নারীরা নাকি লোভী!

নীরা সাদীয়া ২৩ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ১০:৪৬:৪৭পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি, সমসাময়িক ১৫ মন্তব্য

প্রথমে একটা ছোট্ট কাহিনী দিয়ে শুরু করি, যা নিজের সাথে ঘটেছে। আমার এক বান্ধবী একটা বিয়ের প্রপোজাল দেয়। বায়োডাটা জেনে দেখি ছেলে বেকার,তবে ভবিষ্যতে কিছু করবে। সেই ছেলের সাথে আমার কোন পরিচয় নেই। তো, বান্ধবীকে মানা করে দিলাম এই বলে যে, এমন প্রপোজাল আমার বাবা মা রাজী হবেন না। সেও ছেলেকে মানা করে দিল। এটা আবার এক পরিচিত ছোট ভাই জানতে পারল। তারপর সে আমাকে লোভীসহ যাবতীয় নানা কটু কথা শোনাল।

কিছুদিন পর, সেই ছোটভাইয়ের বড়বোন একটা বেকার ছেলের সাথে পালিয়ে গেল।ঘটনা শুনে তাকে ফোন দিলাম। বলল,বোনকে ফিরিয়ে এনেছে। এক বিদেশ ফেরত পাত্রও রেডি, বিয়ে দিয়ে দেবে। জিজ্ঞেস করলাম, যে ছেলের সাথে পালিয়েছিল, তার সাথে বিয়ে কেন নয়? উত্তরে বলল,
"তাদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস আমাদের থেকে অনেক কম।তাছাড়া সেই ছেলে আমার বোনকে সুখী রাখতে পারবে না!"  :c

এবার বুঝুন, এসব ছেলেরা কতটা কী! নিজের বেলাতে বেশিরভাগ ছেলেই চায় তার বেকারত্ব দেখেও কোন মেয়ে তার কাছে চলে আসুক।কিন্তু নিজের বোনকে ঠিকি ভাল চাকরী করা পাত্রের হাতে পাত্রস্থ করতে চায়!!! :c

বেশির ভাগ ছেলেই আবেগ দিয়া যতটা ভাবে,বিবেক দিয়ে তা ভাবে না। তাদের একটাই কথা, মেয়েরা লোভী, তারা পয়সাওয়ালা স্বামী চায়।
আচ্ছা, আপনারা কি নিজের চোখে কখনো দেখেন নি, বেকার যুবক প্রেমিকার হাত ধরে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ২/৪ দিন/মাস রোমান্স করার পর তাদের ভালবাসা কিভাবে জানালা দিয়ে পালায়? অতপর একে অন্যের গায় কাঁদা ছোড়াছুড়ি করে অবশেষে ঘরের মেয়ে ঘরে ফেরে,ঘরে ছেলে ঘরেই থাকে। কিন্তু মাঝখানে ঘটে যায় অনেক কিছু! এরকম কর্মসংস্থানহীন কটা ছেলেমেয়ের সংসার টেকে?
তার কারণ কি? মেয়েরা লোভী, তারা খেতে চায়,পরতে চায়! যার স্বাদ আহ্লাদ মেটাতে পারবেন না,কেন তাকে হাত ধরে টেনে এনেছিলেন,বলতে পারেন? নাকি তখন ভাবেন নি যে সে একটা মানুষ,তার জন্যও আপনার প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে হবে? যেখানে আপনি নিজের চাহিদা মেটাতেই অক্ষম,সেখানে আরেকটা মানুষকে কি আশ্বাস দিয়ে টেনে আনেন? শুধু ভালবাসা দেবেন বলে? আমি বলছিনা যে ভালবাসার প্রয়োজন নাই,কিন্তু শুধু ভালবাসা দিয়ে কি ফুটপাত থেকেও এক কেজি চাল কিনতে পারবেন?

ভেবে দেখুন, নারীরা লোভী, তাহলে আপনার মাও লোভী। -:-  যেহেতু তিনি আপনার চাকুরীজীবী বাবাকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি যদি লোভী না হতেন, তাহলে জন্মের পর আপনার মুখে খাবার জুটত না,আপনাকে ভাল জায়গায় রাখতে পারত না,ভাল স্কুলে পড়াতে পারত না। তারা যদি কেবল সারাক্ষণ নিজেদের প্রেম নিয়েই মত্ত থাকতেন, তাহলে পরবর্তীতে আপনাদেরকে কিভাবে লালন পালন করবেন তাও ভাবতেন না। এগুলো হল বাস্তববাদী চিন্তা। আপনার মা এগুলা না ভাবলে সবচেয়ে বেশি গালি আপনারা তাকেই দিতেন। সবচেয়ে বেশি নরক হত আপনাদের জীবনটাই।

২ ঘন্টার রুমডেট জন্ম দেয় একটি অবৈধ শিশুর। তখন ছেলেটির কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে মেয়েটি ত্যাগ করে আসে তার গর্ভস্থ সন্তানকে। তখনো কিন্তু প্রেম কেন করল,রুমে কেন গেল, এসব নিয়ে আপনারা সেই মেয়েটিকেই দোষারোপ করেন। তখন কিন্তু ভাবেন না, ছেলেটির রোমান্সের কথা!

২ টাকার ঝাল মুড়ি খেয়ে পার্কের আড্ডা জমে,কিন্তু রোজকার দিনে প্রায় ২০০ টাকার কাঁচাবাজারই লাগে। তখন সেটা চাইলেই বেকার স্বামীর মাথা নষ্ট! পারেতো স্ত্রীকে ধরে মারধোর করে, এমন লোভী (!) মেয়েকে বিয়ে করার জন্য আফসোস করে। বউ তো একটা যন্ত্র, তার শাড়ী লাগবেনা, গয়না লাগবে না, বাজার লাগবে না। তবু তাকে সুন্দরী হতে হবে, সে লুঙ্গি পরে থাকুক বা ছেঁড়া কাঁথা জড়িয়ে থাকুক, সেটা দেখার বিষয় না! কারণ বিয়ে তো করেছিল রোমান্স করার জন্য, বৌ নামক মানবীর কোন আব্দার পুরা করার জন্যে নয়!

প্রতিটা বাবা মাই তাঁদের মেয়ের স্বাচ্ছন্দ চান, সেটা চাওয়া কি অন্যায়? শুধু ভালবাসা দিয়ে কি জীবন চলে? অলস, কুঁড়ে ব্যার্থ আর ইমোশনাল ফুল বাদে বাকিরা কি বলবেন?

একটা ছেলে এতগুলো দিক না ভাবলেও একটা মেয়ে তার বাস্তবধর্মী মানসিকতা দিয়ে এগুলো ভাবে। আর তাই তারা আপনাদের (অলস+কুঁড়ে+ব্যার্থ+ভন্ড) কাছে লোভী(!)

পরিশেষে একটাই কথা বলব, এদেশের ছেলেরা মেয়েদের পেছনে ঘুরে, অতপর পটাতে না পেরে তাদের নিন্দে করে যতটা সময় নষ্ট করেন, ততটা সময় যদি নিজেদের কল্যানে ব্যায় করতেন, পড়াশুনো আর ক্যারিয়ারে মনযোগী হতেন এবং মেয়েরা রূপচর্চা আর সাজগোজ করে সময় অপচয় না করে ক্যারিয়ার গঠন করতেন, তাহলে এগিয়ে যেত দেশ, কমে আসত নারী নির্যাতন।

★প্রেম করুন বিয়ের পর★

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

  • নিতাই বাবু

    এবার বুঝুন, এসব ছেলেরা কতটা কী! নিজের বেলাতে বেশিরভাগ ছেলেই চায় তার বেকারত্ব দেখেও কোন মেয়ে তার কাছে চলে আসুক।কিন্তু নিজের বোনকে ঠিকি ভাল চাকরী করা পাত্রের হাতে পাত্রস্থ করতে চায়!!!

    নিজের বেলায় ষোলআনা, পরের বেলায় একআনাও না । এটাই হচ্ছে আমাদের বিবেকবুদ্ধি! বুঝলেন দিদি? এজন্য শুধু নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি না হচ্ছে গোটা সমাজ ।
    বিষয়টি খুব সুন্দরভভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করতে পেরেছেন দিদি । ধন্যবাদ ভালো থাকুন ।

  • মোঃ মজিবর রহমান

    বুবুরে অলস+কুঁড়ে+ব্যার্থ সব যে আমার মধ্যেও আছে । আমি পালায়। তবে এখন অনেক বাস্তব্ধম্রী হওয়ার চেস্টা করছি আপু। আপনার লেখা সকল ছেলে -মেয়ের পড়া উচিত। আবেগ দিয়ে কষ্ট, দুঃখ ভুলা যায়, বা উপলধ্বী হতে পারে কিন্তু বাস্তুব বড়ই কঠিন ।
    তাইতো রবি গুরু বলেছেন,” সত্য যে বড় কঠিন, তাই কঠিনেরে বাসিলাম ভাল, সে কখনও করেনা মোরে বঞ্চনা।,”

    বোন্টি ভাল থেক ।

  • ইঞ্জা

    আপনার সাথে শতভাগ সহমত পোষণ করছি আপু, আসলেই প্রেম আগে করার চাইতে বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রীর সাথে করা ভালো, দারুণ একটি লেখা দিলেন আপু।

  • আবু খায়ের আনিছ

    কিছুদিন আগে এক বান্ধবির সাথে কথা হচ্ছিল, দীর্ঘদিনের রিলেশন বেকআপ করেছে সে, এখন জব করছে। তার বক্তব্যটাই মন্তব্য আকাঁরে তুলে ‍দিলাম।
    যখন ছোট ছিলাম (স্কুল/কলেজ) তখন জীবনটা রঙ্গিন মনে হত, কোন কিছুই গায়ে লাগত না, কারণ দিন শেষে পেটে ভাত পড়ত, ঘুমানোর জন্য বিছানা ছিল আর নিরাপত্তার জন্য ঘর। যখন আরেকটু বড় হইলাম তখন একাকিত্ব ঘুচাতে এক সময় বয়সীর সাথে প্রেম করলাম, রঙ্গিন সুতোয় উড়তে থাকা ঘুড়িতে হাওয়া লাগল আরো জোরে।
    কিন্তু এখন, বড় হয়েছি, বাস্তবতা বুঝতে শিখেছি। আগে যেখানে রোমান্স দেখতাম এখন সেখানে বিভিষিকা দেখি। ছেলের চেহেরা ভালো, দেখতে স্মার্ট, ভালো ছেলে যাকে বলে সব, ব্যস প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। এখন জীবনের প্রয়োজনেই অর্থের সন্ধান করতে হয়, খাবারের সন্ধান করতে হয়, ঘরের সন্ধান করতে হয়, আর যোগ্যতার প্রশ্নে সবার আগেই চলে আসে, ছেলে কি করে? পজিশন কি? বাবা মা কি করে? কয় ভাইবোন? ইত্যাদি ইত্যাদি।
    বাস্তবতায় দাড়িঁয়ে নিজে দেখেছি, কর্পোরেট ওয়াল্ড কত কঠিন জায়গা, এখানে সবাই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, যে আবেগ আর ভালোলাগা নিয়ে ভালোবাসার শুরু হয়েছিল সেটা ফিকে হয়ে গেছে। ছেলের পরিবার বলে, আমি গরিব আর আমার পরিবার বলে ছেলে গরিব (দারিদ্রতা)। ব্যস রিলেশন শেষ, বুঝতে পারছিলাম দুইজনেই যে এই মুহুর্তে প্রতিষ্ঠিত না হতে পারলে জীবনটা নরকের সর্বনিন্ম স্তরে পৌছে যাবে, তারচেয়ে একটু সময় নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হই তারপর ভেবে দেখা যাবে।

    বিষয়টা এমন হতে পারত যদি সবাই এই বুঝটাই সেই বয়সে বুঝত বা বিয়ের আগে বুঝত। কিন্তু তা হয় না, কারণ আমরা ,হে আমরা দায়ী। ছোটদের সামনে কোন আর্দশ আমরা রাখছি না, একটা সুন্দর পরিবেশ দিতে পারছি না, একটা ভালো সমাজ দিতে পারছি না, একটা সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। একটা ছেলে 26/28 বছর বয়সেও জানেনা সে কি করবে? সামনের দিনগুলো তার কিভাবে যাবে? অন্যদিকে যৌবন তার থেমে থাকে না, উন্মাদনা বেড়েই চলে।

  • মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)

    ফেবুকের এই লেখাটা ব্লগে দিতে বলেছিলাম।দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।লেখা নিয়ে এখানে আমার কোন মন্তব্য নেই শুধু আপনার শেষ লাইনটির সম্পর্কে কিছু বলব।
    ★প্রেম করুন বিয়ের পর★ সমর্থন পুরোপুরি আছে।তবে বাস্তবতায় তা খুবই কম দেখা যায়।প্রেম যদি বিয়ের পর হয় তবে আগে হয় বিয়ে।এই বিয়ে তাদেরই করা উচিত যারা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল নতুবা বিপদ আছে,বিয়ের আগে দন্ডায়মান পূরুষের অহংকার সংসারের চুলোর গুতোয় উড়ে যাবে বিয়ের সাধ।সুতরাং ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।তাই প্রেম যা থাকে তা বিয়ের আগেই থাকে।যদি আর্থিক স্বচ্ছলতায় বিয়ে করা হয় সেখানে প্রেম থাকবে ভুরি ভুরি যদি আপনার মন প্রেমানুভুতির যা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত ছেলেদের মনে থাকে না।নিজেকে প্রতিষ্টিত করতে জীবনকে এতো মুল্য দিতে হয় যে সেখানে আর প্রেম ভালবাসা অবশিষ্ট থাকে না যা থাকে তা কেবলি টাকার নেশা।সুতরাং
    প্রেম করতে বা দিতে নিদিষ্ট কোন সময় নেই।আপনার আমার ভাল একটি মনই প্রেম বা ভালবাসাকে জীবিত রাখে বা রাখবে।চমৎকার একটি লেখা সেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

    • নীরা সাদীয়া

      অনেকাংশেই সত্য বলেছেন। কিন্তু আমার যা মনে হয়, টাকার নেশা, আর জীবনধারনের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা উপার্যন দুটো এক নয়। আরেকটা বিষয় হল, ধরুন আপনি আগে কখনো প্রেম করেন নি। কোন মানবী আপনার পাশে ছিলনা। তখন বিয়ের পর যখন জীবনের প্রথম একজনকে পাশে পাবেন, তখন তার সাথে প্রেম না করেও থাকতে পারবেন না। দেখবেন ছোট ছোট কারণেই তার প্রতি ভাল লাগা কাজ করবে।

      আবার অপরদিকে, যে ছেলে/মেয়ে আগেই প্রেম করে সব আকর্ষণ মিটিয়ে দিয়েছে, তার জন্য নিজের স্বামী/স্ক্রীকে পান্তাভাত ছাড়া বা মেশিন ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না। আর যাদের চরিত্র খারাপ, রোজ নতুন নতুন…. চাই, তাদের কথা আলাদা।

      তাই নিজের অতি মূল্যবান অনুভূতিগুলো ভালবাসার সহিত যত্ন করে তুলে রাখলে এই সমস্যা হয় না। বরং অসময়ে যারাতার হাতে তুলে দিলেই এই সমস্যা হয়।

      ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল।

  • শুন্য শুন্যালয়

    সেদিন এক ছেলে স্ট্যাটাস দিয়েছে দেখলাম, মেয়েরা ছেলেদের সাথে ঘুরবে, ফিরবে, ছেলেদের টাকায় রেস্টুরেন্টে খাবে আর প্রেমের প্রপোজাল দেয়া মাত্র বলবে, আমিতো তোমাকে বন্ধু ভাবি। মেয়েদের সম্পর্কে প্রায় সব ছেলেদেরই এমন নেতিবাচক ধারনা।
    নিজেদের বেলায় স্বার্থ ছাড়া কিচ্ছু চোখে দেখেনা, অন্যের বেলায় স্বার্থ না মিটলেই লোভী।
    আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে বাস্তবতা আর বুদ্ধি দিয়েই বিচার করা উচিৎ।
    খুবই ভালো একটি লেখা শেয়ার দিয়েছ নীরা। লেখা আসলে এমনই হওয়া উচিৎ। তোমার লেখার বিষয়বস্তু বা ধার যেকোন অভিজ্ঞ লেখককে হাত মানাবে। লেখা থামাবে না কখনোই, মনে থাকে যেন।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ