ভালোবাসি তোমায় (৩৮)

ইঞ্জা ৯ ডিসেম্বর ২০১৬, শুক্রবার, ০৬:১৩:৩৬অপরাহ্ন গল্প ১৫ মন্তব্য

images-18

 

ভালোবাসি তোমায় (৩৮তম খন্ড)

.
১ মাস ১৪ দিন পর
------------------------

ভোর ছয়টায় অবণী এসে পোঁছাল, গাড়ী থেকে নেমে দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই কাজের লোক দরজা খুলে দিলো, গত কয়েকদিন ধরেই অবণী এই সময়টাতে আসে অভিদের বাসায় কারণ মাত্র পাঁচ দিন আগে অভিকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়েছে আর অভির রেগুলার সেবা করার দায়িত্ব নিজ কাঁদে তুলে নিয়েছে অবণী, সকাল ছয়টা থেকে রাতে অভি ঘুমিয়ে না পড়া পর্যন্ত অবণী সারাক্ষণ অভির সাথে থাকে।
অবণী সোজা উপরে চলে এলো অভির রুমে, দরজায় একটা ছোট নক করে ভিতরে প্রবেশ করলো, অভি গভীর ঘুমে আছে এখনো, অবণী নিজের হ্যান্ডব্যাগ সোফার উপর রেখে অভির বেডে এসে বসলো, তারপর অভির চুলে আসতে করে হাত ভুলালো, অভি একটু নড়ে উঠে আবার ঘুমাতে লাগলো, অবণী আসতে আসতে করে অভির চোখে মুখে ফুঁ দিতে লাগলো, অভি বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো এরপর আসতে করে পিটপিট করে চোখ খুললো আবার বন্ধ করে মুচকি হাসলো তারপর বললো, তুমি কখন এলে?
এই কিছুক্ষণ আগে, আপনি যদি আরো কিছুক্ষণ ঘুমাতে চান ঘুমাতে পারেন, অবণী হেসে বললো।
না আমি উঠবো, তোমাকে দেখবো।
আচ্ছা আমি ধরছি আপনি উঠে বসুন বলেই অবণী অভিকে ধরে বেডের পিছনে পিট লাগিয়ে বসিয়ে দিলো আর নিজে গিয়ে অভির জন্য রাখা উইল চেয়ারটা টেনে নিয়ে এলো।

.
একটু বসো আমার পাশে তোমাকে দেখি, অভি বললো।
অবণী হেসে পাশে এসে বসলো, কি দেখবেন?
এই তোমাকে।
আচ্ছা দেখুন আর দেখা শেষ হলে আমাকে বলবেন তারপর আপনাকে ফ্রেস হওয়ার জন্য নিয়ে যাবো।
তোমার হাতটা দেবে?
এই নিন, তা হাত দেখার মতো জৌতিষ বিজ্ঞান কি জানা আছে?
না জানা নেই আর হাত ও দেখবো না শুধু তোমার হাতটা ধরতে চাই বলেই অভি হাত বাড়িয়ে টেনে নিলো অভি, হাতটি ধরেই রইল অনেকক্ষণ এরপর বললো, অবণী তুমি এতো কষ্ট করলে আমার জন্য আবার এখনো করছো, এগুলা না করলে হয়না?
আপনার আপত্তি আছে, যদি থাকে বলুন আমি চলে যায়, অবণী রাগ করলো।
দেখো দেখো রাগ করার কি আছে, আচ্ছা থাক এইসব কথা, আমি আর বলবোনা।
আপনি জানেন আমি কেন করি এইসব?
জানি।
তাহলে কেন এই প্রশ্ন?
আর করবো নাতো।
ওকে এখন চলুন আপনাকে আগে ফ্রেস করে নিয়ে আসি, বলেই অবণী এগিয়ে গিয়ে উইল চেয়ারটা নিয়ে এলো এরপর অভিকে বাচ্চাদের মতো আগলে ধরে টেনে নিয়ে উইল চেয়ারে বসালো, এরপর অভিকে নিয়ে এগিয়ে গেলো টয়লেটের ভিতরে, টয়লেটের কমোডের পাশে অভির জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যেন অভি নিজে ধরে কমোড ইউজ করতে পারে, অভির উইল চেয়ারটা ভালো করে রেখে অবণী জিজ্ঞেস করলো, পারবেন, অসুবিধা হবে নাতো?
না ঠিক আছে, আমি ডাকলে এসো।
সাবাধানে।
ওকে।

.
অনু তুমি আছো? ইদানীং অভি অবণীকে অনু ডাকে আবার অবণীও ডাকে।
হাঁ বলুন, আসবো।
আসো।
অবণী দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখলো অভি উইল চেয়ারটাকে বেসিনের সামনে এনেছে।
অবণী ব্রাশ নিয়ে ধুয়ে নিলো আর পেস্ট লাগিয়ে অভির হাতে দিলো, অভি উইল চেয়ারে বসেই ব্রাশ করতে লাগলো, শেষ হলে অবণীর বাম কাঁদে ভড় দিয়ে দাঁড়ালো বেসিনের সামনে, অবণী আঁজলা ভরে পানি তুলে দিলো অভির মুখে আর অভি কুলি করে করে মুখের পানি গুলো ফেলতে লাগলো আর মুখ পরিষ্কার হয়ে গেলে অবণী অভির চোখে মুখে সাবধানে পানি দিয়ে দিয়ে পরিষ্কার করে দিয়ে আবার উইল চেয়ারে বসিয়ে দিলো আর তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে দিয়ে চেয়ারটা টেলে নিয়ে রুমে নিয়ে এলো যেখানে আগে থেকেই বসে ছিলেন অভির মা আর প্রিয়ন্তী, উনাদের দেখে অবণী অভির মা সালাম দিলো।
আমার মা এতো কষ্ট করছে আমার ছেলেটার জন্য কি বলে ধন্যবাদ আদায় করবো মা তুমিই বলো, অভির মা চোখে জল নিয়ে অবণীকে বললেন।
আন্টি আপনি এইসব কেন বলছেন, কাউকে না কাউকে দিয়ে করাতেন, আমি না হয় করছি।
এই কষ্ট কেউ করেনা মা, অভির মা বললেন।
আপু যে ভাইয়াকে ভালোবাসে আম্মু তুমি বুঝনা, প্রিয়ন্তী জবাব দিলো আর অবণীকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আর অবণী তো লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
মেয়েটা দেখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে বলেই অভির মা কথা ঘুরালেন পরিবেশ ঠিক করার জন্য, মা তুমি অভিকে এক্সারসাইজ করে নিচে আসো আর আমি তোমাদের জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করি গিয়ে, বলেই উনি চলে গেলেন।

.
অভিকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো অবণী আর প্রিয়ন্তী এরপর অবণী ফ্লোরে বসে অভির পা একটা টেনে নিয়ে লম্বা আর ব্যান্ড করতে লাগলো, দশ মিনিট করে করে দুই পা নিয়েই এমন করে গেল অবণী এরপর অভির পায়ের কাপড় তুলে দিয়ে অবণী আর প্রিয়ন্তী দুজনেই দুই পা মাসাজ করে দিতে লাগলো আসতে আসতে, আধা ঘন্টা ধরে মাসাজের পর দুজনে অভিকে নিয়ে গিয়ে গোসল করিয়ে নিয়ে এলো, অভির গা মুছে দিয়ে অভিকে একটা পাঞ্জাবী পড়িয়ে দিয়ে অবণী পাজামা দিলো অভির হাতে আর বললো, আমরা বাইরে আছি আপনি পড়ে নিন, সমস্যা হলে ডাক দেবেন।
অবণী আর প্রিয়ন্তী বাইরে এসে দাঁড়িয়ে রইল, কিছুক্ষণ পর অভি ডাক দিলো, অনু তুমি একটু আসো, প্রিয় তুই আসিসনে ওখানে থাক।
অবণী তাড়াহুড়া করে ভিতরে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে, কি হয়েছে?
অভি বেকুবের হাসি দিয়ে বললো, পাজামা উপরে উঠাতে পারছিনা।
অবণী জীব কাটলো আর বললো, সরি এতোদিন তো লুঙ্গি পড়েছিলেন আর আজ নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্যই পাজামা দিয়েছি, আচ্ছা আপনি আমাকে ধরে উঠে দাঁড়ান আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
কিন্তু তুমি চোখ বন্ধ রাখবে।
ঠিক আছে রাখবো, এখন ঊঠুল বলে অবণী অভিকে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলো আর নিজে পাজামাটা চোখ বন্ধ করে পড়িয়ে দিলো।
হয়েছে, এখন বসে পড়ুন উইল চেয়ারে আপনাকে নিচে নিয়ে যাবো।
.

ব্রেকফাস্ট করে অবণী অভিকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো ঘরের বাইরে, সারা বাগান ঘুরে বেরাতে লাগলো দুজনে আর অভি অবণীকে প্রত্যেকটা ফুল গাছের বর্ণনা দিতে লাগলো, এমন অনেক ফুল আছে যা অবণী প্রথম দেখছে যা অভির মা বিভিন্ন দেশ থেকে বীজ এনে লাগিয়েছেন। অবণী অভির উইল চেয়ারটা দিয়ে অভিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে আর অভি দেড় মাস পর বেরুতে পেরে খুব খুশি মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর অবণীকে উচ্চাস নিয়ে বলছে।
সামনের বাগান দেখা হলে অভি অবণীকে বললো, চলো বাসার পিছনে যায়, ওখানেও বাগান আছে আর সুইমিং পুলও আছে।
কোন দিকে যেতে হয়, অবণী জিজ্ঞেস করলো।
ওই গাড়ী বারান্দার পাশ দিয়েই যেতে হবে, হাত তুলে অভি দেখালো।
অবণী উইল চেয়ার ঠেলে এগুলো।
আপনাদের বাড়ীটা অনেক বড়, এই এলাকায় এতো বড় জায়গা চিন্তাই কিরা যায়না, অবণী বললো।
বাবা কিনেছিলেন আমার জম্মের পরপরই।
হুম তাই?
হুম।
অবণী পিছনের সুইমিংপুলের পাশে এসে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল আর তা দেখে অভি বললো, কেমন লাগছে।
অসাধারণ, মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
হুম চলো ওই রেস্ট চেয়ার গুলোতে বসি, অভি বললো।
অবণী অভির চেয়ারটা ঠেলে নিয়ে গিয়ে অভিকে তুলে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে পা দুটো তুলে দিয়ে বসিয়ে দিলো আর নিজেও পাশের চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বসে পড়লো।

.
এই যে ভাইয়া তোমরা দেখি এইখানে, আমি আরো ঘুরেই মরছি খুঁজে খুঁজে, নাও ফোনটা, জিএম সাহেব কল দিয়ে ছিলেন, ফোন দিতে বলেছে।
বসো, অবণী জায়গা করে দিলো যেন প্রিয়ন্তী পাশে বসতে পারে, অভিকে কর্ডলেস ফোনটা দিয়ে প্রিয়ন্তী অবণীর পাশে গিয়ে বসলো।
অভি ফোনটা নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল আর তা দেখে অবণী জিজ্ঞেস করলো, কি কোন সমস্যা?
অনু জিএম সাহেবের নাম্বারটা মনে পড়ছে না।
ওয়াট, লাফ দিয়ে উঠে বসলো অবণী।
কি হলো, অমন করে উঠলে কেন?
না আমি আশ্চর্য হয়েছি আপনার নাম্বারটা মনে করতে পারছেন না, আচ্ছা আমাকে দিন আমি ডায়াল করে দিচ্ছি, অভির থেকে ফোনটা নিয়ে ডায়াল করে অভির হাতে দিলো।
হাঁ জিএম সাহেব, কেমন আছেন?
অপর প্রান্ত থেকে জিএম সাহেব বললেন, সালামালেকুম অভি স্যার কেমন আছেন?
মোটামুটি ভালো, আপনারা সবাই ভালো তো?
জি স্যার সবাই ভালো কিন্তু আপনাকে খুব মিস করছি আমরা।
তা হঠাৎ ফোন দিলেন জরুরী ভাবে?
স্যার কাজ কর্মে অনেক সমস্যা হচ্ছে আপনি না থাকায় আর আগামী সপ্তাহে হক সাহেবরা আমাদের শীপ ডেলিভারি দিতে চান আর পেমেন্ট চাইতেছেন উনারা।
হক সাহেব, বুঝলাম না, কিসের শীপ?
অবণী আর প্রিয়ন্তী অবাক হয়ে চেয়ে রইল অভির দিকে, আজকাল অভি অনেক কিছু ভুলে যাচ্ছে।
প্রিয়ন্তী তুমি বসো তোমার ভাইয়ার পাশে আমি ভিতর থেকে আসছি, বলেই অবণী উঠে পড়লো।

.
অবণীকে দ্রুত পায়ে অভিদের ড্রয়িং রুমে আসতে দেখে অভির মা এগিয়ে গেল আর জিজ্ঞেস করলো, কি মা অভি কই?
অভি স্যার প্রিয়ন্তীর সাথে আছে, আপনি বসুন আন্টি কিছু কথা আছে।
অবণীও সোফায় বসে পড়লো আর নিজের সেল ফোনটা বের করে জিএমকে ফোন দিলো, অপর প্রান্তে জিএমের কন্ঠ ভেসে আসলে অবণী সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে জিজ্ঞেস করলো, আপনি তো কিছুক্ষণ আগে অভি স্যারের সাথে কথা বললেন।
জি ম্যাডাম।
কি বুঝলেন উনার সাথে কথা বলে?
স্যার তো দেখছি প্রায় সব ভুলে গেছেন বা যাচ্ছেন, এ কেন হচ্ছে অবণী ম্যাডাম।
আমিও তাই ভাবছি, ওকে আমি আন্টির সাথে কথা বলেনিই আন্টি আপনাকে কল দেবে, বলেই অবণী সালাম দিয়ে ফোন কেটে দিলো এরপর অভির মাকে সব খুলে বললো।
এতো তাড়াতাড়ি হচ্ছে কেন, অভির মা উৎকন্ঠা নিয়ে স্বগতোক্তি করলেন।
অবণী দ্রুত নিওরোলজিস্টের সাথে কথা বললো, কথা শেষ করেই বললো, আন্টি ডাক্তার সাহেবের সাথে কথা বললাম, উনি বললেন দ্রুত অভি স্যারকে আমেরিকায় নিয়ে যেতে, উনি সব ব্যবস্থা করে দেবেন এইখান থেকে।

.
___________চলবে
ছবিঃ Google.

.

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ