বর্বরতা কেনো মাথাছাড়া দিয়ে উঠবে না? কেনো উঠবে না?

গত ১১ই জুন হবিগঞ্জের সুতাং বাজারে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৩০ বছর বয়সী সুখিয়া রবিদাসকে। পিটিয়ে হত্যা করার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণ চলাকালীন কোন এক পর্যায়ে সে উঠে দৌড়ে ঘর থেকে বের হলে ধর্ষক ভারী একটি কাঠ নিয়ে তাকে তাড়া করে। দৌড়ানোর এক পর্যায়ে সুখিয়া সড়কের ওপর লুটিয়ে পড়লে ধর্ষক শাইলু কাঠ দিয়ে তাকে আঘাত করতে থাকলে ঘটনাস্থলেই সুখিয়া মারা যায়। এলাকার অনেকেই এ দৃশ্য দেখেছে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।

এখন প্রশ্ন হলো, এতো দুঃসাহস তার হলো কি করে? কি করে এতো লোকের সামনে নির্দ্বিধায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়ে ফেলল বিকারহীনভাবে?

কারণ, সে একে একে সুখিয়ার পরিবারের সকলকেই নিজ হাতে খুন করে এখনো বহাল তবিয়তে আমোদফুর্তি করে জীবন যাপন করছে। ইতিমধ্যে সে জেনে গিয়েছে তার কিছুই হবে না। হয়নি এ পর্যন্ত!

ভিক্টিমের ছোট ভাইয়ের বক্তব্য থেকে জানা যায়, হত্যাকারী শাইলু প্রায়ই তাদের ঘরে জোর করে ঢুকে পড়তো। এর বিচারও কোন দিন হয়নি।

খুনি শাইলু, ৮ বছর আগে সুখিয়ার স্বামীকে হত্যা করে। ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হওয়া সেই মার্ডারের জন্য মামলা করতে পারেনি অভাবী সুখিয়া। তারপর সুখিয়া তার ছোট ভাইকে নিয়ে চাচার সাথে বাস করতে থাকে। চার বছর আগে শাইলু সেই চাচাকেও হত্যা করে। ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাইলু। মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলাটির সাক্ষী ছিলো আবার সুখিয়া।
এলাকাবাসীর দাবি, সুখিয়া ও তাঁর স্বামী মনিলাল দাস এবং তার চাচা অর্জুন হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র একই।

দু'দুটো খুনের পরও যে মানুষটি নিরাপদে এই রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারে, সে অমন বেপরোয়া হতেই পারে, অস্বাভাবিক কিছু নয়।

খবরে প্রকাশ, বিভিন্ন সময় সুখিয়াদের বাড়ির জায়গা দখলের জন্য এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল তাদের নির্যাতন করে আসছিল। ওই এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে একই এলাকার একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে তাদের নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। জায়গা দখল করাই মহলটির মূল উদ্দেশ্য।
বেপরোয়া শাইলুর খুঁটির জোর হয়তো সেই প্রভাবশালী মহল! শাইলু তো কেবল একজন পেশাদার খুনি মাত্র।

সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ কি তাহলে এখন মগেরমুল্লুক?
জোর যার, মুল্লুক তার?

সুখিয়া হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে আজ ৫/৬ দিন হলো কিন্তু খোদ জেলা (হবিগঞ্জ) শহরেই এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ কর্মসূচি নেই রাজনৈতিক দলগুলো থেকে! দলমত নির্বিশেষে নিজেদের স্বার্থে আজ তারা নীরব! এমনকি সাধারণ এক/দুইজন ছাড়া কাউকে কথাও বলতে দেখিনি। প্রকাশ্যে এমন একটি ঘটনায় নূন্যতম মানবিক বোধও কি তাদের কাজ করছে না? কতোজনকেই তো দেখি কতো কিছু নিয়ে ফেসবুকে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে। আশ্চর্যরকমভাবে তাদের নীরবতা বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে! কেবলই কি আত্মস্বার্থে কথা বলতে হবে? এভাবে সামাজিক দায় এড়িয়ে চলার খেসারত যে একদিন সকলকেই দিতে হবে।

শেষমেশ আজ জানা গেলো, হবিগঞ্জ জেলা শাখার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সুখিয়া রবিদাস হত্যার প্রতিবাদে সুতাং বাজারে প্রতিবাদী মানব বন্ধন করেছে। তারা সরেজমিন ঘুরে জেনেছে, রবিদাস সম্প্রদায়ের প্রায় ৯০% জায়গা প্রভাবশালীদের দখলে। বাকি ১০% জায়গায় কোনরকমে মাথা গুঁজে আছে তারা। এই ১০% জায়গা দখলের ষড়যন্ত্রের নির্মম বলি সুখিয়া রবিদাস। দারিদ্র‍্য আর ধর্মীয় সংখ্যালঘুত্ব যার অসহায়ত্বকে টেনে নিয়ে গেছে মৃত্যু অবধি।

সুবিচার নিশ্চিত হোক অসহায়ের, এই দাবীই রাখছি।

এ নিয়ে হবিগঞ্জের সুপরিচিত লেখিকা রুমা মোদকের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের লিঙ্ক এখানে দেয়া হলো। যেখানে আরো করুণভাবে ফুটে উঠেছে রবিদাস পরিবারের বিবরণ।।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    খবরটি নিয়ে তেমন কোনোকিছুই দেখিনি ফেসবুকে। সবাই ব্যস্ত ক্রিকেট নিয়ে। সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করার জন্য কতোভাবে যে আক্রমণ করা হয়, আমি এবং আমার বাবা-মা সকলেই ভুক্তভোগী। আর সুখিয়া যেহেতু নারী, তাই খুণ করার আগে ভোগ করে নিয়েছে। সুখিয়ার স্বামী এবং চাচা যেহেতু পুরুষ, তাই সরাসরি খতম। আমাদের দেশটাকে বড়ো অপরিচিত লাগে।

    *রবিদাস সম্প্রদায়ের প্রায় ৯০% জায়গা প্রভাবশালীদের দখলে। বাকি ১০% জায়গায় কোনরকমে মাথা গুঁজে আছে তারা। এই ১০% জায়গা দখলের ষড়যন্ত্রের নির্মম বলি সুখিয়া রবিদাস। দারিদ্র আর ধর্মীয় সংখ্যালঘুত্ব যার অসহায়ত্বকে টেনে নিয়ে গেছে মৃত্যু অবধি।* —-তা তো অবশ্যই!

  • মোঃ মজিবর রহমান

    অপরাধীর বিচার না হঅয়া সবচেয়ে বড় সমস্যা এই দেশে। এখানে ধর্ম বর্ণ, নায় অসহায় বড় কথা। আমি কয়েক্মাস আগে ঝামেলায় পরলাম তো স্বাভাবিক ভাবে চাইলাম ঝামেলায় জাতে জেতে না হয়। থাকি ঢাকায় গ্রামে তেমন উঠাবসা হয় না। নিজের নামে লেখা সম্পত্তি পাওয়া হচ্ছে না। আরেকজন ভোগ করবে ছাড়বেনা। এভাবে ৩মাস কেটে গেলে আমি বাধ্য হয়ে আংগুল বাঁ যে রাজনিতি জড়াবনা মনে করি সেখানে জড়াতে হল। কাজও হল।
    এখন আমার পাওনা বুঝে পেয়েছি। তাই এখন বলছি সংখ্যা লঘু নায়। টাকা, বাহুবল, না থাকলে আমাদের দেশ নয় ভারতেই একই সমস্যা। আমি ২০০৫ সালে ভারতে গিয়ে এক মুসলিম ভায়ের সাথে কথা হলে তাঁর কথা আমরা খুব ভাল আছি। কিন্তু তাঁর গ্রামে বাঁ পাশে অসহায় গরীবের কেউ নাই। তেমনি গয়েশ্বর চন্দ্র, বাবু রমেশের সমস্যা না সমস্যা গরীব আর সঠিক বিচার না হওয়া।

  • মোঃ মজিবর রহমান

    এভাবে ৩মাস কেটে গেলে আমি বাধ্য হয়ে আংগুল বাঁ যে রাজনিতি জড়াবনা মনে করি সেখানে জড়াতে হল। কাজও হল। কিন্তু আমিও যদি রাজনিতি সাইট টী তাদের থেকে দুর্বল হত আমি আমার সম্পদ কি ফির পেতাম, কখনও না। তাই অর্থ বাহুবল বাঁ অল ক্ষমতা না থাকে আমি , আপনি সবাই নির্যাতিত হবে কারন এখানে বিচার নায়, বাঁ হয় না।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ