১।

পুড়ছি, পুড়ে যাচ্ছি

নাগরিক স্রোতে মিশে যায় যাপিত জীবন

খানিকটা আলো-ছায়ার ভেতর

পাতাল ফুঁড়ে জেগে ওঠা কুশির মতন

রোদের নাভী ছুঁয়ে বেড়ে ওঠে ঝুমকো লতা।

 

জীবনের টানাপোড়ন বৃত্তান্ত ফাঁস হয়ে যায়

দোয়েলের শিসে মাথা তোলা ভোরে

হাঁটতে হাঁটতে মেদ ঝরাতে গিয়ে দেখি

ব্যর্থতার মেদ এতো বেশি যে

বেঁচে থাকাটাই এক বৃথা প্রচেষ্টা।

 

তবুও বেঁচে আছি বাজার দরের মতন

ক্ষিপ্রতা নেই দোলাচলে মানানসই

সাম্প্রতিক একটা জীবন।

হিসাবের গন্ডির ভেতর কোনমতে সমাধান।

 

নাগরিক সুবিধা যা আছে-শিসাময় সুন্দর

এই সুন্দরের ভেতরেই আন্ত-আনবিক রি একশন

আমরা পুড়ছি-পুড়ে যাচ্ছি

পুড়তে পুড়তে ছাই হয়ে যাচ্ছি খুব ভয়ংকর প্যানডমিক।

২||

প্রত্যাশার ভোর

ডুবে যায় ইর্ষার চাঁদ

রাতের চিরকুটে কে যেন লিখে দেয়

সাঁওতালি গান।

………মেরুন হাওয়ার অন্তর চিড়ে

………পাতার ঝিরঝির

দূর থেকে ভেসে আসে ছাতিমের ঘ্রাণ।

 

একমুঠো চিরন্তনী ধ্রুপদী স্বপ্ন

………রাতের অনুরাগে

ক্রমশ পালটে যেতে থাকে দৃশ্যপট।

………চলমান জীবন

………দৃশ্যমান দুঃখ

আর লুকানো প্রেম

………নারীর আদলে বাঁক নেয়।

চিরাচরিত নিয়মে আসে সুবেহ সাদিক

একটি রঙিন …প্রত্যাশার ভোর।

 

৩||

হেমন্ত বেলা

ঘোড়াঘাসে বদলে যায় মাঠ,ফিরে আসে হেমন্ত;

কাগজ মোড়ানো সন্ধ্যার মোড়কে

জোনাকি ঝুলনা

মসৃণ রাতের পাটে ধ্রুপদী জ্যোৎস্না নামে।

 

শিশিরের শাল গায়ে সারি সারি কাটা ধান

মাটি চুমে ঘুম যায়।

 

ভেজাপাতায় রোদ নেমে এলে দরাজ খুলে সোনাধান

শুকিয়ে গেলে,কৃষকের গোলাভরে সোনারেনূ।

 

কাঁচা সোনা পঙক্তি মেলে

অশ্বের খুরের মতো শব্দ আসে -ঝনঝনঝনাঝন।

 

হাওয়ায় মিলিয়ে যায় পরবর্তী সন্ধ্যার ভাঁজে

খই হয়ে ফুটবে বলে।

 

৪||

কি চাহো হে মৃত্যুচিল

মৃত্যুর চাইতে অধিক প্রিয় ভালোবাসা

আর তা আছে বলেই

………মানুষ ভালোবেসে মৃত্যুর স্বপ্ন দ্যাখে

কামনাশ্রিত মৃত্যুর কাছে যাবার নেশায় বিভোর সবে।

 

ব্যস্ততম সড়কে নেমে এলে বাতাসের প্রবল ঢেউ

মহাসমুদ্র তুমুল বরফে আচ্ছাদিত হলেও

ভালোবাসা থামাতে নেই-

………ভালোবাসাও একপ্রকার মৃত্যু।

 

………কি চাহো হে মৃত্যুচিল?

জেনে রাখো যাঁরা ভালোবাসে

তাঁরা মরার আগেই মরে যায়।

 

যাঁরা ভালোবাসে তাঁরা

ইশ্বরের দরবারের খুব কাছেই থাকে

 

………তুমি আমার আত্মা ছূঁতেও পারবে না।

 

৫||

রাইয়ের খোঁজে

ঘন বিথিকার সিঁথি বরাবর পথ ধরে

যখনই সে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল

নলাবকের টুপটাপ মাছ ধরা ক্ষণে

নিঝুম বিল যেন পেলবতা ফিরে পেল।

 

গোধূলির আবীর মেখে ঠোঁটে গালে

টোলপড়া হাসি ছড়িয়ে সন্ধ্যা কালে

সে করাত কলের কাছেই হারালো

জোনাকি মিছিলের ঢেউয়ের তালে।

 

উর্বশী নারিকেল পাতার বাঁশিতে

ধ্রুপদী রাগের মোহময় সুরমূর্ছনা

কলিঘাটে আর রাই তো আসে না

মাটির কলসিও কৃষ্ণ আর ভাঙেনা।

 

রাইয়ের খোঁজে দিনরাত মথুরার হাট

সুতিয়ার পাড় ধরে ক্লান্ত হাঁটাহাঁটি

রাই নাই, বাজে না তাই শ্যামের বাঁশি

হৃদয়ে নিদারুণ খড়া--ভীষণ ফাঁটাফাটি।

 

 

 

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ