একান্ত অনুভূতির ডায়েরি- ১

তৌহিদুল ইসলাম ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:৩০:০৯অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৯ মন্তব্য

যেদিন প্রথম নিগূঢ় মানব রহস্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে জেনেছিলাম, সেদিন হতেই আমার ভাব কল্পনা চিন্তা বিচিত্র কাব্যগুলি প্রকাশিত করতে শিখেছি ডায়েরির পাতায়। মানুষের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ভীষণতা এর রহস্য মাধুর্যতাকে আমি অনুভব করতে শিখতে পেরেছি জীবনযাপনের দৈবিক সত্য প্রকাশে। চিন্তা ভয় ডরে আক্রান্ত হই, ডায়েরিতে একদিন আমার লেখার সব শব্দগুলি হারিয়ে যাবে। নিত্য লেখার ব্যাধিতে আক্রান্ত আমি হয়তো সেদিন আর লিখতে পারবোনা। ইদানিং এসব কথা মনে আসলেই আমার ভাব-কল্পনাগুলি প্রবলভাবে আলোড়িত হয়। যখনই এরূপ ভাবনা আসে তখন উদ্বেলিত হয়ে আরো বেশি করে লেখার তাগিদ অনুভূত হয় আমার। যদি সত্যিই সেদিন আর লিখতে না পারি আমাকে তোমরা সমাধিত করো নিজেদের লেখায়,উদিত সূর্যালোকের প্রাতঃসৌন্দর্যবেষ্টিত মনের মন্দিরের গুপ্তগুহায়। তোমাদের লেখকীয় অনুভবে ধূম্রচারিকার চোরাবালিতে।

অসুস্থ দেহ-মনের নানাবিধ বিক্ষোভ, বিকারে অস্থির দৃষ্টিবিভ্রম, দেহের ও জীবনের নানা সঞ্চয়ের ভঙ্গুরতা আর লিখতে না পারার এই সত্যরূপ আমাকে বেঁচে থাকার সার্থকতা বুঝিয়ে দেয় বারংবার। আমার লেখার রসদ খুঁজি মানবতার অমরত্বে অবিচলিত বিশ্বাসকে সাক্ষী করে। পৃথিবীর সৌন্দর্যকে নিত্য নতুন দৃষ্টিতে দেখার মাঝেই নিজেকে নিয়োজিত করে ভরে চলেছি আমার একান্ত অনুভূতির ডায়েরির পাতা।

মানব স্নেহ প্রেমের নিত্যনূতন মুখ্য নির্ধারণ করতে গিয়েইতো খুঁজে পেয়েছি লেখার অমরত্ব। সেগুলোকে কবিতা নয়, আমি তাদের নাম দিয়েছি একান্ত অনুভূতি। কবিতার মাঝে কবির কল্পনার কিছু বিশেষ স্বাতন্ত্র্যবোধ আছে। কিন্তু একান্ত অনুভূতিতে কল্পনার জলস্থলসঞ্চারী সেই লীলাখেলা নেই। কল্পনাপ্রসূ প্রকাশের সচেতন শিল্প নৈপুণ্যতা নেই। যা আছে তা হলো মনের ভাব প্রকাশের নানা বৈচিত্র্যের সমারোহ, আভাস ইঙ্গিতের ব্যঞ্জনার মোহ।

একান্ত অনুভূতিতে দৃষ্টির স্বচ্ছতা আছে, সুস্পষ্ট অনুভূতিগুলোর প্রকাশ আছে। কবিতার মত অন্তমিলের দরকার কি? মনের ভাব প্রকাশের অনিয়মিত মুক্ত ছন্দেই নাহয় লিখব আমার নিজস্ব অনুভূতিগুলো। আমার একান্ত অনুভূতিগুলো সব আমার হৃদয়ের কথা, আমার অন্তর্নিহিত শক্তি। শব্দের ঐন্দ্রজালিকতার গন্ডিতে থেকে পাঠকদের কেউ হয় মুগ্ধ, কেউ হয় বিস্মিত। আর আমি পাঠকের মুগ্ধতায় নিজে হই আনন্দিত। আমার ডায়েরি তখন স্মিত হেসে আমাকে নিজের লজ্জাবতীতা জানান দিয়ে যায় আর এটাইতো পরম প্রাপ্তি।

আমার গোপন ইচ্ছেগুলোর একটি হলো চিরবিদায়ের গোধূলিলগ্নে আমার শিয়রে একান্ত অনুভূতির সেই ডায়েরিখানা থাকবে আর লেখার কলমটি থাকবে ঠিক তার মলিন মলাটের উপরে। আমার ঝাপসা হয়ে ওঠা কাঁচের চশমাখানি সেদিন নিজের আঁচল দিয়ে মুছে রেখো তোমরা যাতে লেখাগুলি পড়তে পারি।

এই পৃথিবীর মানুষ রোগ-শোকের কঠিনাবরন আমায় আক্রান্ত করেনি কখনো। তবে ইদানিং একান্ত অনুভূতিগুলি লিখতে না পারার বেদনায় আজ যেন আমি হয়েছি মূর্তিমান এক মমিকৃত নিঃসাড় দেহ। তোমরা নিজেদের হৃদয়ের প্রশান্ততা দিয়ে ডায়েরিতে লেখা প্রতিটি শব্দের গম্ভীরতাগুলিকে অনুভবে নিয়ে আমার অশ্রু ছলছল চোখমুখের দিকে একবার তাকিয়ে দ্যাখো তোমাদের একান্ত অনুভূতিরা ফিসফিসিয়ে বাতাসে শিস্ কেটে কানে কানে আমার কথাই বলবে।

বলবে- আমি ভালো নেই, সত্যিই ভালো নেই।

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ