10930884_330397520495134_6107580833205897734_n

হঠাৎ করে রোবেনের মনে পড়ল। ডায়রীতে বাবার লেখা ৩৫টা ঘর আর ৬৭টা দরজার হিসেব মিলে গেছে। এখানের তিনটা ঘরসহ পুরো বাড়িতে ঘর হয় ৩৫টা। আর দরজাগুলো মিলিয়ে ৬৭টা। এবং এখানকার দ্বিতীয় ঘরে এতগুলো দরজা বসানোর একটাই কারণ হতে পারে। তা হল শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করা। এবং এই ব্যাপারটাতে একটা গোপনীয়তা ছিল। যে কারনে বাবা ডায়রীতে স্পষ্ট করে না লিখে এভাবে লিখেছিল – ‘৩২+৩=৩৫টা ঘর। ৪৩+২৪=৬৭টা দরজা’’। দরজাগুলো বিভ্রান্ত করার জন্য বসানো হলে, তবে এটাও ধরে নিতে হবে এখানের তিনটা রাস্তাও বিভ্রান্ত করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া এই সুরঙ্গটা তৈরি করার উদ্দেশ্যও যে ছিল; শত্রু পক্ষের আক্রমন সামলাতে না পেরে গোপনে পালিয়ে যাওয়া। এ ব্যাপারেও আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এমন ঘটনা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু না। একবার শত্রুপক্ষের আক্রমন সামাল দিতে না পেরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। এবং পরবর্তিতে অধিক শক্তি সঞ্চয় করে পালটা আক্রমন করবে। এটাই বরং তখনকার সময়ের স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। কিন্তু এখনকার সময়ে এই জায়গাটা ব্যাবহার করে কে বা কারা ফায়দা তুলার চেষ্টা করছে? কেনই বা করছে?
রোবেন তিনটা সরু রাস্তার মাঝখানেরটা দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। অবশ্য এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। যেকোন একটা রাস্তা ধরে এগুতেই হবে। মাঝখানের রাস্তাটাই তার কাছে সঠিক রাস্তা বলে মনে হচ্ছে। তবে শেষ মাথায় গিয়ে যদি দেখা যায়; এখানে থেকে বের হবার রাস্তা আছে। তাহলে সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। আর না থাকলে ভুল। এবং এই ভুলের মাশুল দিতে আরো কিছুটা সময় ব্যায় করতে হবে। রোবেন টর্চের আলো ফেলে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগল।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে। রোবেন এখনো ফেরেনি। আবীরের খুব টেনশন হচ্ছে। সে এখন কি করবে তাও বুঝতে পারছেনা। তার কি অপেক্ষা করা উচিত? নাকি রোবেনের কথামত চলে যাওয়া উচিত? তাছাড়া এখানে একা থাকতে তার কিছুটা ভয়ও করছে। গতরাতের ঘটনাটা মনে হতেই তার গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। আবীর মনে মনে ভেবে নিয়েছে। এখানে আর ১০মিনিট অপেক্ষা করবে। এর মধ্যে রোবেন ফিরে না আসলে সে ঢাকায় ফিরে যাবে। কিন্তু ওকে ফেলে একা যাওয়াটা কি ঠিক হবে?
তাথৈ এসে রোবেনকে খুঁজে না পেয়ে আবীরের ঘরে এল। আবীর তাথৈকে দেখে বলল, থ্যাংক্স গড! একা একা খুব ভয় পাচ্ছিলাম। আপনি এসেছেন ভালই হয়েছে।
তাথৈ বলল, আপনার বন্ধু কোথায়? উনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আবীর বলল, তখন আপনি যাওয়ার কিছুক্ষণ পরইতো রোবেন কি একটা কাজের কথা বলে কোথায় যেন গেল। আমাকে বলেছে যদি সন্ধ্যার ভেতর ফিরে না আসে। তাহলে আমি যেন আজ রাতেই ঢাকায় ব্যাক করি। আর যদি ও ফিরে আসে। তাহলে হয়তো আমরা দুজনই ব্যাক করব। কিন্তু এখনো ওর আসার কোন নাম গন্ধ নেই। আমিই বা এখন কি করব। কিছুই বুঝতে পারছিনা।
উনি কোথায় গেছে আপনাকে বলে যায়নি? আপনি জানতে চাননি?
আমিতো সেই সুযোগই পাইনি। তার আগেই ও বেড়িয়ে গেছে। তাথৈ খানিকটা উত্তেজিত হয়ে বলল, মানে কি? আপনি জিজ্ঞেস করবেন না কোথায় যাচ্ছে? আবীর কিছু বলল না। সে চুপ করে আছে। মেয়েটা হঠাৎ করে এত উত্তেজিত হল কেন? রোবেনের সাথে কি কিছু হয়েছে?

ঘড়িতে রাত ৮টা বেজে ৩মিনিট। আবীরের চেয়েও রোবেনের জন্য তাথৈয়ের বেশী টেনশন হচ্ছে। আবীর তাকিয়ে দেখল মেয়েটার চোখজোড়া ছলছল করছে। হঠাৎ দু এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলেই কাজলটা নষ্ট হয়ে যাবে। তাথৈ! আপনি একটু শান্ত হয়ে বসুন। রোবেন এক্ষুনি ফিরে আসবে। তাথৈ বলল, আবীর আপনি আমার টেনশন করার কারনটা বুঝতে পারছেন না। তাই আমাকে শান্ত হতে বলছেন। আপনিতো জানেনইনা আমার কাছে একটা...... তাথৈ কি যেন বলতে গিয়ে থেমে গেল। আচ্ছা উনার কোন বিপদ হয়নিতো?
আবীর কিছু বলল না। চুপচাপ কেটে গেছে কয়েক মিনিট। তারপর হঠাৎ করে আবীর বলে উঠল এইতো রোবেন চলে এসেছে। রোবেনকে দেখে যেন তাথৈয়ের স্বস্তি ফিরে এসেছে। সে চেয়ার ছেড়ে উঠে রোবেনের পাঞ্জাবীর কলারটা চেপে ধরল। এতক্ষন আপনি কোথায় ছিলেন? আপনি জানেন আপনার জন্য আমার কতটা টেনশন হচ্ছিল?
রোবেন একটু হাসল। সে মেয়েটাকে খুব পছন্দ করে। মেয়েটাও কি তাকে পছন্দ করে? হয়তো করে। না করলে এতটা অস্থির হবে কেন? তাথৈ! আমার জন্য এত টেনশন করার কিছু নেই। আপনি কেন এত টেনশন করছিলেন?
তাথৈ বলল, তার আগে বলুন এতক্ষন আপনি ছিলেন কোথায়? আর আপনার কপালে কি হয়েছে? কাপড় বেঁধে রেখেছেন কেন?
রোবেন বলল, ও কিছুনা। একটু কেটে গেছে। আপনি টেনশন করছিলেন কেন সেটা বলুন। কিছু কি হয়েছে? তাথৈ মাথা নেড়ে বলল, হ্যা। আমার কাছে একটা উড়োচিঠি এসেছে। এই যে দেখুন। তাথৈ চিঠিটা বের করে রোবেনের হাতে দিল। রোবেন চিঠিটা মেলে ধরতেই হাতের লেখাটা চিনে ফেলেছে সে। তবে চিঠিতে তেমন কিছু লেখা নেই। এটাকে চিঠি না বলে একটা চিরকুট বলাই ভালো।

‘’রাজবাড়িতে আসা দুজন মানুষকে একটু সাবধানে থাকতে বলবেন।
ওদের সামনে মহাবিপদ। একজনের জীবননাশও হতে পারে’’

তাথৈ বলল, এবার আপনি বুঝতে পারছেন কেন আমি আপনার জন্য এত টেনশন করছিলাম? রোবেন বলল, হ্যা পারছি। এবং এই চিরকুট আমাকে দেখানোর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। যদিও আমি রহস্যের ৯৫% ই বের করে ফেলেছি। এখন এই চিরকুট বাকি ৫% বের করতে সাহায্য করবে। বাই দ্যা ওয়ে, এই চিরকুট পাওয়ার পর আপনার কি একবারও মনে হয়নি; এই বাড়িতে আসলে ভৌতিক কিছু ঘটেনা? এর পেছনে অন্য কোন ঘটনা আছে।
তাথৈ একমুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। তারপর বলল, কোন ভুত-প্রেতের দ্বারা চিঠি লেখা কি সম্ভব? উহু! এমনতো কখনও শুনিনি। তবে কি এর পেছনে কোন মানুষ আছে?
Exactly! মানুষ! এতদিন এখানে যা কিছু ঘটেছে সবই মানুষের দ্বারা ঘটেছে। রোবেন তার পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে বলল, এই কাগজটা দেখুন। আপনার কাছে আসা চিরকুটের সাথে এই কাগজের লেখাটা মিলে কিনা?
তাথৈ কাগজে লেখাটা পড়ে বলল, এটাতো আমাদের এখানকার ঠিকানা। তাছাড়া হাতের লেখাও এক। তার মানে কি লেখা দুইটা একজনই লিখেছে?
রোবেন বলল, শুধু এই দুটা না! আমার বাবার মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে আপনার কাছে একটা চিঠি এসেছিল। মনে আছে আপনার? আমার ধারনা ওই চিঠিও এই একজনই লিখেছে। আচ্ছা! হাতের লেখাগুলো আপনার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছে না? মনে হচ্ছেনা এমন লেখা আপনি আগেও কোথাও দেখেছেন?
তাথৈ বলল, হ্যা হচ্ছে। কিন্তু কে যেন এমন ভাবে লিখে... আমি ঠিক মনে করতে পারছিনা। রোবেন বলল, আপনি চেষ্টা করে দেখুন। আমার ধারনা আপনি মনে করতে পারবেন।

রোবেন বিছানার পাশেই ছোট্ট একটা টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস হাতে তুলে নিল। এক চুমুক পানি খেয়ে বলল, তাথৈ আপনি কি কিছু মনে করতে পারলেন? তাথৈ বলল, হ্যা এমন লেখা আমি একমাত্র বশির চাচাকেই লিখতে দেখেছি। কিন্তু উনি কেন এসব করবেন? উনার এতে লাভ কি? তাছাড়া বশির চাচার মত একজন লোক এসব করবে। আমার তা বিশ্বাস হয়না।
রোবেন বলল, আমরা ঠিক এই জায়গাটাতেই ভুল করি। যাকে আমরা খুব বিশ্বাস করি। যাকে দেখলে মনে হয় সে এমন কাজ কখনও করতে পারেনা। তার দিকে আমরা ফিরেও তাকাই না। অথচ তার দিকেই সন্দেহের আঙ্গুলটা প্রথমে তোলা উচিত। কেননা, বিশ্বাসী লোকরাই সাধারণত এত বড় অন্যায় করার সুযোগ পায়। কারণ সে জানে তার প্রতি আমাদের বিশ্বাসটা কোন পর্যায়ে। আপনার বশির চাচাও সেই রকমই একজন মানুষ।
আবীর এতক্ষন চুপ করে ছিল। কিন্তু এখন আর চুপ করে থাকা যায়না। সে তাথৈকে থামিয়ে দিয়ে বলল, রোবেন! বশির চাচা এই করেছে! সেই করেছে! তুই উনাকে ভুল-ভাল যা বুঝাচ্ছিস বুঝিয়ে যা। আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আমার সাথে যা ঘটেছে তার কি ব্যাখ্যা দিবি তুই। এর কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে তোর কাছে? রোবেন বলল, হ্যা আছে। চল আমার সাথে। তাথৈ আপনিও চলুন। তাথৈ বা আবীর কেউই আর কোন কথা বলল না। তারা রোবেনের পেছনে পেছনে যেতে লাগল।

ড্রয়িং রুমের সেই সিংহাসনটার সামনে এসে নীচে নামার রাস্তাটা দেখিয়ে রোবেন বলল, এখনই একে একে সব রহস্যের জট খুলে যাবে। আবীর তখন তুই কি যেন বলছিলি? তোর সাথে যা ঘটেছে তার যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা আছে কিনা? হ্যা আমার কাছে ব্যাখ্যা আছে। শোন তাহলে। সেদিন রাতের বেলা বশির চাচা তোকে দু-বোতল হুইস্কি দিয়ে গিয়েছিল। এবং তুই একটা বোতল নিয়ে এই সিংহাসনে এসে বসেছিলি। তবে আরেকটা বোতল কোথায়?
আবীর আমতা আমতা করতে লাগল। ইয়ে মানে...মানে... রোবেন বলল, থাম! আমি বলছি। সেদিন রাতে বশির চাচার বলে যাওয়া গল্পের ব্যাপারটা নিয়ে তুই ঘরে বসে ভাবছিলি। যেখানে বশির চাচা খুব সুন্দর ভাবে এই সিংহাসনে বসে মদ্যপান করার অনুভুতিটা কেমন সেটা তোর মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। আর তখনই তোর মনে হল এখানে বসে মদ্যপান করার কথা। কিন্তু ততক্ষনে অলরেডি তুই এক বোতল শেষ করে ফেলেছিস। এবং দ্বিতীয় বোতলটা নিয়ে এখানে এসে বসেছিলি। তারমানে সেই সময়টা তুই পুরো নেশার ঘোরে চলে গিয়েছিলি। আর এটাই বশির চাচা চেয়েছিল। যে কারনে গল্প করা এবং হুইস্কির বোতল দেয়াসহ এতকিছু প্ল্যান করেছে
আবীর বলল, কি বলছিস তুই? তার মানে বশির চাচাই এসব করেছে? কিন্তু আমি যে দেখলাম একটা মানুষের বীভৎস মুখ থেকে রক্ত ঝরছে। সেটা কি করে হল?
এটা আসলে তোকে বোকা বানানো হয়েছে। তাছাড়া তুই নেশার ঘোরে ছিলি। তোর চিন্তা চেতনাগুলোও ছিল এলোমেলো। তাই বশির চাচার এই ভন্ডামিটা বুঝতে পারিস নি। উনি এসে প্রথমে আগুন জ্বালালেন। এবং তার উপর ধরলেন লালরঙের একটা মুখোশের আকৃতির মত মোমবাতি। যেটা আগুনের তাপে আস্তে আস্তে গলে পড়ছিল। এবং তুই এই জিনিসটা দেখেই ভয় পেয়েছিলি। নেশার ঘোরে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জলজ্যান্ত বশির চাচাকেও খেয়াল করিসনি তুই। এবার বুঝতে পারছিস তোকে কিভাবে বোকা বানিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে?
আবীর একটু জোর করেই যেন হ্যা সূচক মাথাটা নাড়ল। রোবেন বলল, আবীর তুই হয়তো ভাবছি আমি কিভাবে এত জোর দিয়ে কথাগুলো বলছি। তাইনা?
‘না তা না আসলে...’
রোবেন হাসল। শোন! তুই যখন ঘটনাটা আমাকে বলছিলি তখন আমি তোর ঘরে খালি একটা বোতল খেয়াল করলাম। তারপর যখন উঠে ঘটনাস্থলে যাই। তখন না পাই চেয়ারের(সিংহাসন) পা ভাঙ্গা। না পাই রক্তেই কোন ছিটে ফুটো। তারপর অনেকটা হতাশ হয়েই তোর ঘরে আবার ফিরে যাই। কিন্তু তোর বিছানার চাদরটা যখন হঠাৎ করেই চোখে পরল উল্টিয়ে বিছানো। ঠিক তখনই মনে হল ড্রয়িং রুমের মেঝেতে বিছানো এই কার্পেটের কথা। আর তখনই আমি তোকে কাজের কথা বলে চলে আসি। তাথৈ আর আবীর মেঝের দিকে তাকাল। ওরা এই কার্পেটের ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছে না।
রোবেন বলল, এই পুরো জায়গাটা জুড়ে কিন্তু আস্ত একটা কার্পেট বিছানো নেই। এখানে আলাদা আলাদা করে ১৬টা কার্পেট আছে। এবং প্রতিটা কার্পেট দৈর্ঘ-প্রস্থে সাড়ে পাঁচ হাত। তাথৈ আর আবীর বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে রোবেনের দিকে।
রোবেন মেঝের একটা অংশ আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলতে লাগল, একটা জিনিস ব্যাবহারের ফলে ক্ষয় হয়। এর চাকচিক্যও মলিন হয়। এই কার্পেটগুলোও দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে তার চাকচিক্য হারিয়েছে। কিন্তু এই একটা কার্পেট এখনো নতুনের মত চকচক করছে। আর এটা দেখেই আমার সন্দেহ হয়। তারপর এটা উল্টাতেই দেখলাম যে, আমার সন্দেহের তীরটা ঠিক জায়গামতই লেগেছে। বশির চাচা এটাকে উল্টিয়ে রেখে গেছে। রোবেন একটু থামতেই আবীর সেই কার্পেটের কাছে এগিয়ে গেল। পেছন পেছন তাথৈও গেল। তারপর আবীর কার্পেটটা ধরে উল্টোটেই দেখল মোমবাতির দানাগুলো পরে জমে আছে।
রোবেন বলল, এখন আমার কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছেতো?
আবীর হ্যা সূচক মাথা নাড়ল।
রোবেন তার ব্যাগ থেকে সুরঙ্গ পথে পাওয়া বই আর খাতাটা বের করে বলল, নে তাহলে এবার এগুলোর অর্থ বুঝার চেষ্টা কর। আবীর বই আর খাতাটা হাতে নিল। তাথৈ কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা! এই যে এদিকে নীচে নামার সিড়িটা। এটা ঠিক কতদূর পর্যন্ত গেছে? আর ভেতর কি আছে?
রোবেন একে একে এই সুরঙ্গ পথে ভ্রমণের খুটি-নাটি বিষয়গুলো বলে যেতে লাগল। কোথায় কি আছে না আছে এসব। তাথৈ চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছে। আর মাঝে মাঝে বিস্মিত হচ্ছে। সব শেষে রোবেন বলল, এই পথের শেষ হয়েছে কোথায় জানেন? তাথৈ মাথা নাড়ল। উহু কোথায়?
দিঘীর ঘাটে একটা কড়ই গাছের নীচে ম্যানুয়েলের ডাকনার মত আছে সেখানটায় এ পথের শেষ হয়েছে। এবং বশির চাচা ওই দিক দিয়ে এসেই এই কর্মগুলো করতেন। তাছাড়া আমার ধারনা বশির চাচাই এই বাড়িটা অভিশপ্ত বলে গ্রামে গুজব ছড়িয়েছেন।
তাথৈ বলল, কিন্তু এতে উনার Motive কি? রোবেন কিছু বলার আগেই আবীর এসে বলল, রোবেন এই বইটা পড়ে যা বুঝতে পারছি তা হল- এই বইটা হচ্ছে একটা ব্ল্যাক ম্যাজিকের বই। এ বইয়ে মৃত দেহে আত্মাস্থাপন সহ আরো অনেকগুলো মন্ত্র লেখা আছে। এমনকি কোথায় কিভাবে বসে মন্ত্রপাঠ করতে হবে সেই বর্ননাও সুন্দরভাবে লেখা আছে। কিন্তু তোর খাতায় লেখাগুলোর কোন অর্থ বের করতে পারছিনা। কেননা, এই লেখাগুলো সংস্কৃত ভাষায় লেখা হলেও এগুলোকে আমি সংস্কৃত ভাষা বলব না। তার কারণ হল, আমাদের বাংলা ভাষায় ‘ক-ল-ম’ এই তিনটা অক্ষর একসাথে বসালে যেমন একটা অর্থপুর্ন শব্দ হয় ‘কলম’। তোর এই সংস্কৃত লেখাগুলোতে কিন্তু তেমন কিছুই নেই। একটা অর্থহীন শব্দ বা বাক্য থেকে কি অর্থ বের করব? যেমন ‘কঘউসঅযদফগ’ এই শব্দের কোন অর্থ হবে?
রোবেন না সূচক মাথা নাড়ল। আবীর আবারো বলতে শুরু করল, আমার ধারনা এই সংস্কৃত লেখাগুলো কারো তৈরী করা নিজস্ব প্রতীকী মাত্র। যেমন তুই আর আমি মিলে ইংরেজী ‘A’ অক্ষরটার মানে ধরলাম ‘she loves you too’। এটা আমি আর তুই ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যাক্তি জানবেনা বুঝবেনা। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম। বুঝলি?
রোবেন মাথা নেড়ে বলল, হুম একদম ক্লিয়ার! তোর এই ব্যাখ্যায় আমি রীতিমত মুগ্ধ। তো তাথৈ এখন বুঝতে পারছেনতো বশির চাচার মোটিভ কি? উনি এখানে ব্ল্যাক ম্যাজিক চর্চা করতেন। এছাড়াও উনি নারী পাচার কাজে এই বাড়িটা ব্যাবহার করতেন। আশে পাশের গ্রামের সহজ সরল মেয়েমানুষ এনে এই বাড়িতেই রাখতেন। এবং সময় সুযোগ বুঝে তা ইন্ডিয়া পাচার করে দিতেন। এবার বুঝলেন?
তাথৈ হা সূচক মাথা নাড়ল। রোবেন বলল, আমি পুলিশকে ইনফর্ম করে এসেছিলাম। এতক্ষনে উনার হাতে বোধহয় হাতকড়াও লেগে গেছে। যাইহোক, আবীর আমাদের কাজতো শেষ। এবার চল আমরা বরং ব্যাগ গুছিয়ে নেই। আজই ঢাকায় ব্যাক করব।
চলে যাবার কথা শুনতেই তাথৈতের মুখটা কেমন শুকিয়ে গেল। চোখ জোড়াও কেমন ছলছল করছে। মাথাটা নামিয়ে আস্তে করে বলল, আপনার না গেলে হয়না? রোবেন আবীরের দিকে তাকাতেই আবীর আঙ্গুল দিয়ে ‘A’ চিহ্ন একে দেখালো। যার মানে ‘She loves you too’।
রোবেন বলল, হুম বুঝতে পারছি কেউ একজন আমাকে মনে মনে ভালবেসে ফেলেছে। সে চাইছেনা আমি চলে যাই। কিন্তু মুখ ফোটে ভালোবাসার কথা বলতে না পারলে আমি থাকব কিনা বলতে পারছিনা। তাথৈ এবার মাথা তুলে তাকাল। সত্যি সত্যি মেয়েটার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। একটা মানুষ অন্য একটা মানুষকে চট করে এতটা ভালোবাসতে পারে কি করে? রোবেন ভেবে পেলনা। তাথৈ এসে তাকে জড়িয়ে ধরল। সব কথা মুখ ফোটে বলতে হবে কেন? এমন কিছু কথা আছে। যা কেবল চোখ দেখে বুঝে নিতে হয়। হুহ! রোবেন হেসে দিল। এদিক আবীরের মাথায় আবারও রবি বাবুর ‘রাহু’ এসে ভর করেছে। সে গুনগুন করে যাচ্ছে - - -

“ হেরো তমঘম মরুময়ী নিশা-
আমার পরান হারায়েছে দিশা,
অনন্ত ক্ষুধা অনন্ত তৃষা করিতেছে হাহাকার।
আজিকে যখন পেয়েছি রে তোরে
এ চিরযামিনী ছাড়বি কি করে,
এ ঘোর পিপাসা যুগযুগান্তে মিটিবে কি কভু আর! ”

========================= * * * ======================

সম্পুর্ন গল্প পিডিএফ ফরমেটে ডাউনলোড করে নিতে পারেন - http://storage.fusionbd.com/219866

গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাথে থাকায় ধন্যবাদ! 🙂

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ