শামুক-৩

ভাস্কর চৌধুরী ১ জুলাই ২০২০, বুধবার, ০৯:৫৯:১৭অপরাহ্ন উপন্যাস ১৪ মন্তব্য

বাবা এসে কয়েকদিন সকালে দাদু ও দিদিমায়ের কাছে হাজিরা দিয়ে স্নান করতেন। আমরা দেখতাম, দাদু বাবার শরীরে হাত বুলিয়ে চোখ থেকে জল ফেলতেন। দিদিমা খুব কাঁদতেন। বলতেন বাপ হামার, আজ যাস নে। তোকে ছাড়া বাঁচবো না।বাবা দিদিয়ের হাত ধরে নিজের জীবনের নিঃশ্বাস নিতেন।পাঁচ বছরের নিঃশ্বাস নিতে কতো সময় লাগে?দেখতাম। বাবা আসার পর মা একেবারে আমাদের উপর শাসন তুলে নিলেন। আমরা দুই ভাই আর চাচাতো ভাই বোন মেজো চাচীর হাতে খায়। মা বাবাকে বসিয়ে আলাদা করে খেতে দেন। বাবা আর মা তখন কি সব গল্প করেন। বাবা বলেন। মা শোনেন। আমরা যেনো বাবা মা থেকে দূরে সরে গেলাম। এর ভেতর বাবার প্রিয় মামা বাবাকে দেখতে এলেন। এসে বললেন, তোকে সব ক্ষমা করে দিলাম। সেই পেশকার দাদু আমার দাদুকে বকা দিলেন। বাবা তার সুটকেস খুলে তিন হাজার টাকা তার মামার হাতে গুঁজে দিয়ে বললেন, এবার মাফ করেন মামা। আমি নগদে ঋণমুক্ত হলাম।

পেশকার দাদু সে টাকা ফেরত দিতে গিয়ে পারলেন না।

বাবা বললেন, এর বদলে আমি কামাই করতে শিখেছি অনেক। দোয়া করবেন। আপনার বুকের ভেতর রাখবেন যেমন আগে ছিলাম। পর করে দেবেন না। আমার আপন বলতে তো আপনি শুধু। আর কে আছে? শক্ত ধাতের সেই দাদু চোখ থেকে জল ফেলতে ফেলতে বললেন, তুই আমাকে হারিয়ে জিতে নিলি। জীবনে বড় হতে থাকো। ছেলে মেয়ে বউ নিয়ে সুখে থাকো। তোমার মা বাপের দিতে নজর রাখো। বাবা বললেন, কাল একবার আপনার কাছে যাবো। এর ভেতর পেশকার দাদু আমাকে কোলে টেনে বললেন, একে নিয়ে আসিস। একে কাছে রাখিস। এর চোখে আলো দেখি। খুব বই পড়ে। পেপার পড়ে। পেপারে কি সব লিখে পাঠায়। একবার তোর কল্পিত গল্প পেপারে ছাপা হয়েছে। কাল দেখিস।

বাবা অবাক হয়ে আমার দিকে প্রথম অন্য দৃষ্টিতে তাকালেন। বাবা বললেন, ওকে মহেশখালী নিয়ে যাবো সাথে।

 

পেশকার দাদু বললেন ওখানে একা কি কাজ তোর? কি করিস?

বাবা বললেন, কাল বলবো ।

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ লেখা

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ