মানুষ মরণশীল

মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার, ০৯:০৫:০১অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৫ মন্তব্য

মানুষ মরণশীল ।

মানুষ মরণশীল।  এবং পচনশীলও বটে। বলা চলে একেবারে লইট্টা মাছের মতো। লাশ রাখার ফ্রিজার গাড়ীগুলো না থাকলে কি হতো কে জানে? একটা মানুষ যখন মারা যায় তখন তাঁর আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকেরই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে অশ্রুজল।  তাঁকে নিয়ে সবাই বেদনা বিধুর হয়ে উঠে।  হয়ে উঠে স্মৃতি-কাতর। তাঁর বিভিন্ন স্মৃতি, ব্যক্তি বা সমাজ জীবনে বিভিন্ন অবদান নিয়ে মানুষ আলোচনা করে। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাতের জন্য সবাই দোয়া করে। পাশাপাশি আমরা প্রায় সবাই তড়া করি যথাশীঘ্র সম্ভব তাঁকে মাটি চাপা দেওয়ার জন্য, দাফন করার জন্য। হায়রে মানুষটা জীবিতকালে কতই না আপন ছিল। ছিল অনেকেরই আপনজন,  ছিল কাছের মানুষ এবং জনপ্রিয় ও প্রাণপ্রিয়। স্নেহের শ্রদ্ধার আদর্শের ভালবাসার প্রিয়পাত্র। হয়তবা কত মানুষকে তিনি বিভিন্নভাবে উপকার করেছেন। করেছেন আর্থিক এবং  বিভিন্ন সাহায্য ও সহযোগিতা।  তাঁর কাছে অনেকেরই ঋণের, শ্রদ্ধার ভালবাসার শেষ নেই। যেই না প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেল অমনি বিদায় দেওয়ার জন্য আমরা যারা বেঁচে আছি তাঁরা ব্যাকুল হয়ে উঠি দাফনের জন্য পাছে মানুষটার মধ্য থেকে লইটা পচার গন্ধ না বের হয়ে যায়। লাশের পচা গন্ধ বাতাসকে দুর্গন্ধময় করে না তোলে।

পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে -- “আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেছেন। তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। আবার তিনিই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন। তারপরও মানুষ অতি-অকৃতজ্ঞ” ! (সূরা হজ, আয়াত ৬৬)। আমরা সবাই  জানি, জন্মিলেই মরিতে হইবে। অতএব মানুষের মৃত্যু অবধারিত, অবশ্যম্ভাবী এবং সুনিশ্চিত । তারপরেও কিছু কিছু মানুষের ভাব-ভঙ্গি ,আচার-আচরণ , চাল-চলন এবং কথা-বার্তা দেখে শুনে মনে হয় এদের কখনোই যেন মৃত্যু হবেনা। ওরা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে না। যেন ওরা অমর। চিরজীবী।  তাই এসব মানুষ অন্যায় করে, জোর জুলুম করে, দুর্নীতি করে, মানুষের প্রাপ্য হক দিতে চায় না।  ক্ষেত্রবিশেষে অন্য মানুষের পেছনে লাগে, বিভিন্নভাবে অন্যকে হয়রানী করে, অপমান অপদস্ত করে, তুচ্ছ তাচ্ছল্য করে, দুর্ব্যবহার করে। এমনকি বিয়ের সম্পর্ক এলে হিংসা বিদ্ধেষ, রাগ, বিরাগের বশবর্তী হয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে উঠে পড়ে লাগে। অন্যের সংসারে আগুনে লাগাতে না পারলে যেন কলিজা ঠান্ডা হয় না। অন্যের সমালোচনা, পরনিন্দা, পরচর্চা, গীবত না করলে যেন পেটের ভাত হজম হয়না। অন্যের উন্নতিতে নিজের হৃদয়ে আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে যতক্ষণ না অপরের উপরে উঠার সিঁড়িটা কেড়েও নিতে না পারে।  ভুলে যায় মৃত্যু কথা। পরকালের কথা। শেষ বিচার দিবসের কথা। আরেকটি আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে --- ‘নিশ্চয়ই মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারে না। কেউ পার্থিব পুরস্কারের জন্যে কাজ করলে তাকে তার পুরস্কার ইহকালে দান করবো। আর যদি কেউ পরকালের জন্যে কাজ করে তবে তার পুরস্কার সে পরকালে পাবে। শোকরগোজার বান্দাদের কাজের ফল আমি নিশ্চয়ই দেবো।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৫)।  হে মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন সেসব অতি চালাক মানুষদের আপনি হেদায়েত করুণ। এবং মানুষে মানুষে বিবাদ কলহ থেকে বিরত থাকার জন্য রহমত করুণ। সুন্দর মানুষের অন্তরের কুৎসিত কালো মেঘ অপসারিত করে তাঁদেরকে প্রকৃত মোমিন মুসলমান হওয়ার তৌফিন দিন। সকলের মনে রাখা জরুরি জন্মিলে মরিতে হইবে। পাশাপাশি ভোর হলে আগামীকাল। ভোর না হলে কিন্তু পরকাল।

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ