শেখ জাহিদ ও আদ্যপরিচয়/আতুমা বিচার(পর্ব---এক ) 

উত্তরবঙ্গের প্রাচীন কবিদের মধ্যে শেখ জাহিদের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তার বিখ্যাত আদ্যপরিচয় কাব্যের জন্য তিনি বিশেষভাবে স্মরণীয়।শেখ জাহিদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না গেলেও কিছু ধারনা বিদ্দমান গবেষকদের মাঝে যে তিনি – খুব সম্ভবত ধর্মান্তরিত নাথ-সম্প্রদায় ও নাথ-ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী এবং যোগ পন্থি সুফি সাধু । যিনি মুসলিম হয়ে এই কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন।

 মনীন্দ্র মোহন চৌধুরী সম্পাদিত করে প্রথম রাজশাহী হতে প্রকাশিত হয় আদ্যপরিচয়(১৯৬৪ খ্রিঃ)। ধরনা করা হয় ১৪৯৮ খ্রিঃ আদ্যপরিচয় বা আতুমা বিচার কাব্যটি লিখিত হয়। বাংলা সুফি সাহিত্যের এক বিশেষ দিক উম্মে-চিত হয়েছে এই কাব্যে।তার কাব্যে ফুটে উঠেছে নাথ গজল সাহিত্যের বিশেষ ধারা।

আদ্যপরিচয় সৃষ্টিতত্ত্বমূলক রচনা। এখানে সৃষ্টিতত্ত্বের ৮ টি তত্ত্ব কথা বা অধ্যায়  ব্যখ্যা করা হয়েছে।

 

 ১।সৃষ্টিতত্ত্ব

২।জন্মতত্ত্ব

৩।জন্মক্ষণ   বিচার

৪।গর্ভের   বিচার

৫।দশরত্ন   বিচার

৬। দশ দ্বার বিচার

 ৭।দেহতত্ত্ব বিচার,

৮। দেহ তত্ত্ব বিচার(২)

 

 

প্রথম অধ্যায়-আদ্যপরিচয়ের প্রথম অধ্যায়ে কবি সৃষ্টি তত্ত্বের বর্ণনা দিয়েছেন তা আশরাফুল মাখলুকাত বা আদম সৃষ্টির রহস্য বর্ণনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন আদম সৃষ্টি ছাড়া স্রষ্টার কাছে সব সৃষ্টি বৃথা মনে হওয়ায় সর্বশেষ তিনি আদম সৃষ্টি করেছেন। সেই বর্ণনা পাওয়া যায় তার কবিতায়-----

“পুনর্বার করিল মন মনুষ্য সৃজো ভুবনে

তাহা হইতে পাইমু হরিষ।

তাহাক করিমু রাজা জীবেরে করিমু প্রজা

পৃথিবী সাজিয়া দিব মহীতলে।

(তাহাক) করিমু প্রবীণ পূজে জেন রাত্রিদিন

তোয়াগিয়া সকল জঞ্জালে।

(((আল্লাহ্   বলেছেন,  ইন্নি   জায়েলোন   ফিল   আরযে     খলীফা,   অর্থাৎ   নিশ্চয়   আমিপৃথিবীতে    খলীফা   নিযুক্ত   করতে   চলেছি” (সূরা   আল্   বাক্বারাহ্-৩১)

অল্লাহ   বলেন:   হুয়াল্লাযী    খালাকাকুম    খালায়েফা    ফিল   আরযে   অর্থাৎ    তিনিই    তোমাদের   পৃথিবীতে    স্থলাভিষিক্ত    করেছেন (সূরা    ফাতিরঃ৪০))))

 

অনেকে মনে করেন এই মানুষ সৃষ্টির এই রুপ তিনি বৌদ্ধ সহজিয়া মতের ভাগু ও ব্রখান্ডবাদ হতে নিয়েছেন। কিন্তু তাদের এই সুফি ধারা বৌদ্ধ ও ব্রখান্ডবাদ হতে পার্থক্য বিদ্যমান।

 কিন্তু কোরআনের এই আয়াত হতে স্পষ্ট হয়ে উঠে মুসলিম কবিরা ঐ সব মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হননি। তেমনি কোন কারনে ধারনা করা উচিত নয় শেখ জাহিদও বৌদ্ধ ও ব্রখান্ডবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।

এর পর আমি     জ্বিন         মানুষকে    কেবলমাত্র    আমার    ইবাদতের    জন্য    সৃষ্টি    করেছি” [আয্যারিয়াত : ৫৬]

মহানবী   (সঃ)   বলেন:      তিন     ধরনের     জ্বিন     রয়েছে :   একদল,    যারা    সর্বদা    আকাশে    উড়েবেড়ায়,    আরেকদল    যারা    সাপ        কুকুরের    আকার    ধারণ    করে    থাকে    এবং       তৃতীয়দল           পৃথিবীবাসী,     যারা     কোন    এক    স্থানে    বাস     করে    বা     ঘুরে      বেড়ায়” [বায়হাকী         তাবারানী]

আদ্যপরিচয় কাব্যে আমারা জীনকে পাই এভাবে----

জন্মিল দেব অসুর বলে হইল প্রচুর

বাহুবলে না চিনে অন্যথা

নিরবধি করে রণ নাহি জানে মরণ-----

এখানে দেব অসুর মুসলিম কাহিনীতে জিনপরি দেও নামে উল্লেখিত হয়েছে।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ----জন্ম তত্ত্ব ----

>> ভাল লাগলে লেখা চলবে।

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ