শুধুই ভূত

বায়রনিক শুভ্র ১৯ নভেম্বর ২০১৩, মঙ্গলবার, ০৫:২৭:২২অপরাহ্ন এদেশ ১২ মন্তব্য

বাংলাদেশের গ্রাম্য সমাজের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ ভূত/জিন । এমন কোন গ্রাম খুজে পাওয়া যাবে না যেখানে একটা দুটি ভূত বা জিন খুজে পাওয়া যাবে না । অস্তিত্বহীন কুসংস্কার মানুষের মনে কতটা গভীর প্রভাব ফেলতে পারে তার প্রমাণ এই ভূত । যুগ যুগ ধরে মানুষ বিশ্বাস করে আসছে ভূত/জিন আছে । এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভাব ও প্রচার অনেক কুসংস্কার দূর করতে পারলেও এই ভূতের ভয় রোধ করতে পারে নি । ভূত/জিনের ভয় একেবারে শিশুবেলা থেকে মানুষের মনে স্থায়ীভাবে রোপণ করা হয় । ফলে বড় হয়েও মানুষ এগুলো বিশ্বাস করে ।

 এখন দেখা যাক ভূত আসলে কি । মাটি,জল,বাতাস,আলো ও তাপ এই পাঁচটি প্রাকৃতিক বস্তু কে এক সঙ্গে বলা হয় পঞ্চভূত । মানুষ মারা গেলে তার দেহ এই পঞ্চভূতে মিলিয়ে যায় । সম্ভবত এইকারণে প্রেতাত্মাকে বাংলায় ভূত বলা হয় । ভূতের ভূত নামেরও উৎপত্তি সম্ভবত এখান থেকে । বাংলায় প্রধানত  ৫ ধরনের ভূতের অস্তিত্ব পাওয়া যায় । এগুলো হলঃ- ১। শাকচুন্নি; ২। মামদো ভূত; ৩। ব্রহ্মদৈত্য; ৪। পেত্নি; ৫। স্কন্ধ কাটা । এর বাইরেও কিছু এলাকা ভিত্তিক ভূতের কথা মানুষের মুখে শোনা যায় । তবে এগুলোই বাংলার ভূত সমাজের প্রধান প্রধান ভূত । পুরো বাংলা একসময়ে এই ভূত সমাজের প্রভাবে ভীত সন্ত্রস্ত্য হয়ে থাকত , যদিও সময়ের সাথে সাথে জিন/ভূতের ভয় ও প্রভাব ধিরে ধিরে কমে আসছে । এখন দেখা যাক ভূতের এই শ্রেণীবিভাগ কিভাবে করা হয়ঃ-

১। শাকচুন্নিঃ সধবা মহিলা মারা যাওয়ার পর যদি তার আত্মা প্রেত লোকের অধিবাসী হয় তবে তাকে শাকচুন্নি বলা হয় । এটি স্ত্রী লিঙ্গের ভূত ।সাধারণত এইধরনের ভূত বড়দিঘী সংলগ্ন পুরাতন কোন গাছে বা সরাসরি পুকুরেই বসবাস করে । মাছ এদের খুব প্রিয় খাবার । যদিও কাঁচা মাছ খাওয়ার ঘটনা খুব একটা শোনা যায় না । তবে রাতের বেলা রান্নারত গৃহিণীদের কাছে এরা নাকি সুরে মাছ চেয়েছে এরকম ঘটনা বিভিন্ন লেখকের লেখায় লিপিবদ্ধ আছে । শাকচুন্নি মাঝে মাঝে মানুষের ঘাড়েও ভর করে । তবে এরা বেছে বেছে শুধুমাত্র অবিবাহিত মেয়েদের ঘাড়েই ভর করে । শাকচুন্নির হাতে মানুষ মারা গিয়েছে এধরনের কোন ঘটনা শোনা যায় না।

২। মামদো ভুতঃ কোন মুসলিম ব্যাক্তি যদি মারা যাওয়ার পর প্রেত লোকের বাসিন্দা হয় তবে তাকে মামদো ভূত বলে । এটি পুরুষ লিঙ্গের ভূত । মামদো ভূত সাধারনত পুরাতন বাড়িসংলগ্ন বড় গাছ বা ফাকা বিলের মধ্যে বড় কোন গাছ বা পুরানো পরিত্যাক্ত পাত কুয়ার আশেপাশে বসবাস করে । এরা কিছুটা বদরাগী গোছের হয় । মানুষের ঘর বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি ও ভাঙচুর করে । মামদোভূতের হাতে মানুষ খুন হওয়ার ঘটনা শোনা যায় ।

৩। ব্রহ্মদৈত্যঃ ব্রাহ্মণ বর্নের কেউ যদি মারা যাওয়ার পর প্রেতলোকের অধিবাসী হয় তবে তাকে ব্রহ্মদৈত্য বলে । এটি পুরুষ লিঙ্গের ভূত । সাধারণত ব্রহ্মদৈত্যরা পুরাতন বাড়িতে বসবাস করে । এমনকি মানুষ এবং ব্রহ্মদৈত্য এর সহবস্থানেরও বিভিন্ন ঘটনা বইতে লিপিবদ্ধ আছে । তবে কাটাওলা গাছেও এরা বসবাস করে ।  ব্রহ্মদৈত্যকে কোথাও চুপচাপ লাজুক গোছের ভূত হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে কোথাও খুবই বদরাগী নির্মম হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে । ব্রহ্মদৈত্যের হাতে মানুষ খুন হওয়ার ঘটনাও শোনা যায় ।

৪। পেত্নিঃ ভূতের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নবর্নের ভূতের নাম পেত্নি । এটি স্ত্রী লিঙ্গের ভূত । এরা সাধারণত শেওড়া গাছে বাস করে । প্রধান খাদ্য কাঁচা মাছ । ইলিস মাছের প্রতি এদের খুব টান । বাজার থেকে ইলিস মাছ নিয়ে ফেরার সময় পেত্নির পিছু নেয়ার ঘটনা প্রতিটি গ্রামেই কয়েকবার ঘটেছে । পেত্নি নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার ঘাড়েই ভর করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের উপর বেশি ভর করে । সদ্য বিবাহিতা নারীদের এরা বিশেষভাবে পছন্দ করে । পেত্নির হাতে মানুষ খুন হওয়ার ঘটনাও শোনা যায় ।

৫। স্কন্ধ কাটাঃ স্কন্ধ কাটা সম্বন্ধে খুব একটা তথ্য জোগাড় করতে পারি নি । এরা সাধারণত বন বা জংলা অঞ্চলের অধিবাসী । এদের দেহ আছে কিন্তু মাথা নেই । এবং মানুষ এদের সামনে পড়লে সাধারণত জীবিত অবস্থায় ফেরে না । এরা মানুষের দেহ বা কোন প্রাণীর দেহ নিয়ে মানুষের সামনে হঠাৎ উদয় হয় । এবং কখনও ঘাড় মটকে বা রক্ত চুষে মেরে ফেলে ।

এর বাইরেও বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শত শত ভূতের কাহিনী ।

 

আমার এই লেখার তথ্য বিভিন্ন বড় বড় লেখকের ভূতের গল্প থেকে সংগ্রহ করা । এর পাশাপাশি গ্রাম্য মানুষের ভূতের প্রতি ধারনা থেকেও কিছু কিছু সংগ্রহ করেছি । ভূত আমাদের লোকজীবন ও সাহিত্যের একটা অংশ । ভূতের উপর এখনও কোন গবেষণা বা বই প্রকাশিত হয়েছে বলে এখনও শুনি নি । কারো খোঁজে যদি এই ধরনের কোন ডকুমেন্ট থাকে তাহলে জানালে উপকৃত হব ।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ