ভালোবাসি তোমায় (২৭তম খন্ড)

ইঞ্জা ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বুধবার, ০৩:০৪:৪৫অপরাহ্ন গল্প ১৯ মন্তব্য

images (10)

 

তুমি বসো আমি একটু ওর সাথে কথা বলে আসি, অভি মোনালিসাকে বললো।
দরকার আছে, ও তো তোমাকে পাত্তাই দেইনি।
সেটাই জানতে চাইছি, বলেই উঠে গেল অভি এগিয়ে গেল ফাল্গুনীর টেবিলের দিকে, টেবিলের সামনে গিয়ে অভি দাঁড়ালে ফাল্গুনী মাথা তুলে চেয়েই চমকে উঠলো।
আমি কি বসতে পারি, অভি জিজ্ঞেস করলো।
ফাল্গুনী নিজেকে ঠিক করে নিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলো।
কেমন আছো এখন?
জি ভালো।
আনকেল, আন্টি সবাই ভালো?
জি ভালো।
কি খাবে বলো?
জি আমি অর্ডার দিয়েছি।
এই হোটেলেই উঠেছো সবাই?
না সবাই না, আমি একা।
হুম, তা অবণী কেমন আছে?
ফাল্গুনী মোনালিসার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, উনিই বুঝি আপনার গার্লফ্রেন্ড?
না উনি আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে, উনারা এইখানেই থাকেন, তা তুমি ওই ভাবে জিজ্ঞেস করলে কেন?
কি ভাবে জিজ্ঞেস করলাম?
কেমন যেন সাউন্ড করলে?
শুনেছিলাম আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে।
কার কাছ থেকে শুনেছো?
আপুই বলেছিলো।
তোমার আপু বলেছে, wonder!
এমন আশ্চর্য হচ্ছেন কেন, আপনার কি কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই?
না আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।
ফাল্গুনী যেন বিষম খেলো, হা করে চেয়ে রইল অভির দিকে।

ফাল্গুনীর ফোন বেজে উঠাতে ও দ্রুত ফোন রিসিভ করলো আর বললো, বল কোথায় তোরা, অপর প্রান্ত থেকে জবাব এলে বললো, ঠিক আছে আমি আসছি, বলেই ফোন কেঁটে দিলো।
ভাইয়া, আমার বান্ধবীরা এসেছে, আমরা নিউমার্কেট দেখতে যাবো।
কখন ফিরবে?
এই ঘন্টা দুয়েক পর।
আচ্ছা তুমি আসলে আমাকে কল দিয়ো বলেই অভি নিজের একটা কার্ড বের করে দিলো।
জি ঠিক আছে, বলেই উঠে যাচ্ছিলো তখন ওয়েটার এলো একটা পেকেট নিয়ে, ফাল্গুনী পেকেটটা নিয়ে বিলে সাইন করে দিয়ে দ্রুত বেড়িয়ে গেল।
অভি উঠে গিয়ে নিজ টেবিলে ফেরত এলে মোনালিসা জিজ্ঞেস করলো, কি হলো?
আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না, প্রথমে জিজ্ঞেস করলো তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড কিনা, আমি না করতেই বললো, ও শুনেছে আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।
আছে নাকি?
আরেহ না।
কখনো ছিলোনা?
ছিলো তাও স্টুডেন্ট লাইফে, আমেরিকায়।
তাই, কই কখনো বলোনিতো?
বলার কি আছে বলো, ও ওর সুবিধার জন্য আমাকে ডিটচ করেছে, বিয়ে করেছিলো এক আমেরিকান কোটিপতিকে।
ওহ, তাহলে ওই কথা বাদ দাও, মোনালিসা আর শুনার আগ্রহ দেখালোনা।
কফি দিয়েছিলো, অভি জিজ্ঞেস করলো?
মোনালিসা ইশারা করে দেখালো ওয়েটার আসছে।
ওয়েটার এসে কফি আর সেন্ডউইচ দিয়ে গেলে দুজনেই খেতে শুরু করলো।
মেয়েটা তোমাকে এমন প্রশ্ন করলো কেন?
অভি কফিতে চুমুক দিয়ে বললো, আমিও বুঝতে পারছিনা।

অভি রুমের মধ্যে পায়চারি করতে করতে বারবার ঘড়ি দেখছে, মোনালিসাকে বিদায় দিয়েই অভি নিজ রুমে চলে আসে আর তখন থেকেই অভি এমন করছে, সিগারেট যে কয়টা ধরিয়েছে তার খেয়াল নেয়, গড়িতে রাত পোনে দশটা, এখনো মেয়েটা আসছেনা কেন? এই সময়েই রুমের ফোনটা বেঁযে উঠলো, অভি ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো ফাল্গুনীর কন্ঠ, ভাইয়া আমি এসেছি।
এসেছো, খাওয়া দাওয়া হয়েছে?
না এখন খাবো।
ঠিক আছে আমি আসছি, তুমি রেস্টুরেন্টে যাও বলেই ফোন রেখে দিলো।
অভি নিজ রুম থেকে বের হয়ে লিফটের সামনে এসে লিফটের বোতামে চাপ দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো, লিফট এলে অভি উঠে গিয়ে রেস্টুরেন্ট লেভেলের বোতামটা চাপ দিলো, রেস্টুরেন্টে এসে লিফটের দরজা খুলে গেল অভি নেমে এলো লিফট থেকে, অভি এইদিক ওদিক তাকাতে লাগলো অভি, ফাল্গুনীকে দেখতে পেল একটা টেবিল নিয়ে বসে আছে, অভি এগিয়ে গেল ফাল্গুনীর টেবিলের দিকে, টেবিলের সামনে এসেই একটা চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করলো, কি খাবে?
ভাইয়া আমি বিল দেবো।
ভাই থাকতে কি বোন বিল দেয়।
ফাল্গুনী চুপ করে রইল, ওয়েটার এসে অর্ডার নেওয়ার জন্য দাঁড়ালে অভি ফাল্গুনীর দিকে প্রশ্নবোধক তাকালো, ফাল্গুনী বললো ও হাল্কা কিছু খাবে, অভি ওয়েটারকে গ্লাস নুডলস উইথ চিকেন এন্ড ভেজিটেবেল, প্রণ উইথ গার্লিক সস, মিট বল আর দুইটা পেপসির জন্য বললো, ওয়েটার চলে গেলে অভি জিজ্ঞেস করলো, এখন বলো অবণী কেমন আছে?
জি ভালো।
ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে?
ফাল্গুনী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপু কি বলেছে আপুর বিয়ে হবে কানাডাতে?
অভি ইচ্ছে করেই মিথ্যে বললো, না না তা বলেনি, এমনিই বললাম।
ও আচ্ছা, না আপুর এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে কেন, আপু ওখানে নতুন জব পেয়েছে।
তাই, তা কেমন জবটা?
শুনেছি ওখানকার এক শিপিং কোম্পানিতে।

খাবার দিয়ে গেলে অভি নিজে সার্ভ করে দিলো ফাল্গুনীর প্লেটে এরপর নিজে নিলো, দুজনে কিছুক্ষণ চুপচাপ খেতে লাগলো।
অভি নিজেই কথা শুরু করলো, তুমি বলেছিলে আমার গার্লফ্রেন্ড আছে তুমি শুনেছো, তা কার কাছ থেকে শুনেছো?
ভাইয়া আন্টি, প্রিয়ন্তী আপু কেমন আছেন, কথা ঘুরাতে চাইলো ফাল্গুনী।
জি উনারা ভালো আছেন, আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে তোমার আপত্তি আছে?
ফাল্গুনী চুপ করে রইল কিছুক্ষণ তারপর বললো, আপু বলেছিলো।
অভি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, তোমার আপু কিভাবে এই কথা বললো?
জানিনা, মনে হয় আপু আপনার অফিসে উনাকে দেখেছে।
অভি অবাক হয়ে চেয়ে রইলো ফাল্গুনীর দিকে তারপর অভি বললো, তোমার আপু কিভাবে বললো জানিনা কিন্তু তোমার আপু ভুল বলেছে।
এখন ফাল্গুনীর অবাক হওয়ার পালা, নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো তাহলে আপু এমন করলো কেন?
ফাল্গুনী, আমার বান্ধবী ছিলো যখন আমি আমেরিকায় পড়াশুনা করছিলাম, পরে আমাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় আর এরপর থেকে আমার আর কোন কারো সাথে সম্পর্ক হয়নি, তারপর হেসে বললো, তোমার আপু ভুল জেনেছে।
হুম তা হতে পারে।
তা কতদিন থাকবে চট্টগ্রামে?
কাল ভোরে রওনা হচ্ছি, আমাদের সফর আজ পর্যন্ত ছিলো।
ঠিক আছে ভালো থাকো তাহলে, চলো উঠি এখন, ওয়েটার বিলটা আমার রুমে পাঠিয়ে দিও, বলেই দুজনেই উঠে গেল যার যার রুমের উদ্দেশ্যে।

অভি রুমে এসে ড্রেস চেইঞ্জ করে ওয়াস রুমে গেল ফ্রেস হতে, ফ্রেস হয়ে এসে সোফার পাশে রাখা নিজের সেল ফোন তুলে ওর মাকে কল দিলো।
হাঁ মা কেমন আছো?
অপর প্রান্ত থেকে অভির মা জবাব দিলেন, ভালো আছি, তুই কেমন আছিস?
জি ভালো, প্রিয় কই?
ঘুমুতে গেছে, তা তুই কি কাল আসছিস?
হাঁ মা, কাল ভোরে আমাদের নতুন শীপের একটি সেইল করবে, ওইটা দেখেই আমি ফার্ষ্ট ফ্লাইটে চলে আসবো, অবশ্য প্রথমে অফিসে যাবো এরপর সন্ধ্যায় বাসায় আসবো।
ঠিক আছে তুই পোঁছেই একটা কল দিয়ে জানাবি পোঁছেছিস বলে।
ঠিক আছে মা তুমি চিন্তা করোনা, পোঁছেই রিং দেব।
ঠিক আছে বাবা, তাহলে এখন ঘুমিয়ে পর কাল তো ভোরেই উঠতে হবে, আমি রাখছি এখন, আল্লাহ্‌ হাফেজ।
আল্লাহ্‌ হাফেজ মা।
ফোন কেটে গেলে অভি সেল ফোনটি বেড টেবিলে রেখে একটা সিগারেট ধরালো।
অবণী ফাল্গুনীকে কেনো বললো আমার বান্ধবী আছে, নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলো আর চিন্তা করতে লাগলো অবণীর মাথায় বা এই কথা কেন এলো, সিগারেটটা এস্ট্রেতে নিভিয়ে অভি শুয়ে পড়লো কিন্তু ঘুম কি আসে, মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ফাল্গুনীর কথাগুলো।

ভোর পাঁচটায় অভির ঘুম ভাঙ্গলো ওয়েক আপ কলের শব্দে, আড়মোড়া ভেঙ্গে অভি বাথরুমে গেল, ফ্রেস হয়ে এসে কিছুক্ষণ ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলো, এরপর কল দিলো রেস্টুরেন্টে ব্রেকফাস্টের অর্ডার দেওয়ার জন্য, বিন, সসেজ, ব্রেড বাটার আর ওমলেট দিতে বললো সাথে ব্ল্যাক কফি, ফোন রেখে শাওয়ার নিতে গেল, শাওয়ার নিয়ে এসে ড্রেস চেইঞ্জ করা শেষ হলেই রুমের দরজায় নক সাথে শব্দ এলো "রুম সার্ভিস ", অভি দরজা খুলে দিলে রুম সার্ভিস ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেল, অভি ব্রেকফাস্ট করেই ফোন দিলো রিশেপ্সনে, হ্যালো রিশেপ্সন প্লিজ আমার বিলটা রেডি করুন আমি চেক আউট করবো আর হাঁ আপনাদের এখানে আমার বোন উঠেছে রুম নাম্বার থ্রিপল সিক্সে, উনার বিলটাও রেডি করুন, আমি পে করবো সাথে একজন বেলবয় পাঠান আমার লাগেজ নিয়ে যেতে, ওকে থ্যাংক ইউ। ডিনারে গেলে টেবিলের উপর ফাল্গুনীর রুমের চাবির কার্ডে রুম নাম্বার দেখেছিলো তাই সেই নাম্বারটাই বললো অভি। কিছুক্ষণ পর অভি নেমে এলো রিশেপ্সনে, বিল দুইটা এগিয়ে দিলো রিশেপ্সনিষ্ট, অভি বিল চেক করলো ফাল্গুনীরটা, নাম লেখা আছে রাজিয়া সুলতানা, অভি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিল মিটিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো, চট্টগ্রাম অফিসের গাড়ী আগে থেকে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো, তাতে চেপে বসলে গাড়ী ছেড়ে দিলো পোর্টের উদ্দেশ্যে।
কিছুক্ষণ পর ফাল্গুনী নেমে এলো রিশেপ্সনে আর বললো, আমার বিলটি রেডি করুন, রুম কার্ড এগিয়ে দিলো।
রিশেপ্সনিষ্ট রুম নাম্বার দেখে বললো, মিস আপনার ভাই আপনার বিল পে করে গেছেন, এই নিন বিল রিসিটটা।
ফাল্গুনী অবাক হয়ে বিল রিসিটটা নিলো আর জিজ্ঞেস করলো, কে বিল পে করেছেন?
মি. অভি পে করেছেন মিস।
ফাল্গুনী রেগে গেল আর বললো, উনি যখন পে করতে চেয়েছেন তখন আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো।
সরি মিস উনি আপনার ভাই বলাতেই আমি আর প্রশ্ন তুলিনি, রিশেপ্সনিষ্ট ক্ষমা চেয়ে বললো।
ফাল্গুনী আর কথা না বলে লাগেজ নিয়ে লিফটে চড়ে নিচে চলে গেল, ওর বাস এসে দাঁড়িয়ে আছে দেখে সোজা বাসে চেপে বসলো তারপর অভির কার্ড বের করে অভির নাম্বারে ফোন দিলো।
হ্যালো, অপর প্রান্ত থেকে অভির কন্ঠ ভেসে এলো।
ভাইয়া আমি ফাল্গুনী।
ওহ তুমি বলো আপু।
ভাইয়া আপনি আমার বিল দিয়ে দিলেন এইটা ঠিক করলেন না, বিলটা এইভাবে পে করাটা ঠিক না।
ফাল্গুনী, আমি তোমার কি হই?
ফাল্গুনী স্বর ছোট করে বলল, ভাইয়া।
তাহলে ভাই থাকতে বোন বিল দেবে এইটা কি ঠিক?
এরপরেও।
আপু তুমি ঢাকায় পোঁছেই আমাকে রিং দিয়ে জানিও তুমি পোঁছেছো কিনা, ওকে আল্লাহ্‌ হাফেজ, ভালো থেকো আর খালা, খালুকে আমার সালাম দিও, বলেই অভি ফোন কেটে দিলো।

কেমন লাগলো স্টেকটা, রবিন জিজ্ঞেস করলো অবণীকে।
অসাধারণ, যেমন ভালো সটেকটা তেমনি এর বিফ সস আর ভেজিটেবেলস, অসাধারণ কম্বিনেশন, অনেকদিন পর খেলাম স্টেক কিন্তু এদের প্রিপারেশন এক কথায় অসাধারণ।
আর কি খাবেন, বলুন।
আর কি, আমার খিদে মিটে গেছে।
এইখানে অসাধারণ আপেল পাই আছে, টেস্ট না করলে পস্তাবেন।
না বাবা পস্তাইতে চাইনা, আনতে বলুন খেয়ে দেখি।
রবিন ওয়েটারকে ডেকে আপেল পাই নিয়ে আসতে বললো আর টিক সেই সময় অবণীর মোবাইল ফোনে রিং হতে শুরু করলো, অবণী টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে ডিসপ্লেতে চেক করে ফোন কেটে দিয়ে আবার রিং ব্যাক করলো আর অপর প্রান্ত থেকে ফাল্গুনীর কন্ঠ ভেসে এলো, হ্যালো আপু তুই কি ব্যস্ত?
তেমন ব্যস্ত না, আমি রবিনের সাথে ডিনারে এসেছি।
ওহ আচ্ছা, ঠিক আছে আপু, তুই বাসায় ফিরে ফ্রি হলে আমাকে একটা কল দিস, ঠিক আছে?
ওকে দেবো,বেশি সিরিয়াস কিছু কি?
না আপু কিন্তু অবশ্যই কল দিস।
ঠিক আছে এখন রাখছি।
ওকে বাই।
অবণী ফোন কেটে দিয়ে রবিনকে বললো, সরি, আমার ছোট বোন কল দিয়েছিলো।
এনি থিং সিরিয়াস?
নো নো নট এট অল।

_______ চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ