ভালোবাসি তোমায় (২৯তম খন্ড)

ইঞ্জা ৬ অক্টোবর ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ০৯:১৮:৫৭অপরাহ্ন গল্প ২০ মন্তব্য

images (7)

 

হাঁ মা হক আনকেলই বললো ও যেন সব সময় আমাকে হেল্প করে, এতে ওর অভিজ্ঞতা বাড়বে আর ওর কাজেরও সুবিধা হবে।
হুম তাই তো বলি আমার ভাই এতোদিন ধরে কই, প্রিয়ন্তী খোটা দিলো অভিকে।
এই তোর না কাল থেকে পরীক্ষা আর তুই এখানে গাল গল্প করছিস, যা পড়তে যা।
না আমি যাবোনা, আমি এখন রেস্টে আছি, ভেঙ্গচি কাটলো প্রিয়ন্তী।
আহা মেয়েটার পিছে লেগেছিস কেনো, সারাদিন ধরে পড়ছে, আচ্ছা শুননা, মোনালিসা মেয়েটা বেশ ভালো, ইন্টালিজেন্ট, সুন্দরী, সব দিকেই ভালো।
অভি দাঁড়িয়ে গেল আর বললো, মা তুমি কি বলবে আমি জানি, আমি নেই এতে।
অভির মা অভির হাত ধরে ফেললেন আর হাত ঠান দিয়ে কড়া স্বরে বললেন, বোস।
অভি দ্রুত বসে গেলো।
তুই আমাকে কি বলেছিলি মনে আছে?
মনে আছে মা কিন্তু এখন নয়।
দেখ তোর হক চাচারও তোকে পছন্দ, উনিই আমাকে প্রস্তাব দিয়েছেন।
কি বলো মা, কখন?
এই উনারা আসার কয়েকদিন পর।
মা আমাকে ভাবতে দাও আর আমি চাই প্রিয়র বিয়ে আগে হোক, এর আগে কোনো ভাবেই নয়।
প্রিয়ন্তীর জন্যও ভালো একটা প্রপোজাল এসেছে।
রিয়েলি, কে ছেলেটা, কোথায় থাকে মা?
ছেলে আমেরিকায় সেটেল্ড, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার, ওখানে জিএমসি গাড়ী কারখানায় ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে আছে।
ঠিক আছে মা, আমাকে বায়োডাটা দিয়ো, আমি চেক করে দেখবো।
ঠিক আছে দেখিস কিন্তু তার আগে মোনালিসার ব্যাপারে কি করবি বল, অভির মা আবার চাপ দিলেন।
মা আগে প্রিয়ন্তী তারপর আমারটা, এর আগে না, আসি ঘুম পাচ্ছে।
মা বড় এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন যা, ঘুমা গিয়ে।

অভি আর অবণী খাওয়ার টেবিলে বসে গল্প করছে, হটাৎ অবণী উঠে গেলো অভিমান করে, অভি হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে তোমার, আমায় বলো, কেন রাগ করলে, খুলে বলো, অবণী এক ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নিলো, অভি ঝট করে শোয়া থেকে উঠে বসে গেল, বুকটা ধরফর ধরফর করছে, কেন এমন হলো, এই সপ্ন কেন দেখলাম, অভি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো, চারিদিকে চেয়ে দেখলো এখনো অন্ধকার, হাত ঘড়িটা টেনে নিয়ে বেড ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দেখলো এখন ভোর সাড়ে চারটা, অভি উঠে গিয়ে সোফার সাইড টেবিলে রাখা বোতল থেকে ঢক ঢক করে পানি খেলো, পুরা,শরীরটা ঘেমে নেয়ে একাকার, মনে পড়লো বেশি ঠান্ডা লাগাতে অর্ধেক রাতেই রিমোটে চাপ দিয়ে এসি বন্ধ করে দিয়েছিল, রিমোটটা বেড থেকে নিয়ে এসি চালিয়ে দিলো অভি এরপর সিগারেটের প্যাকেট টেনে নিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে সোফায় বসলো।
অবণীর এতো তাড়াহুড়া কি ছিলো যে সে বিদেশে চলে গেলো আর বিয়েও করলো কিন্তু হঠাৎ অবণীকে সপ্ন দেখার মতো কি হলো, নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো অভি, মসজিদ থেকে আজানের শব্দ আসছে শুনে অভি কিছুক্ষণ বসে রইল চুপ হয়ে কিন্তু মাথায় ঝড় বয়ে যাচ্ছে, আজান শেষ হলে অভি বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে স্লিপিং ড্রেস খুলে পায়জামা পাঞ্জাবী পড়ে নিয়ে অজু করে এলো নামাজের জন্য, অভি যখন সুযোগ পায় তখনই নামাজ পড়ার চেষ্টা করে, নামাজ পড়লে ওর মনটা শান্ত থাকে। নামাজ শেষ করে অভি কিছুক্ষণ বসে রইল জায়নামাজে এরপর মোনাজাত শেষ করে উঠে গেল।

অভি ল্যাপটপের ব্যাগটা কাদে নিয়ে নিয়ে নিচে নেমে এসে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো, প্রিয়ন্তী আগে থেকেই রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করছিলো দেখে অভি জিজ্ঞেস করলো, তুই রেডি?
হাঁ ভাইয়া, তুমি আমাকে নামিয়ে দিও পরীক্ষার হলে।
ওকে, অভি ব্রেডে বাটার লাগাতে লাগাতে জবাব দিলো, কাজের লোক অভিকে ওমলেট দিয়ে গেলে অভি ফরক আর নাইফ নিয়ে কেটে কেটে খেতে আরম্ভ করলো।
মা কইরে?
মা কিচেনে।
মা, ওমা তুমি কই, অভি ওর মাকে ডাক দিলো।
আসছি, ভিতর থেকে জবাব দিলেন, হাত মুছতে মুছতে মা কিচেন থেকে বেড়িয়ে এলেন।
কি বল।
না তোমাকে দেখছি নাতো তাই জিজ্ঞেস করলাম, তা তুমি খাবেনা?
এই তো বসছি, বলেই মা বাটি থেকে মিক্সড ভেজিটেবেল আর হটপট থেকে রুটি নিলেন নিজ প্লেটে।
তুই প্রিয়ন্তীকে নামিয়ে দিচ্ছিস তো?
হাঁ মা, আমি নামিয়ে না দিলে কে দিবে আর বায়োডাটাটা কই দিলেনা, অভি জিজ্ঞেস করলো।
দ্বারা দিচ্ছি বলে অভির মা উঠে গিয়ে পাশের শোকেসের উপর রাখা এনভেলপ এনে অভির পাশে রাখলেন।
মা আমি এখন বিয়ে করবোনা, প্রিয়ন্তী মন খারাপ করে বলল।
হু উনি বিয়ে করবেন না, ভেঙ্গচি কাটলো অভি, ভালো ছেলে পেলে তোকে অবশ্যই বিয়ে দিয়ে দেবো।
আমি বিয়ে করবো কিন্তু তার আগে আমার জন্য লাল টুক্টুক দেখে একটা ভাবী এনে দাও।
চুপ করে খা।
আমার শেষ বলেই প্রিয়ন্তী ঘড়ি দেখলো তারপর লাফ দিলো, আমার দেরি হচ্ছে, এই ভাইয়া তাড়াতাড়ি করোনা।
হাঁ আমারো শেষ, মা আমরা আসি বলেই অভি টেবিল থেকে এনভেলপ নিয়ে ব্যাগে ভরে নিয়ে প্রিয়ন্তীকে নিয়ে বেড়িয়ে গেল।

প্রিয়ন্তীকে নামিয়ে দিয়ে অভি অফিসে চলে এলো, লিফটে সোজা নিজ অফিস ফ্লোরে এসে সবার সালাম নিতে নিতে নিজ চেম্বারের দরজায় গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো এরপর পাশের আইটি ডিপার্টমেন্টের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে অবণী যে চেয়ারে বসতো সেই চেয়ারে গিয়ে বসলো, পাশের রুমেই আইটি চেম্বার যেখান থেকে ওদের সব শীপগুলোর উপর নজর রাখা, কন্টাক রাখা হয়, অবণী চলে যাওয়ার পর থেকে ওর স্থানে অন্য কাউকে এখনো রাখার সুযোগ হয়নি। অভি বসে বসে এইসব চিন্তা করার সময় আবার গতকালকের সপ্ন এসে ওর মাথায় চিন্তা ভর করলো, পিয়নের দাক শুনে সম্বিত ফিরে পেয়ে তাকালো পিয়নের দিকে, স্যার আপনাকে কফি দেবো?
আমার রুমে দাও।
স্যার অবণী আপা খুব ভালো মানুষ ছিলেন, সব সময় হাসি খুশি থাকতেন।
হুম, যাও আমি রুমে যাচ্ছি, বলেই অভি নিজ রুমের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
নিজ রুমে প্রবেশ করে অভি প্রথমে কল দিলো জিএমকে, নিজ রুমে আসতে বলেই কফির কাপটা উঠিয়ে চুমুক দিলো।
দরজায় নক করে জিএম প্রবেশ করলে অভি উনাকে বসতে বললো।
তা জিএম সাহেব কি খবর?
আলহামদুলিল্লাহ্‌ স্যার সব ঠিক ঠাক আছে, আমাদের বঙ্গ বাহাদুর এই মূহুর্তে কন্টেইনার নামিয়ে দিচ্ছে সিংগাপুর পোর্টে এরপর ওখান থেকে রওনা হবে জাপানে আর বাকি ভেসেল গুলোও নিজ নিজ পথে আছে।
গুড, আচ্ছা আমাদের আইটি ডিপার্টমেন্টে তো একজন দরকার।
জি স্যার সাথে আপনার জন্যও সেক্রেটারি দরকার।
না জিএম সাহেব আমার আর কোনো সেক্রেটারির দরকার নেই, আপনি আইটির জন্য একজন ভালো কাউকে নিন।
ওকে স্যার, আমি আজই এড রেডি করে নিউজ পেপার, বিডি জবস আর আমাদের ওয়েব সাইটে দিয়ে দিচ্ছি, আমি আসি স্যার?
জি আসুন।

জিএম সাহেব চলে গেলে অভি ব্যাগ খুলে প্রিয়ন্তীর জন্য প্রপোজাল আসা ছেলেটার বায়োডাটা খুলে পড়তে লাগলো, পড়া শেষ হলে ইন্টারকমে কল দিলো, অপর প্রান্ত থেকে রিসেপশনিষ্ট রিসিভ করলে অভি বললো, আমেরিকা অফিসের জর্জকে কল দাও, বলে ইন্টারকম অফ করে সিগারেট ধরালো। কয়েক মিনিট পর রিসেপশনিস্ট কল দিয়ে বললো, স্যার মি. জর্জ অন লাইন এরপর টুট টুট দুইটা শব্দ করে অপর প্রান্ত থেকে জর্জের কন্ঠ ভেসে এলো, হ্যালো মি. অভি স্যার, হাউ আর ইউ?
অভি ইংরেজিতে জবাব দিলো, ইয়েস আই এম ফাইন, তোমাদের খবর কি?
ইয়েস সব কিছু ঠিক ঠাক আছে, বলুন কি করতে পারি?
আমি তোমাকে একটা সিভি পাঠাচ্ছি, তুমি খবর নাও, ইন্স এন্ড আউট সব জানতে চাই আমি, ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, যার সিভি পাঠাবো ছেলেটা আমার ছোট বোনের জন্য প্রপোজাল পাঠিয়েছে, সো ইউ নো ওয়াট টু ডু।
ইয়েস স্যার, আই উইল ডু মাই লেভেল বেস্ট।
গুড, ধন্যবাদ তোমাকে, বাই।
বাই স্যার।
অভি ফোন কেটে দিয়ে রিসেপশনিষ্ট কে ডেকে পাঠালো, রিসেপশনিস্ট এলে অভি ওকে বায়োডাটাটা দিয়ে বললো, এইটা এস্কেন করে জর্জকে পাঠিয়ে দাও, দ্যান এইটা আমাকে ফেরত দিয়ে যেও।
ওকে স্যার বলে মেয়েটি সিভি নিয়ে বেড়িয়ে গেল।

ফোন বেজে উঠলে অভি সেল ফোন রিসিভ করলো, হ্যালো, কি খবর তোমার?
ফোন দিয়েছে মোনালিসা, জবাবে বললো, কি ব্যাপার ঢাকা গিয়ে ভুলেই গেছো দেখছি?
হুম ভুললাম কই, এলামই তো কাল?
তাই বলে কি ফোন দেওয়াও বারণ, অভিমানের সুর মোনালিসার কন্ঠে।
আসলে কাল সময় পাইনি আর আজকেও খুব ব্যস্ত ছিলাম।
হয়েছে হয়েছে বুঝেছি, আচ্ছা শুনো বাবা নাকি আন্টিকে ফোন দিয়েছিলো, শুনেছো কিছু?
কি ব্যাপারে?
তুমি কিছুই জানোনা?
না কি বিষয়ে?
না থাক তাহলে, তুমি কখন এসেছো অফিসে?
এই ঘন্টা খানেক আগে।
তা এতো দেরী কেন?
প্রিয়ন্তীকে কলেজে দিয়ে এলাম, আজ থেকে ওর পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তা তুমি এমন করে প্রশ্ন করছো কেন?
দরকার আছে, তোমার উপর খবরদারী ফলাচ্ছি আর কি বলেই খিল খিল করে হেসে উঠলো মোনালিসা তারপর বললো, কেন বন্ধু হিসাবে কি আমি একটু খবরদারী করতে পারিনা তোমার উপর?
তুমি জানো আমি কেমন।
ওকে বাবা বুঝেছি, তা কিছু খেয়েছো?
হুম কফি খেলাম।
শুধু কফি, কিছু বিস্কিট ত খেতে পারো?
আচ্ছা খাবো, আনকেল কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো।
ওকে তাহলে রাখি পরে কথা হবে।
ওকে বাই।
বাই, অভি ফোন রেখে কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো।

অবণী রেডি হয়েই ছিলো, চাচা চাচী আজ পরেই যেতে চাইছে কারণ অবণীর আজ প্রথম দিন চাকরীর, রবীন এসে কল বেল চাপ দিলে ছোট চাচাই এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো, রবিন সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো অবণী কি রেডি নাকি?
হাঁ ও রেডী, তুমি ভিতরে আসো।
জি আনকেল বলে রবিন ভিতরে প্রবেশ করলো।
কফি খাবে, ছোট চাচী জিজ্ঞেস করলেন?
না আন্টি আজ না, দেরী হয়ে যাবে, অবণী কই?
ওই যে আসছে, অবণী নিচে নেমে এসে, চাচা, চাচীকে সালাম করে দাদীকে সালাম করতে গেল।
তা রবিন তুমি এতো কষ্ট করছো কি বলে ধন্যবাদ দেবো তোমাকে, চাচা রবিনের পিটে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন।
না আনকেল কি যে বলেন না, অবণী এইখানে মেহমান এখনো তাই হেল্পটা করছি।
অবণী এসে চাচা চাচীর উদ্দেশে বললো, ছোট বাবা, ছোট মা আমি আসি?
যাও মা যাও, দোয়া করছি তুমি অনেক উন্নতি করো, চাচা, চাচী আর দাদী মিলে অবণীদের দরজার থেকে বিদায় দিলেন।
অবণী গাড়ীতে উঠার পর রবিন অবণীকে একটা এনভেলপ ধরিয়ে দিল।
কি এইটা?
খুলেই দেখুন।
অবণী এনভেলপ খুলে কিছু কাগজ বের করলো, কাগজের উপরে বড় বড় হরফে লেখা ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার।
ট্রেনিং এর ফর্ম নিয়ে এসেছেন, অবণী খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করলো, তা কবে নিলেন?
গতকালই কালেক্ট করেছিলাম।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, তা কখন হবে ট্রেনিং?
প্রতি শনিবার আর রবিবার।
তা হলে তো ভালোই হবে।
আমারা এসে গেছি আপনার অফিসের সামনে, তা আপনার ছুটি হয়ে গেলে রিং দেবেন আমাকে, আমি এসে নিয়ে যাবো।
ধন্যবাদ, অফিস ত বাসা থেকে বেশি দূরে নয় আমি নিজেই যেতে পারবো, যদি অসুবিধা হয় আপনাকে রিং দেবো।
ওকে, দেখা হবে তাহলে, এখন আসি বাই।
বাই।

_________ চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ