আজ ১৯৭১ সনে মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে আলবদর বাহিনীর প্রধান যুদ্ধাপরাধী কামরুজ্জামান এর অপরাধের বিচারের রায় ঘোষিত হবে।  তিনি স্বাধীনতার বিরোধী দল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল । ১৯৭১ সনে  তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে তৎপরতা গড়ে তোলেন। জামালপুরে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী আল বদর গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যদের হত্যা করার পরিকল্পনা করে। তার নেতৃত্বে অতি অল্প সময়ে ময়মনসিংহে আল বদর বাহিনী গড়ে তোলা হয়। অপরাধ আইনের ৩ (২) ধারায় সব ধরনের অপরাধ তিনি করেছেন।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগ । তিনি আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তার অংশগ্রহণ পরিকল্পনায় নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে। তার প্রমাণ দীর্ঘ ৪০ বছর পরও সোহাগপুর গ্রাম ‘বিধবা পল্লী’ হিসেবে পরিচিত। আলবদর বাহিনী বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। এর পর নারীদের ধর্ষণ করেছে।

আল বদর কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে  ৭টি অভিযোগ:
চার্জ-১
শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি থানার কালীনগর গ্রামের মোঃ ফজলুল হকের পুত্র শহীদ বদিউজ্জামানকে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আল বদর বাহিনী ২৯ জুন ১৯৭১ সাল রাত ১১টার দিকে ঝিনাইগাতি থানার রামনগর গ্রামের আহম্মদ মেম্বারের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। আহম্মদনগর ক্যাম্পে সারা রাত নির্যাতনের করে পরের দিন আহম্মদ নগর রাস্তার ওপর ওপর গুলি করে হত্যা করা হয়। লাশ টেনে নিয়ে কাছে কাঠের পুলের নিচে পানিতে ফেলে দেয়া হয়। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান আল বদর বাহিনীর নেতা হিসেবে সবসময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে জীপে করে ঐ ক্যাম্পে আসা-যাওয়া করত। এলাকায় পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড- সংঘটিত করত।

চার্জ-২
একাত্তরের মে মাসের মাঝামাঝি এক দুপুরে শেরপুর কলেজের তৎকালীন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে খালি গায়ে মাথা ন্যাড়া করে, গায়ে ও মুখে চুনকালি মাখিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় চাবুক দিয়ে পেটাতে পেটাতে শেরপুর শহর ঘোরায় আসামি কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা।

চার্জ-৩
আসামির পরিকল্পনায় ও পরামর্শে একাত্তরের ২৫ জুলাই ভোরবেলায় রাজাকার, আলবদরসহ সেনাবাহিনী শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গ্রাম ঘিরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরুষ লোকদের হত্যা এবং মহিলাদের ধর্ষণ করে। ঘটনার দিন থেকে উক্ত গ্রাম ‘বিধবা পল্লী’ নামে সর্বমহলে পরিচিত। সেদিন ঐ গ্রামে ১২০ জনকে হত্যা করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটরদের দেয়া অভিযোগপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সোহাগপুরে যাদের হত্যা করা হয় তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নিয়ামত আলী, কমেদ আলী, রহম আলী, মনতাজ আলী, আবুল বাশার, শাহেদ আলী, ক্বারী হাছেন আলী, ইব্রাহিম, সফর উদ্দিন, বেয়াহত আলী, রহিমুদ্দিন, বাবর আলী, কুটুমুদ্দিন, কিতাব উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী, মোমিন আলী, মুন্নাস আলী, ছফির উদ্দিন, রেজাত আলী, আব্দুল কুদ্দুস, হাফেজ উদ্দিন, মালেক ফকির, খেজুর আলী, আলী হোসেন, জমির উদ্দিন, আনসার আলী, লতিফ আলী, হাসান আলী, বশিরা, আকবর, ছহুর উদ্দিন, সিরাজ আলী, ময়েজ উদ্দিন, নেকবর আলী, হারুন আলী, দুদু, আব্দুল আজিজ, সালাম, নুর মোহাম্মদ, কানচা শেখ, আব্দুর রহমান, সহর তালুকদারসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১২০ জন।

চার্জ-৪
১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট মাগরিবের নামাজের সময় গোলাম মোস্তফা তালুকদারকে ধরে নিয়ে যায়। কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর বাহিনীর লোকজন তাকে ধরে নিয়ে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে অবস্থিত আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে আসে। তার চাচা তোফায়েল ইসলাম আসামি কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে তাকে ছাড়িয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। ঐ রাতেই কামারুজ্জামান ও তার আলবদর বাহিনী গোলাম মোস্তাফা ও আবুল কাশেম নামে অপর একজনকে মৃগি নদীর ওপর শেরী ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। গোলাম মোস্তাফা মারা যায়। কিন্তু আবুল কাশেমের হাতের আঙুলে গুলিবিদ্ধ হলে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়।

চার্জ-৫
একাত্তরের রমজান মাসের মাঝামাঝি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শেরপুরের চকবাজারের বাসা থেকে মোঃ লিয়াকত আলী, পিতা-মোঃ সাদেক আলী মিয়া এবং মজিবুর রহমান জানু, পিতা মৃত আঃ আজিজ খান উভয় সাং চকবাজার, থানা-শেরপুর। আসামি মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে ৪/৫ জন তাদের বাসা থেকে ধরে রঘুনাথ বাজারের বানথিয়া বিল্ডিংয়ে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সেখানে তাদের ৪ দিন আটক থাকার পর আসামি কামারুজ্জামানের নির্দেশে তাদেরসহ আরও ১১ জনকে ঝিনাইগাতি আহমদনগর আর্মি ক্যাম্পে চালান দেয়। তাদের সকলকে আহমদনগর ইউপি অফিসের পেছনে একটি গর্তের পার্শ্বে দাঁড় করায়। তাকে সহ তিনজনকে ঐ লাইনে থেকে আলাদা করে বাকিদের গুলি করে হত্যা করে। গুলি করার সময় আসামি কামারুজ্জামান ও তার সহযোগী কামরান উপস্থিত ছিল।

চার্জ-৬
একাত্তরের নভেম্বর মাসে দিদারসহ কয়েকজনকে ময়মনসিংহ শহরের জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী। পাকিস্তানের পক্ষে বক্তব্য দিতে বাধ্য করতে সেখানে নির্যাতন চলে তাদের ওপর।

চার্জ-৭
একাত্তরে ২৭ রোজার দিন দুপুরে টেপা মিয়ার বাড়ি ঘেরাও করে আলবদর বাহিনী। এর পর কামারুজ্জামানের নির্দেশে টেপা মিয়াসহ ৫ জনকে হত্যা করা হয়। টেপা মিয়া ও তার বড় ছেলে জাহিরুল ইসলাম দারাকে আলবদর বাহিনী ধরে আনে। প্রথমে টেপা মিয়াকে বেয়নেট চার্জ করা হয়। পরে গুলি করে হত্যা করা হয়। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বিবরণ আনুযায়ী, কামারুজ্জামান এসব অপরাধ করেছেন একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে। তার বিচরণক্ষেত্র ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা।

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ