রাতে ঘুম ভাঙলে রিফাত মাঝে মাঝেই মোবাইল সময় দেখে , এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে । কিন্তু আজ হটাৎ মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল । সময় দেখতে মোবাইলে চাপ দিতেই দেখে ৭ টি মিসডকল । এত বার কে ফোন দিল? কেন দিলো? রিফাত ভাবতে থাকল এখন রাত ৩ টা, কে হতে পারে ? কার কোন সমস্যা ? ব্যাক দেয়া উচিত কিনা ভাবছে। শেষে চিন্তা করলো ফোনটা দিয়েই দেখি । প্রথমবার ফোন দিলে রিচিভ হল না, একবার ভাবল থাক সকালে দেখা যাবে। রিফাত ঘুমাতে চেষ্টা করল কিন্তু আর যে চোখে ঘুম নেই কে ? কেন ? এতবার ফোন দিল তাও এই মাঝ রাতে। রিফাত এবার আর ভাবল না ফোন তুলে আবার ফোন দিল । এবার শীঘ্রই রিচিভ হল । কিন্তু আওয়াজ আসছে না । রিফাত হ্যালো হ্যালো বলতেই থাকল কিছু সময় পরে ওপাশ থেকে একটা প্রশ্ন আসলো কেমন আছ?
এক প্রশ্নেই রিফাতের শরীর হিম হয়ে গেল । এই স্বাভাবিক একটা প্রশ্নে রিফাত কেন থেমে গেল ? কে সে ?
আমি ভালো আছি, রিফাত উত্তর করল । তুমি কেমন আছো ? কোন উত্তর না দিয়ে নতুন প্রশ্ন তোমার বারান্দার পাখি গুলি কি এখন ও আছে? তোমার টিয়া পাখি টা কি এখনও আমার নামটা বলতে পারে নাকি ভুলেই গেছে ? তোমার আলনায় কি এখনো কাপড় এলোমেলো থাকে ? তুমি কি এখনো মানিব্যাগ নিতে ভুলে যাও ? আচ্ছা ছাদের ডান পাশের লজ্জাবতী গাছটি এখনো বেঁচে আছে?
এতো প্রশ্ন যদি তুমি একবারে কর উত্তর কিভাবে দিব ! কয়েকটা পাখি আছে আর টিয়া পাখিটি তুমি চলে যাবার কিছুদিন পরেই মারা গেছে ! আমি আছি আগের জায়গাতেই কোন পরিবর্তন হয়নি , না মানি বাগ নিতে আর ভুল হয় না। ছাদে আর কোন গাছ নেই । নিচের ফ্ল্যাটের ২ টি পিচ্চি বাবু শেষে কিছু টব ছিল সব ভেঙ্গে ফেলছে ।
এতো দিন পরে তুমি কেন এসব জানতে আগ্রহী ঠিক বুঝলাম না ,মিলি?
মিলিঃ না এমনি ।
রিফাতঃ তোমার কথা বল, কি করছ এখন ? কোথায় থাকছ ?
মিলিঃ ঢাকায় একটি বিল্ডাস কোম্পানিতে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার পোস্ট এ কাজ করছি ।
রিফাতঃ বিয়ে করেছ নিশ্চয় ? তোমার হাজব্যান্ড কি করে ?
মিলিঃ কেন জানো না ? নাকি জেনেও ভান করছ?
রিফাতঃ আমি যাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তারা আমাকে তোমার কোন তথ্য দিতে পারেনি । তুমি কি আমার খোঁজ নিয়েছিলে ?
মিলিঃ না , চেষ্টা করি নি ।
রিফাতঃ তাহলে আজ কেন এতো রাতে ফোন দিয়ে খোঁজ নিচ্ছ ?
মিলিঃ এমনি মন চাইল তাই ।
রিফাতঃ মন চাইলেই কি সব করা যায় ?
মিলিঃ না করা যায় না ।
রিফাতঃ কই আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না ?
মিলিঃ কোন প্রশ্ন টা ?
রিফাতঃ কিছুক্ষণ আগে যে প্রশ্নটা করেছিলাম।
মিলিঃ ও হাঁ ! নামি একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঙ্গিনিয়ারিং শেষ করে আমার অফিস এ জব করতো , গত বছর একটা স্কলারশিপ পেয়ে কানাডা চলে গেছে । সেখানেই আছে । শুনেছি সেখানে নাকি বিয়েও করছে । ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিল কয়েকমাস আগে স্বাক্ষর করে দিয়েছি । এইতো ৫ বছরের ইতিহাস । এখন জব করছি ভালই আছি ।
রিফাতঃ তুমি কি লেখা পড়া শেষ করেছিলে ?
মিলিঃ না আর এমএসসি টা করা হয় নি । স্বপ্ন গুলো কেমন জানি অঙ্কুরেই শেষ হয়ে গেছে । আসলে ভাগ্য সহায় ছিল না ।
পুব আকাশে রক্তিম আলোকছটা জানালা দিয়ে উকি দিচ্ছে , এমন সময় একটা আওয়াজ আসলো , বাবা বাবা উঠো ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে দাও বাবা, বাবা
রিফাতঃ আসছি মা, একটু ।
মিলিঃ বাবা মানে ? কে ডাকছে তোমার মেয়ে বুঝি ?
রিফাতঃ ও তোমাকে তো বলা হয়নি তোমার সাথে আলাদা হবার পরে ইচ্চা ছিল আর বিয়ে করব না, বাকি জীবন এভাবেই কাটিয়ে দিব কিন্তু হয়নি, মায়ের কথা ভেবে রিমু কে বিয়ে করেছি ?
মিলিঃ তোমার স্ত্রীর নাম বুঝি রিমু?
রিফাতঃ হ্যাঁ । গতকালই বাবা হবার ৪ বছর পূর্ণ হল । আভা, আমার মেয়ে । সম্প্রতি একটা স্কুল এ দিয়েছি । নার্সারিতে পড়ে। সকালে ব্রাশ করিয়ে স্কুল এর জন্য আমি ওকে তৈরি করে দেই আর রিমু সকালের কাজ গুলি সেরে ফেলে । অফিসের পাশেই স্কুল সবাই একসাথে বের হই । রিমু আভাকে স্কুল এ নিয়ে যায় আমি অফিস এ যাই এই তো প্রাত্তাহিক রুটিন আমাদের।
মিলি; বাহ ! সুখি পরিবার ।
রিফাত ; হাঁ আমি ভাবিনি এতো তা সুখ আল্লাহ আমাকে দিবেন। আভার দিকে তাকালে নিজের একটা ছায়া খুজে পাই মনে হয় জীবনটা ওর জন্যই সার্থক । রিমু অসাধারন একটি মেয়ে । ব্যাখ্যা দিয়ে করতে চাই না ।
মিলিঃ গভির রাত থেকে সকাল অবধি আমার সাথে কথা বললে তোমার স্ত্রী দেখে নি ? কি পরিচয় দিবে আমার?
রিফাতঃ আমি সত্যবাদী নই, মিথা না বলার চেষ্টা করি যদি ও অনেক কঠিন কাজ পারি না তার পরেও চেষ্টা করি । রিমুর কাছে আমার জীবনাচরন সেই আগের মতই স্বচ্ছ কাঁচের মত। সে আমার ভেতর বাহিরটা দেখতে পায় । তোমার সাথে যত কথা বলেছি সে সব শুনেছে দুজনের মাথা এক বালিশেই ছিল এতটা সময়।
মিলিঃ প্রশ্ন করে নি ?
রিফাতঃ না, কিন্তু কিসের প্রশ্ন?
মিলিঃ আমরা কেন আলাদা হলাম?
রিফাতঃ দেখ সত্যটা কি ছিল ? তোমার স্বপ্ন পূরণ ? ক্যারিয়ার ? এইতো ? নাকি ?
মিলিঃ শুধু কি এতটুকুই ?
রিফাতঃ তাহলে ? ও হাঁ আমি তখন বেকার ছিলাম ? তোমর শপ্নের আর আখাঙ্খিত বাক্তি হতে পারিনি । আমাকে স্বপ্ন পূরণে প্রতিবন্ধকটা মনে করেছিলে ।
মিলিঃ তার পর !
রিফাতঃ আমি কি ভুল বলেছি?
মিলিঃ না।
রিফাতঃ তাহলে?
মিলিঃ আমরা আলাদা থাকতে চেয়েছিলাম, তুমি কিন্তু আসনি?
রিফাত; একজন বেকারের পক্ষে কি তা সম্ভব ছিল ? আর তাছাড়া আমাদের বাড়িতে তো তোমার সমস্যা ছিল না! তুমি আমার মা-বাবাকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারনি । আমার শত সমস্যা সর্তেও তো তোমার সব অভাব গুলি পূর্ণ করেছিলাম। তুমি আমাকে ৩ মাসের সময় দাও নি । আমি ঠিকই ৩ মাস পরেই চাকরি টা পেয়েছিলাম ।
মিলিঃ আমার বাবা ও তোমাকে টাকা দিতে চেয়ে ছিলেন ? চাকরীর বাবস্থা করে দিতে চেয়েছিলেন?
রিফাতঃ শর্ত কি ছিল ? বললে না! আমাকে মা বাবা পরিবার ছেড়ে তোমাকে নিয়ে তোমাদের বাড়ীতে উঠতে হবে। আমার পক্ষে আত্মসম্মান বিসর্জন দেয়া ,নৈতিক দায়িত্ব উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না ।
মিলিঃ নৈতিক দায়িত্ব বলে কি বুঝাতে চাও ?
রিফাতঃ সন্তান হিসেবে পরিবারের প্রতি আমার যা দায়িত্ব রয়েছে।
মিলিঃ আমার প্রতি কি তোমার কোন নৈতিক দায়িত্ব ছিল না?
রিফাতঃ ছিল, আমি তা পালন করেছি , তাতে আমার কোন দুর্বলতা ছিল না। আমার পরিবারের সংস্কৃতি তোমাদের চেয়ে আলাদা ছিল । আমরা পরিবার বুঝি আলাদা থাকা বা হবার কথা ভাবি না ।
মিলিঃ বাহ ! এখনো সেই আগের মতই আছ ।
রিফাতঃ আমার শিক্ষা এতটুকুই, যা শিখেছি ভেতরে তো তাই থাকবে , এটাই কি স্বাভাবিক নয় ?
বাবা, তোমাকে অনেক বার ডাকছি, তুমি কিন্তু আসনি ,আম্মু ডাকছে। তাড়াতাড়ি বের হতে হবে ।
রিফাতঃ আমাকে রাখতে হবে। অফিস এর সময় এগিয়ে আসছে। ভালো থেকো।
মিলিঃ তোমর মেয়ের সাথে কথা বলতে দিবানা ?
রিফাতঃ আভা কে ফোন দিলে আজকে আর ওর স্কুল এ যাওয়া হবে না, পুরো মাসে যা যা ঘটেছে সব তোমাকে বলা শুরু করবে ।
মিলিঃ ওকে ঠিক আছে ভালো থেকো !!!!!!!!!!!!!!
৬টি মন্তব্য
মেহেরী তাজ
বাহ চমৎকার। এমন ভাবে উপস্থপন করেছেনন যে পড়ার সময় চরিত্রগুলো কে যেনো দেখতে পাচ্ছিলাম।
নাটোর শূন্য কিলোমিটার
তাই ? লেখা লিখির পাঠশালায় একজন শিক্ষার্থী আমি । ধন্যবাদ
শুন্য শুন্যালয়
অনেকদিন পর লিখলেন। ভালো লেগেছে গল্প।
নাটোর শূন্য কিলোমিটার
ধন্যবাদ । আসলে গত ৩ মাস অনেক বাস্ততার মাঝে গেল। এর মাঝে পিসিটা নষ্ট ছিল । তাই ব্লগ আর আসা হয়নি । ভালো থাকবেন । শুভকামনা রইল
খেয়ালী মেয়ে
ভালো লেগেছে (y)
আত্মসম্মান,নৈতিক দায়িত্ব বিসর্জন না দিয়ে রিফাত অনেক ভালো কাজ করেছে–
নাটোর শূন্য কিলোমিটার
আমার উদ্দেশ ছিল উপলব্দির ঠিক এই জায়গাটাতে । ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে ধরতে পারার জন্য । শুভকামনা । আপনিও লিখতে থাকেন ভালো করবেন। ইনসাআল্লাহ