প্রথমে ক্যাম্প খোলা হয় 'নিগাহ' নামে একটি ছোট্ট গুদামে। সেখানে হাজার খানেক লোক ধরবে। পরে কান্দুলিয়া ক্যাম্প খোলা হল। এতে প্রায় দশ হাজার লোকের জায়গা হবে। আমি এই ক্যাম্পের নাম দিলাম 'হিজরতগঞ্জ'। মওলানা ইয়াসিন নামটা গ্রহণ করলেন এবং খুশি হলেন। আসানসোল স্টেশনে ও পরে রাণীগঞ্জ স্টেশনে মোহাজেরদের নামানো হত, পরে ট্রাকভরে ক্যাম্পগুলিতে নিয়ে আসা হত। আমার সাথে সকল সময়ের জন্য কাজ করতেন মওলানা ওয়াহিদ সাহেব। আমরা একসাথে পড়তাম, এখন তিনি শাহজাদপুরের পীর সাহেব।
আমাদের খাওয়া-দাওয়ার কোন বন্দোবস্ত ছিল না। মোজাহিরদের জন্য যা পাক করতাম, তার থেকেই কিছু খেয়ে নিতাম। দোকানপাট কিছুই ছিল না। শত শত লোক রোজই আসছে। দিনে এক বেলার বেশি খেতে দিতে পারতাম না। একটা হাসপাতাল করেছিলাম। ময়মনসিংহের ডা. আব্দুল হামিদ এবং গফরগাঁওয়ের ডা. হজরত আলী এই হাসপাতালে কাজ করতেন। আসানসোলের এসডিও মিস্টার রোজ চার পাঁচ দিন পরে একজন বৃদ্ধা মেম সাহেবকে নিয়ে আসলেন। তিনি আমাদের কাজের প্ল্যান করে দিয়ে সাহায্য করবেন। কারণ, এই ভদ্রমহিলা যুদ্ধের সময় ব্রক্ষ্ণদেশ থেকে যখন লোক পালিয়ে আসছিল তখন সরকারি ক্যাম্পের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি যে প্ল্যান দিলেন, তাতে কাজের সুবিধাই হল।
ছয়-সাত দিন পর, বাংলা সরকার জনাব সলিমুল্লাহ ফাহমীকে বিহার মোহাজেরদের ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী নিয়োগ করলেন। তিনি আসানসোলে এসে আমার খোঁজ করেন। পরে ময়রা ক্যাম্পে এসে আমাকে পেলেন। তিনি ক্যাম্পগুলিকে সরকারের তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন। মুসলিম লীগ সেচ্ছাসেবকরাও কাজ করলেন। আমি ও সলিমুল্লাহ সাহেব পরামর্শ করে মোহাজেরদের থেকে সুপারিন্টেনডেন্ট, এসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেনডেন্ট, রেশন ইনচার্জ, দারোয়ান ও অন্যান্য কর্মচারী নিযুক্ত করলাম।
এক জায়গায় খানা পাকানো সম্ভবপর হচ্ছে না। রেশন কার্ড করে প্রত্যেক ফ্যামিলিকে বিনা পয়সায় চাল, জ্বালানি কাঠ, মরিচ, পিঁয়াজ সবকিছুই সাত দিনের জন্য দিয়ে দেওয়া হবে। শুধু মাংস একদিন পর পর দেওয়া হবে। মোহাজেররা এই বন্দোবস্তে খুশি হলেন। এই সমস্ত ঠিক করতে এক মাস হয়ে গেল। এই সময় বিহার থেকে জাফর ইমাম সাহেব মোহাজেরদের বাংলাদেশের লোকেরা কেমন রেখেছে দেখবার জন্য এলেন। আমার সাথেও দেখা করলেন, আমাদের অফিসে। আমরা একটা অফিস খুলেছিলাম, তার পাশেই আমরা থাকতাম। আমাদের পাকের বন্দোবস্তও হয়েছিল ঐখানেই। আমাদের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা দেখে তিনি আমাকে ও আমাদের সহকর্মীদের অনেক ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। মোহাজেরদের সাথে দেখা করে তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং-৭০)
১০টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
Real soul and great leader. দেখছি একটু একটু করে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
(y) ধন্যবাদ।
নিহারীকা জান্নাত
কি সব দিন গেছে তখন!
মারজানা ফেরদৌস রুবা
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প তখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছিলো।
রিফাত নওরিন
সত্যিই অসাধারন!!!
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
এই না হলে নেতা!
নীলাঞ্জনা নীলা
রুবা’পু শনিবার চলে গেলো তোমার লেখা কোথায়? জানোনা অপেক্ষায় থাকি তোমার পোষ্টের?
ভালো আছো তো? সুস্থ রাখুক তোমায় ঈশ্বর। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আরে শনিবারে লিখে পোস্ট দিতে আর মনে ছিলো না।
(3
নীলাঞ্জনা নীলা
তাই তো বলি শনিবার গেলো তুমি কোথায়? 🙂