প্রিয় রুদ্র,
তোমার জন্মদিনের শেষ প্রহরে এসে বললাম “শুভ হোক তোমার জন্ম, শুভ জন্মদিন”।
আমি তসলিমা আপার মতো কবিতা না কথা কোনটাই গুছিয়ে লিখতে কিংবা বলতে পারি না কিন্তু আজ তোমাকে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে ।
তোমার সাথে আমার চেনা-জানা হয়নি কিন্তু কয়েকটা দিন কিংবা বছর যাবত আমি তোমার লেখার প্রেমে পরেছি। কাঠ ফাটা রোদে ঝুপ করে বৃষ্টি নামার নাম তুমি, আমি জানি না “এ কেমন ভ্রান্তি আমার” । তুমি আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে বলেছিলে কিন্তু আজকাল প্রেমিকরা তা বলে না , তারা চিঠি পড়া ভুলে গেছে , তারা কবিতার ভাষা ভুলে গেছে , তারা বলে “ভালবাসার সময় তো নেই” , আজ তোমার মতো কেও নেই তাদের প্রেম শেখানোর জন্য ।
তুমি আজও “আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে”র মতো নিছক প্রেমিকার মন জুরে আছো । তুমি এই জগৎসংসার ছেড়ে বিধাতার প্রিয় হয়েছ, তুমি এতো অভিমানী এমন করে এতোটা সময় রেখেই চলে যাবে তা আমি আজও ভেবে পাই না । জানো, যখন তোমার আর তসলিমা আপার প্রেম কাহিনী গুলো পড়ি তখন জানি না কেন আমার বড্ড হিংসে হয় ।
আজ আমারও প্রেম আছে, তুমি যেমন তসলিমা আপার নাম “সকাল” দিয়ে ছিলে সেও আমাকে “নাগরিকতমা” নাম দিয়েছে, এখন তোমাদের মতো আমারও তোমার সেই নীলক্ষেত, শাহবাগ, পরীবাগ, লালবাগ চোষে বেরাই । তোমাদের মতো আমি আর আমার প্রেমিক যা ইচ্ছে তাই করি , আমরা বৃষ্টি নামাই আবার সবুজ ঘাসের উপর কুসুম রোদের খেলা করাই ।
জানো আজও “বাতাসে লাশের গন্ধ” ভেসে আসে তারা এখনো শান্ত হইনি। ধর্মের নামে তারা যা ইচ্ছে করে বেরাচ্ছে , আমি বলবো তোমার কথাই সত্যি “আফিম তবুও ভালো , ধর্ম সে তো হেমলক বিষ” ।আজও আমি “অবেলায় শঙ্খধ্বনি” শুনতে পাই । এখন আর কারো চোখে আগামীর স্বপ্ন খেলা করে না,আমার মনে আছে তুমি বলেছিলে তোমার মৃত্যু যেন মিছিলে হয় , আমি বলবো আজ এতটা সাহসী হাতে গোনা কয়েকজন আছে মাত্র ; এখন আর কেউ “আগামীর স্বপ্নে মুগ্ধ বুনে যাবো সমতার বীজ এক গ্লাস অন্ধকার হাতে” নিয়ে বসে নেই । খুব কষ্ট নিয়ে বলতে হচ্ছে তোমার সময় “শ্রম আর প্রশান্তির কথা ছিলো সুবিনয়” আর এখন এসব শুধুই স্বপ্ন কারণ সবাই শ্রম ছাড়া প্রশান্তি চাচ্ছে ।“মনে পড়ে সুদূরের মাস্তুল” এর কথা গুলো কিন্তু আজও “মানুষের মানচিত্র ১” হয়নি ।
এতো হতাশা আর অস্থিরতার মাঝে যদি তুমি ফিরে আসতে তাহলে “মাধবীর অবিশ্বাস্য স্মৃতি” শুনে নিতাম তোমার কাছ থেকে , তোমার হাতে “ফুলের কৃষ্ণপক্ষ” না দিয়ে এই নগরের কোন এক উচু “দুঃস্বপ্নের দালানকোঠা”র ছাদে একসাথে পা ঝুলিয়ে বসে শুরু করে দিতাম “পৃথিবী বানাবো উল্টো ঘুড়ি” কিন্তু তুমি বড্ড অভিমানী । যাই হোক তুমি “দূরে আছো দূরে”ই থাকো , কাছে আসলে হয়তো আমার প্রেমিকের কপাল পুড়বে । এই ভেবে খুশি হই কারণ তুমি বলেছিলে “চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়” ।
“অন্তরঙ্গে ধাবমান আমি আমাকে”বলি ,
তুমি বেঁচে আছো মনে- প্রাণে ,
থাকবে চঞ্চল অন্তরে চিরকালই।
অনেক কথা বলে ফেললাম , ভাবছি একদিন মিঠেখালি তে যাবো তোমার অভিমানী ঘর আর “অভিমানের খেয়া” দেখতে , কতটা অভিমান নিয়ে ঘুমিয়ে আছো নিজ চোখে দেখে আসবো ।
চিঠিতে কোন ভুল হলে মনে কিছু নিয়ো না , ভালো আছি ভালো থেকো ;ওপাড়ে বসে আমার ভালোবাসা নিও ।
ইতি
তোমার নাগরিকতমা

(শ্রদ্ধেও কবি ও গীতিকার "রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ" এর প্রতি আমার লেখা ছোট ভাঙা চিঠি)
- গালিবা ইয়াসমিন
(১৬/১০/২০১৭)

0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ