678

গোধূলি ১৮ এপ্রিল ২০১৫, শনিবার, ০৩:০৬:২৪অপরাহ্ন মুভি রিভিউ, সমসাময়িক ৩৫ মন্তব্য

movie-678-poster-mask9

বছরখানেক আগে একটা মিশরীয় মুভি দেখেছিলাম। ১লা বৈশাখের ঘটনার জন্য মুভিটির কথা মনে পড়ল আবার। মিশরীয় মুভিটির নাম 678 (film) ( Les Femmes du Bus 678 নামেও পরিচিত)। মুভিটি আমার পছন্দের মুভিগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল। The Association for Human rights and Social Justiceএর Mahmoud Hanfy Mahmoud মুভিটিকে নিষিদ্ধ করার অনুরোধ করেছিল (জানি না, আন্তর্জাতিক মানবতাবাদীদের সমস্যা কি???!!! অমানুষদের জন্যই তাদের সব মায়া!!!)
পরিচালক Mohamed Diab মুভিটিতে মিশরের রাস্তাঘাট, বাসে মেয়েদের যৌনহয়রানিকে তুলে ধরেছেন। ২০১০সালের এই মুভি অনেক বিতর্কের শিকার হলেও Dubai International Film Festivalএ সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছিল।

Cario-678-2012-photo1
সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত- এই তিন শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসেবে তিনটি প্রধান নারীচরিত্র। তিনটি চরিত্র হল ফায়জা, নেলী ও সেবাহ। ফায়জা চরিত্রে অভিনয় করেই বুশরা Dubai International Film Festivalএ সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার যেতেন। সেবাহ চরিত্রে অভিনয় করে নেলি করিম Arab Film Festivalএ সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারলাভ করেন। নেলী চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাহেদ এল সেবাই। তিনজনে মিলে গ্রুপ হিসেবে Asia Pacific Screen Awardsএ জুরি গ্র্যান্ড প্রাইজ পান।

Kairo 678 1
ফায়জা নিম্নবিত্ত রক্ষণশীল গৃহিণী ও অল্পবেতনের চাকরী করে। প্রতিদিন বাসে করে যায় অফিসে। বাসে নিয়মিত হয়রানির শিকার সে। কিন্তু বাস ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই। প্রতিদিন বের হবার আগে সবচেয়ে কম আকর্ষণীয় ঢিলেঢালা পোশাক খোঁজে, হিজাব পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে নিজেকে। তার এই পোশাক-আশাক কাউকে প্রলুব্ধ করবে কি গতদিনের মত? লাভ হয় না। দিন দিন আতংক বাড়ে মনে। স্বামী কাছে আসলেও আতংকে কুঁকড়ে যেত ফায়জা। নারীদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সেমিনারে যায়, টিভিতে প্রোগ্রাম দেখে। আবার একদিন নির্জন রাস্তায় একজন ফলো করে। ফায়জা পিছে ঘুরেই স্কার্ফের সেফটি পিন ঢুকিয়ে দেয় পুরুষাঙ্গ বরাবর এবং পালিয়ে যায়। ফায়জা ধরা না পড়লেও ঘটনা পুলিশের কানে যায়। পুলিশ তদন্ত শুরু করে ফায়জাকে খুঁজে বের করার জন্য।(আমাদের দেশেও বাসে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটে। অনেক পুরুষের দাবি, নারীপুরুষ সম অধিকার হলে বাসে মহিলা সিট কেন? মহিলা সিটের মাধ্যমে মহিলাদের প্রিভিলেজ দেয়া হচ্ছে কেন? আচ্ছা দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৮-১০% কি মহিলা যে বাসের ৪০-৪৫টি সিটের মধ্যে ৪-৬টি মহিলা সিট বরাদ্দ? নির্দিষ্ট করে দেয়ার আরেকটি মানে অনেকে ধরে নেয় বাকি সব সিট পুরুষদের। মহিলা সিট পূর্ণ হলেই বাসে মহিলা উঠাতে মানা করে কিছু পুরুষ যদিও মহিলা সিট অনেকসময় পুরুষ দখল করে থাকে। কিছু স্নেহবান পুরুষ মহিলাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জায়গা ছেড়ে দেন এবং পরক্ষণেই কন্ডাক্টারকে বলে, ‘মহিলা সিট নাই? মহিলা উঠাও কেন?’ এসব সময় সেই পুরুষকেও উত্তর দিতে পারি না আমরা কারণ তার সিটে বসে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতাবোধ কাজ করে। রাত হয়ে গেলেও মহিলা সিট ভরা হয়ে গেলে নারীদের বাসে উঠতে দেয় না কন্ডাক্টরা পুরুষযাত্রীদের ভয়ে। নারীরা দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তায়। বখাটেদের উৎপাতের শিকার হয়। অনেকসময় অনেক খারাপ ঘটনাও ঘটে। মহিলা সিট আসলে প্রিভিলেজ দেয়? মহিলা সিট কি উঠিয়ে নেয়া উচিৎ? মহিলা সিটের কোন দরকারই হত না যদি পুরুষগুলোর মন পরিশুদ্ধ হত। যেহেতু বিষাক্ত মনের পুরুষে ভর্তি সমাজ, মহিলা সিটের প্রয়োজন, তবে তা মাত্র ৪-৬টি নয়, বাসের অর্ধেক। এটাও হলফ করে বলতে পারি, সিটের সংখ্যা বাড়লেও থেমে থাকবে না এসব কারণ সমস্যা সিটসংখ্যায় না, সমস্যা চিন্তা-চেতনায়...)

E_0000927633
নেলী মধ্যবিত্ত পরিবারের অতি সাধারণ মেয়ে, যে কল সেন্টারে জব করে এবং কিছুদিনের মধ্যেই ভালবাসার মানুষের সাথে ঘর বাঁধবে। রাস্তা ক্রস করার সময় চলন্ত গাড়ির ভেতর থেকে এক লোক বাজেভাবে স্পর্শ করে। নেলী ও নেলীর হবু বর তৎক্ষণাৎ লোকটিকে লোকাল পুলিশের কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ কেস ফাইল করতে চায় না এবং নেলীকে বোঝায় যে, এতে নেলীর নামই খারাপ হবে। কিন্তু নেলী রাজি হয় না। মিশরে এর আগে কখনো সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের কেস হয় নি। নেলীর কেসকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয় মিডিয়াতে। লাইভ টক শোতে নেলীকে মানুষের তির্যক বাক্য শুনতে হয়। একজন নেলীকে বলে, “তোমার জন্য মনে হচ্ছে আমি যে দেশটাতে আছি, সেটা মিশর নয়। আমাদেরও মা-বোন আছে। কৈ? তারা তো যৌনহয়রানির শিকার হয় না। নিশ্চয় তুমি প্রলুব্ধকর পোশাক পরেছিলে”। নেলী উত্তর দিয়েছিল, “আমি জানতাম, এই প্রশ্নের সম্মুখীন আমাকে হতে হবে। তাই আমি আজ ঐদিনের পোশাক পরে এসেছি শুধুমাত্র এই জ্যাকেটটি বাদে। কারণ রাস্তায় পড়ে গিয়ে ঐদিনের জ্যাকেটটি ছিঁড়ে গেছে। আপনার মা-বোনের সাথে এমন কেন হয় না জানেন? যদি তাদের সাথে এমন হয় তারা আপনাকে জানাবে না কারণ আপনি তাদেরকে তা বলবেন যা আজ বললেন”। নেলীর হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেস উঠিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দেয় কারণ নেলীর এই সংগ্রাম লজ্জা ছাড়া আর কিছু বয়ে আনছিল না তাদের জন্য। (মধ্যবিত্ত মানুষজনের মধ্যবিত্ত চিন্তা। না পারে নামতে, না পারে উঠতে...)

les-femmes-du-bus-678-30-05-2012-7-g
উচ্চবিত্ত সেবাহ নারীদের আত্মরক্ষা বিষয়ক প্রোগ্রাম করে এবং মেয়েদের সচেতন করার জন্য কাজ করে। একটি ঘটনা সেবাহর জীবনকে উলট-পালট করে দিয়েছিল। স্বামীর সাথে সেবাহ গিয়েছিল স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে। হঠাৎ এক দল ছেলে সেবাহকে ঘিরে ধরে... ঠিক যেমন ঘটনা ১ল বৈশাখে ঘটেছে... সেবাহকে ছেড়ে না দিলেও সেবাহকে ভালভাবে গ্রহণ করতে পারেনি তার স্বামী(অন্য পুরুষ ছুঁলেই তো নষ্টা...)।

b640x600
সিনেমার এক চূড়ান্ত পর্যায়ে ফায়জা সেবাহকে বলে, “তোমার মত মেয়েরা খোলা চুল বাতাসে উড়িয়ে পুরুষদের প্রলুব্ধ করে, কামনা জাগিয়ে তোলে। আর সেই কামনার শিকার হয় আমার মত ভদ্র মেয়েরা”। পরিচালক Mohamed Diab দেখান, ফায়জার সেক্স-ডিপ্রাইভড স্বামীও রাস্তা-ঘাটে মেয়েদের শরীর হাতানো শুরু করে এবং ফায়জা তা জানতে পারে। ফায়জা ভাবে, সেবাহর জন্য ফায়জারা শিকার না, বরং ফায়জার জন্যই সেবাহরা শিকার। পরিচালক দেখান, আসলে ফায়জার জন্যও সেবাহ শিকার না। সমস্যা পোষাকে না, চিন্তা-চেতনায়...

মেয়েদের শরীরকে স্পর্শ করতে পারাও গর্বের বিষয়, দুঃসাহসের বিষয়, বাজি ধরার মত বিষয় অনেকের কাছে। অনেক কিছুই তুলে ধরেছেন তিনি। জায়গাটা যদিও মিশর, কিন্তু সারা বিশ্বের চিত্র উঠে এসেছে। কিন্তু এসব মুভি মানুষ দেখে না। সেবাহর একটা ডায়লগ ছিল, “Being harassed is not shameful. The one who should be ashamed is the animal who did that to you, not you” এটাকে মানতে সমাজের কয়েক যুগ লাগবে জানি না, আদৌ মানবে কিনা জানি না।

b7ebb9fcc6fe492fc9f4cd4413f8e1fc
Mahmoud Hanfy Mahmoud দাবি করেছিলেন, এই মুভি মেয়েদের উৎসাহিত করবে পুরুষাঙ্গে আঘাত করতে। তাই তিনি নিষিদ্ধ করার অনুরোধ করেছিলেন সরকারকে। নপুংশকদের আবার পুরুষাঙ্গ কিরে???

মুভিটির ট্রেইলারের লিঙ্ক

মুভিটি ডাউনলোডের টরেন্ট লিঙ্ক

সাবটাইটেল ফাইল নিচেঃ

678[2010]DVDRip Egypt By Arif

0 Shares

৩৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ