ভালোবাসি তোমায় (৩৬তম খন্ড)

ইঞ্জা ১৯ নভেম্বর ২০১৬, শনিবার, ১২:৪১:৪৫পূর্বাহ্ন গল্প ২৪ মন্তব্য

images

 

অভি ঘুমিয়ে পড়লে অবণী বেড়িয়ে এলো আইসিইউ থেকে আর বেড়িয়ে এলেই প্রিয়ন্তী দ্রুত পায়ে এসে অবণীকে জড়িয়ে ধরলো আর জিজ্ঞেস করলো ভাইয়া কিছু বলেছে আপু?
না, ঘুমিয়ে পড়েছে।
এরি মধ্যে অভির মা, অবণীর মা বাবা আর জিএম সাহেব অবণীর পাশে এসে দাড়িয়েছে, এ সময় ডাক্তার বেড়িয়ে এসে সবার সামনে হাসি মুখে দাঁড়ালো, অবণীর বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, অভির কি অবস্থা?
এই মূহুর্তে উনার বিপদ কেটে গেছে, আশা করি উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন কিন্তু উনার যে ধরণের এক্সিডেন্ট হয়েছে সে হিসাবে আমাদের আরো কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে উনার জ্ঞান ফিরলে বিশেষ করে উনার বুক হাত পা, মাথা সব থরর চেকআপের দরকার আছে, আপাতত উনার বিপদ কেটে গেছে বাকিটা আল্লাহর উপর, উনি এখন দশ থেকে বারো ঘন্টা ঘুমাবেন, ঘুম থেকে জেগে উঠার পর আমরা আবার চেক করবো, দোয়া করুন আপনারা, বলেই উনি চলে গেলেন।
অবণীর বাবা সবাইকে নিয়ে এসে বসলেন বাইরে রাখা সোফাতে, অবণী আর প্রিয়ন্তী একটু দূরে বসলো।
অভির মা দু হাত তুলে মুনাজাত করলেন শুকরিয়া আদায় করে অবণীর মার দিকে তাকিয়ে বললো, হাসি তোরা অবণীকে নিয়ে বাসায় যা, মেয়েটা একদম রেস্ট পাইনি।
হুম যাবো আর রাতে তোর ভাই আসবে আর তোরা বাসায় চলে যাবি, সকালে আমি আসলে তোর ভাই চলে যাবে, অবণী চল আমরা বাসায় যায়, অবণীর মা ডাক দিলেন।
আম্মু তোমরা যাও।
অবণীর বাবা উঠে গিয়ে মেয়েকে বললেন, দেখ অভি এখন ঘুমাচ্ছে, দশ বারো ঘন্টার আগে জাগবেনা, তোর রেস্টের দরকার, চল দরকার হলে আবার আসিস।
ঠিক আছে আব্বু চলো কিন্তু আমি অভির মানে অভি স্যার জাগার আগেই আসবো।
ঠিক আছে চলো।

অবণীরা যখন বাসায় পোঁছাল তখন বিকেল চারটা, ফাল্গুনী আর শ্রাবণী দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো, সবাই বাসায় এক সাথে প্রবেশ করল, কাজের লোক এসে সবাইকে কফি দিয়ে গেলে অবণী কফির মগটা নিয়ে চলে গেল নিজ রুমে, কফিটা শেষ করতে করতে ফাল্গুনী আর শ্রাবণী মিলে অবণীর ব্যাগ খুলে সব কাপড় চোপড় বের করে আলমারিতে রেখে দিলে অবণী বাথরুমে গেল গোসল করতে, গোসল শেষ করে অবণী শুয়ে পড়লো, শুয়ে শুয়েই গল্প করতে লাগলো বোনদের সাথে, ফাল্গুনী বলতে লাগলো অভির এক্সিডেন্টের আগে ওর সাথে কি কি কথা হয়েছে সেইসব কথা, হঠাৎ ফাল্গুনী খেয়াল করলো অবণী গভীর ঘুমে আর তা দেখে ফাল্গুনী আর শ্রাবণী দুজনেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। রাত নয়টার দিকে অবণীর বাবা অবণীর রুমে এসে অবণীর বেডে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন, অবণীর ঘুম ভেঙ্গে গেলে অবণী ওনার হাতটা নিয়ে চুমু খেলো আর জিজ্ঞেস করলো, আব্বু কিছু বলবে?
রাত নয়টা বেজে গেছে, তুই কি এখন খাবি নাকি ঘুমাবি আরো?
অবণী লাফ দিয়ে উঠে বসলো, হাত ঘড়িতে রাত নয়টা দেখে বললো, আব্বু আমি মুখ হাত ধুয়ে আসছি আম্মুকে খেতে দিতে বলো, হাসপাতালে যেতে হবেনা?
আজ যেতেই হবে মা, আজ রেস্ট করলে হয়না?
না আব্বু, চলো চলো খেয়ে তাড়াতাড়ি বেরুতে হবে যে।
ঠিক আছে মা তুই ফ্রেস হয়ে আয়।
আধা ঘন্টা পরে অবণী আর অবণীর বাবা খেয়ে বেড়িয়ে গেলেন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

রাত প্রায় একটা, অবণী, অবণীর বাবা, অভির মা আর প্রিয়ন্তী বসে আছে আইসিইউর বাইরে রাখা সোফায়, অভির মা আর প্রিয়ন্তী আজ আর বাসায় গেলনা অভির ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষায়, হটাৎ ডাক্তার নার্সদের দৌড়াদৌড়ি করতে দেখে অবণীরা সবাই দৌড়ে গেল গ্লাসের পাশে, অভির ঘুম ভেঙ্গেছে আর ডাক্তাররা চেক করছে অভিকে, অভি আসতে করে মাথাটা ঘুরালো গ্লাসের দিকে যেখানে অবণীরা ভিড় করে অভিকে দেখছে, অভি আবার ফিরে তাকালো ডাক্তারদের দিকে, এক ডাক্তার বললো, আপনি ডান হাতটা নাড়ানোর চেষ্টা করুন, বাম হাত নাড়ুন, এইভাবে চেক করতে লাগলো, আরেক ডাক্তার বললো আপনার কোথায় কোথায় পেইন হচ্ছে?
পা ছাড়া পুরা শরীরেই পেইন করছে, অভি আসতে আসতে বললো।
দেখি আপনি পা নাড়ানোর চেষ্টা করুন, ডাক্তার বললো।
অভি চেষ্টা করলো কিন্তু পা নাড়াতে পারলোনা, আবার চেষ্টা করলো কিন্তু পা দুইটা যেন অসাড় হয়ে রইল।
ডাক্তার আমি পায়ে কোন কিছু ফিল করছিনা বলেই অভি ঝড় ঝড় করে কান্না করে দিলো, ডাক্তাররা দ্রুত পায়ের কাছে এসে চেক শুরু করলো, পাটা ধরে হাল্কা উঠানামা করতে লাগলো আর জিজ্ঞেস করতে লাগলো, এখন ফিল করছেন?
না, না, না আমি কিছুই ফিল করছিনা, ডাক্তার আমার কি হয়েছে, আমি পা কেন নাড়াতে পারছিনা?
দেখুন আপনি এতো বড় এক্সিডেন্টের পরো বেঁচে আছেন আর অনেক সময় এমন হয় আবার ধিরে ধিরে ঠিকও হয়ে যায়, ডাক্তার ইশারা করলো নার্সকে।
ডাক্তার আমাকে সান্তনা দেবেন না প্লিজ, বলেই অভি গ্লাসের ওপারে তাকালো, চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে, নার্স অভিকে আবার ইঞ্জেকশন দিলো, অভি ধিরে ধিরে ঘুমের অতলে ফিরে গেল।
ডাক্তাররা অভিকে কেবিনে দেওয়ার ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বেড়িয়ে এলে অবণীরা সবাই গিয়ে দাঁড়ালো ডাক্তারের সামনে, ডাক্তার ব্রিফ করতে লাগলো এই বলে, উনি এখন অনেক সুস্থ আছেন আর তাই উনাকে কেবিনে দেওয়ার জন্য বলে দিয়েছি, এখন আর আইসিইউতে রাখার দরকার নেই কিন্তু আরেকটি সমস্যা দেখা দিয়েছে।
মানে কি সমস্যা, অবণী উদিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলো?
জি উনার পা দুইটা কাজ করছেনা।
মানে কি, অভির মা চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলেন।
এই মুহুর্তে কিছু বলতে পারছিনা, উনাকে আবার ঘুমের জন্য ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে সকালে উনার ঘুম ভাঙ্গলে উনার এমআরআই করবো আর সিটি এস্ক্যান করবো, এরপর আমরা বলতে পারবো উনার সমস্যা কোথায়, সালামালেকুম বলেই উনি চলে গেলেন আর এইদিকে অবণী, অভির মা আর প্রিয়ন্তী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।

ভোর সাতটার পর অভির ঘুম ভাঙ্গলে অভি এইদিক ওদিক তাকাতে লাগলো আর প্রথমেই চোখ পড়লো কেবিনে রাখা সোফার উপরে ঘুমন্ত অভির মা আর প্রিয়ন্তীর দিকে চোখ পড়লো আর ঠিক তখনই চোখ গেল বেডের অপর পাশে অবণী এসে দাঁড়িয়েছে।
এখন কেমন আছেন আপনি, অভিকে জিজ্ঞেস করলো অবণী?
ভালো, আমি আজ কতোদিন এইখানে?
আজ সহ পাচঁ দিন।
তুমি কখন এসেছো?
গতকাল।
অভি অবণীর হাতটা ধরলো আর বললো, কেন এলে তুমি, আমার তো সব শেষ অবণী।
নাহ, আপনার কিছুই হয়নি, আপনি একদম ঠিক আছেন।
না অবণী তুমি জানোনা, তুমি জানোনা আমার পা দুইটা কাজ করছেনা।
আমি জানি আর এও জানি আমি বেঁচে থাকতে আপনার কিছু হবেনা, বলে অভির হাতে আসতে করে চাপ দিলো।
অভিদের কথাবার্তার আওয়াজ শুনে অভির মা আর প্রিয়ন্তীর ঘুম ভেঙ্গে গেলে ওনারা উঠে এলেন অভির পাশে, অভির মা এসে অভির মাথায় হাত রাখলেন আর জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছিস বাবা?
মা মা করে অভি মাকে জড়িয়ে ধরলো আর কাঁদতে লাগলো আর অভির মা অভির ব্যান্ডেজ বাঁধা মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন, ইনশা আল্লাহ্‌ তুই দেখিস তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবি, তুই চিন্তা করিসনা বাবা।
অবণী দ্রুত বেড়িয়ে গেল ডাক্তারদের খবর দেওয়ার জন্য আর প্রিয়ন্তী এসে অভির হাত ধরে রাখলো।
একটু পর অবণী আর নার্স এসে প্রবেশ করলো, নার্সের হাতে অভির জন্য লিকুইড ব্রেকফাস্ট, অভিকে হাল্কা তুলে দিয়ে গেল নার্স, অবণী সুপের বাটি নিয়ে, চামচ দিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো অভিকে।

অভিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে চেকআপ করানোর জন্য আর এই সুযোগে অবণীর বাবা এসে সবাইকে নিয়ে ক্যান্টিনে এলেন ব্রেকফাস্ট করার জন্য যেখানে আগে থেকে অবণীর মা ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসেছেন সবার জন্য, অভির মা গিয়ে বান্ধবীককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলে অবণীর মাই উনাকে বসিয়ে নিজে সবার পাতে লাবড়া আর মুগ ডাল দিয়ে রান্না মুরগির লটপটি বেড়ে দিলেন সাথে পরটা, কফিটা ওরা ক্যান্টিন থেকেই নিলো, অবণী তাড়াহুড়ো করে খেয়ে নিয়ে ল্যাবের দিকে চলে গেল, ল্যাবে এসে অবণী বাইরে সোফাতে এসে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো অভির জন্য। ঘন্টা খানেক পর অভিকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে বেড়িয়ে এলো ওয়ার্ডবয়, অবণী উঠে গিয়ে অভির পাশে দাঁড়ালো, অভি অবণীর দিকে এক নিমিষে চেয়ে রইল তারপর বললো, কেন এতো কষ্ট করছো তুমি, আমার আর কিছু হবেনা, অবণী অভির মুখে হাত চাপা দিলো আর বললো, প্লিজ অভি স্যার আর এইসব বলবেন না, আমি কিন্তু রেগে যাবো।
অভি চুপ হয়ে গেলে ওয়ার্ডবয় স্ট্রেচার নিয়ে অভির কেবিনের উদ্দেশ্যে চলে গেল।
দুপুরে বড় ডাক্তার খবর পাঠালেন অভির মা যেন দেখা করেন, অভির মা অবণীকে নিয়ে গেলেন ডাক্তারের অফিসে, নক করে ভিতরে প্রবেশ করলে ডাক্তার উনাদের বসতে বললেন।
আমরা অভি সাহেবের থরর চেকআপ করেছি, আর উনার হাত, বুক, পায়ে কিছু ফ্র্যাকচার আর ব্রোকেন বোন আছে যা আমরা প্লাস্টার করে দিয়েছি, আশা করি দুই তিন মাসের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু বড় সমস্যা হলো উনার মাথায়, বলেই চুপ করলেন ডাক্তার।
মাথায় কি সমস্যা আছে, অবণীই জিজ্ঞেস করলো।
এক্সিডেন্টের সময় উনি মাথায় যে বারিটা খেয়েছেন সেইটার কারণে উনার ব্রেইনের সেই জায়গাই রক্ত জমে আছে যেখান থেকে পা নাড়ানর নির্দেশ আসে, যে কারণে এই প্যারালাইসিস।
তাহলে সেকি আর হাটতে পারবে না ডাক্তার সাহেব, অভির মা জিজ্ঞেস করলেন।
আমি যথটুকু বুঝি তা হলো উনাকে একজন ভালো নিওরোসার্জন দেখাতে হবে, উনিই এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

পরের রাতেই দেশের নামকরা নিওরোসার্জনকে কল দেওয়া হলে উনি রাতে এসেই অভিকে চেক করলেন, এমআরআই আর সিটি এস্ক্যানও দেখলেন এরপর উনি চলে গেলেন আর পিছন পিছন অবণী আর অভির মা গেলেন, বাইরে এসেই অভির মা ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন, ডাক্তার সাহেব, কেমন দেখলেন আমার ছেলের রিপোর্ট, ও ঠিক হয়ে যাবে তো?
আপনারা একটু পরে আসুন, আমি ডেকে নেব, বলেই ডাক্তার চলে গেলেন কিছুক্ষণ পর ওয়ার্ডবয় এসে রিপোর্ট গুলো চেয়ে নিয়ে গেলো, আধা ঘন্টা পর ওয়ার্ডবয় এসে ডেকে নিলো আর ওয়ার্ডবয়কে ফলো করে, আগের ডাক্তারের চেম্বারে এসে প্রবেশ করে দুই ডাক্তারকেই বসে থাকতে দেখলো উনারা, ডাক্তার বসতে বললেন, অবণী আর অভির মা বসলে নিওরোসার্জন কথা শুরু করলেন।
আমি রিপোর্ট গুলা দেখে যা বুঝলাম আর তা হলো, উনার একটা সার্জারীর দরকার আছে কিন্তু কাজটা বেশ ক্রিটিকাল আর এই ধরণের অপারেশনে অনেক রুগি মারাও যেতে পারে।
অভির মা কেঁদে দিলেন আর কাঁদতে কাঁদতে উনি অভির মা অবণীর হাত ধরে বললেন, দেখো মা দেখ, কি বলছেন উনারা, এ কিভাবে হয়, তাহলে আমার ছেলের কি হবে?
অবণী চোখে জল নিয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলো, তাহলে আমাদের কি করা উচিত?
দেখুন এই ধরণের অপারেশন আমাদের দেশে আমরা করিই না বললে ভুল হবে, আপনারা কয়েকদিন অপেক্ষা করুন, আমার সিনিয়র আর ঘনিষ্ঠ আমেরিকান বন্ধু ডক্টর হ্যারি রিচার্ডসনের সাথে যোগাযোগ করে দেখি যদি উনি নিজে করে তাহলে চান্স আছে, আমি কয়েকদিনের মধ্যেই জানাবো, আপনারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন, প্লিজ।

____________ চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ