প্রজ্ঞা : অন্তিম পর্ব

নীরা সাদীয়া ১২ নভেম্বর ২০১৬, শনিবার, ১১:৫২:২৭অপরাহ্ন গল্প ৯ মন্তব্য

fb_img_1477459580589
:রিয়া, কাল শুক্রবার আছে,হাতির ঝিল যাবে?
:যাওয়া যায়,তবে অল্প সময়ের জন্য।
:ঠিক আছে।
হাতিরঝিলের মনোরম সৌন্দর্যে পাশাপাশি হাঁটছে দুজনে।কারো মুখে কোন কথা নেই।এ অবস্থায় রোহান প্রথম মুখ খুলল।
:তোমার বাবার বাড়িতে যাওনা কেন?
:সেখানে যাওয়ার মুখ তুমি রেখেছ?
:আমার জন্য যেহেতু সবকিছু গন্ডগোল হয়েছিল,তাই আমি চাই সব ঠিক করে দিতে।
:না,কিচ্ছু করতে হবে না তোমার।
.
এরি মাঝে রিয়ার বাবার ফোন এল।তিনি বললেন, তিনি অযথাই মেয়েকে ভুল বুঝেছিলেন।এটা তাঁর উচিত হয়নি।তাই তিনি খুব দুঃখিত।তাঁর জন্য না হলেও,মায়ের জন্য যেন রিয়া তার বাবার বাড়িতে একবার যায়।মা তাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছেন।এসময় ফোনটা কেড়ে নিয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে মা আকুতি জানালেন।তিনি মেয়েকে না দেখে আর থাকতে পারছেন না।মায়ের কান্না শুনে রিয়ার চোখেও পানি চলে এল।ভেজা চোখে জড়ানো গলায় সে মাকে জানাল যত দ্রুত সম্ভব সে যাবে মায়ের কাছে।যদিও মায়ের সাথে তার ফোনে যোগাযোগ ছিল,কিন্তু দেখা হয়নি অনেকদিন।ফোনটা রেখেই সে রোহানের দিকে তাকাল।রোহানের চোখে মুখে হাসি।
.
:আমাকেও সাথে নেবে রিয়া?
:যাবে?
:যেতে তো চাই,এই দেখ এক পায়ে খাড়া আমি 🙂
একথা বলে সত্যি সত্যি এক পা তুলে দাঁড়িয়ে গেল রোহান।
:রিয়া আমি কিন্তু অল্পবিস্তর রান্না শিখে গেছি। ওসব হাঁড়ি পাতিল, রান্নাঘর ইত্যাদি তোমার কিন্তু একা সামলাতে হবে না।
.
রিয়া ও রোহান একত্রে রিয়ার বাবার বাড়ি গেল। সেখানে কিছুদিন বেড়িয়ে আবার ঢাকা ফিরল।তাদের বন্ধুত্ব আরো জমল,তবে বন্ধুত্বের সীমানা অতিক্রম করলনা কেউ। বাসস্টপ থেকে পুনরায় দুজন আলাদা হয়ে গেল।রিয়া তার হোস্টেলে আর রোহান তার বাসায়।সেই আগের মত ফোনে কথাবার্তা,মাঝে মাঝে এদিক সেদিক ঘুরতে যাওয়া এসব করেই দিন কাটতে লাগল।হোস্টেলের অন্যান্যরা রিয়াকে যত দেখে তত অবাক হয়।তারা জানতে পারল মাঝে মাঝে রিয়া যার সঙ্গে ঘুরতে যায় সে রিয়ার স্বামী। তাদের চোখ কপালে উঠল।এ কেমন স্বামী? একি শহরে থাকে,অথচ বৌকে আলাদা থাকতে দিচ্ছে,তাকে দিয়ে সংসার,রান্না-বান্না,বসন মাজা ইত্যাদি কাজ করাচ্ছে না।আবার বলছে তার স্বামী নাকি তার বন্ধু! স্বামী আবার বন্ধু হয়? তাছাড়া ২ নাম্বারের মিনা আপা,তারওতো সংসার আছে।নেহাত তার শশুড় বাড়ি দূরে,তাই হোস্টেলে থাকতে হচ্ছে।তারপরেও সপ্তাহে অন্তত দুদিন যেতে হয় নিজ সংসারে।সেখানে গিয়ে পুরো সপ্তাহের রান্না-বান্না করে দিয়ে আসে।তার স্বামী অফিস থেকে ফিরে শুধু গরম করে খায়।পুরুষ মানুষ আবার হাত পুড়িয়ে রান্না করবে নাকি?আর রিয়ার স্বামী বলে কিনা এসব কাজ সে নিজেও পারে।সবকিছু রিয়াকে একা করতে হবে না।দুজন মিলেমিশে করবে?এমন আজব কথা শুনে হোস্টেলের একেকজন মহিলা একেক রকম ভঙ্গিতে অবাক হয়।কেউ কেউ আবার বিশ্বাসও করে না। রিয়াকে নিয়ে তাদের কৌতুহলের শেষ নেই।যদিও মনে মনে তারাও এরকম জীবন প্রত্যাশা করে,কিন্তু মুখ ফুটে বলতে তাদের যত ভয়।যার যত ভয়,তার তা পাওয়ার যোগ্যতা তত কম। রিয়ার সে যোগ্যতা আছে,তাই দিয়ে সে রোহানের কাছ থেকে ভালবাসা আর সম্মান দুটোই অর্জন করে নিয়েছে।
.
আজ ১৬ আগস্ট। রোহান রিয়াকে ফোন দিল,দেখা করতে বলল "নেস্ট" রেস্টুরেন্টে,যেখানে তারা প্রায়ই বসে। সেখানে পৌঁছেই রিয়া দেখতে পেল,আজকের পরিবেশটা অন্যরকম।পুরো রেস্টুরেন্টে রিয়া আর রোহান ছাড়া তৃতীয় কেউ নেই। একটা টেবিল ফুলে ফুলে সাজানো।টেবিলে বেশ সুন্দর করে সাজানো একটা ব্ল্যাকফরেস্ট কেক। রিয়া বুঝতে পারছে না ঘটনাটা কি!
.
:শুভেচ্ছা।
:হঠাৎ! কি উপলক্ষে?
:কেন তোমার মনে নেই?
:কি মনে থাকবে?
:ওহ,তুমিতো আবার খুব ভুলো মনের মেয়ে।
আজকের দিনটা দুটো কারনে গুরুত্বপূর্ণ। এক,আজ তোমার জন্মদিন।
:আর দুই?
:আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী!
তারা বেশ আয়েশ করে কেক সহ আরো কিছু ফার্স্টফুড খেল।বেশ আনন্দ করল। অনেকদিন পর আজ দুজনেই খুব উৎফুল্ল হল। এবার খাওয়ার পর্ব শেষ করে বাইরে বেরিয়ে দেখল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। রিয়ার ব্যাগে সর্বদাই একটা ছাতা থাকে।সেটা বের করে দুজন মিলে একই ছাতার তলে আশ্রয় নিল।দেখে যেন মনে হচ্ছে সদ্য ডানা মেলতে শেখা একজোড়া চড়ুই দম্পতি। তারপর পাশাপাশি হাঁটতে লাগল।
:আজকের দিনটার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ রোহান।
:বন্ধুকে কেউ ধন্যবাদ দেয়? তুমিতো জান,আমি তোমার স্বামী নই,বরং আমরা একে অপরের গৃহবন্ধু,যদিও বর্তমানে একি গৃহে থাকছি না। কি বল রিয়া, হবে কি আমার গৃহবন্ধু?
.
কিছুক্ষণ ভেবে রিয়া বলল
:আমার একটা নিজস্ব গৃহ চাই রোহান,যা শুধুই আমার।যে গৃহ থেকে কারণে অকারণে কেউ আমাকে বলবে না বেরিয়ে যেতে। সে গৃহ আমার, একান্তই আমার ............

অন্তিম পর্ব

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ