২০০৭ সালের কথা, ঢাকায় চলে এলাম নিজ প্রিয় শহরকে বিদায় জানিয়ে, ভাই মেঝ জন থাকে ক্ষিলখেতের কনকর্ড লেকসিটির এক এপার্টমেন্টে, সেই রিসিভ করে নিয়ে এলো তার বাসায়, মাস্টার বেডরুমে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে আমার, রুমে টিভি থাকায় আমার বেশ সুবিধা হলো, রাতে ডিনার সেরে কিছুক্ষণ গল্প করে শুয়ে পড়লাম, সাধারণত আমি একা রুমে থাকিনা, বিদেশে বা দেশের অন্য সিটিতে একা গেলে রুমের বাতি জ্বালিয়ে রেখে ঘুমায় কিন্তু এইখানে পাশের রুমে ছোট ভাই আছে বিধায় বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম, টায়ার্ড থাকাতে এক ঘুমেই রাত শেষ, সকালে ঘুম থেকে উঠলাম সকাল দশটায় তাও ছোট ভাই ডেকে দেওয়ায়, ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে বেড়িয়ে গেলাম এক বন্ধুর অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
বন্ধুর সাথে দেখা করে বিকেলে ফিরে এলাম, ছোট ভাই ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে রেখেছিলো, সেইটা দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলাম, ছোট ভাই বাসায় ফিরেনি এখনো, আমি ফ্রেস হয়ে টিভি নিয়ে বসে গেলাম, সন্ধ্যার আগেই ভাই ফিরে এলো, বললো রেডি হয়ে নিতে, যাবে শিয়া মসজিদের ওখানে, রেডি হয়ে বেড়িয়ে গেলাম, শিয়া মসজিদের ওখানে ওর কিছু বন্ধুও যোগ দিলো আমাদের সাথে, কাবাব পরোটার অর্ডার দিয়ে সে গাড়ীতে উঠে বসলো, জিজ্ঞেস করলো রাতে ঘুম হয়েছে কিনা, কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো থাকতে?
আমি জবাবে বললাম, বা কোন সমস্যা নেই, তোর ফ্ল্যাটটা খুবই সুন্দর।
ওর বন্ধুর সাথে কাজ করে ও, এই জন্য বন্ধুই থাকতে দিয়েছে এই ফ্ল্যাটে।
রাতে ফিরে এসে কিছুক্ষণ টিভি দেখলাম এক সাথে, ভাই বললো কাল সে চট্টগ্রাম যাবে, চার পাঁচদিন থাকবে সেখানে, আমি একা থাকতে পারবো কিনা?
আমি হাঁ বলায় সে অবাকই হলো যেন!
একটু পর ঘুমাতে গেলাম।
পরদিন সকালে ছোট ভাই বেড়িয়ে যাবে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে, যাবার আগে বলে গেলো রুমে থাকতে অসুবিধা হলে আমি যেন ওর রুমে থাকি।
ও যাবার পরদিনই আমার সেঝ খালার ছেলে রাশেদ (আমি খুঁজেছি তোমায় মাগো গানটি সেই গেয়েছিলো এনটিভির প্রোগ্রামে) এসে হাজির, ভাইয়ের রুমেই সে থাকলো, সেদিন রাতে ঘুমাচ্ছি আমি হটাৎ ঘুমের মাঝেই টের পেলাম কেউ আমার বুকে চেপে বসে গলা চেপে ধরেছে, আমি নিশ্বাস নেওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করছি, মনে মনে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করেছি, আমার সারা শরীর ঘেমে নেয়ে উঠলো, বুঝতে পারছি গলার উপর চাপটা কমে আসছে, আমি আরো জোড়ে জোড়ে সুরা কালাম পড়ছি, হটাৎ আমি জেগে উঠলাম, খেয়াল করলাম এক সাদা পাঞ্জাবি যেন দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেলো, দ্রুত উঠে বাতির সুইচ অন করে দিলাম, এইদিকে আমি থরথর করে কাঁপছি, পুরা শরীর আমার ভিজে আছে ঘামে, একটু পরেই ফজরের আজান শুরু হলো।
সকালে উঠে আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করে রাশেদকে ডেকে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করলাম, ব্রেকফাস্ট শেষে রাশেদকে রেখে আমি বেড়িয়ে গেলাম বন্ধুর অফিসের উদ্দেশ্যে, সন্ধ্যায় ফিরে দেখি রাশেদ নেই, কিচেনের চুলা জ্বলছে যার উপর গরম পানির হাড়ি পুরছে, আমি মনে মনে বকলাম রাশেদকে এমন পাগলামির জন্য, রাশেদ রাতেই ফিরে এলে ওকে এইভাবে চুলা জ্বালিয়ে রাখার কারণ জিজ্ঞেস করায় বললো ভুল হয়ে গেছে তার।
এর কয়েকদিন পর চট্টগ্রাম গেলাম আমি, আমি ফ্রেস হয়ে ড্রয়িং রুমে সবার সাথে বসে গল্প করছি এই সময় আমার ছোট খালাম্মা বললো, কিরে তুই তো একা কোথাও থাকিসনা, ঢাকায় কিভাবে থাকিস, তোর ভয় করেনা?
আমি হেসে বললাম, সময়ে ভয়ডর ত্যাগ করতে হয়, তখন দেখি মেঝ ভাই, আম্মা, খালাম্মা সহ সবাই চোখাচোখি করছে, এতে আমার সন্দেহ হলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন কি হয়েছে?
ওরা দেখলাম বিষয়টা এড়িয়ে অন্য কথায় চলে যাচ্ছে, তখন আমার আরো সন্দেহের উদ্রেক হলে আমি খালাম্মাকে চেপে ধরলাম, কি হয়েছে বলতেই হবে আমাকে, নাহলে তো আমার নিজেরই সমস্যা হতে পারে।
তখন মেঝ ভাই যা বললো তাতে আমার রক্ত হিম হয়ে গেলো, ঐ ফ্ল্যাটের আসল যে মালিক উনার ছেলে সেখানে আমার রুমটাতেই থাকতো যে কিনা সেই রুমের যে ফ্যানের বাতাস খেয়ে আমি ঘুমায়, সেই ফ্যানেই রশি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো, ছেলেটির পা ফ্লোরে থাকার কারণে দুই পা তার দুই হাত দিয়ে টেনে ধরে রেখেছিলো।
তখন আমি সবাইকে খুলে বললাম আমার সাথে কি হয়েছিলো এবং রাশেদ কেন চুলায় আগুণ জ্বালিয়ে রেখেছিলো তাও বুঝতে পারলাম।
এর পরেরবার যখন ঢাকায় গেলাম তখন ঐ বাসায় তো গেলামই না, উল্টো নিজে বাসা ভাড়া করে অন্য এলাকায় উঠলাম।
সমাপ্ত।
২৪টি মন্তব্য
মায়াবতী
ও আল্লাহ গো কি শুরু করছেন আপনে ইঞ্জিন ভাই! ভয়ে আমার কলিজা শুকায় গেছেগা জানেন। আমি ও কোনো দিন একা থাকতে পারি না, এমন ভয়ংকর গল্প শুনাইলে তো আমি আর সারা রাত ঘুমাইতে ই পারমু না ডরে। আমি কিন্ত ভাবি নাই আপনি এমন গল্প ফেঁদে বসেছেন, রহস্য দারূণ উপভোগ করে ই পড়েছি। ভয় পেলে ও গল্প কিন্ত চমৎকার লেগেছে। (y)
ইঞ্জা
আপু এ গল্প নয়, আমার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা।
তৌহিদ
দাদা জীবনে এমন কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যার কোন ব্যাখ্যা খুজে পাওয়া যায়না। সুন্দর সাবলীল ভাবে এমন বর্ননা, সত্যি পড়ে ভালো লেগেছে। শুভকামনা রইলো।
ইঞ্জা
খুবই সত্য বলেছেন ভাই, কিন্তু এখনো আমি ভয়ে কুকড়ে যায়।
ছাইরাছ হেলাল
গল্পটি গল্প হলেও ফেঁদেছেন বেশ!!
চালু থাকুক, লেখা লেখি।
ইঞ্জা
জ্বি না ভাইজান, এ গল্প অবশ্যই নয়, আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি অল্প পরিসরে তুলে ধরলাম আপনাদের জন্য। ;(
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
কিছু ঘটনা ঘটে যার রহস্য ভেদ করা হয় না।তবে আপনার ঘুমের ঘরে যে বর্ননা এটাকে আমরা বোবায় ধরেছে বলেই আমাদের অঞ্চলে প্রচলিত আছে।বহুবার এমন ঘটনায় পড়েছি.,….. শ্বাস নিঃস্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া যেন কেউ আমাকে চেপে ধরেছে অথবা শত্রু আমার জান কবজে চেষ্টায় আমি দৌড়ায়ে পালাতে চেষ্টা করেও যেন পালাতে পারছি না।
তবে আপনার ঘটনাটা ভিন্ন মনে হয়।হতেও পারে কেননা আত্মারা ঘুরে বেড়ায় আনাচে কানাচে। -{@
ইঞ্জা
ভাই আমারো ধারণা এইটি বোবায় ধরেছে কিন্তু ঘটনাটি সত্য।
রেজওয়ান
সত্যিই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা আপনার! চুলা জ্বালানোর ব্যাপারটা বুঝলাম না ভাইজান..
ইঞ্জা
খালাতো ভাই রাশেদ ঘরে একা থাকায় চুলা জ্বালিয়ে রেখেছিলো কারণ ভুতেরা নাকি আগুণ ভয় পায়।
জিসান শা ইকরাম
ভালই উপস্থাপন করলেন ভাই।
আপনার উপিস্থাপনা গুলো আসলেই অনেক উচু মানের।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাইজান, ঘটনাটির কথা মনে পড়লে এখনো শিহরিত হই। ;(
সাবিনা ইয়াসমিন
লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো।ভুতেরা আগুন ভয় পায় জানি।তবে সে রাতে মনে হয় ভুত আসেনি।জ্বীন এসেছিলো।বদ জ্বীন।এই জন্যে দোয়া-দুরুদ পড়াতে চলে গেছে।
ভালো থাকুন।শুভ কামনা। -{@
ইঞ্জা
যায় আসুক আপু, খুব ভয়ই পেয়েছিলাম, এমন ভয় আমি আগে কখনো আর পাইনি।
ধন্যবাদ
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া পড়ার পর ভয় ভয় লাগছিলো। আসলে মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যার কোনো ব্যাখ্যা নেই, থাকেনা, অথবা বলা যায় খুঁজে পাওয়া যায়না। ভাবছি আমিও বলে ফেলবো এমনই একটা ঘটে যাওয়া ঘটনা। যদিও এখন ভয় অনেকটাই কমে এসেছে। তারপরেও ভুতের গল্প বা মুভি দেখতে পারিনা।
অনেক ভালো থাকবেন ভাইয়া।
ইঞ্জা
এমনই ভূতুরে ঘটনা লিখেছিলাম ব্লগে, আপনি বলেছিলেন আপনার জীবনে ঘটেছে কিছু ঘটনা যা পরে লিখবেন, এইবার লিখে ফেলুন, জানেনই তো এইবার সোনেলা ভূতুরে বিষয় নিয়ে ই বুক করছে।
ধন্যবাদ প্রিয় আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া আসলে যখন লিখতে বসি, রাত হয়ে যায়। রাতে লিখতে ভয় করে। 🙄
ইঞ্জা
আপু এই রাত্রিকেই তো বেশি ভয় পাই। ;(
মোঃ মজিবর রহমান
হুম! ভয়ডর হই এমন অবস্থায়। দারুন পরিবেশন।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই (3
রিতু জাহান
বাপরে! এরকম ঘটনা কিন্তু ঘটে ভাইজু। আমি রাজশাহীর যে বাসাটায় ছিলাম ওখানে এরকম ঘটনা ঘটতো। রাতে বিড়াল ও মানুষের বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনতাম আমি।
ও বাড়ির একটা বাচ্চা মারা যাবার পরে মাটি দেয় যেখানে তার উপরেই ওরা বিল্ডিং করেছে বলে নাকি এমন হতো।
আমি ও বাসায় সাড়ে তিন বছর ছিলাম।
হি হি আমি আপনার চেয়েও সাহসী।
ইঞ্জা
আপু আসলেই আপনি অনেক সাহস, আপনার লেখা এইমাত্র পড়ে এলাম, ইইইইইইইইই অনেক ভয় পাইছি। ;(
নীরা সাদীয়া
আমাদের এলাকায় এরকম একটা বাসা আছে।সেই বাসায় ছাত্র মেস এবং মেসে একটি ছেলে ফেনের সাথে ঝুলে আত্নহত্যা করেছে। একই সময় পাশের বাড়ির দুটো মেয়ে আত্নহত্যা করেছে। তারা তিনজন পরিচিত ছিলো। কারন জানা সম্ভব হয়নি তারা কেন এ কাজ করলো।
ইঞ্জা
সেখানে অদ্ভূতুরে কিছু কি হয় আপু? 😮