চায়না ভ্রমণ (৪’থ পর্ব)

ইঞ্জা ৬ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১২:০৫:৪৬পূর্বাহ্ন ভ্রমণ ১৯ মন্তব্য

 

 

 

পরদিন সকাল সাতটায় চলে এলাম ব্রেকফাস্ট করতে, কম্পলিমেন্টারি কুপন জমা দিয়ে নিজের জন্য একটা টেবিল দখলে নিয়ে প্রথমে গেলাম যে কাউন্টারে কুক নিজেই ডিম ভেজে দিচ্ছে, সকাল সকাল গেস্ট কম থাকায় অল্প কিছু গেস্ট আছে বিভিন্ন টেবিলে, কুক জিজ্ঞেস করলো কেমন ডিম পছন্দ, আমি বললাম শুধু পেয়াজ মরিচ সহযোগে দুই ডিমের অমলেট চাই।
কুক বাটার দিয়ে দ্রুত অমলেট করে দিলে সেইটা নিয়ে এগিয়ে গেলাম ব্রেড যেখানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে, সেইখান থেকে দুইটা ব্রেড উঠিয়ে নিলাম প্লেইটে, পাশের ডিশে দেখলাম চায়নিজ স্টিম বান, এই বান মুভিতে দেখেছি চায়নিজরা বেশ মজা নিয়ে খেতে, আমিও শখ করে দুইটা বান নিয়ে নিলাম প্লেটে, আমার প্লেইট টেবিলে রেখে এসে গেলাম ফ্রুট কাউন্টারে, প্রচুর ফ্রুট রাখা আছে, পছন্দ করে করে এক প্লেইট বিভিন্ন ধরণের ফ্রুট নিলাম, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ড্রাগন ফ্রুট, কিউয়ি, পিচ, আনারস, সাথে নিলাম অরেঞ্জ জুস।
হয়ত সবাই ভাববেন এই ব্যাটা নিশ্চয় পেটুক সদ্ভাবের, তা নয় আমি বিদেশের মাঠিতে প্রচুর পরিমাণে ব্রেকফাস্ট করি আর ওরেঞ্জ জুস খাই চার পাঁচ গ্লাস, কারণ প্রায় দেখা যায় দুপুরের খাওয়া ব্যস্ততার কারণে হয়না।

ব্রেকফাস্ট শেষে নিলাম ব্ল্যাক কফি, কফি শেষ করে দেখলাম ঘড়িতে প্রায় আটটা বাজে, উঠে নিজ রুমে গিয়ে ল্যাপটপ খুলে সিগারেট ফুকতে ফুকতে নিজের কিছু কাজ শেষ করলাম, পৌনে নয়টার সময় ল্যাপটপ এবং অফিস ব্যাগ নিয়ে নিচে পোঁছালাম, নিচে নেমেই অবাক হলাম ইস্টেফেনকে অপেক্ষারত অবস্থায় দেখে, জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার তুমি কখন এলে, জবাবে সে বললো সাড়ে আটটায় এসেছে, নয়টার কথা ছিলো বলে অপেক্ষা করছিলো সময় হওয়ার।
দুজনে বেরুলাম অফিসের উদ্দেশ্যে, অফিসে পোঁছেই ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
দুপুর বারোটায় এক ডাইরেক্টর সহ ইস্টেফেন নিয়ে গেলো লাঞ্চে, অনিচ্ছা সত্বেও গেলাম কিন্তু আগেই বলে দিলাম আমি খুব অল্প খাবো।
লাঞ্চের পর আমাদের সাথে মিটিংয়ে যোগ দিলেন কোম্পানির সেকেন্ড ম্যান, উনাদের সবাইকে আমাদের প্ল্যান প্রোগ্রাম বুঝাতেই আমার সারা বিকেল গেলো, এরপর হলো এক্সক্লুসিভ এগ্রিমেন্ট, ওরাও খুশি আমিও খুশি, এরপর সেকেন্ড বস উনার সেক্রেটারিকে বললেন আমাকে ডিনারে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

সন্ধ্যা ছয়টায় ইস্টেফেন, কোম্পানি সেক্রেটারি মি. ডেবিড আমাকে নিয়ে চললেন ডিনারে, আধা ঘন্টা ড্রাইভিংয়ের পর আমরা এলাম অথেনটিক কোরিয়ান রেস্তোরাঁয়, রেস্তোরাঁটি ছোট একটা পাহাড়ের উপরে, গাড়ী পার্কিং এড়িয়ার ওখানে এস্কেলেটর লিফটে আমরা উপরে উঠে এলাম, আমরা যে টেবিল নিয়ে বসলাম তা অনেকটা গোল ধরণের, আমাদের টেবিলের সাথে লাগানো আছে ইলেক্ট্রিক অপারেটেড ধাতব চুলা, যেখানে কোরিয়ান কুক নানা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে রান্না করবেন, রান্না তো নয় যেন কারাতে যুদ্ধ।
মি. ডেবিড ভিতরে গেলেন অর্ডার দিতে, যাকে বলে প্রি অর্ডার, সেই অর্ডারের বিপরীতে আসবে কাঁচা খাবার, সেই খাবার আমাদের সামনেই ভাজাভুজা করে দেওয়া হবে।
কিছু সময় পর ওয়েটার এসে আমাদের জন্য কাঁচা স্যামন মাছ যা স্কয়ার করে কেটে পরিবেশন করেছে, সাথে প্রতেকের জন্য আলাদা ছোট বাটিতে ওয়েস্টার সস, আরেক বাটিতে শুকনা মরিচ গুড়া (পিষা নয়), আরো দিয়ে গেলো রেড ওয়াইন, বিভিন্ন টেবিল থেকে আওয়াজ আসছিলো ইয়াহু, হুক, হাক এবং উল্লাস ধ্বনি।
কাঁচা স্যামন দেখেই আমার কলজে লাফ দিয়ে উঠলো, বললাম সরি আমি কাঁচা খাবোনা।

ইস্টেফেন এবং ডেবিড খুব করে অনুরোধ করে বললো, একটা খেয়ে দেখো, যদি ভালোনা লাগে আর খেয়োনা।
অনুরোধে ঢেঁকি গিললাম, ওদের দেখাদেখি স্টিক দিয়ে একটা মাছের টুকরো নিলাম, টুকরোটাকে ওয়েস্টার সসে ভালো করে দুই পাশ ভিজালাম, এরপরে শুকনো মরিচ গুড়ো লাগালাম, একটা ঢোক গিলাম কুঁত করে, এরপরে টপাক করে মুখে দিয়ে আসতে আসতে চাবালাম, এরপরে গলার ভিতর চালান করে দিলাম।
নিজেই আশ্চর্য হলাম এই খাঁচা মাছ খেতে চমৎকার, যাকে বলে টেস্টি, এক চুমুক ওয়াইন সবার সাথে টোস্ট করে খেলাম, এরপরে আরেকটা তুলে নিয়ে একি পদ্ধতিতে খেলাম, ইস্টেফেন বললো, নাভী এখন আমরা টোস্ট করবো আমাদের এই বন্ধুত্বের সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করে ফুল টোস্ট, চিয়ারস।
সবাই আমরা দাঁড়িয়ে চিয়ারস করে পুরা গ্লাসটা খালি করে পান করলাম।

চলবে।

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ