নদী সব খুলে বলতে লাগলো ওর মাকে আর ওর মা শুনে অবাক হতে লাগলেন মেয়ের জামাই কি করেছে শুনে আর বলতে লাগলেন, তুই নিশ্চয় এমন কিছু করেছিস না হলে জামাই হঠাৎ করে এমন মার মারবে কেন?
মা এতোকিছু জানালাম আমি, এয়ো বললাম সে আগে থেকেই কি করেছে এরপরও তুমি ওকে সাপোর্ট করো কেন, নদী রেগে গেল।
তা তুই এইসব যে হচ্ছে আগে বলিসনি কেন, নদীর মা পাল্টা প্রশ্ন করলেন।
বলিনি কেন জানোনা?
কেন?
বলিনি বাবার কথা চিন্তা করে, তোমাদের কথা চিন্তা করে।
এইটা কোন কথা হলো, এমন যদি হয়েই থাকে তাহলে নিশ্চয় আগেই বলতিস।
মা আসলে তুমি কি বলতে চাও, আমিই খারাপ?
না সেইটা বলছিনা, আমতা আমতা করলেন নদীর মা।
তাহলে?
নিশ্চয় তুই কিছু করেছিস, না হলে জামাই রাগে কেন?
মা আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি, এরপরেও তোমার বিশ্বাস না হলে থাক আমি ফোন রাখছি, নদীর চোখ ছলছল করে উঠলো।
শুন, জামাই কই?
জেলে।
জেলে কেন, তুই ওকে জেলে দিয়েছিস, অবাক হলেন নদীর মা।
হাঁ জেলে দিয়েছি, তোমার আর কিছু বলার আছে?
তুই ওকে জেল থেকে বের করে আনবি আর ঘরে ফিরে যাবি।
চুপ করো তুমি, আমি ভাবতেই পারছিনা তুমি তোমার মেয়েকে মৃত্যুর দুয়ারে পাঠাতে চাইছো, আমার লজ্জা হচ্ছে এই ভেবে তোমাদের কথা চিন্তা করে আমি এতোদিন ওই পশুর মারধর সয়ে এসেছি কিন্তু কখনো তোমাদেরকে বলিনি ও কতো জঘন্য মানুষ, ভেবেছিলাম বাবা,শুনলে হার্ট এট্যাক করবে, তুমি কষ্ট পাবে কিন্তু এখন তো দেখছি উল্টো, থাক তোমরা তোমাদের নিয়ে থাকো আর আমি আমাকে নিয়ে থাকবো, ভুলে যেও নদী তোমাদের মেয়ে ছিলো, বলেই নদী ফোন কেটে দিলো আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
দেখুন ভুলটা আপনিই করেছেন, যখন এইসব হচ্ছিলো তখনই উনাদের জানানো উচিত ছিলো আর এই কারণেই উনি আপনাকে ভুল বুঝলেন, জীবন বললো।
উনি আমার মা, আমার জম্ম দিয়েছেন।
আপনি তো একে আছেন বিদেশে, উনাদের তো এইখানে কি হচ্ছে জানার কথা নয়।
তারা কষ্ট পাবে, চিন্তিত হবে, বাবা হার্টের রুগী এইসব ভেবেই তো আমি বলিনি, যদি বলতাম বাবা সহ্য করতে পারতেন না এইজন্যই আমি কিছুই জানাতাম না।
এনিওয়ে বাদ দিন এইসব চিন্তা, আগে সুস্থ হয়ে উঠুন এরপর দেখা যাবে কি করা যায়, হাজার হলেও উনারা বাবা, মা, এক সময় বুঝতে পারবেন সব।
নদীর ফোন বাজতে লাগলো দেখে নদী ফোন কেটে পাশে রেখে দিলো, তা দেখে জীবন জিজ্ঞেস করলো কে ফোন দিয়েছে?
বাড়ী থেকে, নদী সাদামাটা করে জবাব দিলো।
তো ফোন ধরলেন না কেন, কথা বলুন।
আপনি বলছেন, শুনলেন না কি বলেছে?
তবুও ধরুন।
আবার ফোন বাজতেই জীবন নিজেই এগিয়ে দিলো ফোন।
হ্যালো।
মা কি হয়েছে মা?
বাবা তুমি?
হাঁরে মা, তুই কি আমাকে এতো দূর্বল ভেবেছিস, আমি এখনো অনেক শক্ত আছিরে মা, তোর মা আমাকে সব বলেছে।
বাবা তুমি কি বলো।
যে মানুষ সে যতই ভালো আর খারাপ হোক, তার কোন অধিকার নেই আমার মেয়েকে মেরে ফেলার।
বাবা, নদী আবার কেঁদে দিলো।
হাঁ মা, তোর মার ভয় থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই, এখনো তোর বাবার ক্ষমতা আছে তার মেয়েকে চালানোর।
বাবা।
তুই এক কাজ কর, তুই কবে রিলিজ পাবি?
আগামী সপ্তাহে।
রিলিজ পাওয়ার পর পরই তুই দেশে চলে আয়,তুই কোন চিন্তা করবিনা, আমি এখনো বেঁচে আছি।
বাবা, বাবা বলে নদী কান্না করতেই থাকলো।
পরদিন জীবন অফিসে কাজ করছে, ফোন বেজে উঠায় ফোন রিসিভ করলো, হ্যালো।
কেমন আছেন?
ও নদী, জি ভালো আছি, তা হঠাৎ?
একা একা সারাদিন বসে আছি, ভালো লাগছিলোনা তাই ফোন দিলাম।
ভালো করেছেন, আমি অবশ্যই একটু পরে বের হয়ে আপনার ওখানে আসতাম।
আসুন, আসুন তাড়াতাড়ি আসুন, খুব বিরক্ত লাগছে।
কিছু লাগবে?
না না কিছু লাগবেনা, আপনি আসুন তাহলে আমি রাখছি।
ওকে বাই।
বাই।
ফোন রেখে ঘড়ি দেখলো জীবন এরপর ফাইল গুলো ঘুচিয়ে নিজের ড্রয়ারে রেখে তালা দিলো আর সামনে রাখা কফিতে চুমুক দিয়ে শেষ করে উঠে গেল, হ্যাংগারে রাখা কোট হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেল নিজ রুম থেকে।
নিজ গাড়ীতে উঠে কোট পিছনে রেখে টাই খুলে নিলো আর সেইটাও রাখলো কোটের সাথে এরপর ফোন দিলো মেয়েকে।
সুইট হার্ট কি করছো তুমি?
ড্যাড আমি খেলছি জিনির সাথে, তুমি কখন আসবে?
মেবি নাইন অর টেন।
ওকে নো প্রবলেম।
টেইক কেয়ার বেবি।
ইউ টু ড্যাড।
বাই।
বাই সুইটি।
ফোন কেটে দিয়ে জীবন গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে গেল পার্কিং লট থেকে।
হ্যালো কেমন আছেন, জীবন হসপিটালে নদীর রুমে প্রবেশ করতে করতে জিজ্ঞেস করলো।
আছি কিন্তু খুব বোরিং লাগছিলো সারাদিন, একা একা আর কতো থাকা যায় বলুন।
এইতো আর কয়দিন মাত্র, এরপর তো আর সমস্যা হবেনা।
আজ পুলিশ এসেছিলো।
তাই, তা কি বললো?
রনি বেইল পেয়েছে আজ সকালে?
ওয়াট!
হুম মনেই হয় ওর বন্ধুরা বন্ড দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়েছে।পুলিশ কি কিছু বলেছে আপনাকে?
বললো, কোর্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ও যেন আমার থেকে এক হাজার মিটার দূরত্ব মেন্টেইন করে।
ভালো তো, নাহলে বিপদ হতে পারতো, জীবন বড় একটা নিশ্বাস ফেলে বললো।
কিন্তু ও তো জানোয়ার, ওকি এইসব নিয়ম মানবে?
নদী এইটা যুক্তরাজ্য, এইখানে আইন ভাঙ্গার পরিণতি খুব কঠিন।
কিন্তু আমি এখনো ওর "ল" ফুলি ওয়াইফ, নদী উদ্বিগ্ন হলো।
হাঁ ঠিক আছে কিন্তু আপনি কি চান, জীবন প্রশ্ন করলো।
ও আমাকে পেলে আর বাঁচতে দেবেনা, নদীর চোখের পানি টলটল করে উঠলো।
বুঝতে পারছি কিন্তু কি চান এখন আপনি?
আমি ডিভোর্স চাই কিন্তু বিয়ে তো দেশে হয়েছে, এইখানে কি ডিভোর্স করা যাবে?
যাবে তো অবশ্যই, আমি বলবো আপনি আরো চিন্তা করুন।
আমার চিন্তা করার কিছুই নেই জীবন, তার স্ত্রী হওয়ার পর থেকে সে যেভাবে মানুষিক ও শারীরিক অত্যাচার করে এসেছে তা মনে হয়না অন্য মানুষ তার স্ত্রীর সাথে এমন করে, ওই ঘরটাতে যখন ফিরে যেতাম তখন মনে হতো আমি ঘরে নয় দোজখে ফিরছি, নাহ আমি ডিভোর্স চাই আরর আমার উপর নির্যাতনের প্রতিশোধ চাই।
জীবন অবাক হয়ে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ, ভাবছিলো এই কি সেই নদী যার চোখে সবসময় থাকতো ভয়, চলাফেরা, কথাবার্তায় ছিলো জড়তা?
কি কিছু বলছেন না, নদী জিজ্ঞেস করলো।
আপনি আর কয়েকদিন ভাবুন তারপর দেখা যাবে আর ভালো কথা, এইখানে কি আপনার পরিচিত আত্মীয় বা অনাত্মীয় কেউ থাকেন?
না জানিনা, কেন?
আপনি রিলিজ নেওয়ার পর কোথায় যাবেন কিছু ঠিক করেছেন কি?
নদী কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবলো তারপর বললো, এইখানে তো কেউ নেই তাহলে দেশে চলে যাবো।
হুম ওকে পরে দেখা যাবে, আগে তো রিলিজ হোন।
কিন্তু রিলিজ নিয়ে রওনা না হলে এইখানে থাকবো কোথায়?
আপনার আপত্তি না থাকলে দেশে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমার বাসায় আমার মেয়ের সাথে থাকতে পারেন।
না না এতে আপনার সমস্যা হবে।
না আমার কোন সমস্যা হবেনা আর নাভিলারও কোন সমস্যা হবেনা।
তাই, নদীর চোখে ভরসার আশা।
অবশ্যই, আপনার কোন অসম্মান হবেনা এই টুকু গ্যারান্টি দিতে পারি।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
এখন কি চিন্তা মুক্ত হলেন, জীবন জিজ্ঞেস করলো।
নদী হেসে দিয়ে বললো, হাঁ।
গুড, তাহলে আজ আমি আসি, মেয়েকে নিয়ে তারপর বাসায় যাবো।
ওকে, আল্লাহ্ হাফেজ।
আল্লাহ্ হাফেজ।
জীবন মেয়েকে বন্ধুর বাসা থেকে পিক করতে গেলে বন্ধু আর তার ওয়াইফ জোর করে ডিনার করতে বসিয়ে দিলো।
উনার এখন কি অবস্থা ভাই, জীবনের বন্ধু জিজ্ঞেস করলো।
অনেকটা সুস্থ, কয়েকদিন পর রিলিজ পাবে কিন্তু হাড় গুলো জোড়া লাগতে আরো অনেক সময় লাগবে।
তোর কাছ থেকে যা শুনেছি মেয়েটা বড়ই দুখিরে।
হুম।
ভাই আমি বুঝিনা মেয়েটা এই দেড় বছর কিভাবে ছিলো ওই জঘন্য মানুষটার সাথে, বন্ধুর ওয়াইফ খাওয়া প্লেটে বেড়ে দিতে দিতে বললো।
ভাবী নদীর এই দেশে পরিচিত কেউ নেই আর দেশে ওর বাবা অসুস্থ মানুষ আর বাবার ক্ষতি হবে যদি মেয়ের দুর্দশারর কথা জানতে পারে আর এইসব ভেবেই সে চুপচাপ সহ্য করে যাচ্ছিলো।
ভাই নিন শুরু করুন।
এই মেয়েটাই তো তোকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই, বন্ধু জিজ্ঞেস করলো।
হুম।
আমাদের কোন হেল্প লাগলে বলিস।
তাতো অবশ্যই বলবো, থ্যানক্স।
খাওয়া শেষে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরে গেল জীবন, বাসায় ফিরে মেয়েকে ঘুমাতে পাঠিয়ে নিজে ড্রয়িং রুমে বসলো টিভি দেখতে।
..................... চলবে।
ছবিঃ Google.
১৮টি মন্তব্য
নিহারীকা জান্নাত
এমন জানোয়ারদের বিরুদ্ধে একসময় রুখে দাড়াতেই হয়। এদের হাত ভেংগে দেয়া উচিত। নদী সাহসি হয়েছে, ঘুরে দাড়াতে চেষ্টা করছে দেখে স্বস্তি হচ্ছে। আমাদের দেশের মেয়েরাও এখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখেছে যদিও সমাজ এদের ভালো চোখে দেখে না।
পৃথিবীর সকল নির্যাতিত নারী ঘুরে দাড়াক।
ইঞ্জা
আমি চাই আমাদের নারীরা ঘুরে দাঁড়াক, ন্যায় অন্যায় বুঝুক, তার সাথে অন্যায় হলে মাথা নত না করুক আর এই জন্যই আমার গল্পে নদীই নায়ক, নদীই নায়িকা।
ছাইরাছ হেলাল
আমাদের সমাজের চিরায়ত মাতৃচরিত্র, যা কিছুই হোক স্বামী ই স্বামী,
এই ভ্রান্তি আপনি তুলে ধরেছেন।
ধন্যবাদ,
ইঞ্জা
উপরে আমার দাদীজান নিহারীকা জান্নাতকেও এই কথা বলছিলাম ভাইজান, আমাদের লেখার মাধ্যমে যদি নারীরা জেগে উঠে তা আমাদের পরম প্রাপ্তি হবে যার কারণে এই গল্পের নায়ক ও নায়িকা হলো নদী।
মৌনতা রিতু
নরম মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়ায় তা এমনই হয়। সহ্যেরও একটা সীমা আসলেই থাকে।
আমাদের দেশের অধীকাংশ মায়েরাই এমন হয়।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
খুবই দুঃখজনক আপু, আমাদের মারা সেই সনাতনী চিন্তা ভাবনা থেকে এখনো বেড়িয়ে আসতে পারছেনা যার ফলশ্রুতিতে নদীরা নির্যাতিত হচ্ছে আর অনেক মৃত্যু বরণ করছে।
মোঃ মজিবর রহমান
নিশ্চয় তুই কিছু করেছিস, না হলে জামাই রাগে কেন?
মা আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি, এরপরেও তোমার বিশ্বাস না হলে থাক আমি ফোন রাখছি, নদীর চোখ ছলছল করে উঠলো।
হাঁ জেলে দিয়েছি, তোমার আর কিছু বলার আছে?
তুই ওকে জেল থেকে বের করে আনবি আর ঘরে ফিরে যাবি।
এত্তো কিছুর পরও মা নিজ সন্তাঙ্কে দোষারোপ করছে কিন্তু মেয়ের অবস্থা বুঝতে চাচ্ছে না। বাঙ্গালী মা।
ইঞ্জা
আমাদের মারা এখনো সেই সনাতন চিন্তা ভাবনার মাঝে বন্ধী হয়ে রয়েছে, উনাদের মন মানষিকতা বদলানোর সময় এসে গেছে।
মোঃ মজিবর রহমান
সেটাই বস।
ইঞ্জা
(3
মিষ্টি জিন
ভাল লিখেছেন.. পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, পাশে থাকবেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
যাক নদী অবশেষে প্রতিবাদ করা শিখতে পেরেছে।
চলতে থাকুক গল্প হ্যান্ডপাম্প ভাই। 😀
ইঞ্জা
ধন্যবাদ প্রিয় আপু
ইঞ্জা
দোয়া রাখবেন প্রিয় আপু।
শুন্য শুন্যালয়
Kichu একটা করলে নারীদের উপর পুরুষের গায়ে হাত তোলা জায়েজ হয়ে যায় যেন 🙂
ইঞ্জা
যে সব পুরুষ নারীদের উপরে হাত তুলে তাদের হাত ভেঙ্গে দেওয়া উচিত।
নীরা সাদীয়া
অামিও নদীর চোখে এ আগুনটাই দেখতে চেয়েছিলাম।