যাপিত জীবন ও একটি উপলব্দি

আবদুল্লাহ ৫ জানুয়ারি ২০১৫, সোমবার, ০৮:৫৬:০১অপরাহ্ন বিবিধ ৬ মন্তব্য

 

রাতে ঘুম ভাঙলে রিফাত  মাঝে মাঝেই মোবাইল সময় দেখে , এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে । কিন্তু আজ হটাৎ  মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল । সময় দেখতে মোবাইলে চাপ দিতেই দেখে  ৭ টি মিসডকল । এত বার কে ফোন দিল? কেন দিলো?  রিফাত ভাবতে থাকল এখন রাত ৩ টা,  কে হতে পারে ? কার কোন সমস্যা ? ব্যাক দেয়া উচিত কিনা ভাবছে। শেষে চিন্তা করলো ফোনটা  দিয়েই দেখি । প্রথমবার ফোন দিলে রিচিভ হল না, একবার ভাবল  থাক সকালে দেখা যাবে। রিফাত ঘুমাতে চেষ্টা করল কিন্তু আর যে চোখে ঘুম নেই কে ? কেন ?  এতবার ফোন দিল তাও এই মাঝ রাতে। রিফাত এবার আর ভাবল না  ফোন তুলে আবার ফোন দিল ।  এবার শীঘ্রই রিচিভ হল । কিন্তু আওয়াজ আসছে না । রিফাত হ্যালো হ্যালো বলতেই থাকল কিছু সময় পরে ওপাশ থেকে একটা প্রশ্ন আসলো কেমন আছ?

এক প্রশ্নেই রিফাতের শরীর হিম হয়ে গেল । এই স্বাভাবিক একটা প্রশ্নে রিফাত  কেন থেমে গেল ? কে সে ?

আমি ভালো আছি,  রিফাত উত্তর করল । তুমি কেমন আছো ? কোন উত্তর না দিয়ে নতুন প্রশ্ন তোমার বারান্দার পাখি গুলি কি এখন ও আছে? তোমার টিয়া পাখি টা কি এখনও  আমার নামটা বলতে পারে নাকি ভুলেই গেছে ? তোমার  আলনায় কি এখনো কাপড় এলোমেলো  থাকে ? তুমি কি এখনো মানিব্যাগ  নিতে ভুলে যাও ?  আচ্ছা  ছাদের  ডান পাশের লজ্জাবতী গাছটি এখনো  বেঁচে আছে?

এতো প্রশ্ন যদি তুমি একবারে কর উত্তর কিভাবে দিব  ! কয়েকটা পাখি আছে আর টিয়া পাখিটি তুমি  চলে যাবার কিছুদিন পরেই মারা গেছে ! আমি আছি আগের জায়গাতেই  কোন পরিবর্তন  হয়নি , না মানি বাগ নিতে আর ভুল হয় না।  ছাদে আর কোন গাছ নেই । নিচের  ফ্ল্যাটের  ২ টি  পিচ্চি বাবু শেষে কিছু টব ছিল সব ভেঙ্গে ফেলছে ।

এতো দিন পরে তুমি কেন এসব জানতে আগ্রহী ঠিক  বুঝলাম না ,মিলি?

মিলিঃ না এমনি ।

রিফাতঃ তোমার  কথা বল, কি করছ এখন ? কোথায় থাকছ ?

মিলিঃ ঢাকায় একটি বিল্ডাস কোম্পানিতে  সহকারী ইঞ্জিনিয়ার  পোস্ট এ কাজ করছি ।

রিফাতঃ  বিয়ে করেছ  নিশ্চয় ?  তোমার হাজব্যান্ড কি  করে ?

মিলিঃ কেন জানো না ? নাকি জেনেও ভান করছ?

রিফাতঃ আমি যাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তারা আমাকে তোমার কোন তথ্য  দিতে পারেনি । তুমি কি আমার খোঁজ নিয়েছিলে ?

মিলিঃ না , চেষ্টা করি নি ।

রিফাতঃ তাহলে আজ কেন এতো রাতে ফোন দিয়ে খোঁজ নিচ্ছ ?

মিলিঃ এমনি মন চাইল তাই ।

রিফাতঃ মন চাইলেই কি সব করা যায় ?

মিলিঃ না করা যায় না ।

রিফাতঃ কই  আমার প্রশ্নের  উত্তর  দিলে না ?

মিলিঃ কোন প্রশ্ন টা ?

রিফাতঃ কিছুক্ষণ আগে যে প্রশ্নটা করেছিলাম।

মিলিঃ  ও হাঁ ! নামি একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঙ্গিনিয়ারিং শেষ  করে আমার অফিস এ জব করতো , গত বছর একটা স্কলারশিপ পেয়ে কানাডা চলে গেছে । সেখানেই আছে । শুনেছি  সেখানে  নাকি বিয়েও করছে । ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিল কয়েকমাস আগে স্বাক্ষর করে দিয়েছি । এইতো ৫ বছরের  ইতিহাস । এখন জব করছি ভালই আছি ।

রিফাতঃ তুমি কি লেখা পড়া শেষ করেছিলে ?

মিলিঃ না আর এমএসসি টা করা হয় নি । স্বপ্ন গুলো  কেমন জানি  অঙ্কুরেই শেষ  হয়ে গেছে । আসলে ভাগ্য সহায় ছিল না ।

 

পুব আকাশে রক্তিম আলোকছটা জানালা দিয়ে উকি দিচ্ছে , এমন সময় একটা আওয়াজ আসলো , বাবা বাবা উঠো ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে দাও বাবা, বাবা

 

রিফাতঃ আসছি মা, একটু ।

মিলিঃ বাবা মানে ? কে ডাকছে তোমার মেয়ে বুঝি  ?

রিফাতঃ ও তোমাকে তো  বলা হয়নি তোমার  সাথে আলাদা হবার পরে ইচ্চা ছিল আর বিয়ে করব না, বাকি জীবন এভাবেই  কাটিয়ে  দিব কিন্তু হয়নি, মায়ের কথা ভেবে রিমু কে বিয়ে করেছি ?

মিলিঃ তোমার স্ত্রীর নাম বুঝি রিমু?

রিফাতঃ হ্যাঁ । গতকালই বাবা হবার  ৪ বছর পূর্ণ হল । আভা, আমার মেয়ে । সম্প্রতি একটা স্কুল এ দিয়েছি । নার্সারিতে পড়ে। সকালে ব্রাশ করিয়ে স্কুল এর জন্য আমি ওকে  তৈরি  করে দেই আর রিমু সকালের কাজ গুলি সেরে ফেলে । অফিসের  পাশেই স্কুল সবাই একসাথে বের হই । রিমু আভাকে স্কুল এ নিয়ে যায় আমি অফিস এ যাই  এই তো প্রাত্তাহিক রুটিন আমাদের।

মিলি; বাহ ! সুখি পরিবার ।

রিফাত ; হাঁ আমি ভাবিনি এতো তা সুখ আল্লাহ আমাকে দিবেন। আভার দিকে তাকালে নিজের একটা ছায়া খুজে পাই মনে হয় জীবনটা ওর  জন্যই সার্থক । রিমু অসাধারন একটি মেয়ে । ব্যাখ্যা দিয়ে করতে চাই না ।

মিলিঃ গভির রাত থেকে  সকাল অবধি আমার সাথে কথা বললে তোমার  স্ত্রী দেখে নি ? কি পরিচয় দিবে আমার?

রিফাতঃ আমি সত্যবাদী নই, মিথা না বলার চেষ্টা করি  যদি ও অনেক কঠিন  কাজ পারি না তার পরেও চেষ্টা করি । রিমুর কাছে আমার জীবনাচরন সেই আগের মতই স্বচ্ছ কাঁচের মত। সে আমার ভেতর বাহিরটা দেখতে পায় । তোমার  সাথে যত কথা বলেছি সে সব শুনেছে দুজনের মাথা এক বালিশেই ছিল এতটা সময়।

মিলিঃ প্রশ্ন করে নি ?

রিফাতঃ  না, কিন্তু কিসের প্রশ্ন?

মিলিঃ আমরা কেন আলাদা হলাম?

রিফাতঃ দেখ  সত্যটা  কি ছিল ? তোমার স্বপ্ন পূরণ ? ক্যারিয়ার ? এইতো ? নাকি ?

মিলিঃ শুধু কি এতটুকুই ?

রিফাতঃ তাহলে ? ও হাঁ আমি তখন বেকার ছিলাম ? তোমর শপ্নের আর আখাঙ্খিত বাক্তি হতে পারিনি ।  আমাকে স্বপ্ন  পূরণে প্রতিবন্ধকটা মনে করেছিলে ।

মিলিঃ তার  পর !

রিফাতঃ আমি কি ভুল বলেছি?

মিলিঃ  না।

রিফাতঃ তাহলে?

মিলিঃ আমরা আলাদা থাকতে চেয়েছিলাম, তুমি কিন্তু আসনি?

রিফাত;  একজন বেকারের পক্ষে কি তা সম্ভব ছিল ? আর তাছাড়া আমাদের বাড়িতে  তো  তোমার সমস্যা ছিল না! তুমি আমার মা-বাবাকে  সহজ ভাবে মেনে নিতে পারনি  । আমার শত সমস্যা সর্তেও  তো তোমার   সব অভাব গুলি পূর্ণ  করেছিলাম।   তুমি আমাকে ৩ মাসের  সময় দাও নি । আমি ঠিকই  ৩ মাস পরেই  চাকরি টা  পেয়েছিলাম ।

মিলিঃ আমার বাবা ও তোমাকে টাকা দিতে চেয়ে ছিলেন ?  চাকরীর বাবস্থা  করে দিতে চেয়েছিলেন?

রিফাতঃ শর্ত  কি ছিল ? বললে না! আমাকে মা বাবা  পরিবার ছেড়ে তোমাকে নিয়ে তোমাদের  বাড়ীতে উঠতে হবে।  আমার পক্ষে আত্মসম্মান বিসর্জন দেয়া ,নৈতিক  দায়িত্ব  উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না ।

মিলিঃ নৈতিক  দায়িত্ব বলে কি বুঝাতে চাও ?

রিফাতঃ সন্তান হিসেবে পরিবারের প্রতি আমার যা দায়িত্ব রয়েছে।

মিলিঃ  আমার প্রতি কি  তোমার কোন নৈতিক দায়িত্ব ছিল না?

রিফাতঃ ছিল, আমি তা পালন করেছি , তাতে আমার কোন দুর্বলতা  ছিল না। আমার পরিবারের সংস্কৃতি তোমাদের  চেয়ে আলাদা ছিল । আমরা পরিবার বুঝি আলাদা থাকা বা হবার কথা ভাবি না ।

মিলিঃ বাহ ! এখনো সেই আগের মতই আছ ।

রিফাতঃ আমার শিক্ষা  এতটুকুই, যা শিখেছি  ভেতরে তো তাই  থাকবে , এটাই কি স্বাভাবিক নয় ?

 

বাবা, তোমাকে অনেক বার ডাকছি, তুমি কিন্তু আসনি ,আম্মু ডাকছে। তাড়াতাড়ি বের হতে হবে ।

 

রিফাতঃ আমাকে রাখতে হবে। অফিস এর সময় এগিয়ে আসছে। ভালো থেকো।

মিলিঃ তোমর মেয়ের সাথে কথা বলতে দিবানা ?

রিফাতঃ আভা কে ফোন দিলে আজকে আর ওর স্কুল এ যাওয়া হবে না, পুরো  মাসে যা যা ঘটেছে  সব তোমাকে বলা শুরু করবে ।

মিলিঃ ওকে ঠিক  আছে ভালো থেকো  !!!!!!!!!!!!!!

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ