আমরা নিজেদের ঘরবাড়ী, শিল্প-কারখানা বা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুমোদিত একটি সুনির্দিষ্ট নকশা থাকে। থাকে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা এবং খরচের সুনির্দিষ্ট বাজেট। স্থাপনাটিকে বিভিন্ন উপায়ে এর বহুবিধ ও সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে সংশ্লিষ্ট সবাই। কিন্তু ঠিক তার উল্টো হতে দেখি যা সরকারী, জনসেবা, জনকল্যাণ এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের সময়। সরকারী, দানশীল বা সাধারণ মানুষের চাঁদা, দান বা অনুদান দিয়ে যে সমস্ত জনসেবামূলক বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি হয় সেখানে আমরা মোটেও সচেতন সতর্ক বা সজাগ থাকিনা। এক কাজকে বার বার ভেঙ্গেচুরে করি, অর্থের অপচয় করি, ক্ষমতার অপব্যবহার করি। জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বাধিক ব্যবহার উপযোগী করে গড়ি তুলি না। দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেদের খেয়াল খুশী, মর্জিমাফিক, দায়সারা বা অবহেলা নিয়ে কাজ করে। অনেকক্ষেত্রে এখানে ব্যাক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছা এবং স্বেচ্ছাচারিতাও যে ঘটে না তা নয়। নিজেদের বিবেক বুদ্ধি বিচার বিবেচনা প্রয়োগ করিনা যা নিজেদের বেলায় কখনো ব্যত্যয় ঘটে না। আমরা সামাজিক, ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় কাজে নিজেদের মেধা, বিদ্যাবুদ্ধি, দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক গাফেলতি করি। উদাসীন থাকি। অনেক সময় অবহেলাও করে থাকি। আমার সবাই জানি, ঘরের সিঁড়ির ব্যবহার হয় অল্প সংখ্যক মানুষের জন্যে কিন্তু জনসেবামূলক বা ধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচুর জনসমাগম ঘটে বলে নিজেদের ইচ্ছেমতো, খেয়াল খুশী মতো স্থাপনা নির্মাণ যুক্তিসংগত নয় মোটেও। এখানে অনুমোদিত নকশা থাকা আবশ্যক। কেননা এখানে বিশেষ করে মসজিদে একই সময়ে প্রচুর মানুষের চলাচল বা উঠানামা হবে সেটি আবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে যা একজন নকশাবিদের, স্থপতিরই সম্যক জ্ঞান আছে। পাড়ার একজন রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে একাজটি যদি করে থাকেন তবে তা হবে বিরাট বোকামি। প্রাসঙ্গিকভাবে চট্টগ্রামের মেহেদীবাগস্থ সিডিএ মসজিদের নির্মাণশৈলী, স্থাপত্য নিদর্শন, বিশাল সিঁড়ি সবকিছু মিলে একটা অনন্য স্থাপত্যের নিদর্শন যা ধর্মীয় স্থাপনা তথা অনেক মসজিদেই পরিলক্ষিত হয়না। অথচ আমরা নিজেদের বিবেক বুদ্ধি বিচার বিবেচনা না খাঁটিয়ে বা স্থপতি, প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করেই যেনতেনভাবে বা দায়সারাভাবে নিজেদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করি। নির্মাণের পর দেখা যায় কাজটি অনেক ক্ষেত্রেই সুষ্টু সুন্দর জনাসমাগম অনুযায়ী হয়নি। অথচ নিজের ঘর বা প্রতিষ্ঠান তৈরির সময় স্থপতি, প্রকৌশলীদের সাথে কত না পরামর্শ করি। নিজের টাকায় হলে যা হাজার বার চিন্তা করতাম এখানে তা না করে মানুষের সাহায্য, সরকারের দান, চাঁদা বা অনুদানের যথেচ্ছ অপব্যবহার করি, অর্থের অপচয় করি, ক্ষমতার বা দায়িত্বের অপপ্রয়োগ করি। করি মারাত্মক এবং অমার্জনীয় অবহেলা। মানবিক, সামাজিক, জনকল্যাণমূলক এবং ধর্মীয় দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালন করা নিজেদের আন্তরিক, নৈতিক এবং ধর্মীয় দায়িত্ববোধের মধ্যেই পড়ে। পাশাপাশি যাঁদের জন্যে এসব করা হচ্ছে প্রয়োজনে তাদেরকে এসব কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা যায় কিনা তাও চিন্তা ভাবনায় রাখা উচিৎ। কিন্তু আমরা সেই পথে খুব একটা হাটি না বা হাটতে চাই না। বরং আমাদের আমিত্ব, নিজেদের বড়ত্ব, অহমিকা, দম্ভ, ক্ষমতার দাপট প্রদর্শনে বা জাহিরে অনেককেই ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। সকলের মনে রাখা উচিৎ একালে না হলে পরকালে হলেও আপনাকে প্রতিটি অন্যায়, অনিয়ম, অপচয়, দায়িত্বে অবহেলা, প্রতিটি কর্মের জন্য অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। দয়া করে দেশ ও সমাজের কাজ করার সময় সংশ্লিষ্ট সকলের উচিৎ যে কোন স্থাপনা নির্মাণের সময় নিজের মনে করে দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ সতর্ক এবং সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ কারিগরি পরামর্শ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। আমাদের প্রত্যাশা সমাজসেবীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে জনকল্যাণমুখী স্থাপনা জনগণের সর্বোচ্চ ব্যবহারে ন্যায্য সুযোগ সুবিধার নিশ্চিত করতে কাজ করবেন এবং সকল প্রকার অপচয় অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে সচেষ্ট থাকবেন।

 

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ