ভালোবাসি তোমায় (২৪তম খন্ড)

ইঞ্জা ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ০৯:৩০:১৫অপরাহ্ন গল্প ১৮ মন্তব্য

 

images (8)

 

অভি, আসলে বাবা পাঠিয়েছে আপনাকে জানানোর জন্য, আমরা আগামীকাল চট্টগ্রাম ফিরে যাচ্ছি, মোনালিসা বলল।
তাই, তা কয়টার সময়?
এই বিকাল পাঁচটার ফ্লাইটে।
ঠিক আছে, অবশ্য আমিও আসছি দুই দিন পর, তোমরা নিশ্চয় শীপ ওনার্স এসোসিয়েশনের কনভেনশন এটেন্ড করবে?
জি তাই চলে যাওয়া, আর আসছেন যখন তাহলে আমাদের বাসায় উঠলে খুশী হবো।
আসলে এসোসিয়েশন আমাদের জন্য হোটেল ঠিক করে রেখেছে, সরি।
কনভেনশন তো একদিন, এরপর কয়েকদিন আমাদের দিতে হবে, আপনাকে আমাদের শীপ ইয়ার্ড আর চট্টগ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবো আর প্রিয়ন্তী, তুমিও আসো সাথে।
না আপু এইবার নয়, আর কয়েকদিন পরেই আমার পরীক্ষা, আরেক সময় যাবো।
চলো আনকেলের সাথে দেখা করে আসি, বাইরে থেকে এসেছি পর্যন্ত দেখা করিনি।
প্রিয়ন্তী বিদায় নিয়ে নিজ রুমে চলে গেলো আর অভি মোনালিসাকে নিয়ে হক সাহেবের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করে ভিতরে প্রবেশ করলো।
আসসালামু আলাইকুম আনকেল, কেমন আছেন?
জি বাবা ভালো, বসো বসো।
অভি সোফায় এসে হক সাহেবের পাশে বসে বললো, আনকেল কালই যাচ্ছেন?
হাঁ বাবা, কাল যেতে হচ্ছে, তুমি কি কনভেনশন এটেন্ড করবে?
জি আনকেল, আমি পরশু দিন যাচ্ছি।
তাহলে তো ভালোই হলো, তোমাকে আমরা তোমার অর্ডার কনফার্ম করে ডিটেইলস দিতে পারবো।
জি আনকেল আর একটি সুখবর হলো আমার নতুন কন্টেইনার শীপ গুলো এসে গেছে আউটারে, আর এই তিনটির উদ্বোধন হবে কনভেনশনের পরদিন, আনকেল আপনাদের থাকতে হবে উদ্বোধনের সময়।
অবশ্যই থাকবো বাবা, তা কয় নম্বর জেটিতে হবে?
জি আট নম্বর জেটিতে হবে আর কমোডোর ইস্তিয়াক উদ্বোধন করবেন।
ওকে, ইনশা আল্লাহ্‌ আমরা থাকবো আর লিসা তুমি, তুমি উদ্বোধনের সকল বিষয়ে অভিকে হেল্প করবে সাথে থেকে।
না না আনকেল, ওকে কষ্ট দেওয়ার কি দরকার।
না বাবা তুমি সব একা একা করবে কেনো, লিসা তোমাকে হেল্প করবে, মোনালিসার দিকে তাকিয়ে বললেন, কি মামনি, পারবে তো?
জি বাবা, অবশ্যই হেল্প করবো।
গুড।

দুজনেই গুড নাইট জানিয়ে বেড়িয়ে এলো হক সাহেবের রুম থেকে, অভি মোনালিসাকে রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে নিজ রুমে ফিরে এসে ওয়াস রুমে গেলো ব্রাশ করতে। ফ্রেস হয়ে এসে পিডিএফ নিয়ে শুয়ে গল্প পড়তে লাগলো আর হঠাৎ মনে পড়লো ফেইসবুকে দেখা অবণীর আইডিটার কথা, ইচ্ছে হলো আবার দেখার, উঠে ল্যাপটপটা নিয়ে সোফায় গিয়ে অন করলো আর ফেইসবুকে লগিন করে টাইপ করলো "খেয়ালি জীবন"।
অভি খেয়াল করলো অবণী লাস্ট আপডেইট দিয়েছে প্রায় ২৫ দিন আগে আর অবণীর স্টাটাস গুলো কবিতা আর একান্ত অনুভূতিতে পরিপূর্ণ আর লাস্ট আপডেইট হলো একটা কবিতা, অভি পড়তে লাগলো...

তুমি হিনা বাঁচি কি করে বলো
কেন জীবনটা আমার এমনি হলো
অজান্তে ভালোবেসে আমি তোমাকে
হারিয়েছি আজ সবই তোমারি অন্তে।

আরো আগে লিখেছে....

এলে আমার মনের কড়া নেড়ে
যেভাবে এলে তার চেয়ে দ্রুত চলে গেলে
বলিতে চেয়েছি আরেকটু সময় থাকো
তোমার দুহাত আমার হাতে রাখো
আসো চোখে চোখ রাখি
আঁকি প্রেমের আঁকিবুকি
কিন্তু ছিলোনা তোমার মনের ঠিকানা
সেখানে কড়া নাড়ার সুযোগই পেলামনা
তবুও আমি সারাক্ষন অপেক্ষায় থাকি
যদি তোমার প্রেমে অবগাহন করতে পারি।।

আরেকটা স্টাটাস পড়ে বিস্মিত হলো অভি তাতে অবণী লিখেছে, তোমার সাথে আরেজনকে কিভাবে সহ্য করি, এর চাইতে দূরে সরে যাওয়ায় সমীচীন।

কার কথা লিখেছে অবণী, অবণী নিশ্চয় কাউকে ভালোবাসতো, কে সে? অভি ল্যাপটপ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো, মাথা যেন কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে, শ্রাগ করলো অভি, অবণীর চিন্তা কেনো সে করছে, চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

অবণী আপনি কি কিছু ভাবছেন, রবিন জিজ্ঞেস করলো।
অবণী চমকে উঠে বললো, কিছু বলছেন?
বললাম আপনি মনে হয় কিছু ভাবছিলেন।
না আসলে ঘরের সবাইকে খুব মিস করছি বলেই বড় করে একটা নিশ্বাস ফেললো।
কোনো সমস্যা?
না কিসের সমস্যা?
আচ্ছা ঠিক আছে চলুন, মনে হয় এতোক্ষণে ডিনার রেডি হয়ে গিয়েছে।
চলুন।
অবণী আর রবিন ড্রয়িং রুমে এসে সবার সাথে বসলে রবিনের মা এসে সবাইকে ডাইনিং রুমে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালো, সবাই উঠে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসার পর সবাইকে সার্ভ করে দিতে শুরু করলেন উনি আর সাথে রবিনও মাকে হেল্প করতে লাগলো।
রবিন তুই বসে যা খেতে, রবিনের মা বললেন।
মা তুমিও বসো।
হুম বসছি, অবণী তুমি আর কি নিবে, চিকেন তুলে দিতে দিতে রবিনের মা জিজ্ঞেস করলেন।
ঠিক আছে আন্টি, লাগলে আমি নেবো, অবণী জবাব দিলো।
বাহবা, মেয়ের কন্ঠ শোনা গেলো তাহলে, হেসে রবিনের বাবা বললেন, তা মামনি কথা না বললে কি ভালো লাগে, তোমার আম্মু তো বেশ কথা বলেন আর তোমার আব্বুও তো তেমনি, তুমি কম কথার মানুষ কার মতো হলে?
অবণী আমার মতো হয়েছে, মাঝ থেকে ছোট চাচী জবাব দিলেন।
উঁহ, উনি এতো কথা বলেন যে আজকাল আমি নিজেই কানে কম শুনি, কান শুদ্ধ নষ্ট করে দিলেন আর এখন বলে কিনা মেয়ে আমার মত হয়েছে, ছোট চাচা ফোড়ন কাটলেন আর অবণী ছাড়া সবাই ঘর ফাটিয়ে টা টা হেসে উঠলো।

রবিন, রবিনের বাবা মা সবাই এসে অবণীদের গাড়ীতে উঠিয়ে বিদায় দিতে এলে রবিনের মা অবণীকে জড়িয়ে ধরে বললেন, খুব খুশী হলাম তোমাকে আজ আমাদের মাঝে পেয়ে, আবার এসো।
জি আন্টি, আসি।
আল্লাহ্‌ হাফেজ।
অবণীরা বাসায় ফিরে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করতে লাগলে অবণী বললো সে ঢাকায় কথা বলতে চাই, চাচা বললো, অবশ্যই মা তুমি ল্যান্ড ফোন থেকে করো।
ঠিক আছে ছোট বাবা বলেই অবণী উঠে গিয়ে ডায়াল করতে লাগলো, একটু পরই লাইন পেয়ে কথা বলতে লাগলো।
অনু তোর কথা শেষ হলে আমাকেও দিস, তোর বাবার সাথে কথা বলবো, দাদী ডাক দিয়ে অবণীকে বললেন।
অবণী সবার সাথে কথা বলে দাদীকে ডেকে ফোনে কথা বলতে দিয়ে নিজে এসে বসলো সোফাতে।
কি খাবি, সেইন্ট মাইকেলসের পুডিং আছে খুব টেস্টি, চাচী বললেন।
তাই, দাও দেখি কেমন।
চাচী উঠে গিয়ে চারজনের জন্য পুডিং নিয়ে এসে সবাইকে দিয়ে একটা টি টেবিলে রাখলেন শাশুড়ির জন্য, অবণী ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে বললো, ছোট মা এইটা তো দেখছি জেলি।
নিচে জেলি হলেও উপরে দেখ ওই সাদাটা ক্রিম পুডিং আর যখন তুই চামুচ দিয়ে পুডিং উঠাতে যাবি তখন জেলি সহ উঠে আসবে, খেয়ে দেখ।
অবণী খেতে আরম্ভ করলে দাদীও এসে যোগ দিলেন আর বললেন, তোর ছোট মা এইটার পাগল, ভাত খাক আর নাখাক এইটা প্রতি সপ্তাহে এক দুইবার খাবেই।
তাই নাকি ছোট মা, আসলেই এইটা বেশ টেস্টি।
তুই এইটা খা আর ততক্ষণে আমি হট চকলেট নিয়ে আসছি।

এক কাপ কফি নিয়ে পেপারটা পড়তে শুরু করলো, অবণী ছোটবেলা থেকেই পেপার পড়ে আর খুটিয়ে খুটিয়ে পড়া ওর অভ্যাস, সব শেষে জব অপরচুনিটীর কলাম পড়তে শুরু করলো কিন্তু একটাও ভালো জবের কোনো ইনফরমেশন না পেয়ে হতাশ হলো, পেপারটা ভাজ করে রেখে উঠে গিয়ে দাদীর রুমে উকি দিলো, দাদী গরম কাপড় পড়ে কোরান পড়ছেন দেখে অবণী নিজ রুমে চলে এলো, জানালার পর্দা সরিয়ে ভাইরে তাকালো, বাইরে হাল্কা তুষারপাত হচ্ছে, রাস্তা দিয়ে ঘষ ঘষ আওয়াজ তুলে স্নো ক্লিনার গাড়ীটি তুষার পরিষ্কার করতে করতে চলে যেতে দেখলো অবণী, ল্যাপ্টপের ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করতে গেলে সেল ফোনের রিংয়ের শব্দ শুনে ফিরে এলো বিছানার সাইড টেবিলের সামনে, গতকালকেই চাচা নতুন সিম কিনে দিয়েছে অবণীকে, অচেনা নাম্বার থেকে রিং হচ্ছে দেখে অবাক হলো প্রথমে, এক মূহুর্ত ভেবে রিসিভ করে হ্যালো বললো, অপর পাশ থেকে ভেসে এলো রবিনের গলা, হাই আমি রবিন, কেমন আছেন?
জি ভালো, আপনি?
জি ভালো, আনকেল নাম্বারটা দিলো আমি আপনার খোঁজ করাতে, বিরক্ত করলাম নাতো?
না না, বিরক্তের কি আছে, বলুন।
জি আপনার জন্য একটি সুখবর আছে।
কেমন?
একটা জব পেয়েছি এখানকার নামকরা এক শিপিং এজেন্সিতে, ওখানে ম্যানেজারের পদ খালি হয়েছে জানলাম আর যেহেতু আপনি এই লাইনে ছিলেন তাই আমি কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করেছি বলেই থামলো রবিন।
সত্যি, অবণী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
জি, ওই কোম্পানির চেয়ারম্যান আমাদের গুড ক্লাইয়েন্ট, উনিই জানালেন, এখন কথা হলো আপনাকে ইন্টার্ভিউ দিতে হবে, একটু দম নিয়ে আবার বললো, আজ কি সময় হবে?
আজ, কখন?
এই আমি আসতে যা সময় লাগবে।
ওকে আমি রেডি হয়ে থাকছি, আপনি আসুন।
জি আমি আসতে আধা ঘন্টা লাগবে, এখন রাখছি, দেখা হবে, বাই।
বাই।

কিরে অনু কই যাস, দাদী জিজ্ঞেস করলেন।
দাদী, রবিন আসতেছে, ও নাকি একটা চাকরীর খবর পেয়েছে, ওখানে নিয়ে যাবে ইন্টার্ভিউ দিতে।
আলহামদুলিল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তোর যেন চাকরীটা হয়ে যায়।
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে অবণী এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলে রবিন কোট থেকে তুষার ঝাড়তে ঝাড়তে জিজ্ঞেস করলো, আপনি রেডি?
জি রেডি।
তাহলে চলুন যাওয়া যাক।
জি এক মিনিট, দাদীকে বলে আসছি।
ঠিক আছে আপনি আসুন আমি গাড়ীতে ওয়েট করছি।
একটু পর অবণী গাড়ীর সামনের দরজা খুলে উঠে পড়লে রবিন গাড়ী টান দিলো কিন্তু ধিরে ধিরে চালাতে লাগলো না হলে চাকা স্লিপ করতে পারে।
তা কতদূর অফিসটা, অবণী জিজ্ঞেস করলো।
তা ঘন্টা দুইয়েক লাগবে, সেন্ট্রালে অফিসটা আর তুষারপাত বাড়ছে তাই আসতেই গাড়ী চালাতে হচ্ছে, আপনার কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাতো?
না না কিসের অসুবিধা, আমি ঠিক আছি।
গুড, নিশ্চয় আগেও তুষারপাত দেখেছেন?
জি আমি বেশ কয়েক মাস সুইজারল্যান্ড ছিলাম।
ওহ তাহলে তো অভ্যাস আছে।
জি।

গাড়ীটা হাই রাইজ বিল্ডিংয়ের বেইজমেন্ট পার্কিংয়ে রেখে দুজনেই বেইজমেন্ট লিফটের কাছে গিয়ে লিফট আসার অপেক্ষা করতে লাগলো, একটু পর খালি লিফট নেমে এলে দুজনেই লিফটে উঠে গেল আর রবিন লিফটের বত্রিশ নম্বর বোতামে চাপ দিলো। যখন উপরে পোঁছে লিফটের দরজা খুললো অবণী দেখলো ওরা এক অফিসের ভিতরেই উঠে এসেছে, রবিন এগিয়ে গেলে রবিনের পিছে পিছেই অবণী ফলো করলো।
রবিন রিসেপ্সনিষ্ট মেয়েটার সামনে এগিয়ে গেলে মেয়েটা দাঁড়িয়ে বললো, হ্যালো মি. রবিন, হাউ আর ইউ?
আই এম ফাইন মার্থা, হাউ আর ইউ?
মি টু, স্যাল আই ইনফরম মি. অর্থার দ্যেট ইউ কেইম ইন?
সিউর প্লিজ বলে রবিন অবণীকে নিয়ে সামনের সোফাতে বসে পড়লো।
দশ মিনিট পর মার্থা রবিনকে বললো যে মি. অর্থার অপেক্ষা করছে ওদের জন্য।
রবিন ধন্যবাদ জানিয়ে অবণীকে নিয়ে লম্বা অফিসের শেষ মাথায় চলে এলো এক কেবিনের সামনে, দরজা নক করে ভিতরে প্রবেশ করলো। বিরাট অফিস রুম আর সেখানে বসে আছে টেকো মাথার বয়স্ক মি. অর্থার। দুজনেই এগিয়ে গেলে অর্থার উঠে দাঁড়িয়ে হেন্ড সেইক করলো রবিনের সাথে আর জিজ্ঞেস করলো ইংরেজিতে, এই সুন্দরী মেয়েটার কথায় কি বলেছিলে তুমি?
হাঁ মি. অর্থার এর কথায় বলেছিলাম, পরিচয় করিয়ে দিই, এ হলো অবণী।
অবণী ওর হাতটা হেন্ড সেইকের জন্য হাত বাড়িয়ে বললো, হ্যালো মি. অর্থার, আমি জেসমিন সুলতানা, অবণী।

_________ চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ