সিপিআর

ইঞ্জা ২৯ আগস্ট ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৪:৫৭অপরাহ্ন চিকিৎসা ৩২ মন্তব্য

সিপিআর সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে এই বাংলাদেশে, এই সিপিআর দেওয়ার বিষয়টা আমি শিখেছিলাম চট্টগ্রামে যখন আমার আম্মাকে প্রথমবার সিপিআর দিলো ডাক্তাররা, এরপরের তিন বছরের শেষে আমার আম্মার অবস্থা খুবই খারাপ, উনার হার্ট মাত্র ৩৬% কাজ করছে, কিডনি প্রায় ফেইল, প্রশ্রাব রক্তে মিশে একাকার, আম্মা প্রচন্ড রকমের পাগলামি করছেন রক্তে প্রসগাব মিশে যাওয়ার কারণে, নভেম্বরের ১০ তারিখ রাত ৯.৩০ উনি হটাৎ চোখ উল্টিয়ে দিলেন।

সারা ঘরে কান্নাকাটি পড়ে গেছে, তখন আমার ছোটো মেঝ ভাইটাকে বললাম সিপিআর দেওয়ার জন্য শেষ চেষ্টা হিসাবে, যদিও জানতাম আম্মা চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে।
রাব্বির হাম হুম কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।

এই সিপিআর নিয়ে একটি লেখা পেলাম ফেইসবুকে, যা সদ্য ইন্তেকাল করা উত্তরা প্রাইম ব্যাংকের মহিলা ব্যাংকারকে নিয়ে লেখা হলেও সবার জানা উচিত বলেই বিষয়টা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি।

.... লেখক।

গতকাল প্রাইম ব্যাংকে কাজ করা অবস্থায় এক মহিলা মারা গেছেন, এই মারা যাওয়ার ভিডিও অনেকেই অনলাইনে দেখেছেন।
.
ইউটিউবে সার্চ দিলে অনেক ভিডিও পাবেন। দেখবেন বিদেশের মার্কেটে, মাঠে ময়দানে বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ কেউ একজন অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে, তখন কোথা থেকে ছুটে এসে কিছু হিরো অজ্ঞান হওয়া লোকের বুকের উপর উঠে চাপাচাপি করছে, খানিকক্ষণ পরেই সেই অজ্ঞান হওয়া লোক জ্ঞান ফিরে পেয়েছে।
যারা এভাবে ছুটে এসে জীবন বাঁচায় তাদেরকে সমাজে হিরো বলে ট্রিট করা হয়, তাদের বলা হয় 'সিপিআর হিরো'। তারা কিন্তু স্ট্রেঞ্জার, মানে সাধারণ লোক। বিদেশের অনেক সাধারণ লোকেরই এই ট্রেনিং নেয়া থাকে। এই বুকে উঠে চাপাচাপি করাকে বলা হয়- Cardiopulmonary resuscitation (CPR)।
.
বিদেশের অনেক কলেজ ভার্সিটিতে মাঝে মাঝে ফ্রি তে সিপিআর করা শেখায়। আমাদের দেশেও সম্ভবত কয়েকটি অরগানাইজেশন এগুলো শেখায়। সব জায়গায়ই এই প্রাথমিক চিকিৎসার সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা আছে। এটা একটা জীবন বাঁচানো প্রাথমিক চিকিৎসা।
.
এটা জানা থাকলে আশেপাশে হার্ট এটাক হওয়া বা নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়া, হার্টবিট বন্ধ হওয়া যে কারো জীবন বাঁচানো যেতে পারে।
.
সিপিআর দেয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে হার্টের উপর চাপাচাপি করে কোন রকমে হার্টটাকে একপ্রকার রিস্টার্ট দেয়া, আবার কোনরকমে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ চালু করানো। প্রাইম ব্যাঙ্কের ভিডিওটিতে দেখা যায় পড়ে যাওয়ার পর অনেক লোক মহিলাকে ঘিরে ধরেছে। এটা খুব ভুল, আশেপাশে কোন ভিড় করতে দেয়া যাবেনা, কারন এতে উল্টো মহিলাটির শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার সুযোগ কমে গেছে ভিড় করায়।
.
রেডক্রসের ওয়েবসাইট থেকে অনুবাদ করে আমি সিপিয়ার এর স্টেপ গুলো এখানে অনুবাদ করে দিচ্ছি।
.
সিপিআর দেয়ার আগে যেসব বিষয় চেক করতে হবেঃ
.
১। প্রথমে দেখে নেন আশেপাশের পরিবেশ নিরাপদ কিনা। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া লোকটার কাঁধে একটা চাপড় দিন, দিয়ে জিজ্ঞেস করুন- আর ইউ অকে?? মানে সব ঠিকঠাক কিনা! মানে নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে লোকটার আসলেই সাহায্য লাগবে কিনা। যদি তার সাহায্য চাওয়ার মত অবস্থা না থাকে তবেই সাহায্য করা শুরু করুন!
.
২। ৯৯৯ কল দিন, এম্বুলেন্স দ্রুত নিয়ে আসতে ফোন করে দিন।
.
৩। বাংলাদেশে কেউ পড়ে যাওয়া মাত্রই আশেপাশে লোকজন ভিড় করে মজা দেখতে শুরু করবে, তাদের তাড়িয়ে দিন, নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করাই সিপিআর এর মূল উদ্দেশ্য। চিত করে শুইয়ে দিন।
.
৪। দেখুন শ্বাস নিচ্ছে কিনা। যদি দেখেন ১০ সেকেন্ড কোন শ্বাস নিচ্ছেনা তবে সিপিআর শুরু করে দিন।
.
কিভাবে সিপিআর দিবেনঃ
.
১। হাত বুকের মাঝ খানে রাখুন , একটু বাম দিকে। শরীরের ওজন দিয়ে জোরে জোরে চাপ দিতে থাকুন। বেশ জোরে যেন দুই ইঞ্চি পরিমাণ দেবে যায় প্রতিবারে। মিনিটে ১০০ বার এমন চাপ দিন।


.
২। মুখের মাঝে মুখ লাগিয়ে ফুঁ দিন। এটাকে বলে রেসকিউ ব্রেথ।
.
৩। আবার বুকের মাঝে ১ নং নিয়মের মত করে চাপ দিতে থাকুন যতক্ষন না শ্বাসপ্রশ্বাস আবার চালু হয়। চাপ দিতেই থাকুন!
.
অনেক হালকা মনে হচ্ছে জানি। কিন্তু বিশ্বাস করুন ঠিক এই কাজটা করলেই আজকে হয়তো মহিলাটার প্রাণ বেঁচে যেতো। এই বিষয়গুলা জেনে রাখলে হয়তো আপনার কোন আত্নীয় স্বজনের জীবনও বাঁচবে!
.
CPR লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে অনেক ভিডিও পাওয়া যাবে বিষয়ের উপরে। দেখতে পারেন।
.
তবে আমাদের দেশের মানুষের মতো পণ্ডিত সারা পৃথিবীতে আপনি খুঁজে পাবেন না, হাস্পাতালে অনেক সময় ডাক্তাররা CPR করতে গিয়ে রোগীর স্বজনদের হাতে হেনস্তার শিকার হয়। আর রাস্তাঘাটে করতে গেলে তো ধইরা পিটাইবো , বলবে যে যাতা দিয়ে রোগী মেরে ফেলেছে। তাই সাবধান ।
.
( সংগৃহিত)

সমাপ্ত।

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ