রমেশ বাবু প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে মোবাইলটা চার্জে দিয়ে ঘুমায় । কিন্তু গতরাতে আর আগেকার নিয়মটা বহাল রাখতে পারেনি । মোবাইলটা সারারাত চালু ছিল বলেই একটা কল মোবাইলে আসতে পেরেছে । মোবাইলটা বন্ধ থাকলে আর তা হতো না । সকালে ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখে একটা মিসকল । আসলে সেটা মিসকল ছিল না, ছিল ডাইরেক্ট কল ।

কিছুক্ষণ পর হাত মুখ ধুয়ে মোবাইলটা নিয়ে চলে যায় বাইরে । যাচ্ছে অফিসে, যাওয়ার পথে সামনেই একটা চায়ের দোকান । ওই দোকানেই তিনি প্রতিদিনের সকালের নাস্তাটা সেরে নেয় । তিনি দোকানে গিয়ে বসলে আর বলতে হয় না চায়ের কথা । দোকানদার তার অর্ডার ছাড়াই, চা বিস্কুট রেডি করে সামনে দেয় । রমেশ বাবু বিস্কুট দুটো খেতেই মিসকলটির কথা মনে পড়ে যায় । তখনই কল ব্যাক করার সিদ্ধান্ত নেয়, যেহেতু কলটি ছিল ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির ।

মোবাইলটা বুকপকেট থেকে বাইর করে মিসকলে ক্লিল করে । এন্ড্রয়েড মোবাইল, ক্লিক করার সাথে সাথে গো । কল হচ্ছে, রিং বাজছে অথচ অপরপ্রান্ত থেকে কল রিসিভ করছে না । রমেশ বাবু বিরক্ত না হয়ে আবার কল দিলে কল যায় না, বলছে ব্যস্ত । রমেশ বাবু দুই মিনিট অপেক্ষা করতেই অপরপ্রান্ত থেকে কল আসে ।

রমেশ বাবু কল রিসিভ করে প্রথমেই নমস্কার জানায় । অপরপ্রান্ত থেকে নমস্কার গ্রহণ করে বলছে, "বাবু, আপনাকে গতকাল এতো করে বারণ করার পরেও এটা করেছেন কেন?"
"ওস্তাদ, ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।"
"যেই ভুল আপনি করেছেন, সেই ভুলের ক্ষমা করা সম্ভব নয় ।"
"ওস্তাদ, আপনার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে আমি ক্ষমা পাবো ।"
"এই ভুলের ক্ষমা যদি করি, তাহলে ক্ষমার প্রতি অপরাধ করা হবে । কাজেই বারবার ক্ষমা চাওয়া মানে ক্ষমাকে অপমান করার সামিল ।"
"ওস্তাদ, ক্ষমা হলো মন থেকে ক্ষোভ বা রাগকে মুছে ফেলা । আপনি কি সত্যি সত্যি রাগ করেছেন?"
"হ্যাঁ সত্যি রাগ করেছি, সেই রাগ মন থেকে মুছতে একটু সময় লাগতে পারে ।"
"ওস্তাদ, তাহলে তো আমি সত্যি সত্যি অপরাধী হয়ে গেলাম । বুঝতে পেরেছি আমি ক্ষমার অযোগ্য, আমি ক্ষমা পাবো না । তবু অনুরোধ করছি, মিনতিও করছি আমাকে ক্ষমা করুন ।"
"আমি তো আপনাকে বলেছি, এরকম ক্ষমা আমি করতে পারবো না ।"
"ঠিক আছে ওস্তাদ, ক্ষমা আমি না-ই-বা পেলাম দুঃখ নাই । দুঃখ থাকবে তখন, যদি আপনি আমাকে কোনদিন ভুলে যান । এটাই আমার শেষ কথা ওস্তাদ, এবার রাখতে পারেন ।"

মোবাইলে কথা বলতে বলতে রমাশ বাবু একরকম ক্লান্ত হয়ে পড়ে । সামনে থাকা চায়ের কাপে চা ঠাণ্ডা হয়ে পানি হয়ে গেছে । দুইটা বিস্কুটে মধ্যে একটা বিস্কুটও শেষ করা হয়নি । দোকানদার রমাশ বাবু অবস্থার ব্যাঘাত দেখে আবার চা সামনে দিল । কিন্তু রমেশ বাবু চা পান না করে চায়ের দাম দিয়ে উঠে দাঁড়ায় । এমন সময় দোকানদার বলল, "বাবু কী হয়েছে বলুন তো শুনি?"
"না কিছু হয়নি তো!"
"না বাবু না, কিছু একটা হয়েছে । আপনি না বললেও মোবাইলে কথার ভাবে বুঝলাম ।"
"না তেমন কিছু হয়নি, এটা আমার নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপার।"                           "আচ্ছা বাবু, যাই হোক, আপনি এককাপ গরম গরম চা পান করে যান । না হয়, আপনার মতো আমিও মনে কষ্ট পাবো ।"

দোকানদার চা বানিয়ে রমেশ বাবুর সামনে এনে দিয়ে বলল, "খান বাবু খান ।"
রমেশ বাবু হেসে দোকানদারকে বলল, "চা তো খায় না পান করে, বুঝলে ।"
দোকানদার হেসে প্রত্যুত্তর দিল, "হয়েছে বাবু হয়েছে, আমরা তো আপনাদের মতো এতো শিক্ষিত না ।"

রমেশ বাবু চা পান করছে আর একা একাই বলছে, ভুলেই শিক্ষা । ভুল ছাড়া শিক্ষার প্রশ্নই উঠে না । রমেশ বাবুর কথাটা দোকানদারের কানে যেতেই দোকানদার বলল, "কী যেন বলছিলেন বাবু?"
রমেশ বাবু আবার একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, "তোমাকে কিছু বলিনি । এটা আমার নিজের কথা, তাই নিজে নিজেই বললাম ।"

রমেশ বাবুর কথা শুনে দোকানদার হাসি দিয়ে বলল, "বাবু আপনার নিজের কথা, আর আমার অনেককিছুই শেখা ।"
রমাশ বাবু হতবাক হয়ে দোকানদারের দিকে তাকিয়ে রইল । দোকানদার হাসতে হাসতে আপন মনে তার দোকানের কাজ করছে । কিন্তু দোকানদার থেকে রামেশ বাবুর চোখ আর এড়ায় না, তাকিয়েই আছে ।
কিছুক্ষণ পর দোকানদার রমেশ বাবু দিকে ফলো করে বলল, "কী বাবু, তাকিয়ে আছেন যে? অফিসে যাবেন না?"
ততক্ষণেও রমেশ বাবু নিশ্চুপ । দোকানদার আবার জিজ্ঞেস করল, "বাবু, অফিসে যাবেন না? আজ কি অফিস বন্ধ?"
রমেশ বাবু দোকানদারকে বলল, "তুমি তখন কী যেন বললে? তাই নিয়ে ভাবছি! আমি বলেছি ভুল থেকে মানুষের শিক্ষা । তুমি বলেছ আপনার কথায় আমার অনেককিছু শেখা হয়েছে । কী শিখেছ একটু বলবে?"
দোকানদার রমেশ বাবুর কথা শুনে হাসি দিয়ে বলে, "না_মানে একদিন আমার দোকানের বাকি খাতায় একটা ভুল করেছিলাম । ভুলটা হয়েছিল যোগে ভুল, আর সেই ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে একটা থাপ্পড় খেয়ে । সেই থেকে আমি আর অন্তত বাকি খাতায় ভুল করি না । এখন আপনার কথায় আমার সেই ভুলকে স্মরণ করে দিল, তাই বলছিলাম ।"
দোকানদারের কথা শুনে রমেশ বাবু দোকান থেকে বাইর হয়ে গেল ।

রাস্তা দিয়ে হাটছে আর ভাবছে দোকানদারের কথা । দোকানদার একটা ভুল থেকে শিক্ষা নিলো, সেই শিক্ষায় তার হুশ হয়ে গেল । আমি এমন কতই ভুল করি, অথচ আমার শিক্ষা হয় না কেন? এইতো গত দুইদিন আগেও ওস্তাদের আদেশ করলাম অমান্য । যার কারণে আজ ওস্তাদের সাথে মনমালিন্য, মনঃক্ষুণ্ণ । যেই ওস্তাদের কাছ থেকে বাক্য শেখা, কথা শেখা, লেখা শেখা । সেই ওস্তাদের কথা অমান্য করাও একটা মস্তবড় ভুল । এক দিন ওস্তাদই বলেছিলেন, ভুল থেকে মানুষের অনেককিছু শেখা হয় । কেন বলেছিলেন? বলেছিলেন, ল্যাপটপের একটা কাজ নিয়ে ।

ওস্তাদ যেভাবে শিখিয়েছিলেন, সেভাবে না করে করেছি অন্যভাবে । অন্যভাবে করতে গিয়ে পুরো ল্যাপটপের সবই পরিষ্কার, মানে ডিলিট । তারপর ব্যাপারটা শেষমেশ ওস্তাদের কানে গড়ায় । ওস্তাদ জিজ্ঞেস করলেন, "কী হয়েছিল ল্যাপটপে?"
রমেশ বাবু_"আপনি যেভাবে করতে বলেছিলেন আমি সেভাবে করতে পারিনি । অন্যভাবে করতে গিয়ে ল্যাপটপ এখন সাদা হয়ে গেছে । এখন উপায় কী ওস্তাদ?"
"সমস্যা নাই, কিছু হয়নি । তো-অন্যভাবে করতে গেলেন কেন? করার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতেন । যাক তাও কিছু হয়নি, ভুল করে অনেককিছু শিখতে হয় । যেই ভুলটা করেছেন, সেটা সারাজীবন মনে রাখতে হবে । তাহলে এধরণের ভুল আর হবে না, এভাবেই ভুল থেকে মানুষের শিক্ষা ।"

এসব কথা ভাবতে ভাবতে রমেশ বাবু তার অফিসে যায় । অফিসে গিয়ে প্রতিদিনের মতো আর কাজে মন বসছে না । শুধু ওস্তাদের সাথে ফোনালাপের কথাগুলোই মনে পড়ছে । রমেশ বাবুর ভুলটা ছিল একটা বারণ নিয়ে । ওস্তাদ বারণ করেছিলেন, এইদিনে আমার জন্য কিছু করবেন না । যদি কিছু করেন, তা হলে ভুল করবেন । দিনটা ছিল ওস্তাদের জন্মদিন । ওস্তাদের এই জন্মদিনের তারিখটা রমেশ বাবুর একটুও মনে ছিল না । সেটা আবার ওস্তাদেই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন রমেশ বাবুকে । মনে করিয়ে দিয়েছিলেন জন্মদিনের আগের দিন, মোবাইল ফোনে কল করে ।

সময়টা ছিল ১৯ জুলাই বিকাল ৫ টা । রমেশ বাবু তার অফিসের কর্তব্য পালনে ছিলেন ব্যস্ত । ছিলেন তার অফিসের নিকটতম একটা বাজারে । বাজারের দোকানগুলোতেই হচ্ছে রমাশ বাবুর ডিউটি । এই ডিউটি চলা সময়েই রমেশ বাবুর মোবাইলে রিং হচ্ছে । ঝটপট বুকপকেট থেকে মোবাইলটা বাইর করেই রিসিভ করে । রমেশ বাবু নমস্কার বলার আগেই ওস্তাদ বললেন, "কেমন আছেন?"
"আপনার আশীর্বাদে ভালো আছি । তো আপনি কেমন আছেন?"
"আমিও ভালো আছি ।"
"এই প্রথম অসময়ে আপনার ফোন পেলাম । কোনো জরুরী সংবাদ আছে নাকি ওস্তাদ?"
"তেমন কোন জরুরী সংবাদ নাই, শুধু জানাতে চাই কাল আমার জন্মদিন । আমার জন্মদিনের তারিখটা আপনার মনে আছে? হয়ত মনে হয় নাই । সেটা জানানোর জন্যই ফোন করলাম, মনে করিয়ে দিলাম ।"
"সত্যি ওস্তাদ এ বিষয়টা আমার একটুও মনে ছিল না । আপনি মনে করিয়ে দিয়েছেন তো ভালো করেছেন । আপনার আবির্ভাব দিবসে কিছু একটা করা যাবে ।"
"না না, কিছু যেন না করেন তার জন্যই-তো ফোন করেছি ।"
"ওস্তাদ, বর্তমানে আপনার কাছ থেকে আমার দুরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার । কিছু একটা করতে চাইলেও করা সম্ভব নয় । যেটা করা সম্ভব, তা হলো ছোট্ট একটা শুভেচ্ছা বার্তা । এমন একটা শুভেচ্ছা বার্তাও কি পৌঁছাতে পারবো না?"
"না তাও করার দরকার নেই, আপনাকে বারণ করছি কিছু করবেন না ।"
"তাহলে জন্মদিনের তারিখটা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন কেন? আমার মনে নেই, আমি ভুলেই থাকতাম । এখন মনে করিয়ে দিলেন, আর আমি কিছু করবো না, তা কি হয়?"
"আপনি জানেন না, আমি ভিন্নধর্মী মানুষ । আমি অন্যরকমভাবে চলতে পছন্দ করি । আপনার একটা শুভেচ্ছা বার্তাতে আমি বিরাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব । তাই আবারও বলছি, জন্মদিনের তারিখটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি এতটুকুই । কিছু করার জন্য নয়, কথাটা মনে রাখবেন । এখন রাখি, ভালো থাকবেন, আবার কথা হবে ।"

ওস্তাদের কথাগুলো শুনে রমেশ বাবু ভাবতে লাগলেন । ভাবতে ভাবতে রমেশ বাবু সিদ্ধান্ত নিলেন, রাতেই একটা শুভেচ্ছা বার্তা লিখবো । ওস্তাদ বারণ করেছে তো কী হয়েছে? শুভেচ্ছা বার্তাটা হাতে পেলেই খুশি হয়ে যাবে । এই ভেবে রামেশ বাবু রাতেই শুভেচ্ছা বার্তা লিখে ফেলে । রামেশ বাবু তার শুভেচ্ছা বার্তাতে লিখেছে;

"ওস্তাদ, আজ ২০ জুলাই ২০১৭ ইং । আজ আপনার “শুভ জন্মদিন” এই জন্মদিনে আপনাকে জানাই উষ্ণ অভিনন্দন ।
১৯৬৯ সালের এই দিনে পৃথিবী নামক গ্রহটিতে আপনার আবির্ভাব । যা আমার অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনের জন্য সূর্য্যের আলো । আপনার আশীর্বাদেই আজ আমার এ পর্যন্ত আসা । যেখানে আমি ‘ক’ লিখতে কলম ভাঙতাম কয়েকটা । সেখানে আপনার আশীর্বাদে আজ আমি লেখক । তাই এই দিনটি আমার জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ । আপনি শুধু আমার ওস্তাদই নন, আপনি আমার অন্ধকার জীবনের প্রদীপের আলো । তাই আপনাকে আবারও শুভেচ্ছা অভিনন্দন ।

জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আপনার সফলতা কামনা করছি । সেই সাথে আপনার আশীর্বাদ কামনা করছি, আমার জীবন চলার দিনগুলোর জন্য । আপনার আশীর্বাদ ছাড়া আমার জীবন শুধুই অন্ধকারময় । ওস্তাদের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, যেন আপনার জীবনের প্রতিটা দিন - প্রতিটা মুহূর্ত হয়ে উঠুক আনন্দময় ।

আজকের দিনটির মতো প্রতিটি জন্মদিন ভরে উঠুক ভালবাসা আর উৎসাহে । আশা করছি সব প্রিয়জনেরা আপনার পাশেই আছে । জীবনে আরো উন্নতি ,সৌভাগ্য ,ঐশ্বর্য আসুক এই কামনাই করি । “শুভ জন্মদিন” শুভ হোক এই মাকনা ।"

রমেশ বাবু শুভেচ্ছা বার্তাটি লিখে অপেক্ষা করছিলেন রাত ১২ টা ১ মিনিটের জন্য । যখন ১২ টা ১ মিনিট হবে, তখনই পাঠিয়ে দিবে ওস্তাদের ই-মেইল ঠিকানায় । একসময় যখন রাত ১২.০১ মিনিট হলো, তখনই বার্তাটি পাঠিয়ে দেয় ওস্তাদের ই-মেইলে । শুভেচ্ছা বার্তাটি পাঠানোর পর, রাতে আর বার্তাটি ওস্তাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি । হয়েছে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কোনও একসময় । রমেশ বাবু জানতেন না, শুভেচ্ছা বার্তাটি পাঠানোর প্রতিক্রিয়া কী হবে । ওস্তাদ শুভেচ্ছা বার্তাটি মেইল বক্সে দেখামাত্রই রাগে জ্বলে ওঠে । সাথে সাথেই রমেশ বাবুর মোবাইল নম্বরে কল করে । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই কল সময়মত রমেশ বাবু আর রিসিভ করতে পারেননি । কারণ; তখনও রমেশ বাবু ছিলেন ঘুমের ঘোরে । যার কারণে ডাইরেক্ট কলটি হয়ে যায় মিসকল ।

এমনিতেই ওস্তাদের একটা কল আসতেই রমেশ বাবুর ভয়ে শরীর কাঁপে । আবার সময় সময় খুশিতে হয়ে যায় আত্মহারা । তাই একটু দেরিতে হলেও রমেশ বাবু ওস্তাদের দেওয়া কলটি ব্যাক করে । কিন্তু ওস্তাদ রমেশ বাবুর কলটি কেটে দেয় । পরবর্তীতে ওস্তাদ নিজেই আবার কল করে রমেশ বাবুর কাছে । মোবাইল ফোনে কলটি যখন আসে, তখন রমেশ বাবু চা দোকানে । কলটি মোবাইলে আসার সাথে সাথে রমেশ বাবুর মনটা আনন্দে ভরে ওঠে । রমেশ বাবু ভেবেছিলেন, ওস্তাদ হয়ত পাঠানো বার্তার অভিনন্দন জানাবেন । কিন্তু না, অভিনন্দনের বদলে জানানো হয় তিরস্কার । সাথে কৈফিয়ত আর হাজারো প্রশ্ন । কেন করলেন, কেন দিলেন, নিষেধ করা শত্বেও কেন বার্তা পাঠালেন?_ইত্যাদি ইত্যাদি ।

ওস্তাদের কথাগুলো রমেশ বাবু শুনছিলেন, আর ভেতরে ভেতরে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন । কাঁদছিলেন এই কারণে যে, এতদিনের মধুর সম্পর্ক একটা শুভেচ্ছা বার্তায়ই শেষ । রমেশ বাবু মনে মনে ভাবছে, যদি বার্তাটি না পাঠাতাম তাহলেও কী হতো? ওস্তাদ হয়ত মনে মনে বলতেন, তারিখটা জানানোর পরও শুভেচ্ছা জানালো না । হয়ত বলতো, বারণ করেছি এমনিতেই, পাঠালে কি আমি রাগ করতাম? সেটাও হতো দোষ, হতো ওস্তাদের প্রতি অভক্তি । কী এমন ইনজেকশন পুশ করলাম যে, আমার ওস্তাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল? এমন হাজার প্রশ্ন রমেশ বাবুর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, উত্তর মেলছে না ।

প্রশ্নের উত্তর মেলাতে না পেরে, সমস্ত দোষই নিজের কাঁধে চাপিয়ে রাখলেন । মনকে শান্তনা দিলেন, ভুল করেছি ওস্তাদের আদেশ অমান্য করে । এইরকম ভুল থেকে আমার শিক্ষা হওয়া দরকার, যেন আর কখনো এমন ভুল না হয় । এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি ঠিক, কিন্তু ভুলের ক্ষমা পাবো না কেন?

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ