gul2স্বাভাবিক কারনে নন্দিনীর প্রতি সূর্য্যের একটু দরদ ক্রমশতঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে।যদিও প্রথম দিকে নন্দিনী তার কাছে তেমন কোন পাত্তা পেতনা ডাক্তারদের কাছ থেকে অপ্রিয় শব্দটি শুনার পর তার মনে পরিবর্তন আসে।অতীতকে মনে গেথে রেখে কি লাভ এ শুধু ভবিষৎকে পিছনে টানবে।জীবনতো একটাই,এই এক জীবনে রং রস করার সময়ই বা কই।জীবনের অর্ধেক সময়তো চলে যায় ঘুমের ঘরে বাকী অর্ধেকের অর্ধেক সময় কাটে যৌবনে পা দিতে শুধু কোয়াটার জীবনে কতটুকুই বা থাকে আনন্দের সময় এখানেও নিরান্দরা মাঝে মাঝে এসে থাবা দেয়।অনেক দিন হলো সূর্য্যের সাথে নন্দিনীর তেমন একটা কথা হয় না,সেই যে নন্দিনী হাসপাতাল থেকে নিজ বাসায় চলে গেলেন তারপর অনেক যাওয়া হয়েছিল তাদের বাসায়,নন্দিনী সূর্য্যের প্রতি তেমন কোন আগ্রহ দেখতে পেল না শুধু হাই হ্যালো বলেই চলে আসত সে।তার কাছে  মনে হলো,কেমন যেন হঠাৎ বদলে গেছে নন্দিনী।আগের সেই চঞ্চলতাতো নেই বরং প্রশ্ন করলে,প্রশ্নের উত্তর দিতে সে অনেকটা অপ্রস্তুত থাকেন।

সমরকে সাথে নিয়ে আজোও নন্দিনীদের বাসায় গেলেন সূর্য্য।যথারিতী নন্দিনীর মামি এসে দরজা খোলে দেন।ভাল মন্দ জিজ্ঞাসা করে বসতে বলে নন্দিনীকে ডাকতে মামী ভিতরে গেলেন।আধুনিকতার আদলে খুব গোছানো ড্রইং রুমটি।বিশাল একটি টিভি সেটও দেয়ালে দোলছে।সাহসী পুলিশ অফিসার বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুন  টিভি সেটের হেড লাইনে লাইভ চলছে।
download (4)-দেখছোস কামডা করছে কি?
-এইতো সেই পুলিশ অফিসার যার সূত্র  ধরে প্রশাসন অনেক জঙ্গির আস্তানা ভেঙ্গে দিয়েছে।
-হ্যা,সেতো এখন এসপি....তার স্ত্রীকে মেরে ফেলল....ব্যাপারটা কেমন যেন েঠেকছে আমার কাছে।কে বা কারা করল!তা খুজে বের না করলে,ভবিষৎতে সৎ সাহসী সৈনিক জন্মাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
নন্দিনী তাদের সামনে আসেন।এত চেনা মানুষটি আজ অচেনা মনে হচ্ছে।নন্দিনীর চেহারায় স্পষ্ট দুশ্চিন্তার ছাপ।সে তাদের পাশাপাশি বসল।সমর টিভি সেটের নজর ছেড়ে তার দিকে তাকালেন।
-কি ব্যাপার নন্দিনী তোমার অবস্থা কি....রোজা রেখেছো?তাতেও কোন উত্তর নেই।...সূর্য্য কিন্তু রোজা রাখেনি আর আমিতো ভিন ধর্মীই তাই মেহমানদের এ ভাবেই বসিয়ে রাখবে!একটু চা পানের আপ্যায়ন করবে না?এবার সূর্য্যও টিভি সেটের নজর ছেড়ে নন্দিনী আর সমরের কথা ফলো করল।এরই মধ্যে মামী কাজের মেয়েটিকে দিয়ে চা পাঠিয়ে দিল।চায়ে কয়েক চুমুক বসিয়ে সমর অন্দর মহলে তার মামীর সাথে কথা বলতে চলে গেলেন।সূর্য্য নন্দিনীর কাছাকাছি বসলেন।নন্দিনী অন্য মনষ্ক হয়ে এক দিকে তাকিয়ে আছেন বেশ কিছুক্ষন।কয়েক বার ডাকলেন সূর্য্য...নন্দিনী নন্দিনী...কথা বলছো না কেনো...হঠাৎ কি হলো তোমার।নন্দিনী এবার এদিকে একটু হালকা মনোযোগ দিলেন।
....কই কিছু না,
-তমি বললেই হলো সেই কখন থেকে বসে আছি কোন কথাই বলছো উত্তরও দিচ্ছ না।
-শরিরটা কয়েক দিন যাবৎ কেমন জানি লাগছে।
-ঔষধগুলো ঠিক মতো খাচ্ছতো?
মাথা নেড়ে হ্যা বলেন নন্দিনী.....চিন্তা করোনা সামান্য অসুস্থ্য তুমি ঠিক হয়ে যাবে।নন্দিনীর মুখোবয়ে চিন্তিত হাসির আভা।এরই মধ্যে সমর মামীকে নিয়ে তাদের সামনে আসেন।মামীকে বিদায় জানিয়ে ওরা তখনকার মতো নন্দিনীর বাসা থেকে বের হয়ে রাজ পথে হাটতে থাকেন।

রাজ পথগুলো এখন ব্যাস্ততায় দিন কাটাচ্ছে তার সারা বুক জুড়ে মানুষের প্রচুর পদচারণা।সবাই ছুটছেন নারীর টানে স্ব-জেলারগুলোর দিকে কেননা ঈদের আর কয়েকটি দিন বাকী মাত্র।রাজপথ দিয়ে হেটে বাস স্ট্যাসনে যাচ্ছিলেন সমর সূর্য্যদের পরিচিত শহুরে এক চা বিক্রেতা।সে প্রলাপ করে গন্তব্যে পৌছার যানবাহনের টিকেট বিক্রেতাদের বকছিলেন।....সালারা সব টিকেট কালো বাজারি করে ফেলেছে এখন উপায়....দেশে যাবো কি করে?চলন্ত পথে সমর সূর্য্যের সামনে পড়েন সে।
-কি ব্যাপার করিম চচা কি হইছে..?সমরের উক্তি।
-আর কইয়েন না গেছিলাম টিকেট কাটতে বউ বেটি নিয়া দেশে গিয়ে ঈদ করব বলে।
-তবে টিকেন পেয়েছেন?
-নারে ভাই সালারা পাচশ টাকার টিকেট আটশ টাকা চায়...সব সালারা ধান্দাবাজ।রোজা এলে সব ধান্দাবাজরা এক হয়ে ধান্দাবাজী শুরু করে দেয়।কে শুনে কার কথা সরকার বলছেন রমজানে জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক থাকবে,বাস্তবে এর উল্টো....নাহ্ দেশটা এবার রসাতলে গেল।সমর বুঝতে পারলেন করিম চাচার কথার রেলগাড়ী চালু করে দিয়েছেন নিশ্চিত এবার নাপিতের পাট লইবেন তাই তাকে কোন মতে পাশ কেটে চলে এলেন।
 দেশ ব্যাপি চলছে পুলিশের সাড়াশিঁ অভিযান এক পুলিশ অফিসারের স্ত্রী নিহত তাই সারা দেশে অপরাধী নির্মুল নামক সাড়াশিঁ অভিযান তাতে প্রায় ১১ হাজারো লোক গ্রেফতার হন তার মধ্যে অধিকাংশই নিরাপরাধী।এই সাড়াশিঁ অভিযানে কি লাভ হবে তা আমাদের বোধগম্য নয় এরই মধ্যে এসপি বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদে আটক করেন প্রশাসন,হলুদ মিডিয়ায় গুঞ্জন উঠে এসপি বাবুল আক্তার তার স্ত্রীর পরোকিয়ায় যুক্ত ছিলেন বলে সে নিজেই ভাড়াটি খুনিদের দিয়ে খুন করিয়েছেন তার প্রিয়তমা নিহত মিতুকে।এ দেশের নারীরা যে মরেও শান্তি পাননা তারই প্রমান করলেন পুরুষ শাসিত এ দেশের নোংরা সমাজ।যা পরবর্তীতে গুজব বলেন প্রশাসন।অথচ গ্রেফতার কৃত সেই মামলা গুরুত্বপূর্ণ দুই আসামীকে ক্রশফায়ারে হত্যা করেন প্রশাসন কিন্তু কেনো?এত কেনোর উত্তর আসবে জিরো।

এর মধ্যে 13495104_10208268119973509_7681218420349318754_nযুদ্ধাপরাধী রাজাকার মীর কাসেমকে কেন্দ্রীয়  কারাগারে নিয়ে আসা হয়।মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আলবদর কমান্ডার ও জামায়াতের শুরা সদস্য মীর কাসেম আলীকে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ঐ বছরে তিনি রায় বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আপিলের ওপর শুনানি করেন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ। শুনানি শেষে ৮ মার্চ রায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ।বিচারের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে আবারো মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের শুনানি ২৫শে জুলাই করা হয়।
রমজান মাস প্রায় শেষের দিকে ঈদের আমেজ দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে।নারীর টানে ছুটছেন সবাই যার যার গন্তব্যে পাড়ার ছোট একটি চা দোকানে বসে তা অবলোকন করছেন সূর্য্য অভি সমর।তাদের স্থায়ী ঠিকানা এই শহরে হওয়াতে এমন সব উৎসবে তাদেরকে কোথাও যেতে হয় না বলে হাফ ছেড়ে যেন বেচেছেন।কেননা চোখের সামনে বাড়ী ফেরা মানুষের যানজটের  দূর্ভোগ দেখে তারা মনে হয় স্বর্গেই আছেন।এরকম কিছু কথা বার্তা চলছিল তাদের মাঝে হঠাৎ সমরের মোবাইলে ফোন আসে।সমর রিসিভ করে কথা বলতে তাদের কাছ হতে কিছুটা দূরে গিয়ে কথা বলছেন।এ দিকে অভি চেচাচ্ছেন সমরকে উদ্দ্যেশ্য করে।
-কি সহি মালাউন দূরে গেলি কেনো?তুই কি মনে করছিস এই ঈদে তোদের পার্টি ছাড়াই ছেড়ে দেবো!
-কিসের পার্টি?সূর্য্যের প্রশ্ন।
-ওহ্ তো বলাই হয়নি....ওরা গোপন অভিসার সেরে ফেলেছে।
-মানে?
-ওরা গত পরশু কোর্ট ম্যারিজ করেছে।
-কেনো?
-কেনো আবার ওর লাভারের আব্বা ওর সাথে তার মেয়েকে বিয়ে দিবেন না কিছুতেই।ওর মা ওর চাচাদের নিয়ে গিয়েছিলেন ওর লাভারের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কিন্তু কোন লাভ হয়নি তাই ওরা দুজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোর্ট ম্যারিজ করে ফেলল......।
সমর ফোনের কথা শেষ করে ওদের সাথে যোগ দেয়।মুখটা মলিন কপালে চিন্তার ভাজে সমুদ্রের ঢেউ।সূর্য্য তাকে ভাল মন্দ জিজ্ঞাসা করল।
-কিরে নতুন জীবন কেমন লাগছে?
-কই সময় পেলাম কই....এই তোরা একটু বস আমি একটু আসছি।
-কই যাবি?
-গুলসানে,
-কেনো?আমরাও তোর সাথে যাবো...সমস্যা আছে?
-না..চল তাহলে,....রাত বেড়ে চলল তাড়া তাড়ি ফিরতে হবে বাড়ীতে আবার।

একটি রিক্সা নিয়ে তিনজনে চললেন গুলসানের দিকে....চারদিক এখন কেবল ব্যাস্ততা।এত ব্যাস্ততার মাঝে সবগুলো রাস্তা যদি ওপেন না থাকে তবে যানজটে জীবন অতিষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক তাই রিক্সাওয়ালা যে দিক দিয়েই গুলসানে যাবার চেষ্টা করছেন সে দিকের অভিমুখে বাধার সম্মুখিন হচ্ছে।লোকমুখে জানা যায় গুলসানের একটি স্প্যানিস রেস্তোরায় জঙ্গিরা হামলা করেছে।অগত্যা ওরা বাধ্য হয়ে রিক্সা ছেড়ে পায়ে হেটে চলল ঘটনাস্থলের দিকে।

আর্টিসানে-নারীদের-ওপরই-বেশি-নৃশংসতা-চালিয়েছে-জঙ্গিরাদেশে জঙ্গি হামলার ইতিহাসে এই প্রথম কোন এক স্থানে মানুষকে জিম্মি করে হামলা চালায়।গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হানা দিয়ে বিদেশি সহ অন্তত ৩০ জনকে জিম্মি করে।তাদের উদ্ধারে জঙ্গিদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কয়েক দফা গোলাগুলি ও সংঘর্ষে হয় তাতে দুই জন সাহসী পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়।পরে অপারেশন থান্ডারোল্ড এ ছয়জন জঙ্গি নিহত হন একজনকে জীবিত গ্রেফতার করেন।উল্লেখ্য নিহত সবগুলো জঙ্গিই আমাদের সোনার বাংলাদেশের উচ্চ শ্রেনীর উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের গুণধর সন্তান।সেখানে জঙ্গিরা নারীদের উপর বেশী অত্যাচার চালিয়ে হত্যা করেন......এই হিজাব নেই কেনো?
সমর কেমন যেন এক অজানা উৎকন্ঠায় এ দিক সে দিক তাকাচ্ছেন,মনে হয় গুলসানের এই হামলা স্থলের আশপাশে সে কাউকে খোজ করছেন।

চলবে...

ইচ্ছে হলে আগের পর্বটি পড়তে পারেন

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ