আকর্ষণীয় ও উত্তেজক পোশাক পড়া মেয়েটা

Yousuf Rana ১২ নভেম্বর ২০১৩, মঙ্গলবার, ০৮:৪২:৪৪অপরাহ্ন বিবিধ ৭ মন্তব্য

সবাইকে পড়ে দেখার অনোরোধ রইল

আকর্ষণীয় ও উত্তেজক পোশাক পড়া মেয়েটা ৮ নাম্বার
বাসে প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে উঠলো। বাসে কিলবিল
করা অসংখ্য মানুষের মাঝে একটু জায়গা করে দাঁড়ালো। তার
ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে ২ টা yoo yoo টাইপের কলেজ
বয়।
ইচ্ছা করে করে গায়ে হেলে পড়া, নানারকম
উল্টা পাল্টা কথায় কান গরম হচ্ছে মেয়েটার। কিন্তু
কিছু বলার উপায় নেই। কারণ সরাসরি তো তাকে কিছু
বলছেনা!
একটা পর্যায়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একজন মেয়েটার
কাঁধে টোকা দিলো- এই যে আপু শুনছেন?
মেয়েটা তাকালো তার দিকে। কি বলতে চাও?
- মানে, আমার বন্ধু না আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছে!
আপনি একটা চরম মাল!
মেয়েটা হকচকিত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে বললো-
তোমরা কি জানো, আমার ছোট ভাই তোমাদের বয়সী?
জুতা দিয়ে ২ গালে ৪টা বারি খেতে চাও? বেয়াদব
কোথাকার!
ভাবছেন, আমি কি নিয়ে লিখা শুরু করলাম হঠাৎ!
আসলে হঠাৎ নয়, অনেকদিন ধরেই
ব্যাপারটা নিয়ে লিখবো বলে ভাবছিলাম।
আপনারা নিশ্চয়ই ক্লিয়ার শ্যাম্পুর ঐ বিজ্ঞাপন
টা দেখেছেন! বরফি খ্যাত
অভিনেত্রী ইলিয়েনা ডি ক্রুজের সেই বিজ্ঞাপনটি!
যেখানে ডি ক্রুজ বলছেন-
আমি জানি আপনি আমাকে ফলো করছেন, আমার শর্ট,
মেকাপ……আর ইম্প্রেশন জমানোর মতো সব কিছু! ইভেন
dandruf. এরপর আরও অনেক কথা বলে। বিজ্ঞাপনের শেষ
মেসেজটা এরকম- যখন কিছুই লুকানোর থাকেনা তখন অনেক
কিছুই থাকে দুনিয়াকে দেখাবার!
এখানে ২টা প্রশ্ন আসে-
১. নারীর মধ্যে কি কিছুই লুকানোর নেই?
২. দুনিয়াকে নিজের সব কিছু দেখানোর কি প্রয়োজন?
একটা বিজ্ঞাপন একটা সমাজের অনেক বাস্তব অবস্থার
প্রতিচ্ছবি। ক্লিয়ার ব্যবসা করছে বাংলাদেশে।
ভ্যাটসহ পণ্য কিনছে, কিনবে এদেশের জনগণ।
তাহলে কেন ভিনদেশী মডেল দিয়ে আমাদের প্রথা বিরুদ্ধ
কথা দিয়ে সাজানো এই বিজ্ঞাপনের এমন ঢালাও
প্রচারণা?
তাও, বিজ্ঞাপনটির শেষ মেসেজগুলো কি ভয়াবহ! কিছুই
নাকি লুকানোর নেই, তাই সব কিছুই
দুনিয়াকে দেখাতে হবে।
প্রাচীনকাল থেকেই একটা প্রবাদ সমাজে বিদ্যমান।
লজ্জাই নারীর ভূষণ।
লজ্জা বলতে নিজেকে পাবলিক প্রোপার্টির মতন
প্রদর্শন থেকে দূরে রাখাকেই আমি বুঝি।
আসলে আপনি যখন কিছুই না লুকানোর সংকল্প করেন,
তাতে আপনার আল্টিমেট লাভ কি হয়?
আপনার লাভ একটাই সেটা হলো প্রশংসা কুড়াতে পারেন
সকলের। যদিও এই প্রশংসা আপনার নয়, আপনার
সৃষ্টি কর্তার প্রাপ্য।
আর বাকিদের কী লাভ জানেন?
এই যে ব্যবসা সফল বিজ্ঞাপন
দিয়ে আপনাকে পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে। সেই পণ্য
আপনিই কিনছেন, হাজার টাকার মেকআপ
গায়ে মেখে ওনাদেরই আবার বিনোদন দিচ্ছেন।
এতে আপনার কোনো লাভ কি আসলে দেখতে পান?
কিছুদিন আগে ফেসবুকে এক পেইজ দেখলাম, যার
অ্যাডমিনের কাজ একটাই। বাসে রিক্সায় মাঠে ঘাটে সব
জায়গায়ই যতো সুন্দর নারী আছে, তাদের শরীরের বিশেষ
কিছু পার্টসের ছবি তোলা। হুম!
এটা রাস্তা ঘাটে চলা ফেরা করা সাধারণ মহিলাদের
চিত্র, বাংলাদেশেরই বিভিন্ন এলাকার। একবার ভাবুন
তো, আপনার অঙ্গ প্রতঙ্গ কেউ
মোবাইলে বা কম্পিউটারে জুম করে দেখছে আর
মজা লুটছে কেমন লাগে তখন?
জনাব হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের
মেয়েদের দেখলে চুইংগামের মতো চিবাতে ইচ্ছে করে!
একজন সুশীল, শিক্ষিত শিক্ষকের যদি এহেন
বাজে ধারণা আর খায়েশ করে মেয়েদের দেখলে;
তাহলে একটা রিক্সাওয়ালা কিংবা মেথরের
কি ইচ্ছা করে একবার ভাবুন তো দেখি! আর আপনার সাজ
সজ্জা নিত্যদিন কারা দেখছে বিনা পয়সায়?
রিকশাওয়ালা, মেথর, মুচি, দোকানদারসহ সমাজের সবাই।
নারী যদি পর্দায় ঢুকে যায়, ক্ষতি হয়
ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের। কারণ, তখন
তারা মানুষকে দেখানোর জন্য গাদা গাদা লিপস্টিক নেল
পোলিশ, ফেসপাউডার কিনবে না।
না কিনলে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করতে পারবেনা,
শোবিজে বিজ্ঞাপন বানানো হবেনা, মডেল
কন্যারা পড়ে যাবে মহাবিপদে।
ইসলাম আপনাকে কত সম্মানিত করেছে দেখুন। ইসলাম চায়
নারী শালীনতার মধ্যে থাকুক। যাতে কেউ তাকে পথে-
ঘাটে কটু দৃষ্টিতে না দেখে। বাজে কথা না বলে, টিজ
না করে! ছোট ভাইয়ের বয়সী ছেলেরা যাতে ‘মাল’
বলে অপমানিত না করে। ইসলাম চায় নারীকে যেন
যে সে না দেখে। স্বামী ও যদি নারীর সুষমা ভোগ
করে তাহলেও তাকে আগে মোহরানা আদায় করতে হবে।
কারণ নারী মায়ের জাতি! নারী এতো সস্তা নয়
যে যে খুশী সে চুইংগামের
মতো চিবোতে চাইলে চিবোতে পারবে।
ইদানিং একটা সুর উঠেছে যে- বোরখা বা হিজাব
পড়ে কি লাভ? ইভটিজিং তো বন্ধ হয় না!
এটার পিছনেও নারী লোভী মিডিয়ার হাত। কারণ, এক
জায়গায় যখন রব উঠে যে, অমুকের বিরিয়ানি খেতে খুব
মজা। তখন সে খাদ্য ঢাকা থাকুক আর খোলা, তার স্বাদ
সবাই পেতে চায়।
যারা অশ্লীলভাবে চলেন, কিছুই না লুকানোয় বিশ্বাসী,
তাদের কাজকর্ম আর ধ্যান ধারণার ভুক্তভোগী হয় আপামর
নারী সমাজ।
আমি ক্লিয়ারের এই বিজ্ঞাপনের তীব্র
বিরোধিতা করে বলবো- যখন কিছুই দেখানোর থাকেনা,
তখন অনেক কিছুই থাকেই নিজের মতো লুকাবার।
সবচেয়ে অবাক বিষয় এটাই যে, ক্লিয়ার
একটা খুশকিনাশক শ্যাম্পু! কিন্তু মাথা যদি না ঢাকা হয়,
মানে চুল যদি না লুকানো হয়, খুশকির সম্ভাবনা আরও
১০০ গুন বেড়ে যায়। এটা আমার কথা না, জগৎবিখ্যাত
স্কিন স্পেশালিষ্টদের কথা। কিন্তু দুনিয়াকে সব কিছু
দেখাবার এই ঢালাও প্রচারে চুলের ক্ষতির এহেন বানী,
একটা খুশকিমুক্ত করার শাম্পোর জন্য কি শোভা পায়?
বরং, নারীদের চুলে খুশকি বাড়ানোকে উৎসাহিত করার
দণ্ডে জরিমানা করা উচিৎ এই প্রতিষ্ঠানকে।
কিছুই না লুকানোর শিক্ষা এ দেশের
নারী সমাজকে দিবেন না দয়া করে। আপনারা তো সেই
সুসভ্য দেশের নাগরিক যে দেশে চলন্ত বাসে নারী ধর্ষিত
হয়ে মৃত্যু বরণ করে! আপনারা কিছুই লুকান না! তাই
আপনাদের দেশের পুরুষদের পশু বৃত্তির
কোনো সীমা পরিসীমা নেই। কিছুই না লুকানোর
শিক্ষাটা না হয় আপনাদের নারীদের জন্যই তুলে রাখলেন!

( copy )

0 Shares

৭টি মন্তব্য

  • খসড়া

    আকর্ষণীয় ও উত্তেজক পোশাক এই কথাটির বিশ্লেষন করুন। তার পর অন্যান্য বিষয় আলোচনা করা যাবে।

    নারী র পোষাকের চিন্তা না করে নিজেদের মননশিলতার বিকাশ জরুরী।

  • মা মাটি দেশ

    মনে হয় ভাইজান ডিজিটাল চাননা।পর্দা হলো যার ব্যাক্তিগত।কিছু কিছু কথার সাথে একমত আবার কিছু কথা আছে তর্কের আর হুমায়ুন আজাদ স্যারকে নিয়ে যা বললেন তার প্রুভ কিন্তু দেখাননি।যাই বলবেন তার যথাযত প্রুভ থাকা বাঞ্জনীয় নয়কি?ইভটিজিং ভাল লেগেছে।চালিয়ে যান সাথে আছি।

  • লীলাবতী

    আমাদের দেশের নারীরা এমন কোন উত্তেজক পোষাক পরিধান করেন না যে ছেলেদের এধরনের অসভ্যতা করতে হবে। পোশাকই যদি সব কিছু হয় , তবে মাদ্রাসার মেয়ে ধর্ষিতা হয় কেন ? কেন শিশু ধর্ষিতা হয় ? একজন শিশু উত্তেজক পোশাকের কি বুঝে ? নিজেদের চোখের পর্দা করুন , সংযমী হোন আগে । নিজেদের দোষ মেয়েদের উপর চাপাবেন না ।

  • জিসান শা ইকরাম

    লীলাবতী বলেছেনঃ আমাদের দেশের নারীরা এমন কোন উত্তেজক পোষাক পরিধান করেন না যে ছেলেদের এধরনের অসভ্যতা করতে হবে। পোশাকই যদি সব কিছু হয় , তবে মাদ্রাসার মেয়ে ধর্ষিতা হয় কেন ? কেন শিশু ধর্ষিতা হয় ? একজন শিশু উত্তেজক পোশাকের কি বুঝে ? নিজেদের চোখের পর্দা করুন , সংযমী হোন আগে । নিজেদের দোষ মেয়েদের উপর চাপাবেন না । — একমত

    কোথাও থেকে কপি করে এখানে পেস্ট করার পূর্বে এইচটিএমএল এ ক্লিক করে পেস্ট করবেন। তাহলে আর লেখার লাইন গুলো এমন কবিতার মত দেখাবে না ।

  • শুন্য শুন্যালয়

    যা বলার তা আগেই সবাই মন্তব্য করে দিয়েছেন… প্রশ্ন আপনার কাছে, আরব মেয়েগুলো কেনো ধর্ষণের শিকার হচ্ছে ? একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে এতো কিছু বিশ্লেষণ… একটা লুঙ্গির বিজ্ঞাপনেও মেয়েদের ব্যাবহার করছে, মেয়েদের এভাবে ব্যবহার নিয়েই বা আমরা কয়টা প্রতিষ্ঠান কে দায়ি করছি… নিজেদের শুদ্ধতা সবার আগে …

  • "বাইরনিক শুভ্র"

    আপনি বিজ্ঞাপনের বিরোধিতা করেছেন খুব ভালো কথা । করতেই পারেন । কিন্তু বিরোধিতা করতে গিয়ে যে বিষয়গুলো সামনে নিয়ে এসেছেন তার বিরোধিতা প্রতিটা বিবেকবান মানুষেরই করা উচিৎ ।

    ১। আপনার লেখায় আপনি বুঝাতে চেয়েছেন মেয়েদের বিশেষ অঙ্গ অনাবৃত থাকলে পুরুষ রা সেদিকে তাকিয়ে থাকে । তাহলে সমস্যাটা পুরুষের । পুরুষদের আত্মসুদ্ধি নিয়ে তো একটা কথাও এখানে নেই ! কেন ???? এবং সেটাই বেশি জরুরি কিনা ????

    ২। “আকর্ষণীয় ও উত্তেজক” পোশাক বলতে আসলে কি বুঝালেন ?????

    ৩। বিজ্ঞাপনে “কোন কিছুই লুকিয়ে রাখা যায় না” এর দ্বারা আপনি কিভাবে ধরে নিলেন দেহের কথা বুঝানো হয়েছে ????

    ৪। বাসের যে ঘটনা তুলে ধরলেন তাতে মেয়েটার দোষ কতটা আর আমাদের পুরুষবাদী সমাজের প্রতিনিধি দুটি কলেজ ছাত্রের কতটা ????

    ৫। হুমায়ূন আজাদের মত এক নারীবাদী লেখকের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, কিন্তু এর আগে বা পরের লাইনগুলি কি আপনি পড়েছেন ???? একটা লাইন দিয়ে একজন মানুষ কে বিচার করা কি ঠিক ????

    আপনি আশাকরি বিষয়গুলো পরিস্কার করবেন । আপনার মানসিকতা সম্বন্ধে মন্তব্য করার ইচ্ছা ছিল । কিন্তু ব্যাক্তিগত আক্রমণে গেলাম না ।

  • নীলকন্ঠ জয়

    https://www.sonelablog.com/archives/6593

    ধর্ষণ রোধে পুরুষের চোখের পর্দার বিকল্প আর কিভহু নেই। অন্যকে সামলানোর আগে নিজেকেও সামলাতে হবে। বোরখা পরা মেয়েরাও ইভ টিজিং এর শিকার হয়, ধর্ষনের শিকার হয়। কেন???

    উপরের লিঙ্কের লেখাটি পড়ে দেখার আমন্ত্রণ।।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ