শায়লা অসুস্থ রোগীর মতো শ্যাত শ্যাতে বন্দীশলার ফ্লোরে শুয়ে তিন হাটু এক করে ঘুমাবার বৃথা চেষ্টায় যেন এই বুঝি তার প্রানটা যায় যায়।বন্দীশলার

26985এক কর্মচারী শায়লাকে কাধে করে পাকিদের স্থান হতে তুলে এনে বন্দীশলায় রেখে চলে যায়।বন্দীশলায় আরো যারা তার পূর্বেই অত্যাচারিত হয়ে বন্দী হয়েছিলেন তারা অবাক দৃষ্টিতে শায়লাকে দেখছেন
…একি এতো অল্প বয়সের মেয়েটিকেও ওরা ছাড়ল না,ওদের ওপর খোদার আরশ ভেঙ্গে পড়বে…সেখানকার এক বন্দী বীরাঙ্গনার আত্বনাৎ।যারা সেখানে বন্দী ছিলেন তাদেরও শারিরীক মানষিক অবস্থা এমন যে,কেউ ব্রেন সর্টে নিজের অঙ্গের জরাজীর্ণ কাপড়ের বাকী অংশ টেনে ছিরে ফেলছেন,কেউ বা পাগলের মতো উপরের দিকে তাকিয়ে একা একা বির বির করে কি যেনো বলার চেষ্টা করছেন,কেউ বা ভয়ে মাঝে মাঝে আৎকে উঠছেন।তাদের মধ্যে জুলেখা নামক এক বীরাঙ্গনা শায়লার দিকে এগিয়ে আসছেন।সেখানে জুলেখার মতো আরো দু’তিন জন পাকিদের নির্মম অত্যাচারেও নিজেকে কন্ট্রোল রেখে সুস্থ জ্ঞানে বন্দীশালায় আছেন।নতুন যারা আসছেন তাদের সাহস দেন,অভয় দিয়ে বলেন,যারা এখানে এসেছেন তাদের নাম ইতিহাসের পাতায় সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে,আপনারা স্বাধীনতা সংগ্রামে গর্বিত নারী।ভয় নেই জয় আমাদেরই হবে।
জুলেখা শায়লাকে লক্ষ্য করে সামনে যাচ্ছেন,ব্যাথায় কাতর উপুর হয়ে শুয়ে পড়া শায়লার নীভু নীভু চোখ দুটোর দৃষ্টি পড়ে জুলেখার এগিয়ে আসা চলন্ত পা দুটোর দিকে….শায়লার চোখে পা দুটি যেনো এখনো পাকিদের পা মনে হচ্ছিল…তার মনে হচ্ছিল আবারও কোন এক জানোয়ার তার নিথর দেহটাকে ছিড়ে ছিড়ে খাবে।সে আৎকে দু’তিন হাত পিছু নিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন "আমি আর পারছি...এ ভারের বোঝা বইতে আর পারছি না….আমাকে ছেড়ে দাও…আমাকে ছেড়ে দাও’’...এরই মধ্যে জুলেখা তাকে জড়িয়ে ধরে চোখে জল গড়িয়ে তাকে শান্তনা দিতে থাকেন।ভয় নেই মা এখানে আমরা সবাই বাঙ্গালী।আমরা তোমাকে আর কোন কষ্ট হতে দেবো না।
শায়লা এক সময় শান্ত হন,নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন।বন্দীশালায় যারা ছিলেন তাদের মধ্যে শায়লা সর্বো কনিষ্ট।সেই হিসেবে তার প্রতি সহানভুতির পরিমানটা ছিল সব চেয়ে বেশী তাই একে একে ভাগ্যহত বীরাঙ্গনারা পরিচত হচ্ছেন তার সাথে।
-আমি নাজমা, গোপাল গঞ্জের আমি।আমার আফসোস নাই আমি এ পর্যন্ত পঞ্চাশ জন নর পশু,কাউকে দা দিয়ে কুপিয়ে,কাউকে গলায় ফাস দিয়ে কাউকে বা গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে হত্যা করেছি।হালিমা প্রশ্ন করেন…আপনি গুলি পাইলেন কই থেকে?
-মুক্তি বাহিনীর অস্ত্র গুলোকে আমি কুজো ভিখারি সেজে থলে করে এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায় পৌছে দিতাম।তখনি আমি ট্রেনিং নিয়ে ছিলাম।যে দিন ওরা আমাকে ধরে ফেলবে সেই দিনও পাচটারে খাইছি…।
কথা গুলো বলতে বলতে মনের আবেগ চোখের জল হয়ে গড়িয়ে পড়ল মাটিতে।…চোখের জল মুছতে মুছতে আবারো বলতে থাকেন তার ভিতরে লুকানো ব্যাথা গুলো…আমার ছয় বছরের একটি মাত্র নাতিন ছিল,ওরা আমার ছেলেকে, ছেলের বউকে তো মারলই বরং ছয় বছরের শিশুটিকেও ওরা বাচতে দেয়নি…নাতিনের পা দুটিকে দুদিক থেকে ধরে চিড় চিড় করে দেহটিকে নিমিষেই দু ভাগ করে ছুড়ে ফেলল ঘরের কোনায়।আমি তা দেখে জ্ঞান হারাই।জ্ঞান ফিরে দেখলাম.... আমার আদরের বউ মার দেহটিকে উলঙ্গ করে খাড়া একটি বাশের উপর বেধে রেখেছে,ছেলের মাথাটি খুজে পাইনি হয়তো ওরা নিয়ে গেছে।নাতিনের দেহটিকে দেখছি কিছূ শকুন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে……উপচে পড়া চোখের জল মুছতে লাগলেন।তেমন কোন বস্ত্র না থাকায় হাতেই চোখের জল মুছলেন বীরাঙ্গনা নাজমা।সে সময় তার অমানবিক ঘটনাগুলো শুনে কেউ আর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি,যারা স্মৃতি ভ্রষ্ট ছিলেন তারাও যেনো নিশ্চু নিস্তব্দ কেবল ঘটনার সাক্ষী।
-আমি হালিমা বেগম,বাড়ী আমার যশোর।আমি আর কি বলব শুধু বলব মুক্তি বাহিনীরা এক দিন এর বদলা নিবেই নিবে…যুদ্ধে আমার তিন ছেলে এবং স্বামী মুক্তি বাহিনীতে আছেন।আমাকেও ওরা হয়তো পাগলের মতো খোজেছেন।যে দিন আমি নর পশুদের হাতে ধরা পড়লাম সে দিন ছিল চাদেঁ যৌবন। তার আলোতে মাটির পিপিলিকাগুলোও দেখা যাচ্ছিল,পাশের বাড়ীর শহুরে এক ডাক্তার কিছু ঔষধ দিয়েছিল মুক্তি বাহিনীকে দেবার জন্য এবং বলেছিলেন যদি বেশী প্রয়োজন পড়ে সেও মুক্তি বাহিনীর ক্যাম্পে যাবেন। আমাকে কেবল ঔষধগুলোকে পৌছে দিতে বললেন।
ঘরে আমার আট দশ বছরের ছোট ছেলেকে রেখে ঔষধগুলো নিয়ে চললাম মুক্তি বাহিনীর ক্যাম্পের দিকে।ঔষধগুলো আমি আমার কোমড়ে কাপড়ের ভাজেঁ ভাজেঁ বেধে রেখেছিলাম।কিছু দুর যেতেই আমার পথ আটকালো দুই পাকি হারামজাদা।তখন তেমন একটা ভয় পায়নি ,যে দুজন ছিল তারা যদি কোন তেরি বেরি করত তবে দুজনকে দু গালে এক থাপ্পরেই অজ্ঞান করে ফেলতাম কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যে কোথা থেকে যেনো এক লরি ভরে মিলিটারি এসে আমাকে তুলে ফেলল লরিতে।লরিতে তুলতেই এক পাকির হাত পড়ে আমার কোমড়ে,বুঝতে পেরে সে আমাকে সাথে সাথে আবার নামিয়ে ফেললো এবং আমার পড়নে যা ছিল তা এক এক করে খুলে নিল।সমস্ত উলঙ্গ করে আমাকে,কেউ কেউ আমার স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থানে তাদের হাতের বেত দিয়ে খোচাতে লাগে।এরই মধ্যে আরেক বদমাইশ আমার গোপনাঙ্গ সার্চ করতে বললো,অন্য এক কনষ্টেবলকে।তখন আমি কি করব,বাচব না মরব কোন কিছুই মনে ভাবতে পরছিলাম না,অর্ডার পাওয়া কনষ্টেবলটি যখন আমার সামনে এলো অমনি আমিও কনষ্টেবলের ঘাড়টি শক্ত করে ধরে ইয়া...লী… জয় বাংলা বলে তার পুরো দেহটিকে ছুড়ে ফেললাম দুরে ধান ক্ষেতে।আমি নিশ্চিত ছিলাম সেই পাকি মারা গেছে আর ভাবছিলাম আমাকেও ওরা হয়তো মেরে ফেলবে কিন্তু না আরেক পাকি অফিসার আমাকে তার জিপের পেছনে রশি দিয়ে বাধল…তার পর যা হলো,,,কুকুরের মতো ওরা দল বদ্ধ ভাবে আমার দেহটাকে ছিড়ে ছিড়ে খাইলো….কখন যে জ্ঞান হারালাম বুঝতে পারিনি।জ্ঞান ফিরে দেখি আমি এখানে।চোখ ঝাপসা হয়ে আসা চোখের জলের ঝর্ণা ধারাও যেনো বলছে আর নয় কান্না,,,এবার নিতে হবে প্রতিশোধ,বাংলা ছাড়তে হবে সব হায়নার।
-আমার নাম ফাতেমা,মুসলিম জাহানের সর্বো উৎকৃষ্ট নাম মা ফাতেমা আমিই, জেলা যশোর,আমি অন্ত সত্তা,পাকি জানোয়ারদের আনন্দের ফসল নিয়ে বেচে আছি আজ প্রায় সাত মাস।
জুলেখার পরিচয় দেবার সময় এক মধ্য বয়সী হিন্দু ধর্মের বন্দী মহিলার প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে সবাই যেনো নিশ্চুপ হয়ে গেলেন যেনো শশ্মানের নীরবতা এসে ভর করেছে তাদের মনে।
-জুলেখা বু,আমরা না হয় হিন্দু ধর্মের আমাদের প্রতি পাকিদের ধর্ম ভিত্তিক কিংবা রাষ্ট্র ভিত্তিক আক্রোস থাকতে পারে সেই হিসাবে ওরা আমাদের উপর অমানষিক অত্যাচার চালায় কিন্তু তোমরা!তোমরা যারা মুসলমান ওরাতো মুসলমান তবে ওরা এক মুসলমান হয়ে আরেক মুসলমানের উপর এমন জগণ্যতম অত্যাচার করে কেনো?তোমাদের ধর্মেতো স্পষ্ট লেখা “আছে এক মুসলমান অন্য মুসলমানের সম্পর্কে ভাই-বোন”?জুলেখা তার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন।
-যদিও ওরা মুসলিম তবুও  মুসলিমের লেবাস ছাড়া মুসলিমের অন্য আর কোন গুণ তাদের মধ্যে নেই।আর এখন যা ওরা করছে তা কেবল একটি নতুন দেশ সৃষ্টির বিরুদ্ধে।আমাদের মুক্তি বাহিনীরা যুদ্ধ করে যাচ্ছেন…কেউ কেউ শহীদ হচ্ছেন,এই আমাদের মতো ভাগ্যহত নারীদের এই আত্ব ত্যাগ কেবল একটি ফুলকে বাচাতে একটি নতুন সূর্য্য উদয়নে।আমার বিশ্বাস, সীমাহীন এই অত্যাচারই তাদের নির্মম পরাজয়ের দিকে নিয়ে যাবে।
তাদের পাশেই বসা ছিলো বেশ কয়েক জন পাকিদের নির্যাতিত স্মৃতি হারানো অর্ধ মধ্য যুবতি বয়সের মেয়েদের কন্ঠে হঠাৎ…মোরা একটি ফুলকে বাচাবো বলে যুদ্ধ করি”গানটি শুনে সকলেই নীরবে চোখের জল ফেলে যাচ্ছিলেন।

আরো যারা ছিলেন তারা তাদের পরিচয় দেবার মতো জ্ঞান ছিল না।দিনের পর দিন দৈহিক মানষিক টর্চারে তাদের স্মৃতি ভ্রষ্ট ঘটে।পরিচয় দেবেন তো দুরের কথা তারা কি হিসাবে বেচে আছেন বদ্ধ এই ঘরটিতে তাই অবগত নয় পাগলের মতো সারাক্ষণ কি যেনো ভাবনায় মগ্ন থাকেন।প্রায় প্রতিদিনই ভাগ্যহত বন্দী নারীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

প্রচন্ড খিদে লেগেছে শায়লার গত দু’তিন দিন যাবৎ পাকিরা তাকে কখনও এ ক্যাম্পে কখনও ঐ ক্যাম্পে নর পশুদের আনন্দের খোরাক হয়ে স্থান স্থান্তরিত করেছেন তারা কখনও ভাবেনি সেও তো মানুষ,তার উপর অল্প বয়স।যে বয়সে স্কুলে পড়ার কথা সেই বয়সে সে আজ ভাগ্যহত এক কিশোরী।
জুলেখা তাকে একটুকরো রুটি আর জল এগিয়ে দিলেন সে তা খেয়ে নিজেকে সবল রাখেন।এই বন্দীশালায় খাবার সরবরাহের ব্যাবস্থা নেই তবে জুলেখা এবং তার আরও তিনজন সহযোগি ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়ীত্বে থাকা নিরাপত্বাকর্মী ও পাকিদের সাথে ভাব জমিয়ে মাঝে মাঝে কিছু খাবার সংগ্রহ করতেন।সেই খাবার সবাই মিলে একটু একটু করে ভাগ করে খেতেন।
বন্দীশালায় কখন রাত আর কখন দিন তা বুঝবার কোন উপায় নেই।গভীর অন্ধকার জঙ্গলের ভিতর শুধুমাত্র এই পাকা দালালটিই আছে যেখানে বন্দী আছেন প্রায় দুই তিন শতের বেশী নারী।শুইবার স্থানতো দুরে থাক বসবার স্থানটুকুই নেই।একে অন্যের উপর কোন মতে দিন অতিবাহিত করছেন তাছাড়া প্রতিদিনই কম পক্ষে পনের বিশ জন করে পাকিদের মনোরঞ্জনের জন্য নারীদের এ ক্যাম্প থেকে ঐ ক্যাম্পে আনা নেয়া করেন।তেমনি আজকেও এক পাকি কনষ্টেবল এসেছে কয়েক জনকে নিয়ে যেতে।সে জন্য বেছে বেছে বেশ কয়েক জনকে সারিবদ্ধ ভাবে লাইনে ধার করালো কনস্টেবল।
যদিও দাড়ানোর শক্তি সামর্থ কোনটিই তাদের দেহে বিদ্যমান ছিল না তবু নিত্য দিনের রুটিন মাফিক পাকিদের খোরাক হতে তাদের লাইনে দাড়াতে বাধ্য ছিলেন নতুবা ব্যাত্রাঘাতে তাদের দেহ থেকে রক্ত জলের ন্যায় গড়িয়ে পড়ত।শারিরীক অসুস্থতায় শায়লা সেই লাইনে দাড়াতে পারেননি বলে তাকে অসুস্থ শরীরে ব্যাত্রাঘাতের আঘাত সইতে হলো।
মুক্তিবাহিনীরা এগিয়ে যেতে থাকলেন তাদের জয়ের দিকে।জুলেখা গোপন সূত্রে জানতে পারেন তাদের ক্যাম্পেও মুক্তিবাহিনীর হানা পড়বে।যতই দিন যাচ্ছে একটু একটু করে বিজয়ের নিশানা উড়ছে,কখনো এ গ্রাম কখনো ঐ গ্রাম মুক্তি বাহিনীর দখলে চলে যাচ্ছে।এদের এমন জয়ের পিছনে বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র ভারতে সহযোগিতা শেষ পর্যন্ত ভারত বিমান হামলা চালালো পাকিদের বিরুদ্ধে।জুলেখার কাছ থেকে এ সব খবর জানতে পেরে বন্দী নারীরা আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেন…হে আল্লাহ তুমি জালিমদের হাত থেকে এ দেশের মানুষদের বাচাও।
জুলেখা সাথীদের সাথে গোপনীয়তা বজায় রেখে আলাপ করছেন যদি মুক্তি বাহিনী তাদের ক্যাম্পে হামলা দেয় তবে তাদের কি কি করনীয় আছে।আলাপের এক পর্যায় এক ক্যাম্পের সিকুরিটি হায়না মাতালের প্রবেশ।পরামর্শ অনুযায়ী মাতাল হায়না ভিতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে ওর উপর ঝাপিয়ে পড়েন একদল বীরাঙ্গনা।তাকে স্বাস রুদ্ধ করে মেরে ফেলেন এবং তার পরিধেয় পোষাক খোলে মৃত দেহটিকে চার দেয়ালের বাহিরে ভাল করে লক্ষ্য করে ময়লা আর্বজনা ফেলানো ডাষ্টবিনে ফেলে দিয়ে কিছু শুষ্ক ডালপালা সাবধানে তার উপরে ফেলেন যাতে লাশটি বাহির থেকে দেখা না যায়।

এক দিন এলো সেই সময়।মুক্তি বাহিনীরা প্লান করেন এখানে পাকিদের যত ক্যাম্প আছে সব বোম্বিং করে উড়িয়ে দিবেন।প্লান মোতাবেক জুলেখা বন্ধ ঘর থেকে বাহিরে যাবার সুযোগ খোজেন।এক দিন সেই সুযোগও এসে যায়,পাকিদের বড় অফিসারের জন্ম দিন উপলক্ষ্যে খাওয়া দাওয়া আনন্দ ফুর্তির আয়োজন করেন কিন্তু ওদের মাঝে বাত বাধে কোন হোলেটের কিংবা সরকারী খাবার নয় নিজেরাই রান্না করবেন।কিন্তু আদা মরিচ হলুদ পেয়াজের মশলা তৈরী করবেন কি ভাবে?একজন কনষ্টেবল বলল এখানে বাঙ্গালী মহিলা যারা আছেন তাদের মধ্যে দুজনকে এ দায়ীত্ত্ব দিবেন।এক কনষ্টেবল সেই বদ্ধ ঘরে ঢুকে জুলেখা এবং শায়লাকে ডেকে নিয়ে পাকি অফিসারের সামনে দাড় করায়।
-হুম!কিয়া নাম হে তুমকো?
-জুলেখা আর শায়লা।
-হুম!তোমারা হামকো এক কাম দ্যাট মিনস তোমহারা হামকো কুচ মাশালা মেকিং কারকে দিয়েঙ্গে,হামারা আজ পার্টি।
-আমাদেরতো পাটা পুতা কিছুই নেই কি ভাবে তা করব?
অফিসার রাগ হয়ে….এই ছুড়কি তুম উর্দুমে বাতাও।
-কেনো যে ভাষার লাইগা আমরা রক্ত দিছি সেই ভাষা বাদ দিয়ে অন্য ভাষায় কথা কইমু কেন?
অফিসার আবারও রেগে তার এক কনষ্টেবলকে জিজ্ঞাসা করেন সে কি বলছেন।কনষ্টেবল হিন্দিতে তাকে বুঝিয়ে দেবার পর সে আরো রেগে যায় এবং মনের জিদ মনে রাইখা কনষ্টেবলকে বলেন সব কিছু ম্যানেজ করতে।
-সমস্যা নেই কোথাও এগুলো পাওয়া যায় বলেন আমি আনিয়ে দিচ্ছি…।
শায়লা বুদ্ধি করে কথার লেজ ধরেন।
-না না আপনাকে কষ্ট করে যেতে হবে না…ঐ যে ঐখানে এক ঐবাড়ীতেই আছে শুধু আমাদের যেতে দিলেই হয়,আমরাই নিয়ে আসব।
-ঠিক আছে যেতে পারেন।কেউ কিছু বললে.. এই নিন এই কার্ডটা,দেখাবেন।
বাঙ্গালী এই কনষ্টেবল লোকটি যদিও পাকিদের কাজ করেন তবুও বাঙ্গালীদের প্রতি এক বিশেষ সহানুভূতি রয়েছে তার।তার মাধ্যমেই জুলেখা অনেক দিক দিয়ে সুবিদা ভোগ করেছিলেন।
যে কথা সেই কাজ শায়লা এবং জুলেখা বন্ধ ঘর থেকে বাহির হয়ে দেখলেন,ধান ক্ষেতে ধান রোপন করছেন দু'জন চাষী।তাদের সাথে কথা বলেন সে।চাষীদের কথা মতো জুলেখারা একটি নিদিষ্ট বাড়ীর খেড়ের মাচার ভিতর হতে কিছু একটা বস্তু দুজনের কোমড়ের ভাজে ভাজে লুকিয়ে রেখে ঘরে ঢুকে পাটা-পুতা নিয়ে সোজা চলে আসেন সেই কনষ্টেবলের কাছে।পাটা পুতে তার কাছে দিয়ে পানি আনার উসিলায় দু'জনে তাদের ক্যাম্পে প্রবেশ করে চারদিকে তাকিয়ে কোমড় হতে বস্তুগুলোকে নিরাপদে রেখে পানির জগ হাতে করে মশলা বাটায় চলে যান।
মশলা বাটা শেষ এ দিকে সন্ধ্যাও ঘনিয়ে আসছে।আকাশে মেঘের গর্জন শুনা যাচ্ছে।পাকিরা তাদের নিজ নিজ কক্ষে ভোজন সারছেন এই ফাকে শায়লা জুলেখা তাদের কর্মে লেগে যান।বস্তুর প্যাকেটগুলো খোলে দেখল কয়েকটি টাইম বোমা সাথে একটি চিরকুট আছে এগুলো কি ভাবে ইউজ করবেন তার পুরো বিবরন আছে।কতটা সময়ে তা ব্লাষ্ট হবে এবং মুক্তবাহিনীরা বোম ব্লাষ্টিকের সাথে সাথে কে কোন দিক দিয়ে হামলা করবে এ সব বন্দী নারীদের উদ্ধার করবেন সব পরিকল্পনাই স্পষ্ট চিরকুটটিতে লেখা ছিল।জুলেখা ও শায়লা চিরকুটটি ভাল করে পড়েন এবং তা মুখের ভিতরে গোজে খেয়েই ফেলেন যাতে শত্রুর হাতে চিরকুটটি না পড়ে।
আকাশটা যেন রাগে কালো মেঘে ঢেকে রেখেছে সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও পড়ছে।পাকিদের আনন্দটা যেনো মাটি করে দিলো অভিমানী আকাশ তবুও যেনো বাদ না যায় আনন্দ সে জন্য তাদের কক্ষে মদ বিয়ার আর বাঙ্গালী রমনীদের রান্না করা পোলাও মুরগী  যেনো রাক্ষুসে পেটে ঢুকছে।এই সুযোগে শায়লা জুলেখা প্লান মতো পাকিদের বস বাসের জন্য কৃত্রিম ভাবে তৈরী করা ঘরগুলোর প্রতিটি ঘরের কোণায় কোণায় অতি সাবধানে টাইম বোমা ফিট করে ফিরে আসেন তাদের নিজ ক্যাম্পে।সবাই প্রস্তুত বোম ব্লাষ্টের সাথে সাথে সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে পড়বেন তখনি মুক্তিবাহীনির একটি গ্রুপ তাদের সামনে থাকবেন।

এটি একটি গল্প তবে এমনি আরো অসহ্য যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়েছে এদেশের নারীদের।তারা 2016_08_11_08_59_31_7115_ooক্ষমতার কোন সুবিদা ভোগ চাননি তাদের যে আত্বত্যাগ তা কোন কিছুর বিনিময়ে পুরণ করা সম্ভব নয় এ ঋণ শোধরাবার নয়,বেচে থাকা বীরাঙ্গনাদের এই ৪০/৪৫টি বছর  ধরে তাদের একটিই চাওয়া ছিল রাষ্ট্র যেমন এ দেশের শহীদ গাজী যুদ্ধাহতদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছেন তেমনি তাদেরকেও অন্ততঃ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দিবে রাষ্ট্র।আমাদের আশার বাণী হলো মুক্তি যুদ্ধে বিরল অবদানের অধিকারিনী ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দিল রাষ্ট্র

বাংলার মসনদকে রক্ষা করতে প্রা্ন দিতে হয়েছিল নবাব সিরাজদৌল্লাহকে তারই অতি বিশ্বাসি লোকদের হাতে তেমনি এ দেশের লক্ষ মায়ের সম্ভ্রম রক্ষায়,লক্ষ লক্ষ শহীদের প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধাস্থ্য একটি স্বাধীন দেশের হাল ধরে ছিলেন বাংলাদের দেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবর রহমানক।যে লোকটি পৃথিবীতে না এলে হয়তো আমরা বাংলাদেশীরা সেই অন্ধকারেই থেকে যেতাম,যে লোকটির জন্ম না হলে আমরা আজো পাকিদের গোলামী জিঞ্জির পড়েই থাকতাম..সেই লোকটিকে এই আমরাই কি ভাবে হত্যা করি!আমরা কি মানুষ না অন্য কিছু।শুধু বঙ্গবন্ধুকে মেরে ওরা ক্ষান্ত হতো দুঃখ  ছিল না ওরা তার নিষ্পাপ পরিবারের পরিজনকেও নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করে....শৈশরের চঞ্চলতা না পেরুতেই বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলকেও ওরা ছাড়েনি।ওরা শিশু রাসেলকেও হত্যা করে।শুধু ভাগ্যের জোড়ে বিদেশ বিভুয়ে বলে সে যাত্রায় বেচে যান বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহেনা।

১৫ই আগষ্ট বঙ্গ বন্ধুর শহীদ হওয়ার সাথে সাথে এদেশের আবারো কালো অন্ধকার নেমে আসে।এই কালো অন্ধকারটি দেশ উন্নয়ন থেকে দেশকে অনেক পিছিয়ে রাখে।আজ আবারো সেই বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাতের স্পর্শ,আমরা আশা বাদী মানুষ বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় আছি।মুক্তিযুদ্ধের গল্প দিয়ে এ লেখাটি লিখলাম শুধু একটিই কারন তা হলো কতটা আত্ব ত্যাগে এই দেশ আমরা পেয়েছিলাম।
"রক্ত  দিয়ে কিনেছি স্বাধীনতা
রক্ত দিয়ে কিনেছি মুখের ভাষা
রক্ত দিয়েই কিনেছি গণতন্ত্রের বাসা
তব,
শোকাহত
আজ সারা বাংলা"

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ