কালোজাদু.. অতঃপর তিনি !

রেজওয়ান ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ০১:১৭:০১অপরাহ্ন গল্প ২০ মন্তব্য


২৭ বছর বয়সে পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে মিঃ সিম জিং মেং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে সবে চাকুরী পেয়েছেন। মিঃ সিম এর একটু বর্ণনা দিয়ে নেই। ছয় ফিট লম্বা এই চাইনিজ মানুষটা খুব ফর্সা, সুন্দর ও শুঠাম দেহের অধিকারী। চাইনিজ বংশভূত এমন পুরুষ খুব কম ই দেখা যায়। যে কেউ দেখেই প্রেমে পরে যাবে। কেন যে সে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে না গিয়ে ডিফেন্সে এসেছে কে জানে?

তো ঘটনার শুরু চাকুরী পাওয়ার দুই মাস পর থেকে..
মিঃ সিম এর এক চাইনিজ মেয়ে কলিগ তাকে খুব পছন্দ করে উনাকে বেশ কয়েকবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে লাভ হয়নি। প্রতিবার একই উত্তর 'আমি জেনিফার নামের এক ইন্ডিয়ান মেয়েকে ভালবাসি এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বিয়ে করবো!' কিন্তু মেয়েটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। অনেক ঈর্ষা করতে থাকে কারণ জেনিফার ও সিম দুজনেই দু'প্রান্তের ধর্ম,বর্ণ কালচার সব দিক থেকেই। অন্যদিকে কলিগ লিনেট একই কালচারের। তবে লিনেট হাল ছাড়ে না। ছলে বলে সবসময় সিমের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে। বিভিন্ন সরকারি ফাংশনে উনার সাথেই যায় কারণ দূর্ভাজ্ঞবসত তারা একই ডিপার্টমেন্টের একই টিমের সদস্য। এভাবেই চলতে থাকে আট-নয় মাস। এরপর একদিন লিনেট প্রায় মাস তিনের জন্য ছুটি নিয়ে নেয়। অন্যদিকে সিম ও তেমন পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে।

মিঃ সিমের চাকুরীর বয়স মাত্র এক তখন তার খুব সখ হয় শরীরে ট্যাটু করার এবং সরকারি অনুমতি নিয়ে করেও ফেলে পুরো শরীরে সব ভয়ংকর ভয়ংকর ট্যাটু। সবচেয়ে ভয়ংকর পিঠে প্রায় ২১ ইঞ্চির কালী দেবির ট্যাটু। ট্যাটু করার কয়েকদিনের মধ্যেই লিনেট চাকুরীতে যোগদান করে সেও আগের মতই মেশার চেষ্টা করে সিমের সাথে। এবার সিম একটু কড়া সুরেই জানিয়ে দেয় সামনের সপ্তাহে তাঁঁর ভালবাসার মানুষকে বিয়ে করতে যাচ্ছে, সে যাতে আর বিরক্ত না করে।

কিছুদিন পর সিম বিয়ে করে নেয়। বিয়ের ঠিক চৌদ্দদিন পর মিঃ সিম অনেক অসুস্থ হয়ে পরে হঠাৎ করেই। প্রচন্ড জ্বর, মাথা ও শরীর ব্যাথা। প্রথম ধাপে ডাক্তার কিছু মেডিসিন দেয় এতে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায় দেখে মেডিকেলে ভর্তি করা হয় কিন্তু নানান চেকয়াপ করার পরেও কোনো রোগ ধরা পরে না। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিশাল দেহের মানুষটা কঙ্কালসাড় হয়ে যায়। অসুস্থতার প্রায় আড়াই সপ্তাহ পর তাকে সিংগাপুরে নেওয়া হয় আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য। সেখানে আরো অবনতি হয়ে যায়। সম্পূর্ণ শরীর নীল হয়ে হয় রক্তবমি ও চুল বমি!! হ্যা পাঠক/পাঠিকা সত্যি ই বমির সাথে প্রচুর লম্বা লম্বা চুল বেরিয়ে আসে। শুতে পারে না কেউ ছুতেও পারে না। ছুলেই প্রচন্ড ব্যাথায় চেঁচিয়ে উঠতেন তিনি। এমন অবস্থায় সকল ডক্টর বলে দেন উনাকে বাঁচানো সম্ভব না, বাড়ি নিয়ে যান বলে রিলিজ করে দেয় সিংগাপুরের হস্পিটাল থেকে।(সিকিউরিটির জন্য হস্পিটালের নাম গোপন রাখতে হলো)

মেডিকেল রিলিজের পর যখন সবাই মিঃ সিমকে নিয়ে আসায় ব্যস্ত সেদিন ই বিকেলে এক ফোনকল পায় উনার স্ত্রী জেনিফার। ফোনের সারমর্ম যত দ্রুত সম্ভব সিমকে বাসায় নিয়ে আসুন, আমি আপনার বাসার বারান্দায় আছি গত তিন দিন যাবত কিন্তু কেউ নেই এখানে। একথা শুনে সবাই অবাক হয় কে এই ব্যক্তি জানা নেই শোনা নেই হুট করে বলে দিলো বাসায় আসুন! যেতেতো হবেই সেদিন রাতেই পুলিশের ইমার্জেন্সি হেলিকপ্টারে উনাকে বাসায় আনা হয়। এসে দেখে এক তান্ত্রিক টাইপ মানুষ বারান্দায় বসা।

কাউকে কথা বলতে না দিয়ে সোজা এম্বুল্যান্সের কাছে গিয়ে দড়িয়ে বলে উনি কালোজাদুর প্রভাবে এমন হয়েছেন তবে এখনো চিকিৎসা সম্ভব তবে কে করেছে তার নাম বলবো না আমি। কিন্তু যে করেছে সে একজন মহিলা এবং আগামী তিন দিনের মধ্যে সে নিজে এসে সব বলবে ও ক্ষমা চাবে। আগামীকাল আমি উনার চিকিৎসা করবো তোরা সব যোগার করে রাখবি এই কথা কিছু জিনিসের নাম বলে চলে গেলো।

পরদিন ভোরে ওই তান্ত্রিক এসেই বললো উনার শরীরে ট্যাটু করা উচিৎ হয়নি। এর পর একটু সময় নিয়ে যোগ্য করা শুরু করে ওই তান্ত্রিক। এর মধ্যে পরিবারের সবাই মিলে বাসার হল রুমে রাখা হয় মিঃ সিম কে এভাবে তিন দিন তিন রাত পার হওয়ার পর উনার কালীর ট্যাটুর ভেতর থেকে কালো ধোয়ার এক অবয়ব বেড়িয়ে আসে সকলের উপস্থিতিতেই। সেই বলে কালো অবয়বটা কিছু বলার চেষ্টা করতেছে কিন্তু বলতে পারছে না বলেই সবাইকে অন্য রুমে যেতে বলাহয় শুধু জেনিফার থাকার অনুমতি পায়। কালো অবয়ব টা আবার মিঃ সিমের ট্যাটুতে ঢুকানো হয় এবং সে বলে ওর মালিক অনেক টর্চার করে যদি মিঃ সিম কে পেইন না দেওয়া হয়। যখন তান্ত্রিক জিজ্ঞাসা করে কিভাবে ঢুকলো মিঃ সিমের শরীরে তখন বলে ওর মালিক সিমের চুল ও নখ সংগ্রহ করে এই কালোজাদু করে এই বলেই কালো অবয়বটা বেরিয়ে আসে এবং তান্ত্রিক বলে এর পর এই প্রেতআত্মা কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এমন সময় সবাইকে অবাক করে দিয়ে লিনেট পাগলের মত দৌড়ে আসে এবং সবাইকে জানায় কালোজাদু ওই করেছিলো, বিভিন্ন ফাংশনের সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে কিছু একটা খাওয়ানো হয়েছিলো মিঃ সিমকে এতে সাহায্য করেছিলো থাইল্যান্ডের এক কালো জাদুকর! পরে সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নেয়।

সব শেষে এই তান্ত্রিক যানায় কালির ট্যাটু রিমুভ করতে হবে তা না হলে যে কোনো সময় আবার যে কোনো কিছুই হতে পারে কারণ ওই থাইল্যান্ডের জাদুকরের এটাই ছিলো শেষ জাদু এর পর সে মারা যায়।
প্রায় আট মাস কষ্টভোগ করার পর মিঃ সিম সুস্থ হয় এবং ট্যাটু রিমুভ করে চাকুরীতে যোগদান করে। তখন সে এও জানতে পারে লিনেট আত্মহত্যা করেছে উনি যোগদানের দুইদিন আগে।

🌹পরিশেষেঃ এটি একটি সত্য ঘটনা যা ঘটে যায় আমার ফুফা শশুরের সাথে। উনি এখনো আন্ডার কাভারে চাকুরীরত আছেন এবং সম্ভবত ২০২০ সালে অবসরে যাবেন। যদিও ছবিটা উনার না কিন্তু উনার কালির ট্যাটু অনেকটাই এমন ছিলো আর জিহ্বা টা ছিলো লাল। আমি চেয়েছিলাম অরজিনাল ছবিটা দিতে কিন্তু ফুফু শাশুরী বললো কাহিনীটা শেয়ার করো সমস্যা নেই তবে ছবি দিও না তাই অনলাইন থেকে ছবিটা দেওয়া।

✌নোটঃ ট্যাটু আমার কাছেও খুব পছন্দের এবং মাঝে মাঝে করতেও চাই কিন্তু ভয় হয় তাই এখনো করিনাই! আমি বলবো না ট্যাটু করা ভাল! আমি এও বলবোনা আপনারা ট্যাটু করুন তবে এটা বলবো যাই করুন দেখেশুনে বুঝে তারপর করুন। করে ভাববেন না, পস্তাবেন..

সমাপ্ত

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ