে আছিস, আসলে আমি জানতামনা তুই এতো সিরিয়াস ছিলি।
তোরা ভালো থাকিস আমি আসি, বলেই রওশনকে আর কোন কথা বলতে দিলোনা, অনিক দ্রুত হেঁটে এগিয়ে গেল ডিপার্চার গেইটের দিকে, যদি ফিরে দেখতো তাহলে দেখতো বন্ধু রওশনের চোখে অঝোর ধারা।

সেই যে এলো আর কারো যাতে যোগাযোগ রাখেনি সে, বাসায় মাঝে মাঝে কথা বলে তাও স্কাইপেতে, শুনেছিলো রওশন বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলো ওর বাসায়, বিয়ে চট্টগ্রামেই হয়েছিলো ওদের বাড়ীতে।
অনিক বিছানা ছেড়ে উঠে ড্রয়িং রুমে গেল, মিনিবারে রাখা হুইস্কির বোতল নিয়ে গ্লাসে ঢেলেই গলায় ঢাললো, এরপর সেলফোন নিয়ে জুনিয়র বন্ধু তৌহিদকে মেসেজ দিলো মেসেঞ্জারে কল দেওয়ার জন্য।
কয়েক মিনিটের মধ্যে কল এলো, অনিক রিসিভ করেই বললো, কি খবর ছোটো ভাই, কেমন আছো?
ভাইয়া আমি ভালো আপনি কেমন আছেন?
এই আছি, আচ্ছা শুনো তুমি আজ যে ভিডিও শেয়ার করেছো, উনাকে কি চিনো?
না ভাইয়া, আমার এক ফেইসবুক আপুর পোস্ট থেকে শেয়ার করেছি।
তাই এক কাজ করো, একটু খবর নিতে পারবে আসল ঘঠনা কি, কোথায় আছেন, কি অবস্থা?
ভাইয়া আপনি কি নিউইয়র্কে?
হুম।
ওকে ভাইয়া আমি চেষ্টা করে দেখি পাই কিনা।
ওকে এখন রাখলাম বলেই অনিক ফোন ডিস্কানেক্ট করলো।
আরো কিছুক্ষণ ড্রিংকস করার পর টলতে টলতে নিজ রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
হটাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো ওর, এলোমেলো ভাবে এইদিক ওদিক তাকালো ফ্যালফ্যাল করে, ওর ফোনে মেসেঞ্জারে রিং হচ্ছে বারবার, ও একটু দাত্বস্থ হয়ে ফোনটা সাইড টেবিল থেকে টেনে নিয়ে রিসিভ করলো।
হ্যালো।
ভাইয়া আমি তৌহিদ, আপনাকে অনেকক্ষণ ধরে ট্রাই করছি।
সরি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বলেই ওয়াল কল্কের দিকে তাকালো, ভোর ছয়টা বাজে।
ভাইয়া আমি খবর নিয়েছিলাম, আপুও এই বিষয়ে কিছু জানেননা, উনিও আরেকজনের পোস্টে শেয়ার করেছেন।
তাই, আচ্ছা অসুবিধা নেই, দেখি কি করা যায়।
জ্বি ভাইয়া।
রাখলাম।
ওকে ভাইয়া শুভ সন্ধ্যা।
শুভ সকাল বলেই লাইন কেটে দিলো অনিক, এরপর আবার শুয়ে পড়লো ও।

সকাল দশটায় এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো ওর, ছুটির দিনে একটু দেরিতেই ঘুম থেকে উঠে ও, ফ্রেস হয়ে কিচেনে গিয়ে ব্রেড টোস্ট করে নিয়ে মাখন, ওমলেট সহযোগে ধীরে সুস্থে ব্রেকফাস্ট করলো, এরপর রেডি হয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ময়লার পলিথিনটা নিয়ে নিলো বাইরে ডাস্টবিনে ফেলার জন্য।
গাড়ীতে উঠে সিটবেল্ট লাগিয়ে ইগনিশনে চাপ দিতেই গাড়ী স্টার্ট হয়ে গেলো, গাড়ী নিয়ে এপার্টমেন্ট বিল্ডিং থেকে বেরিয়েই চললো সেন্ট্রালের দিকে, আজ লাঞ্চ করার কথা আছে ফিলিপিন ইম্পোর্টার চ্যাং জুনের সাথে, লা ম্যারিডিয়ান হোটেলের উদ্দেশ্যেই অনিকের গাড়ী ছুটে চললো।
হোটেলের কাছাকাছি পোঁছুতেই দেখলো নিউরো সায়েন্স হসপিটাল, অনেক বড় হসপিটাল, ওর গতরাতের কথা মনে পড়ে গেলো, ছায়া এই হাসপাতালের কোথাও আছে।
অনিক লা ম্যারিডিয়ানের মেইন এন্ট্রান্সের সামনে এসে গাড়ী থেকে নেমে দাঁড়াতেই হোটেল কার বয় এসে চাবিটি চেয়ে নিয়ে গাড়ী পার্কিংয়ে নিয়ে চলে গেল, অনিক ভিতরে প্রবেশ করে রিসেশনে চলে এলো, সুন্দরী রিসেপশনিস্ট মিষ্টি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো ইংরেজিতে, স্যার আমি কি কোন সাহায্য করতে পারি?
ইয়েস প্লিজ, আমি এসেছি মি. চ্যাংয়ের সাথে দেখা করতে, রুম নাম্বার 5004.
আপনার নাম স্যার?
অনিক, বলেই ওর বিজনেস কার্ড এগিয়ে দিলো।
ধন্যবাদ স্যার বলেই রিসেপশনিস্ট মেয়েটা ফোন তুলে নিয়ে কল দিয়ে কথা বলল, এরপর ফোন রেখে অনিককে জানালো, মি. চ্যাং আসছেন কিছুক্ষণের মধ্যে, প্লিজ আপনি একটু বসুন স্যার।
ওকে নো প্রবলেম, ধন্যবাদ বলে অনিক সামনের কোণার এক সোফায় গিয়ে বসলো।

লাঞ্চ এবং মিটিং শেষে দুপুর তিনটার কিছু পর অনিক বেরিয়ে এলো হোটেল থেকে, গাড়ীতে চড়ে বসেই নিজ ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল, ভাবছে ছায়ার সাথে ও কোন প্রকারেই দেখা করবেনা, কি লাভ দেখা করে, অযথায় কেন পুরোনো সম্পর্ক খুঁচিয়ে তুলবো, ওদের তো আমাকে দরকার নেই, নাহ নাহ ও এইসব কেন ভাবছে, ছায়া নিশ্চয় বড় বিপদেই পড়েছে, আমি নাহয় নাই পেলাম ওকে কিন্তু ওর বিপদে কি আমি সাহায্য করতে পারিনা, নিশ্চয় পারা উচিত, মনে মনে স্বগতোক্তি কতলো অনিক।
অনিক সামনের এক পার্কিংয়ে গাড়ী থামালো, এরপর ওর ফেইসবুকে লগইন করলো যেন ভালো করে ভিডিওটি দেখে বুঝতে পারে কোথায় আছে ছায়ারা।
পোস্টটা ভালো করে দেখলো, সেখানেই পেল ডিটেইলস, ফোন নাম্বার, রুম নাম্বার ইত্যাদি দেখে নিয়ে গাড়ী ছোটালো সামনের বাক ঘুরে আসার জন্য, কিছুক্ষণের মধ্যে পোঁছে গেলো হসপিটালের টপ ফ্লোরের পার্কিং এড়িয়াতে, গাড়ী রেখে অনিক এগিয়ে গেল লিফটের দিকে, লিফট এলে উঠে পড়লো, লিফটে করে রিসেপশন পোঁছেই গেলো ইনফরমেশন ডেস্কের সামনে, ওখানেই জিজ্ঞেস করলো ছায়ার বাবার ব্যাপারে, রুম এবং বেড নাম্বার বললে ওরা বললো চার তলায় চলে যেতে।

অনিক চার তলায় এসে সামনে ইনফরমেশন ডেস্কে গিয়ে তার পরিচয় দিয়ে বললো সে সিসিইউ বেড নং ২৪ এর পেসেন্টকে দেখতে এসেছে।
ওকে মি. আপনি ওয়েট করুন আমি খবর দিচ্ছি বলেই সে একটা কল দিয়ে কথা বললো, ফোন রেখে বললো প্লিজ আপনি ওয়েটিং রুমে বসুন, ভিতরে জানানো হয়েছে।
ওকে ধন্যবাদ, অনিক ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসলো বুকটা ওর ঢিপঢিপ করছে, নিজের এঞ্জাইটি কাটাতে অনিক টেবিলের পাশে রাখা নিউজপেপার উল্টাতে লাগলো, হটাৎ শুনলো ইয়েস প্লিজ।
অনিক মাথা তুলে তাকাতেই থমকে গেল, ওর বুক ঢিপঢিপ করা বেড়ে গেলো, সামনের মেয়েটিকে ও চিনে কিন্তু তবুও যেন অচেনা, পুরা চেহেরাই যেন বিধস্ত হয়ে গেছে, চুল গুলো অবিন্যস্ত।
অপরদিকে থামকে দাঁড়িয়ে আছে ছায়া, তাকিয়ে আছে অবাক দৃষ্টিতে, এক সময় কান্না আর চেপে রাখতে পারলোনা, হু হু করে কান্না শুরু হয়ে গেলো।
অনিক নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললো, ছায়া তুমি বসো বলেই ছায়াকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গিয়ে বাইরে রাখা পানির মেসিন থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ফিরে এলো।
নাও পানিটা খেয়ে নাও।
ছায়া চোখ মুছতে মুছতে পানির গ্লাসটা নিয়ে চুমুক দিলো।
অনিক একটু দূরে রাখা সোফায় গিয়ে বসলো, মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলো কেন যে সে এলো এখানে।

........... চলবে
ছবিঃ গুগল।

 

বি.দ্রঃ গল্পের স্থান, কাল, পাত্র সবই কাল্পনিক, কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নন।

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ