545de98ddafa2

নিরক্ষর ও সাক্ষর মানুষঃ
প্রচলিত ধারণায় নিরক্ষর বলা হয় তাকে, যে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন নয়। মানে স্বরবর্ণ-ব্যঞ্জনবর্ণেরসাথে যার পরিচয় নেই তিনিই নিরক্ষর। একাডেমিক শিক্ষার সাথে নিরক্ষরতা শুধুই নয় সাক্ষরতারও কোনো সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। অর্থাৎ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসাসৃষ্টির আগেও যেমন সাক্ষর ও নিরক্ষর মানুষ ছিলো, তেমনই এসব প্রতিষ্ঠানসৃষ্টির পরও সাক্ষর ও নিরক্ষর আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

সাক্ষর ও নিরক্ষরব্যক্তির সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পর্কঃ
সহজেই এটা অনুমেয় যে, নিরক্ষর ব্যক্তির সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেমন কোনো সম্পর্কই থাকেনা, তেমনই ভাষার ব্যাকরণ এমনকি ভাষার প্রাথমিক সূত্র হিসেবে স্বরবর্ণ-ব্যঞ্জনবর্ণের সাথেও তাদের কোনো পরিচয় থাকেনা। তাই চোখথাকতেও অন্ধ বলেই আমরা তাদের অনেকসময় উপহাসও করে থাকি। দুনিয়াসৃষ্টির পর অটোমেটিক কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন তৈরি হয়নি, তেমনই নবী-রাসুলগণও আল্লাহর তরফ থেকে যে শিক্ষা এনেছিলেন, তার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাক্ষর না হলেও চলতো। আসলে ১০০% সাক্ষর লোক থাকা সম্ভবই নয়। দুনিয়াসৃষ্টির পর শিক্ষার বিস্তার ঘটলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির জরুরত পড়েনি; এসব এসেছে বহুবছর পরেই। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানছাড়াও সাক্ষর-নিরক্ষর উভয়প্রকার লোকই তৈরি হতেই পারে।

images

সাক্ষর ও নিরক্ষরব্যক্তির সাথে ভাষা ও ব্যাকরণের সম্পর্কঃ
মাতৃভাষা এমনই একটি বিষয়, যা জন্মমাত্রেই আমরা পরিবার থেকেই শিখি। এজন্য যেমন বর্ণমালা শিখতে হয়না, তেমনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পড়তে হয়না। কিন্তু আমরা যা শিখি, তা কিন্তু আঞ্চলিক ভাষা-যা সব সমাজে চলেনা। এ আঞ্চলিক ভাষারও একটি আদর্শ লিখিত ও কথ্যরূপ থাকে। আঞ্চলিক ভাষা সাক্ষর-নিরক্ষরনির্বিশেষে শিশুমাত্রই শিখে থাকে। এক্ষেত্রে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সাক্ষর-নিরক্ষর এর কোনোই প্রভেদ নেই।

কিন্তু আঞ্চলিকতামুক্ত আদর্শ কথ্যভাষা রপ্ত করতে হলে আপনাকে বাংলাব্যাকরণের দ্বারস্থ হতেই হবে কিংবা কুষ্টিয়া বা পশ্চিমবঙ্গের সেই অঞ্চলে গিয়ে মুখেমুখেই তা শিখতে হবে, যেখানে আদর্শ কথ্যভাষা প্রচলিত আছে। আঞ্চলিকতাদোষে দুষ্ট আপনার মাতৃভাষা থেকে বর্ণমালার শিক্ষাই আপনাকে কেবল নিরক্ষর ব্যক্তি থেকে আলাদা করে দেবে। তাই নিরক্ষরের জন্য ব্যাকরণ নয়, ব্যাকরণ সাক্ষরদের জন্যই জরুরি। ভাষার আঞ্চলিকতা পরিহারের স্বার্থে আদর্শ চলিতভাষা শেখার পর কিভাবে আপনি এটা অস্বীকার করবেন যে, আপনার ব্যাকরণের দরকার নেই?

তাহলে বলুন, আপনি কেনো সাক্ষর হলেন, কেনো বর্ণমালা বা ব্যাকরণ শিখলেন? কেনো নিরক্ষর থাকলেন না, যদি ব্যাকরণের জোড়ালো ভূমিকা না-ই থাকে আপনার জীবনে! কেনো তবে পানিতে বাস করে পানিকেই অস্বীকার করেন?

ভাষার আরেকটি প্রমিত ও লিখিতরূপও আছে, তাও কেবলমাত্র বর্ণমালা শিখেই রপ্ত করতে হয়। এটা শিখতেও কিন্তু একাডেমিক শিক্ষা জরুরি নয়; যেকোনোভাবেই এ ভাষা শেখা সম্ভব। আর এ ভাষা না শিখলে আমাদের যাবতীয় লেখাজোঁকা আঞ্চলিকতাদোষেই দুষ্ট থেকে যাবে।

মানুষ বিশেষত মুসলিমরা প্রথম মানুষ আদম আঃ এর মতো নবীদের কাছ থেকেই বর্ণমালা শিক্ষাছাড়াই সরাসরি মৌখিক ভাষাজ্ঞান পেয়েছেন বলে কথ্যভাষা সৃষ্টির আদিকাল থেকেই ছিলো এবং এখনো আছে। আর একারণেই আল্লাহর নবীদের অনেকেই নিরক্ষর ছিলেন। আমাদের প্রিয়নবী সাঃও তেমনই একজন নিরক্ষর নবীই ছিলেন।

নিরক্ষর মানেই কি মূর্খ ও অশিক্ষিত?
নিরক্ষর মানেই কি মূর্খ ও অশিক্ষিত? না, অক্ষরজ্ঞান না থাকলেই কেউ মূর্খ ও অশিক্ষিত হয়না। তাহলে আমাদের নিরক্ষর পূর্বপুরুষগণ যারা সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন-যাপন করে বংশধর রেখে গেছেন তাদের কি মূর্খ বলবেন? এমনকি বাদশাহ আকবরের মতোন নিরক্ষরলোকও দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশশাসন করতে পারতেন কি? আমাদের নবীসহ অনেক নবী-রাসুল এবং অনেক পণ্ডিত-কবি-বিজ্ঞানীও ছিলেন নিরক্ষর বা আধানিরক্ষর। কিন্তু তারা ছিলেন সেই যুগের সর্বোত্তম ও সবচে’ জ্ঞানী ও শিক্ষিত ব্যক্তি। তবে নিরক্ষর ও একাডেমিক শিক্ষাবঞ্চিত লোকদের অনেকেই মূর্খ ও অশিক্ষিত হতেই পারেন; কিন্তু সবাই নয়।

সাক্ষর ও নিরক্ষরব্যক্তির সাথে শিক্ষার সম্পর্কঃ
নিরক্ষরব্যক্তি মানেই কিন্তু অশিক্ষিত লোক নন্য। আর শিক্ষা মানেই কিন্তু একাডেমিক শিক্ষা বুঝায়না। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেও যেমন আবু জেহেলের মূর্খতা থাকতেই পারে, যাদের বলা হয় পণ্ডিতমূর্খ; তেমনই নিরক্ষর মানেই অশিক্ষিত নয়। শিক্ষিত ঘোড়া, কুকুর, রেসার কবুতর বলতে আমরা কী বুঝি? এরা কি স্কুলের অক্ষরজ্ঞান্সম্পন্ন নাকি আমাদের চাহিদামাফিক শিক্ষা বা ট্রেনিংশেখার ফলে শিক্ষিত প্রাণীতেই পরিণত হয়েছে? তাই এরা অশিক্ষিত ও মূর্খ নয়। মানুষের বেলায় সেটি ১০০% সত্য। তাই আমাদের নবী সাঃ দুনিয়ার লেখাপড়া না করায় নিরক্ষর হলেও আল্লাহর কাছে শিক্ষাগ্রহণ করায় সবচে’ জ্ঞানী, শিক্ষিত প্রশাসক পর্যন্ত ছিলেন।

তাই মাইকেল হার্ট নামক একজন খৃস্টান ইংরেজ পর্যন্ত ‘পৃথিবীর ১০০জন সেরা মানুষের অবদান ও যোগ্যতার বিষয়ে ” দি হাণ্ড্রেড” নামক গবেষণাবইয়ে মুহাম্মদ সাঃকে ১ নম্বর সেরামানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন এভাবে-“My choice of Muhammad to lead the list of the world’s most influential persons may surprise some readers and may be questioned by others, but he was the only man in history who was supremely successful on both the religious and secular level.”
― Michael H. Hart, The 100: A Ranking of the Most Influential Persons in History
(চলবে)

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ