২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার দক্ষিণ সাধনপুর গ্রামের শীল পাড়ায় তেজেন্দ্রলাল শীলের বাড়িতে আগুন দিয়ে এক পরিবারের মোট ১১ জন হিন্দুকে জ্যান্ত পুড়িয়ে খুন করা হয়েছিল। এই ১১ জনের মধ্যে একজন শিশু ছিলো যার বয়স মাত্র তিন কি চারদিন ছিল। তারও অপরাধ ছিলো। কেন বাংলাদেশে সে হিন্দু হয়ে জন্মেছিল। সকালে যখন লাশ উদ্ধার করা হয় তখন দেখা যায় একটি ছাই হয়ে যাওয়া লাশের ভিতরে শিশুটি প্রায় অর্ধগলিত। মা তাঁর সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটিকে নিজের শরীর দিয়ে আগুনের হাত থেকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন।
রাতের আঁধারে বাঁশখালীরই কিছু দূর্বৃত্ত মুসলমান ঐ বাড়িতে আগুন দেয়। তারপর আশেপাশের সব বাড়ি ঘেরাও করে রাখে অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে যাতে কেউ আগুন নেভাতে যেতে না পারে। যতক্ষণ পুরো বাড়ির ভিতরের সব মানুষ পুড়ে ছাই না হয় ততক্ষণ তারা দাঁড়িয়ে থাকে। ভেবে দেখুন কত মানুষ, কত অস্ত্র এবং কত প্রস্তুতি নিয়ে হামলা করা হয়েছিলো।
ঐ বাড়ির একটু সামনের বাড়ি আমার মামার বাড়ি। ঘটনার দিন আমি মাকে নিয়ে মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। তাই ঐ আগুনের শিখা আমি দেখেছিলাম। পরদিন পুড়ে যাওয়া মৃতদেহগুলোও দেখেছিলাম। তখন ছোট ছিলাম। দেখেই আমার জ্বর উঠে গিয়েছিল। আমার জন্য এটা একটা বড় মানসিক ধাক্কা ছিলো। ঐ দিনই মা আমাকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আমাদের বাড়িতে চলে আসেন। তিনি পুরো বাসের রাস্তায় কান্না করেছিলেন। আমার অনেকদিন লেগেছিল এটা ভুলতে।
এই ঘটনার ১০ বছর ৩ মাস ৪ দিন হলে আজ। এখনও বিচার হয়নি। হবেও না কোনদিন।
কিরকম অসভ্য, বর্বর এবং জানোয়ার হলে এভাবে একসাথে ১১ জন মানুষকে পুড়িয়ে খুন করা হয়? আর কেমন দেশ হলে ১০ বছরেও তার বিচার হয় না।
মাত্রই ২১শে ফেব্রুয়ারী গত হয়েছে। বাঙালির দেশপ্রেম, আমরা সবাই বাঙালি, এই দেশ হিন্দু মুসলমান সবার এমন আবেগ একেবারে ঝরে ঝরে পড়ছে। তাই আজকেই প্রশ্নটা রাখলাম। এই দেশটা আসলে কাদের? এই দেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ? ছি ছি ছি! বাংলাদেশে হিন্দুরা যে বেঁচে আছে সেটাই আমার অবাক লাগে। সময়ে অসময়ে যেকোন ইস্যুতে অথবা কোন ইস্যু ছাড়াই এত নির্যাতনের পরেও তাঁরা কিভাবে আছেন? কেন কোনদিন বিচার হবে না?
আমি শুধু একটা কথাই বলি, আমার ঘৃণা করতেও করুণা হয় তথাকথিত এই অসাম্প্রদায়িকতা এবং অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিদের প্রতি..
১৩টি মন্তব্য
আদিব আদ্নান
বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদে ।
কাঁদতে থাকুক ।
জুলিয়াস সিজার
এটা বাংলাদেশের দোষ।
জিসান শা ইকরাম
এমন ঘটনার বিচার না হওয়াটা দুঃখ জনক ।
খুব খারাপ লাগে এসব ভাবলে
কি চেতনায় ১৯৭১ এর যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হয়েছিল , আর কি হয়ে গেলো ।
বিচার কোনদিন হবে বলে মনে হয় না ।
জুলিয়াস সিজার
আশা করাও বোকামি হবে।
ছাইরাছ হেলাল
হতাশ হওয়া ছাড়া আর কী ই বা করার আছে ।
জুলিয়াস সিজার
আমিও জানি না।
নীহারিকা
এসবের বিচার হয় না।
জুলিয়াস সিজার
এটা আমার পাপ। আমার জন্ম হিন্দু মা বাবার কোলে হয়েছে।
নীলকন্ঠ জয়
এটা আমার পাপ। আমার জন্ম হিন্দু মা বাবার কোলে হয়েছে।
সহমত জুলিয়াস সিজার। 🙁
শুন্য শুন্যালয়
কিছুই বলার নেই..
যে কস্ট বয়ে বেড়ায় সে ই শুধু জানে..
আর আশা করতেও কস্ট হয়..
জুলিয়াস সিজার
হ্যাঁ সেটাই।।
যাযাবর
বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদে 🙁
জুলিয়াস সিজার
আর বিচার চাইও না।। 🙁