একদিন//৪

বন্যা লিপি ১২ জানুয়ারি ২০২০, রবিবার, ০৯:৫৭:৪১অপরাহ্ন গল্প ১০ মন্তব্য

'আমি বরাবরই একজন রাবীন্দ্রিক প্রেমিকা চেয়েছিলাম'
প্রচ্ছদে লেখকের পেন্সিল স্কেচ্। জলছাপে কয়েকটা লাইন.........."তোষামুদে-জন প্রিয় হয় সবার পৃথিবীর
পরিহাসে;
তোষামোদ নেই রন্ধ্রে
আমার-লিখে রেখো
ইতিহাসে!

অবাক প্রেমের মিলবে
দেখা নষ্ট হলেই তবে;
আহ্বান-নষ্ট হব, হবে?

নষ্ট হব, নষ্ট রব
নষ্ট দেহের কোমায়;
যাবজ্জীবন ভালো থাকার
দণ্ড দিলাম তোমায়।

আমি মুগ্ধ চোখে বইয়ের প্রচ্ছদ এবং লেখার বুননের উপর দৃষ্টি বিছিয়ে রাখছি; এককথায় নির্বাক! ভাবনার গভীরতার কি অনুপম শাব্দিক প্রকাশ এই লেখা।হাসু ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি মাখা মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ তুলতেই পৃষ্ঠা উল্টে ভাঁজের দাগ রাখা আরেকটা কবিতা মেলে ধরে বললো- এটা পড়ে দ্যাখ!
-- তুই পড় আমি শুনি।
-- ওরে,আমি তো একা একা পড়িই, এটা আমি তোর কন্ঠে শুনতে চাই বলে তোকে পড়তে বলছি।
আমি কন্ঠে তুললাম আমার মতো করে----- "চলো দেড় আড়াই হয়ে যাই!"

তোমাকে যেদিন প্রথম চুম্বনে অভিষিক্ত করেছিলাম!
পুরো বাড়ি মেতে উঠেছিলো সোল্লাসে!
তোমার বাবা চাপড়ে দিয়েছিলেন আমার পিঠ,
তোমার মা টিপে দিয়েছিলেন আমার গাল,
আমার দাদু টেনে দিয়েছিলেন কান।
আমার বাবা-মা সবাইকে ডেকে সানন্দে বলেছিলেন-
দ্যাখো, দ্যাখো -আমাদের ছেলে বড় হয়েছে!

সেদিন-
আড়াই বছরের আমি দেড় বছরের তোমাকে চুমু খেয়ে
বড় না হয়েও অনেক বড় হয়েছিলাম;
কুড়িয়েছিলাম বহদলীয় বাহবা,
পেয়েছিলাম বীরোচিত অভিনন্দন!

কুড়ি বছর পরে-
আমি যখন সত্যি বড় হয়েছি,
চুম্বন যখন সময়ের দাবি;
তখন চাইলেই আমি তোমার চৌকাঠ ডিঙোতে পারি না,
তোমাকে অভিষিক্ত করতে পারিনা দ্বিতীয় চুম্বনে!

তবে কি আড়াই বছরের আমিই শক্তিমান ছিলাম
বাইশ বছরের আমার চেয়ে?
যখন চাইলেই চুমু খেতে পারতাম যে কারো ঠোঁটে,
থুথু দিতে পারতাম যে-কারো মুখে!

তবে, চলো-
আবার আমরা দেড় আড়াই হয়ে যাই!

পড়া থামিয়ে হাসুর দিকে তাকালাম, হাসু হাসছে! আমার মুখ থেকে শব্দ বেরোলো...- এ শালা কে রে?
হাসু শব্দ করে হেসে উঠলো।
-- আয় খেয়ে নেই, আরো একটা পড়বি এরপর। আমার দারুন লেগেছে ওটাও।
-- আমার তো মনে হচ্ছে এ শালা লেখকের সব লেখাই মনে ধরার মত! কোনটাকে রেখে কোনটা বলবি যে-এটা ভালো লাগেনি?
-- কাহিনী আছে, বলবো তোকে। তুই তো জানিস ; আমার সাথে কেউ ইগো দেখাবে,আর আমি তাঁকে সহজে ছেড়ে দেব,এমন মেয়ে এই হাসি না।
-- হুম, তো?
ভাতের থালার দিকে নজর পড়তেই আমি খেঁকিয়ে উঠলাম।--এই তুই আমারে বড় পিসটা দিলি ক্যান? বদলা শিগগীর! আমি পেটির মাছ খাবো।
-- তুই কি ভাবছিস,এই টুকরোটা ছোট?
নিজের থালার মাছ দেখিয়ে বললো। টুকরো ভেঙে মুখে দিয়েই বললো, --- মাছটা অনেক মজা হয়েছে রে!
--- বলার জন্য বলছিস?
চিরাচরিত স্বভাবসুলভ চোখমুখ শক্ত করে ফেললো হাসু।ওর এই চেহারাটা দেখতেই আমি ক্ষনে ক্ষনে হাসুকে নানা কৌশলে কথার টোপ ফেলাই। হাসুকে তখন দারুন দেখতে লাগে।শ্যামলা বরন হাসু, ছোট করে চুল কাটা, তীক্ষ্ণ চোখ,নাক মুখের ধারালো ঐশ্বর্য আছে হাসুর চেহারায়। দারুন স্টাইলিশ। কে বলবে ওকে দেখে বয়স আটচল্লিশ ছেড়ে ঊনপঞ্চাশ ছুঁয়েছে কিছুদিন হলো। সবার অগোচরেই হাসুর জন্মদিন চলে গেলো। আমারো মনে ছিলোনা।
খেতে খেতেই চলছে আমাদের খুনসুটি আর গসিপিং।
-- দ্যাখ সত্যি বলছি, আমি এরকম রান্না করতে পারিনা। সত্যি অনেক মজা হয়েছে। আরে! তুই রানছিস না!
-- হইছে আর থাক।
হাসু একা একাই বলে চলেছে এরপর কবির কথা।

চলবে......

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ