আমকথন- ৩

তৌহিদুল ইসলাম ৮ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার, ০৮:৫৭:৫০অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৬ মন্তব্য

আমার সাদা মনে কাঁদা নেই, আমার আপনাদের কাছে লুকানোরও কিছু নেই। এ বছরে আমি আম নিয়ে ঠিক ব্যবসা করতে আসিনি, এসেছিলাম আপনাদেরকে অর্গানিক আমের স্বাদে তুষ্ট করার ক্ষুদ্র প্রয়াসে।

তাই খোলা মন নিয়ে সকলের কাছে জানতে চেয়েছিলাম-

সদ্য গাছ হতে পাড়া ভালো মানের এক মণ আম - 2000-2200/- হিসেবে 1 kg এর দাম = 55 /-

24 kg এর দাম- 24*55 = 1320 /-

প্যাকেজিং সেলাই সহ 24 kg প্লাস্টিক ক্যারেট = 220/-

কুরিয়ার প্রতিকেজি 20/- হিসেবে 24 kg কুরিয়ার খরচ = 480/-

মোট- 1320+220+480 = 2020/-

সে হিসেবে 24 kg তে প্রতি কেজির দাম 2020/24 = 84.166666666 টাকা।

আম বাগান থেকে ঘরে এবং ঘর থেকে কুরিয়ার অফিসে যাতায়াত খরচ কেজি প্রতি 10/- টাকা ধরে মোট আসে 94/- টাকা।

এতো গেলো একদম নিট খরচ হিসেব। এখন আমার নিজের মোবাইল বিল, শ্রমিকদের মাস্ক, জীবাণুনাশক, নেট বিল, চা, সিগারেট এগুলো সব সহ যদি আমি মাত্র পাঁচ টাকা লাভ করতে চাই তাহলেও আম কেজিপ্রতি আসে 99 /- টাকা।

যারা আম নিয়েছেন তাদের কাছে নিয়েছি 90/- টাকা প্রতিকেজি করে। আমি কি লাভে ছিলাম নাকি লসে ছিলাম ভাই?

লাভ করতে চাইলে আমার কি করা উচিত ছিলো বা কত করে কেজি ধরা উচিত ছিলো মানবিকতার খাতিরে বলে যান।

তাই যারা দাম বেশী বলেছিলেন তাদের অনুরোধ করেছিলাম দাম বেশী এটা বলার আগে উপরের হিসেবটা বুঝে নিয়ে একটু ভাবতে। বিনা লাভে সুস্বাদু আম খাওয়াচ্ছি তার জন্য ন্যুনতম একটা ধন্যবাদ পাওনা আছে আমার। অথবা যারা এরচেয়েও কম দামে দিচ্ছে আপনি তাদের কাছে নিন, সমস্যাতো নেই।

তবে গ্যারান্টি দিতে পারি সেই আম আর আমার পাঠানো আমের মধ্যে স্বাদের তারতম্য হয়েছিলো নিশ্চিত। আর আপনি নিজ চোখে ভালো আমের বাজার যাচাই করতে প্রয়োজনে নিজেই আসুন আমবাগানে, সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

পরিশেষে একটা কথাই বলবো, নতুন উদ্যোক্তা যারা আম ব্যবসায় আসেন তারা একবছর ব্যবসা করে বেশীরভাগই আর ফিরে আসেন না। এর কিছু কারন খুঁজে পেয়েছি-

* নতুনদের আমরা উৎসাহিত করিনা, কারন সদ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্য নিলে বিশ্বস্ততার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে যায়।

* আম সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাছাই, প্যাকেটিং এবং কুরিয়ার অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয় যা নতুন একজন উদ্যোক্তাকে ঝিমিয়ে তোলে। পুনরায় সে আর আমের সাথে জড়িত হতে চায় না।

* অনেককেই আড়ত থেকে আম কিনে পাঠাতে দেখেছি এবং এই আম বাগানের বাছাই করা আমের মত গ্রাহকের কাছে তুষ্টি অর্জন করতে অপারগ নিশ্চিত। ফলে গ্রাহক পুনরায় অর্ডার করেননি এবং উদ্যোক্তা নিরাশ হয়েছেন।

* আম ব্যবসায় লাভ সীমিত। কেজিতে ৫/৭ টাকা লাভ হয়। এরফলে বেশী লাভের আশাকারী অনেক উদ্যোক্তা এ ব্যবসাকে পরেরবছর আর গ্রহন করতে চান না।

* দক্ষ জনবলের অভাব।

* অনেকে না বুঝেই ব্যবসায় নেমে পড়েন যা উচিত নয়। ফলে লসের সম্মুখীন হন।

আম নিয়ে খুব পেরেশানিতে ছিলাম। আমাকে দিয়ে ব্যবসা ব্যাপারটা আসলে হবেনা। ব্যবসা করতে গেলে কিছু সময় দামদরের বিষয়ে কঠোর হতে হয় যা আমি পারিনা।

একজন ক্রেতার মুল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে জানার পূর্ণ অধিকার আছে। অথচ এই দাম বাড়ার বিষয়টি বলতে গেলে মাঝেমধ্যে চরম লজ্জা পাই। ফলে পূর্বের দামেই জিনিশ দিতে হচ্ছে অনেককে। ভাবি, দাম বাড়ার কথা বললে যদি আমাকে ঠকবাজ বলে! মরে গেলেও এ আমি শুনতে রাজি নই।

মানুষ হিসেবে মানবিক থাকাটাই আমাকে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভূতি দেয়। আর মানবিকতা হচ্ছে ব্যবসার অন্তরায় এবং এটাই বাস্তবতা। লস হয়নি ঠিকই কিন্তু লাভও করতে পারিনি।

এ আমি কেমন ব্যবসায়ী!!

(সমাপ্ত)

আমকথন- ২

 

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ