ক্রাশ

নীরা সাদীয়া ২১ জানুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ০৩:৫৯:৫০অপরাহ্ন গল্প, সাহিত্য ১০ মন্তব্য

সেপ্টেম্বরের এক অলস দুপরে বসে বসে ঝিমুচ্ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ পুরোনো বাটন ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলাম,

: কে বলছেন?
: আমি অর্ণব।

ছোটবেলার বেশ কজন ক্রাশের ভেতর অর্ণব একজন! কিন্তু একই নামে আরো কত মানুষ থাকতে পারে।তাই সাতপাঁচ না ভেবে আবার কথা বললাম, ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম "হ্যালো........ হ্যালো" বলেই চলেছে।

: কে অর্ণব?
: চিনতে পারলে না?
: না
: অর্ণব চক্রবর্তী।

অবাক বিষ্ময়ে আরো কিছুক্ষণ থ মেরে রইলাম! হঠাৎ এক টুকরো স্মৃতি যেন চোখের কোণে ভেসে উঠলো, নতুন উদ্যমে জীবন্ত হয়ে ধরা দিলো। আমি, কেয়া, তরী, ঝিলামসহ আরও অনেকে মিলে প্রায় প্রতিদিনই এই অর্ণবকে নিয়ে কত কি আলোচনা করতাম! আসলে কি প্রায় প্রতিটি স্কুলে/কলেজে এমন কিছু ছেলে থাকে যারা প্রায় অনেক মেয়েরই ক্রাস বা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে, আবার এমন কিছু মেয়ে থাকে যাদের পেছনে ছেলের দল কিলবিল করে ছোটে! অর্ণব ছিলো তেমনি একটা ছেলে। অনেকেই তাকে নিয়ে ভাবতে পছন্দ করতো। তো একদিন হলো কি, কেয়া পথে হেঁটে যাবার সময় অর্ণবকে দেখতে পেয়ে তাকে ডেকে কথা বললো। ছেলেটিও স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তর দিলো। পরদিন ক্লাসে এসেই এই ঘটনা অত্যন্ত উচ্ছাসের সাথে কেয়া সবাইকে শোনালো। শুনে একেকজনের মুখের ভাব একেক রকম হয়ে গেলো। আমি যে ঠিক কোন ভাবটা ধরব বুঝতে পারছিলাম না। অন্যদের মুখ বেজায় নীরস দেখে ভেতরে ভেতরে হাসি পাচ্ছিল। অবশেষে মুখ খুললো
ঝিলাম : এটা কোন আনন্দের কথা হলো নাকি? অর্ণব কোন মেয়ের সাথেই কথা বলে না, আর তোর সাথে কথা বলেছে? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? কি বলিস সবাই?

তরী: পথে ঘাটে দেখলেই কথা বলতে হবে নাকি?

কেয়া: কী এমন করেছি? একটু কথাই তো বলেছি।

ঝিলাম: তোর এই বেশি আগ্রহী স্বভাবটা আর গেলো না।

কেচমেচকেচমেচকেচমেচ.........

আমি বসে ভাবছিলাম, "ইশ কেয়ার পরিবর্তে যদি সেখানে আমি থাকতাম!..." হঠাৎ ভাবনায় ছেদ পড়লো তাদের তুমুল চিৎকারে! তারপর দেখি একেকজন রাগ করে একেক দিকে চলে গেছে। পরদিন থেকে একে অন্যের সাথে বসা তো দূরের কথা, মুখ দেখাদেখি ও বন্ধ। আমি পড়লাম মহাবিপদে, কার সাথে বসব, কার সাথে বসব না? তারপর একাই বসলাম। এভাবে কিছুদিন যাবার পর খেয়াল করলাম ক্লাসের যে মেয়েটিই কোন না কোন কারনে অর্ণবের নাম মুখে আনে তার সাথেই ঝিলাম, তরী গিয়ে ঝামেলা বাঁধায়। হয়ত ডিসিপ্লিন ম্যামের কাছে গিয়ে তার নামে মিথ্যে নালিশ দিয়ে হয়রান করে, নয়ত ব্যাগে কলার ছোলা রেখে দেয়। কী আজব ব্যাপার, কেউ অর্নবের নাম মুখে পর্যন্ত আনতে পারবে না!

সেই যে ঝিলাম, তরী, কেয়া আলাদা হয়েছিলো, আজ প্রায় ১০/১২ বছর পেরিয়ে গেছে, তবু তারা এক হতে পারেনি। অথচ সবাই এখন বোঝে, এই পাগলামীগুলো না করলেও চলত।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ১৫ মিনিট পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। এদিকে পুরোনো বাটন ফোনটা আবার বাজছে। স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখি সেই নাম্বারটাই। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে বলছে,

: কি হলো, এখনো চেননি? আরে *** এ একসাথে পড়তাম...
: চিনেছি। (গায়ে চিমটি কাটলাম আরেকবার। ব্যাথা লেগেছে, এটা তবে সত্যি)
: চিনেছো, তাহলে কথা বলছো না যে?
: এই তো বলছি।

অণুগল্প

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ