আজমির শরীফ (৪’থ পর্ব)

ইঞ্জা ৭ অক্টোবর ২০১৯, সোমবার, ০৭:২২:১৪অপরাহ্ন ভ্রমণ ২৭ মন্তব্য

আমরা যাত্রা শুরু করলাম রাজস্থানের বিখ্যাত শহর জয়পুর দ্যা পিংক সিটির উদ্দেশ্যে, আজ রাতটা আমরা ওখানেই থাকবো, ট্রাভেল এজেন্ট আমার জন্য ওখানকার এক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেছে।

ভারতের আয়তনে সবচেয়ে বড় রাজ্য রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর, রাজস্থান ভারতের পর্যটন স্থানগুলির একটিতে যুক্ত হয়েছে ভারতীয় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের তৃতীয় কোণ হিসেবে, জয়পুর দিল্লীর দক্ষিণ-পশ্চিমে ৩০০ কি.মি. দুরে, তাজমহল খ্যাত আগ্রা থেকে পশ্চিমে ২০০ কি.মি. দুরে অবস্থিত।
রাজস্থানের হিন্দু রাজাদের সাথে মোঘল সম্রাটদের অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল, রাজস্থানের রাজপুত যোদ্ধারা মোঘলদের জন্য জীবন উৎসর্গ করে যুদ্ধ করতো এবং রাজপুতরা তাদের যুদ্ধ বীরত্ব এবং সাহসিকতার জন্য পরিচিত ছিল, যে সম্পর্ক আকবরের সময় সবচেয়ে জোরালো ছিল ।

কিন্তু ভারতবর্ষের ষষ্ঠ মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমল থেকে এই সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে, কারণ তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বৈরী ভাব বজায় রেখেছিলেন, তিনি রাজপুত রাজা জয় সিংহকে মোগলদের শত্রু বিবেচনা করে তাঁকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন, যোদ্ধা ও জ্যোতির্বিদ মহারাজা জয়সিংস দ্বিতীয় ১৭২৭ সালে তাঁর রাজধানী আমের থেকে সমতলভূমি জয়পুরে সরিয়ে নিয়ে আসেন।
বিদ্যাধর ভট্টাচার্য নামের একজন বাঙ্গালী স্থপতি জয়পুর শহরের ডিজাইন তৈরী করেন প্রচীন হিন্দু স্থাপত্য ও শিল্প-শাস্ত্রের অবলম্বনে, তাঁর স্থাপত্য বিদ্যার বলে নগর প্রাসাদ এবং পৃথিবীর বৃহত্তম পাথরের মানমন্দির নির্মিত হয়, এটি ভারতবর্ষের সবচেয়ে প্রাচীন পরিকল্পিত নগরী ।

১৮৭৬ সালে প্রিন্স অব ওয়েলস এবং রানী ভিক্টোরিয়া একটি সফরে ভারত সফর করেন, গোলাপীকে আতিথেয়তার রঙ বিবেচনা করে জয়পুরের মহারাজা রাম সিং পুরো শহরের বাড়িঘর গোলাপী রং করে অতিথিদের স্বাগত জানান, একারনেই জয়পুরকে পিংক সিটি বলা হয়, জয়পুর শহরের পুরাতন আংশের প্রতিটি ঘরবাড়ি এখনো গোলাপি। - সূত্রঃ গুগল।

সন্ধ্যার আগে আগে আমরা জয়পুর শহরে পোঁছে গেলাম, শহর একটু গিঞ্জি ধরণের, যেন পুরান ঢাকার অলিগলি।
আমার গাড়ী এগিয়ে চলেছে শহরের ভিতর দিয়ে, যেদিকে দেখি সব গোলাপি রঙের বাড়ী ঘর, বেশিরভাগ পুরাতন বিল্ডিং যা রাজারাজরাদের বানানো।
ড্রাইবার বললো, জনাব সামনে দেখুন।
আমি সামনে তাকিয়েই হা হয়ে গেলাম, সামনে এ মাথা থেকে ও মাথা (ডানে বামে) দেখায় যায়না, এ এক বিশাল বিল্ডিং, ছয় সাত তলা হবে হয়ত, এর নিচ এবং মাঝ বরাবর রাস্তা চলে গিয়েছে, সেই পথ দিয়ে আমরা বিল্ডিংটা পেরিয়ে এলাম।

ড্রাইভার বললো, এই বিল্ডিংটার নাম হাওয়া মহল, এইখানে মহারানি থাকতেন তার সখি ও দাসীদের নিয়ে, যে রাস্তা দিয়ে আমরা হাওয়া মহল পেরিয়ে এলাম, সেই রাস্তায় এক সময় সম্রাট আসা যাওয়া করতেন হাওয়া মহলে।

আমাদের গাড়ী এক রাজবাড়ির গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে ড্রাইভার বললো৷ এইটা আপনার হোটেল।
আমি প্রথম দেখাতেই না করলাম, এই পুরানো রাজারাজদের বিল্ডিংয়ে আমি থাকতে রাজি নই।
ড্রাইভার বললো, এইটা তিন স্টার মার্কা হোটেল।
আমার এক কথা, আমি এই হোটেলে থাকবোনা, অন্য ভালো হোটেল দাও, দরকার হলে ফাইভ স্টারে থাকবো।
ড্রাইভার বাধ্য হয়ে দিল্লি ট্রাভেল এজেন্টের সাথে কথা বলে নিয়ে আমাকে বললো, জনাব আপনাকে ফাইভ স্টার হোটেলে নিয়ে যাবো কিন্তু বারতি ২০০০ রুপি আপনাকে দিতে হবে।
আমি রাজি হয়ে গেলে আমাকে নিয়ে চললো ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে।

........ চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ