আমরা যখন শেখ যায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের কাছাকাছি পৌঁছাই, তখন দুপুর আর বিকেলের সন্ধিক্ষণ। হাইওয়ে ধরে গাড়ি যতই নিকটে আসছিল, ততই মসজিদের সৌন্দর্য আমাদের আরও বেশি অভিভূত করছিল। যেন এটি শুধু একটি প্রার্থনার স্থানই নয়, শৈল্পিক এক স্থাপত্যশৈলী।
বিশ্বের অন্যতম বড় এই মসজিদটির নামই শেখ যায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি উপাসনালয়। মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে আরব আমিরাতের প্রয়াত রাষ্ট্রপ্রধান শেখ যায়েদ বিন সুলতান আলনাহিয়ানের নামানুসারে। ১১৫ মিটার উচ্চতার এই মসজিদটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে অবস্থিত। এটি এ দেশের বৃহত্তম মসজিদ। মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদে ৪০ হাজারেরও অধিক মানুষ এটি পরিদর্শন করে থাকেন। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে মসজিদটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। ব্যয় হয় ২ বিলিয়ন দিরহাম। মার্কিন ডলারে ৫৪৫ মিলিয়ন। ৪১ হাজারেরও বেশি মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই মসজিদটির ডিজাইন করেছিলেন সিরিয়ান স্থপতি ইউসেফ আবদেলকী। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি শেখ যায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানকে মসজিদের পাশেই সমাহিত করা হয়।
মসজিদটি সব ধর্মের মানুষের দেখার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ ইচ্ছে করলে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন। এটি দেখতে কোনো দর্শনীর প্রয়োজন নেই। আমরা যখন মূল মসজিদের ভেতরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, একজন আমাদের নিয়ে গেলেন একটি রুমে। যেহেতু এটি সব ধর্মের মানুষদের দেখার জন্যে উন্মুক্ত, সেহেতু সকলকেই নিয়ম মেনে সংরক্ষিত বোরকা কিংবা আলখাল্লা পরিধান করে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। ভেতরে অদ্ভুত শান্তির এক পরিবেশ বিরাজ করছিল। চারপাশের দেয়াল ও মেঝেতে মার্বেল পাথরের চোখ জুড়ানো কারুকাজ দেখে আমার কেবলই মনে হচ্ছিল, মসজিদটিকে শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রার্থনার স্থান ভাবলে ভুল হবে। কেননা, এটি চমৎকার স্থাপত্য ভবন হিসেবেও পরিচিত।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে মাগরিবের আজান হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমান সকলে নামাজ আদায় করেন। অন্য ধর্মের মানুষ যারা দর্শনার্থী, তারা শান্তিপূর্ণভাবে পিনপতন নীরবতায় ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন, ছবি তুলছিলেন। রাত্রি নেমে এলে বাইরে এসে দাঁড়াই। সে আরেক বিস্ময়! বিকেলের সেই দৃশ্যের বিপরীত এক রূপ। এবার আলোকসজ্জার কারণে মসজিদটিকে কী অদ্ভুত সুন্দরই না লাগছিল।
ফিরে আসার সময় দূরের হাইওয়ে থেকে যত দূর দৃষ্টিসীমায় চোখ যায়, তাকিয়েছিলাম অপলক গাড়ির জানালা দিয়ে। পবিত্র স্থানে গেলে মানুষের মনের ভেতরটায়ও কী পরম এক শান্তি খেলে যায়? জানি না। তবে আমার কেবলই মনে হচ্ছিল, কেন মানুষ হিংসা, ঘৃণা কিংবা ঈর্ষার বাইরে এসে সুন্দর মানবিক মন নিয়ে পৃথিবীর বুকে শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকে না? আমরা মানুষ, আমাদের সবার ধর্মই তো শান্তির কথা বলে। নয় কি?
রিমি রুম্মান:
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
৬টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
ধর্মীয় স্থাপনায় মন যতসুন্দর ধর্মীয় কাজে ব্যয় হয় ঠীক সেই মন্টা সকল সময় সকল ভাল কাজে আন্তরিক হবে বিশ্বটা শান্তিময় হত।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন|
নীলাঞ্জনা নীলা
পোস্টটি ফেসবুকে পড়েছি। স্থাপত্যশৈলীর কী সুন্দর নিদর্শন! আপু তোমার লেখনীতে যাদু আছে। অপরূপ রূপ ধারণ করে।
রিমি রুম্মান
যেমনটি দেখেছি, তেমন করে লেখায় তুলে আনতে পারিনি। অদ্ভুত সুন্দর!
জিসান শা ইকরাম
জানলাম মসজিদটি সম্পর্কে।
কখনো সুযোগ হলে দেখব এটা।
এমন কিছু মসজিদ দেখেছি মালয়েশিয়ায়, পর্যটকরা দেখেন সেসব মসজিদ। মেয়েদের জন্য বোরকার মত পোষাক দেয়া হয় যেমন তুমি বর্ননায় বলেছ।
শুভ কামনা,
রিমি রুম্মান
ভুল হয়ে গেসিল, দাদাভাই। আমি বোরখা পরেছি, জামাই আর ছেলেদের আলখাল্লাহ পরাই নাই ভুলে।