ভালোবাসি তোমায় (২৫তম খন্ড)

ইঞ্জা ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ০৪:৩৭:৪৪অপরাহ্ন গল্প ২০ মন্তব্য

images (8)

 

নোভো এয়ারের ফ্লাইট যখন চট্টগ্রামে ল্যান্ড করে তখন বিকেল ৪.১০, অভি সব প্যাসেঞ্জার নেমে গেলে ধিরে সুস্থে নেমে এলো এরোপ্লেন থেকে। মোনালিসা নিজেই এসেছে অভিকে রিসিভ করতে আর সিআইপি হওয়ার কারণে সে ভিতরে আসতে পেরেছে, অভি যখন নেমে আসছে মোনালিসা মুগ্ধ চোখে চেয়ে রয়েছে অভিকে, বেশ হ্যান্ডসাম আর যেন হলিউডের নায়ক নেমে আসছে প্লেন থেকে। অভি এগিয়ে এসে যখন হাই করলো তখনো মোনালিসা যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে হাত বাড়ালো অভির দিকে।

কি ব্যাপার কই আছো?
তন্দ্রাভঙ্গ হতেই মোনালিসা বললো, না না কি কই?
আমার তো মনে হয় তুমি অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলে এমনই লাগছিলো।
না না, এমন কিছুনা, চট্টগ্রামে সু-স্বাগতম অভি, চলুন আপনার লাগেজ কালেক্ট করে নিই।
জি চলুন।
দুজনেই এগিয়ে লাগেজ বেল্টের উদ্দেশ্যে, লাগেজ আসার পর কালেক্ট করে বেড়িয়ে এলো শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে, আগেই মোনালিসা ড্রাইভারকে ফোন দিয়েছিল পার্কিং থেকে গাড়ী যেন নিয়ে আসে, গাড়ীর কাছে পোঁছালে ড্রাইভার তাড়াতাড়ি লাগেজ গুলো নিয়ে পিছনের বনেটে রেখে দিলো, অভিকে নিয়ে মোনালিসা পিছনের সিটে বসলে ড্রাইভার গাড়ী ছেড়ে দিলো।

তারপর বলুন, আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো, অভির দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলো মোনালিসা।
না তেমন অসুবিধা হয়নি, হেঁটে এসেছি তো তাই একটু পা ব্যাথা করছে, হেসে জবাব দিলো অভি।
মোনালিসা অবাক হয়ে তাকালো অভির দিকে তারপর খিল খিল করে হেসে উঠলো অভির ঠাট্টা অনুধাবন করতে পেরে তারপর বললো, আসলে এইটাই তো আমাদের কার্টেসি, কেউ আসলে জিজ্ঞেস করা।
আমিও মজা করছিলাম।
তা আপনার কি আজ কোনো প্রোগ্রাম আছে?
না তেমন নয়, শুধু অফিসের লোকদের সাথে তাদের কর্মকান্ড নিয়ে আলাপ করা।
তাহলে তো কথায় নেই, আপনি তো আমাদের বাসায় উঠবেন না অন্তত আমাদের বাসায় তো নিয়ে যেতে পারি নাকি?
অভি হেসে বাইরে তাকিয়ে দেখতে লাগলো কর্ণফুলী নদীর ভূবন মোহিনী দৃশ্যগুলো, যথবার আসে ততবার এই দৃশ্য ওকে মোহিত করে, রাস্তার ধারেই বয়ে চলেছে কর্ণফুলী, নদীর পাড় ধরেই দাঁড়িয়ে আছে ছোট বড় অনেক দেশী বিদেশী জাহাজ, সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে জাহাজের আলো জ্বলছে আর তা নদীর জলকে আরো আলোকিত করছে, সামনেই আছে সিমেন্ট ক্লিংকার ডাম্পিং এস্টেশন, গুরো সিমেন্টের ধুলায় কুয়াশাছন্ন হয়ে আছে আশপাশ।
আজ না গেলে হয়না তোমাদের বাসায়?
না আজই চলো, সরি চলেন, আব্বু অপেক্ষা করছেন।
তা তুমি করেই বললে যখন তুমি করেই বলো খুশী হবো, ফরমালেটিসে আবার এলার্জি আছে আমার।
ওকে তুমি, হেসে দিয়ে মোনালিসা জবাব দিলো।

মোনালিসাদের গাড়ী বারান্দাতে যখন গাড়ী এসে দাঁড়ালো দুজনেই গাড়ী থেকে নেমে এলো, মোনালিসাদের বাড়ীটিও বেশ বিশাল আর অভির মনে হলো যে জায়গাটিতে বাড়ীটা তা ২ বিঘার নিচে হবেনা, চারিদিকে বিরাট সব গাছ আর গাছের কয়েক ফুট দূরত্বে ফুলের বাগান, বেশ পরিপাটি, মোনালিসা পথ দেখিয়ে ভিতরে নিয়ে এসে ড্রয়িংরুমে বসালো অভিকে, কাজের লোককে দিয়ে ওর বাবার কাছে খবর পাঠালো ওরা এসেছে বলে। অভি সেল ফোনটা বের করে মায়ের নাম্বারে স্পীড ডায়াল করলো, কয়েকটা রিং হতেই অপর প্রান্ত থেকে অভির মা রিসিভ করেই জিজ্ঞেস করলো, বাবা ঠিক মতো পোঁছেছিস?
হাঁ মা ঠিক মতোই এসেছি।
আলহামদুলিল্লাহ্‌, এখন কই তুই?
এখন হক আনকেলের বাসায় আছি।
তুই কি ওখানেই উঠেছিস?
না মা, মোনালিসা রিসিভ করে এখানে নিয়ে এলো, আনকেলের সাথে দেখা করেই হোটেলে ফিরবো।
ঠিক আছে, ভালো থাকিস আর হক ভাইকে আমার সালাম দিস, রাখি।
ঠিক আছে মা, আল্লাহ্‌ হাফেজ।
আল্লাহ্‌ হাফেজ।
তা আনকেল কই, মোনালিসাকে জিজ্ঞেস করলো অভি।
এই আসছে বলেই মোনালিসা ইশারা করলো ঘরের ভিতরে সিঁড়ির দিকে।
হক সাহেব নেমে এসেই জড়িয়ে ধরলেন আর জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছো অভি?
জি আনকেল ভালো আর আপনি?
হুম ভালো, আমি ওয়াস রুমে ছিলাম তা একটু দেরী হলো, ঘরের সবাই ভালো তো?
জি আনকেল, মা সালাম জানিয়েছেন।
হেসে হক সাহেব বললেন, আমারো সালাম দিও ভাবীকে।

অভি কফির কাপে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কাল কনফারেন্সে কয়টায় যাচ্ছেন আপনারা?
সকাল থেকে তো শুরু হচ্ছে, আমি বিকালে যাবো ভাবছি কিন্তু লিসা সকাল থেকেই থাকবে, জবাবে হক সাহেব জানালেন।
হুম যেহেতু আমার হোটেলেই কনফারেন্স তাহলে তো সকাল থেকেই থাকবো কিন্তু মাঝে একবার পোর্টে যাবো পরশুর উদ্বোধনির কি ব্যবস্থা হয়েছে এইসব ঘুরে দেখার জন্য।
লিসা তাহলে তুমিও অভির সাথে থেকো সব সময়, ইউ নো ইউ হেভ টু হেল্প হিম অ্যান্ড ক্যান লার্ন মোর এবাউট দিস বিজনেস।
আব্বু তোমার বলতে হবেনা আর, অবশ্যই আমি হেল্প করবো পাশে থেকে।
ভেরী গুড, হক সাহেব হেসে বললেন।
আনকেল অনেক রাত হচ্ছে আজ উঠি, অভি বিদায় নিতে উঠে দাঁড়ালো।
তুমি যদি লিসার কাছ থেকে বিদায় নিতে পারো আমি কিছু বলবোনা, হেসে হক সাহেব বললেন।
অভি, আজ আমি নিজ হাতে রান্না করেছি তোমার জন্য, খেয়ে যেতে হবে, মোনালিসা চোখ বড় বড় করে বললো।
এইটা ঠিক করলেনা।
চোখ রাঙ্গিয়ে মোনালিসা বললো, একদম চুপ তুমি পাঁচ মিনিট বেশী বসবে আর এতে ঠিক না করার কি আছে বলেই হেসে ফেললো।
বসো বাবা বসো, আমার মেয়েটা তোমার জন্য রান্না করেছে, খেয়েই যাও, মুচকি হেসে হক সাহেব বললেন আর মোনালিসা দ্রুত খাবার টেবিলে দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।

বাহ দারুণ রান্নার হাত তোমার, এমন দেশি রান্না সবাই রাঁদতে পারেনা, অভি খেতে খেতে বললো।
মোনালিসা মিষ্টি হেসে বললো, মা শিখিয়ে ছিলেন অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে।
আন্টি তাহলে বেশ রান্না করতেন।
আমি সৌভাগ্যবান মার রান্না আমি শিখতে পেরেছি বলতে বলতে অভির পারে খাসীর সিকান্দারি রান তুলে দিলো মোনালিসা।
অভি অবাক হয়ে চেয়ে রইল কয়েক মূহুর্ত তারপর বললো, এতো বড় এইটা খাবো কি করে?
আসতে আসতে খাও, খেতে পারবে।
অভি খাও খাও, আমার মেয়ে এতো শখ করে সব সময় রান্না করেনা, তুমি এসেছো বলেই আজ রান্না করলো, মা মুসলমান থেকে একটু মাংস দাও তো।
হু তোমাকে সব সময় ভালো খাওয়ালে প্রেশার তোমার আকাশে উঠবে, কপট রাগ দেখিয়ে মোনালিসা বলল মুসলমান থেকে ছুরি দিয়ে মাংস কাটতে কাটতে।
অভি আর হক সাহেব দুজনেই হেসে দিলো।
খাওয়া শেষে অভি বিদায় নিলো হক সাহেবের কাছ থেকে, অভিকে ড্রপ করতে মোনালিসা সাথে আসতে চাইলে অভি না করে বললো, আমি তো হোটেলে ফিরে ঘুমাবো, তোমার সাথে তো কাল দেখা হচ্ছে সকালে।
তাহলে এক সাথে ব্রেকফাস্ট করবো।
ঠিক আছে, তাহলে সকাল আটটা।
ওকে সকাল আটটা।
আনকেল আসি, সালামালেকুম
ওয়া আলাইকুম আসসালাম বাবা, আল্লাহ্‌ হাফেজ।

রাত তখন প্রায় দশটা অভি যখন হোটেল পেনিন্সুলাতে পোঁছাল, লিফটে রিসেপশন ডেস্কের ফ্লোরে উঠে আসলো, রিসেপশ্নিস্ট মেয়েটা হ্যালো স্যার, ওয়াট ক্যান আই ডু ফর ইউ বলাতে অভি নিজের পরিচয় দিলো, মেয়েটা তাড়াতাড়ি কম্পিউটারে চেক করে বললো, স্যার আপনার জন্য রয়াল স্যুইট রিজার্ভেশন দেওয়া আছে, কার্ড এগিয়ে সাইন করতে বললো আর সাথে নিজের অফিস কার্ড এগিয়ে দিয়ে চেকইন কার্ডে খস খস করে সাইন করলো, রিসেপশ্নিস্ট মেয়েটা ডোর কার্ড এগিয়ে দিতে দিতে বললো, স্যার আপনার অফিসের লোক আপনি আসলেই জানাতে বলেছেন, জানাবো?
কত নাম্বারে আছে?
জি ২০৩।
ওকে ইনফরম করুন আমি এসেছি, আমি কল দিয়ে ডেকে নেবো।
জি স্যার, বেল বয়কে ইশারা করে অভির ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে যেতে বললো।
লিফটে দশ তলায় উঠে এলো অভি, বেলবয়কে ফলো করে ১০০১ নম্বর রুমে এসে প্রবেশ করলো, বিশাল রুম, রুমে টিভি, ড্রিংক্স, পানি, চকলেট রাখার জন্য মিনি ফ্রিজ, পাশেই আছে একি সাইজের আরেকটা রুম আর সেইখানেও টিভি ফ্রিজ আছে, আছে সোফা সেট, ছোট খাটো কনফারেন্স টেবিল। অভি বেল বয়কে টিপস দিয়ে বিদায় দিয়ে ট্রাভেল ব্যাগ খুলে পাঞ্জাবী পায়জামা সহ ব্যবহৃত কিছু জিনিস বের করে পড়নের ড্রেস খুলে বাথরুমে প্রবেশ করে ফ্রেস হয়ে এলো, পায়জামা পাঞ্জাবীটা পড়ে নিয়ে কল দিলো ২০৩ নম্বরে, অপর প্রান্তে অভির অফিসের জিএম রিসিভ করলে অভি খবরা খবর নিলো এরপর কাল সকালে দেখা হবে বলেই ফোন রেখে ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

অবণী বাসায় এসেই দাদীকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো মুখ খুলতে, দাদী বললো, মুখ খুলে কি করবো অনু, বাতাস তো নাক দিয়েও নেওয়া যায়।
আরে খুলোনা, খুলতে বলছি খুলবে এতো ট্যা ফো কিসের, কপট রাগ দেখালো অবণী।
আচ্ছে নে খুললাম হা...
অবণী মুখের ভিতর বড় একটা চকলেটের টুকরা ঢুকিয়ে দিলো আর বললো, এখন গরুর মতো জাবর কাটো।
দাদী চকলেট চাবাতে চাবাতে বললো, তাহলে কি চাকরী হয়ে গেলো?
হাঁ দাদী বুড়ী, চাকরি হয়ে গেলো ওয়ার্ক পারমিট সহ, ছয় মাস তারা দেখবে কেমন করছি এরপর ভালো মনে করলে আমেরিকায় পোষ্টিং দেবে তাদের ব্রাঞ্চের ইনচার্জ করে।
কি বলিস, তোকে আমেরিকা পাঠিয়ে দিলে তো তুই একা হয়ে যাবি, না না এইটা ঠিক না।
দূর বুড়ী একা যাবো কেন, তোমাকেও সাথে নিয়ে যাবো আমার বাঁদী বানিয়ে বলেই জোরে জড়িয়ে ধরলো।
আমার আর কাজ নেই, তুই দূর হলেই আমি বাঁচি বলেই কেঁদে দিলেন দাদী।
দাদী তুমি কাঁদছো কেন, যখন যাবো তখন দেখা যাবে।
যা তুই রুমে যা কাপড় চেইঞ্জ করে নে।
হুম যাচ্ছি, দাদীকে কষে এক চুমু দিলো গালে তারপর সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে চলে এলো, রুমে এসে কাপড় চেইঞ্জ করেই ঢাকার বাসায় রিং দিলো, রিং হতেই অবণীর মা রিসিভ করলো ফোন।
মা কেমন আছো?
আছি তুই কেমন আছিস, ওখানে কোনো সমস্যা হচ্ছেনা তো তোর?
না মা, কোনো সমস্যা হচ্ছেনা আচ্ছা শুনো, আমার চাকরী হয়ে গেছে।
এ্যাঃ সত্যি!
হাঁ মা সত্যি, খুব ভালো চাকরী, বাবা কই বাবাকে দাওনা।
কই শুনছো, তোমার মেয়ে ফোন দিয়েছে, অবণী তুই বল তোর বাবাকে।
হ্যালো, কিরে মা কেমন আছিস, অবণীর মার কাছ থেকেই ফোন নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন অবণীর বাবা।
জি বাবা ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?
হাঁ মা আমি ভালো আছি, তুই বল।
বাবা আমার এইখানকার এক শিপিং কোম্পানিতে ম্যানেজার পদে চাকরী হয়েছে, বেতন সাত হাজার কানাডিয়ান ডলার।
বাহ বাহ খুব খুশী হয়েছি, খুব চিন্তায় ছিলাম।
বাবা সাথে কোম্পানি থেকেই গাড়ী দেবে কিন্তু এইখানকার লাইসেন্স করতে হবে, কাল এপ্লাই করতে যাবো।
খুব ভালো, খুব ভালো, তা তোর চাচা চাচী আর দাদী কেমন আছে?
আলহামদুলিল্লাহ্‌ সবাই ভালো আছে।
তোর কোনো সমস্যা হচ্ছেনা তো?
না বাবা, তুমি তো জানো ছোট বাবা আর ছোট মা আমাদের কেমন করে।
ঠিক আছে মা, ভালো থাক আমরা দোয়া করছি।
বাবা ফাল্গুনী আর শ্রাবণী কেমন আছে?
ওরাও ভালো আছে, ওরা ঘুমাচ্ছে।
ঠিক আছে বাবা এখন রাখছি, পরে কথা হবে, আল্লাহ্‌ হাফেজ।
আল্লাহ্‌ হাফেজ মা।

_______ চলবে।
ছবিঃ Google

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ