সন্মানীত দর্শক,বিরতীর পর আবারো ফিরে এলাম আপনাদের প্রিয় অনুষ্ঠান “একজন মফিজ এর সমসায়িক সাক্ষাৎকার” এ। আমরা কথা বলছিলাম সন্মানীত অতিথি মফিজ সাহেবের সাথে।

-আপনার বয়স কত?
-আরে ছাগলে কয় কি! তোর বয়স আর আমার বয়সতো প্রায় সমান।
-এইই কাট কাট….!!! কি হলো এটা? ক্যামেরা লাইট সব কিছু অন আর তুই কি না,,,কেমন সব জগণ্য ভাষায় কথা বলে যাচ্ছিস!
-অ এই কথা! সরি দোস্ত ভুলে গেছিলাম।..নে এবার শুরু কর।
আবারো মেক্যাপম্যান তার মেক্যাপটা দেখে নিলেন।লাইট ক্যামেরা সবগুলো সার্ভিস আবারো কর্নফ্রাম হল।এরপর এক দুই তিন স্টার্ড।
-প্রিয় দর্শক আপনাদের আর্শীবাদ দোয়ায় আমরা আবারো বিরতীর পর ফিরে এলাম “একজন মফিজ এর সমসাময়িক সাক্ষাৎকার” অনুষ্টান নিয়ে।আজও যথারিতী প্রশ্ন চলবে এ ছাড়াও আমার প্রশ্নোত্তর ফাকে ফাকে আজ থাকছে দর্শকদের জন্য সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ।দর্শকদের প্রশ্ন করতে ডায়াল করুন-00000000420।

তাহলে শুরু করছি-আজকের পর্ব।
-কেমন আছেন আপনি?
-ভাল আছি।
-আমাদের আজকের এ পর্বটি তা গত পর্বের শেষের অংশ থেকে শুরু করব নাকি নতুন কিছু প্রশ্ন দিয়ে করব ?

-না না,যা গেছে তা যেতে দেয়াই ভাল অনর্থক মায়া কান্না করে লাভ কি! ঘুমানো লোকদের জাগানো যায় কিন্তু ঘুমের ভান ধরে ঘুমিয়ে থাকা বিবেককে জাগানো যায় না। এই যে আমরা এক সময় ওয়াজ মাহফিল হলে কত দুর দুরান্তেই না চলে যেতাম।ও’মুক হুজুর আসবে,ভাল ওয়াজ নসিয়ত হবে,মন ভাল হবে,আত্মা শুদ্ধিতার সুযোগ পাবে ইত্যাদি মনে এক ধরনের পবিত্রতার চিন্তা আসত।
সে সময় এতো ঘন ঘন ওয়াজ মাহফিল হতো না,এখন যেমন হয় বিশেষ করে শীতলকাল এলেই দেশে ওয়াজ মাহফিলের হিড়িকঁ পড়ে যায়।দেশের প্রায় প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় মসজিদে মসজিদে এখন বলা যায় ওয়াজ মাহফিল নামক ধান্দার উৎসব চলে।
আপনি হয়তো বলতে পারেন-এসবতো পূর্ণ্যের কাজ তাহলে এ কাজটিকে আমি ধান্দার উৎসব বলছি কেন?
প্রথমতঃ আমি বলবো আশির দশক কিংবা তার আগ হতে নব্বই দশকে ওয়াজ মাহফিল হতো পুরো এক গ্রাম,বেশ কয়েকটি মসজিদ মিলিত হয়ে,বিশাল একটি মাঠে যেখানে ওয়াজ শুনতে ধর্মপ্রান মুসলমান কিশোর যুবক বৃদ্ধরা কঁনকঁনে শীতের হিঁমায়িত ঠান্ডায় গায়ে চাদর কিংবা মোটা কাপড় পড়ে,পায়ে হেটে জিঁকিরের সহিত দলে দলে গিয়ে পাটখরির/চট বা ছালার চাঁদরে ছাউনি বেষ্টিত বিশাল ওয়াজের ময়দানটি নিমিষেই লোকে লোকারণ্য হত।আরো অসংখ্য ভক্তপ্রান মুসলিম শীতের হিম সহ্য করে তাবুর বাহিরে দাড়িয়েই ওয়াজ শুনতেন।আর আশে পাশের বাড়ীগুলোতে নারী মুসলিমদের ভিরতো বলাই বাহুল্য।

কি বলেন আপনার অজ্ঞিতায় এ সব ঠিক কি না?
-হ্যা,আমারো এমন অসংখ্য স্মৃতি আছে।আমিও মাথায় টুপি আর পায়জামা পাঞ্জাবী পড়ে বাবার হাতটি ধরে চলে যেতাম কয়েক মাইল দূরে ওয়াজ শুনতে।সত্যিই সে সব স্মৃতিগুলো বড় মধুর ছিলো।
আবারো মফিজ বললেন।
-আর এখনকার সময়ের ওয়াজ মাহফিলের অবস্থা দেখলে আমরা কি দেখতে পাই! পাড়ায়-মহল্লায় ওয়াজের ব্যাবস্থা।পাবলিক শুনতে (ভিন্ন ধর্মের) না চাইলেও একেবারে কানের কাছে মাইক এনে দিবে।যদিও ওয়াজের প্যান্ডেল কয়েক মাইল দূরে তবুও তারা এতোটা দূরে মাইক লাগিয়ে শব্দ দোষনের কারনটা কি আমি ঠিক বুঝি না! এ ছাড়াও যদি ঐসব ওয়াজ মাহফিলের মুল প্যান্ডেলের ভেতরে অবস্থানরত ওয়াজ শুনার মুসল্লির সংখ্যা যদি আপনি দেখেন তবে দেখতে পাবেন প্রায় খালি ময়দান।তাহলে এতো দূর মাইক লাগিয়ে ওয়াজ করার ফজিলত কি? তারা কি মানে না যে,একটি দেশে অন্যান্য ধর্মের লোকদের নিশ্চিন্তে বসবাস করার নিশ্চয়তার কথা হাদিসেও আছে? এ ছাড়াও ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা সহ এ সব শব্দ দোষণ হতে মুমূর্ষ রোগীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। তাদের কি এই কমনসসেনসটুকুও কি নেই যে,এ রকম শব্দ দোষনে পক্ষান্তরে তারা মানুষের বিরক্তের কারন হচ্ছেন। সে জন্যই হয়তো হাদিসে ইসলামের প্রথম ও শেষ নবী বলে গিয়েছেন-মসজিদ যত পাকা হবে মুসল্লী তত কমবে বা কাচা রবে অথাৎ কোন কিছুতেই অতিরঞ্জিত কিছু করতে নেই,তাতে হিতের বিপরীত হয়।

মফিজ সাহেবের জল তৃষ্ণা পেল।তিনি সামনে রাখা টি টেবিল হতে এক গ্লাস জল গলার্ধকরন করছেন।

এই ফাকে এবার উপস্থাপক বললেন..
-যতটুকু জানি আজ কালকার অনেক ওয়াজ মাহফিলে বক্তা হুজুররা নাকি হেলিকপ্টার করে ওয়াজ করতে আসেন…।
গ্লাসের জলটুকু মফিজ পুরোটা গলায় ঢালার পূর্বেই উপস্থাপকের এমন কথা শুনে মফিজ হাসতে গিয়ে জল অনেকটা তার নাকে মুখে উঠে গেল।অলরেডি পোষাকে পড়া জল মুছতে মুছতে বলতে লাগলেন।
-শুধু কি তাই!ভাল বক্তা এতই কম যে তাদের একটি ওয়াজ মাহফিলের জন্য দাওয়াত দিতে হলে অগ্রীম অসহনীয় টাকাতো দেওয়াই লাগে আবার সিরিয়ালেও থাকতে হয়। অথচ পবিত্র কোরান ও হাদিসে স্পষ্ট লেখা আছে-ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা করা হারাম। মুলতঃ এই কারনে হয়তো মানুষের মনে আ্ল্লাহর হেদায়েত ঢুকে না আর মানুষও ধর্মের পথে তেমন একটা চলতে চায় না--নয়তো স্বাধীনের পর হতে এ যাবৎকাল যত ওয়াজ নসিয়ত হয়েছে তাতে বাংলার প্রতিটি ঘরে প্রতিটি লোকের মাথায় টুপি থাকত।আরেকটি বিষয় হল আপনার সূত্র ধরেই বলছি-এই যে ওয়াজ মাহফিলের ব্যায় তা পূরণ করবে কি ভাবে ? পূরণ করতে তারা ভাল দুএক জন কালেক্টসন বক্তা আনেন যারা মাহফিলের একটি সময়ে টাকা কালেক্টসন করেই মাহফিল শেষ করেন তাহলে বান্দাদের মনে হেদায়েত আসবে কোথা হতে? যেখানে টাকার গন্ধ কয় সেখানে শয়তানেরও বসবাস রয়।
আগের দিনের ওয়াজ মাহফিল আর এখনকার দিনের ওয়াজ মাহফিল এর মধ্যে রাত দিন পার্থক্য।ইসলাম প্রচারে এই যদি হয় চিত্র! তাহলে ইসলাম প্রচারের চেয়ে অপপ্রচারটাই বেশী হবে।পক্ষান্তরে আমাদের প্রিয় ধর্মটিই ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে।মনে রাখতে হবে ধর্ম প্রচারে,কোন জোর চলবে না,অন্য ধর্মকে কটুক্তি করা যাবে না,মানুষকে মানুষ হিসাবে ভাবতে হবে,যেন অন্যের বিপদে ঝাপিয়ে পড়েন,তাহলেই কেবল আপনার ধর্মের পরিধি বাড়বে-আর এসব আমার কথা নয় সব হাদিস কোরানের কথা।কিন্তু আমাদের দেশে দেখি এসব চিত্রের উল্টোরূপ।
আবারো উপস্থাপকের প্রশ্ন
-কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে ৯০% মুসলিম সেখানে মুসলিম কোন দলই দেশের জাতীয় ক্ষমতা আসতে পারে না কেন?
-ঐতো এতক্ষণ কি বললাম!আরো কিছু কারন আছে যেমন ধরুন-ক্ষমতা ভাগা ভাগির বিষয়টি। এদেশে বৃহৎ ধর্ম একটি আর লক্ষ্য করে দেখুন দেশে ইসলাম ধর্মীয় দল কয়টি ? কিন্তু কেন ? এই সব ইসলামী দল গুলো কি একত্রিত হয়ে একটি ইসলামী দল গঠন করতে পারেন না ? পারেন কিন্তু তা তারা কখনোই করবেন না! তাহলে দলের মাথা যে কমে যাবে।ক্ষমতা যষ প্রতিপত্তিতে ভাটা পড়বে..এখানে লোভ কাজ করে যার অবস্থান ইসলামের বিপরীতমুখী।আরেকটি বিয়ষে স্পষ্ট বলব ধর্ম নিয়ে যত চাপাচাপি করবেন ততই মানুষের অমঙ্গল বয়ে আসবে।
এই তো সেই দিন শান্তিপ্রিয় দেশ নিউজিল্যান্ডের মসজিদে প্রকাশ্যে ঘটে গেল ইসলাম ধর্ম বিদ্বেষী হত্যাজ্ঞ।এর পর শ্রীলংকায় ঘটে গেল গীর্জা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সিরিজ বোমা হামলা যার মৃত্যু সংখ্যা প্রায় ৩৫৯ পরে তা সংশোধিত হয়ে ২৫৩  জন।এখন লক্ষ্য করে দেখুন দুটো হামলাতে ধর্মের ছোঁয়া পাওয়া যায় তবে কোন ধর্মেই কিন্তু এমন হত্যাজ্ঞের অনুমতি নেই।

ধর্মীও বিদ্বেষী এ দুটো হামলাতে বাংলাদেশের বেশ কয়জন লোক নিহত হয়েছেন।সব চেয়ে হৃদয় বিদারক হল মাননীয় সাংসদ শেখ সেলিমের নাতি কিশোর জায়ান এর মৃত্যু।কলি ফুটতে না ফুটতেই ঝড়ে গেল।

এই যে এতো সহিংসতা এতো হত্যা এ সব তারা কোন ধর্মীও আদর্শে করেন!তারা মানুষকে মেরে আর কোন ধর্মকে প্রতিষ্টিত করতে চায়! অথচ ধর্মের সকল কিতাবেই স্পষ্ট লেখা আছে “জীব হত্যা মহা পাপ”।

পৃথিবী হতে সকল ধর্মীও বিদ্বেষিদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর এখনি সময়….বুঝাতে হবে পৃথিবীর বিপদগামী মানুষকে, একটাই পৃথিবী তার ধ্বংস হতে দূরে থকার কারনগুলোর একটি হল ধর্মন্ধতা-তাই "যার যার ধর্ম ও সকল প্রানীদের রক্ষার্থে-ধর্ম হউক যথা তথা-মানুষ হওয়াই বড় কথা"।

এর মধ্যে সরাসরি দর্শকদের প্রশ্ন করার টেলিফোন সেটে ফোন আসে।উপস্থাপক ফোনটি রিসিভ করতে ব্যাস্ত হলেন।
-একজন দর্শক আমাদেরকে ফোন করেছেন কথা বলবেন।আমরা তার ফোনটি রিসিভ করছি-হ্যালো,আসসালামুআলাইকুম, কে বলছেন? কোথা হতে বলছেন? আপনার পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন রাখুন।তবে টিভির ভলিউমটি কমিয়ে নিবেন।
-জি আসসালামুআলাইকুম আমি ওমুক তমুক জায়গা থেকে বলছি..আমি মফিজ সাহেবের সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছি।
উপস্থাপক অনুমতি দিলেন।
-জি কথা বলুন।
-আসসালামুআলাইকুম কেমন আছেন ভাইয়া?
-জি আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি, আপনিও ভাল থাকুন।বলুন কি জানতে চান?
-আচ্ছা আপনিতো একজন মুলতঃ চিত্রশিল্পী এছাড়াও আপনি এ যাবৎকাল বহু বই লিখেছে যেখানে গল্প কবিতা প্রচ্ছদ সবিই আপনি করেছেন।এ সব প্রকাশিত বইগুলোর মাঝে সমসাময়িক প্রকাশিত একটি বইয়ে দেশের আইন কানুন আর বিচারিক অব্যাবস্থাপনা নিয়ে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ ক্ষোভ কি কেবল এ সরকারের বেলায় নাকি দেশ স্বাধীনের এ যাবৎকাল আগত সকল সরকারের উপরই বর্ত্যায়?আর এই যে দেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার বিচারহীনতা সে সম্পর্কে কি কিছু বলবেন?

-ধন্যবাদ আপনাকে,খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন করেছেন।আমি চেষ্টা করব আমার অভিজ্ঞতার আলোকে খুব সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করতে।তবে….রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ষষ্ঠ বার্ষিকী পালন করা হচ্ছে...শুধু এই টুকুই এখন মনে রেখে ভাবুন।আর...??

এর মধ্যে আমন্ত্রীত অতিথি মফিজ এর মাইক এর শব্দ বন্ধ,ক্যামেরাও ক্যামেরাম্যান ঘুরিয়ে নিয়েছেন উপস্থাপক আবুল এর দিকে।
-জি দর্শক,.আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তরে আসবো তবে আরো একটি বিরতীর পর।সেই পর্যন্ত সাথেই থাকুন।

ক্যামেরা লাইট সব বন্ধ করে আবুল তার লোকদের এখানেই কিছুক্ষণ অবস্থান করার কথা বলে বের হবেন বাহিরে মনস্থির করে মফিজের কাছে গেলেন।
-দোস্ত! মাথাটা ঝিম ঝিম করছে, বাহির থেকে একটা বিড়ি খাইয়া আসি।
-এই শুন গু’ খাবি খা-আমার কোন সমস্যা নাই তয় সিগারেটে প্যাকেটে যে ছবি দেয়া থাকে “ধূম পান বিষ পান” সেই ছবিটা ভাল করে দেখে নিজের মনকে প্রশ্ন করিস ঐসব গু’খাওয়া কি ঠিক নাকি বে-ঠিক!
-ঠিক আছে তা দেখা যাবেনে,তুও চলনা?
-ঠিক আছে…চল।

আবারো আসছি.....

গত পর্বটি পড়তে চাইলে পড়তে পারেন-০১

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ