মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন ৭ (Upside Down House)

নীহারিকা ৬ জুন ২০১৭, মঙ্গলবার, ০১:৩০:৫৮অপরাহ্ন ভ্রমণ ২৪ মন্তব্য

হোটেলে এসে দুপুরের খাবার খেতে না খেতেই দেখি ৪টা বেজে গেছে। রেস্ট না নিয়ে লবিতে এসে বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি চলে এলো। এখন যাবো একটি স্পটে যার টিকিট আগেই কেটেছিলাম। গাড়িতে উঠার পর ড্রাইভার বললো সেখানে যাবার আগে সে আমাদের চকলেট কিংডমে নিয়ে যাবে। সেখানে নাকি ভালো চকলেট বিক্রি হয়। তো আমরা বললাম, ঠিক আছে। কিছুক্ষণ পর পৌছে গেলাম সেখানে। একতলা বিল্ডিং। আশে পাশে অনেক গাড়ি পার্ক করে রাখা। গাড়ি থেকে নেমেই দেখি সেই দোকানের সামনের একটি গাছের নিচে জটলা। লোকজন হা করে গাছের উপর কি যেনো দেখছে। আমরাও হা করা গ্রুপে যোগ দিলাম। একজন সেই গাছ দেখিয়ে তাদের ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে যা বুঝলাম তা হলো, এটা কোকো গাছে। এবং গাছে দুটো কোকো ফল ঝুলছে যা থেকে চকলেট বানানো হয়। একটা ছবি তুলে নিয়ে ভেতরের দিকে পা বাড়ালাম। একতলা ফ্ল্যাটবাড়ির মত দোকানটা। সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। দেখি দেয়ালে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন ধরনের চকলেটের প্যাকেট/বক্স। রূমের এক কোণে ভীড় দেখে এগিয়ে গিয়ে দেখি লোকজন হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে আর এক মেয়ে টুকরো করা চকলেট সবার হাতে হাতে দিচ্ছে। সবাই সেই চকলেট মুখে দিয়ে দেয়ালে সাজানো চকলেটের প্যাকেট পছন্দ করছে। আমি আর হাত পেতে চকলেট নিলাম না। পাশের রূমে গিয়ে দেখি একই অবস্থা। এখানেও সবাইকে চকলেট দেয়া হচ্ছে। তখন বুঝলাম এগুলো ক্রেতাদের স্যাম্পল টেস্ট করবার জন্য দেয়া হচ্ছে যেন তারা স্বাদ বুঝে পছন্দমত চকলেট কিনতে পারে। এবার আমিও হাত পাতলাম। ২/৩ টুকরো চকলেট পেয়েই মুখে চালান করে দিলাম। উম্মম্মম....কি মজা!!!! ইশ এখন আফসোস হতে লাগলো কেন আগের রুমে ভাব দেখিয়ে চকলেট খেলাম না। একবার ভাবলাম আবার গিয়ে খেয়ে আসি। পরে কর্তার রক্তচক্ষুর কথা ভেবে আর যাইনি। পরে সবগুলো রূমে ঢুকে ঢুকে সবার সাথে চকলেট খাওয়া আর চকলেট বাছাই করতে লাগলাম। শেষের রূমে পেলাম কফি। বিভিন্ন ফ্লেভারের। কর্তা সেখান থেকে কফি নিলো। আমরা চকলেট, কফি নিয়ে বিল চুকিয়ে বেরিয়ে এলাম। গাড়িতে উঠে আমরা রওনা হলাম নতুন স্পটের উদ্দেশ্যে। "Upside Down House".  নাম শুনে ভাবলাম এ আর তেমন কি? কোথাও ছবি দেখেছিলাম উলটো বাড়ি। দেখা যাক কি আছে সেখানে। গাড়ি এসে থামলো KL Tower এর কাছেই এক গেটের সামনে। নেমে দেখি এক আজব জিনিস, বাড়ি তো উল্টানোই আবার গেটে রাখা গাড়িও মাথার উপর। টিয়া রঙের আস্ত এক কার। আমিতো হাসতে হাসতে মরি। যাহোক, গেট পেরিয়ে ঢুকতেই ছোট্ট ঘাসে ঢাকা উঠোনমত জায়গা। পাশে আবা জাপানিজ কায়দায় বসার ব্যবস্থা। এটাই রিসেপশন। এখানে টিকিটে দেখে আমাদের একটা লোহার সিড়ি দেখানো হলো যাবার জন্য। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে দরজা দিয়ে ঢুকলাম। তখন কিন্ত ব্যাপারটা ধরতে পারিনি যে কেন সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হবে। পরে বুঝেছি যে, যেহেতু বাড়িটা উলটানো তাই নীচে চাল থাকায় ১ তলার দরজা দোতলা সমান উঁচুতে চলে গেছে। ভেতরে ঢুকে দেখি হালকা ছায়ামত ভেতরটা। একদল ছেলেমেয়ে ছবি তুলছে, দেখছে আর হেসে পড়াগড়ি খাচ্ছে। কেউ আবার শুয়ে, বসে, কাত, চিৎ বিভিন্ন ভঙ্গীমায় ছবি তুলছে আর কি যে হাসছে। আমি চারদিক তাকিয়ে হাসির কোনো কারণ বুঝতে পারলাম না। ওরা এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাচ্ছে। তো আমরা খালি হওয়া ঘরে গিয়ে দেখতে লাগলাম ঘরটা। দেয়ালে কিছু জিনিসপত্র লাগানো কিন্ত কেমন উলটো। আচ্ছা ঠিক আছে। এমন সময় ওই স্পটের এক মেয়ে এসে আমাকে বললেন, তুমি এই দেয়ালে দাড়াও, তারপর হাত মাথার উপরে বা পাশে নিয়ে এভাবে প্রতি রূমে ছবি তুলবে, তারপর ছবিটা উলটে দেবে। এতে মনে হবে তুমি ছাদ থেকে ঝুলছো। বুঝলাম না প্রথমে ঘটনা কি। ছবি তুলে দেখি বাসার সব ফার্নিচার তো ছাদে আর দেয়ালে। নিচে থেকে দেয়ালের জিনিসগুলো উলটো দেখাচ্ছে তাই বুঝিনি। দাঁড়িয়ে ছিলাম বেডরুমে। তখন উপরে তাকিয়ে দেখি মাথার উপর আস্ত এক খাট ঝুলছে। কি সর্বনাশ!!! বের হয়ে আগের জায়গায় গিয়ে দেখি সেটা ড্রয়িং রুম।

 

 

সোফা, টিভি, এসি, সেন্টার টেবিল, টেবিলের উপর আবার চায়ের কাপ, ফুলদানি সব আমার মাথার উপর ছাদে আর দেয়ালে। টিভি দেখে ভাবলাম, এ কি সত্যিকারের টিভি? কাছে গিয়ে দেখি সত্যি সত্যি টিভি দেয়ালে উল্টো করে লাগানো। চলে এলাম পাশের রুমে।

 

 

 

 

দেখি আস্ত এক ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, এমনকি টেবিলে কাঁচের বাটি-প্লেট সব মাথার উপর উলটো হয়ে ঝুলছে। কিছুটা ভয় হলো যদি ভেঙে পড়ে? তাড়াতাড়ি সরে এলাম সেখান থেকে। গেলাম পাশের রুমে।

 

 

 

এটা রান্নাঘর। দেয়াল কেবিনেট সহ সিংক, চুলা, চিমনি, তাকের উপর মগ, গ্লাস সবই দেয়ালে উপর থেকে ঝুলছে।পাশের রুমে ঢুকতেই দেখি, দেয়ালে উলটো করে তোয়ালে, সাবান, শ্যাম্পু রাখা। চোখ ফেরালাম ছাদের দিকে একি! এতো বাথরুম! আর আমি দাঁড়িয়ে আছি এক্কেবারে কমোডের নিচে। কমোডের পাশে আবার পলিথিন দেয়া ময়লার ঝুড়ি আর আরেক পাশে বিশাল এক বাথটাব। আমিতো হাসতে হাসতে শেষ। এরা কিনা বাথরুমও এমন বানালো? তাড়াতাড়ি কমোডের নিচ থেকে সরে এলাম। বলা যায় না, যদি হুট করে মাথায় কিছু এসে পড়ে?

 

 

 

 

বাথরুম থেকে বের হয়ে পাশে দেখি একটি সিঁড়ি নিচতলায় চলে গেছে। সেখান থেকে হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। বুঝলাম আমাদের আগের গ্রুপের ওরাই এখন নিচতলায় আছে। নিচে নেমে দেখি এটা আরেকটা রুম। চিলড্রেন্স রুম। পড়ার টেবিল, খেলনা, সব ছাদে। এসব দেখেও বেশ হাসি পেলো। কিছু ছবি তুলে আবার উপরে চলে এলাম। বুঝলাম উল্টো বাড়ি দেখার পর্ব শেষ হলো। সেখান থেকে বের হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা। আজকের মত আর ঘুরাঘুরি নয় ভেবে রওনা হলাম হোটেলের দিকে। কাল সকালে রেস্ট নেবো। বিকেলে যাবো অন্য কোনো নতুন স্পটে।

চলবে.....

মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ৬/ মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন ৬

মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ৫/ মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন ৫

মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ৪/ মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন ৪

মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ৩/ মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন ৩

মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ২/ মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন ২

মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ১/ মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন ১

 

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ