ভালোবাসি তোমায় (১৭তম খন্ড)

ইঞ্জা ১১ আগস্ট ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ০১:১৫:০৮অপরাহ্ন গল্প ১৮ মন্তব্য

images (11)

ব্রেকফাস্ট করে অভি বেরুচ্ছে এই সময় অভির মা এসে বললেন, অভি তোর রিপোর্ট অনেকদিন আনা হয়না, আজ নিয়ে আসিস আর প্রিয়ন্তীকে নামিয়ে দিস ওর কলেজে।
ঠিক আছে মা, প্রিয়ন্তী কই?
ও আসছে।
একটু পর প্রিয়ন্তী আর অনামিকা এক সাথে বেরিয়ে এলো, অনামিকা সামনে উঠলে প্রিয়ন্তী পিছনে উঠলো, অভি ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে ওর মাকে বলল, মা তুমি কাউকে পাঠিয়ে আনিয়ে নিও, স্লিপ আমার ড্রয়ারে রেখেছি, নিয়ে নিও।
অভির মা হেসে দিয়ে বললেন, ঠিক আছে, তোরা যা।
অভিরা বেড়িয়ে গেলে অভির মা কতক্ষণ হাঁটলেন বাগানে এরপর সুইমিংপুলের লাউঞ্জ চেয়ারে বসলেন, কাজের লোক এসে চা দিয়ে গেলে চুমুক দিতে লাগলেন আর সাথে চিন্তা করতে লাগলেন, অনামিকা কি অভিকে পছন্দ করে, অভি কি অনামিকাকে পছন্দ করে? না না অভি কেন ওই মেয়েটিকে পছন্দ করবে যদিও মেয়েটি ভালো এরপরেও মেয়েটির আগে বিয়ে হয়েছে, কিন্তু গতকাল অনামিকা কি কিছু বুঝাতে চাইছিলো? অভির আসলেই বিয়ে করানো উচিত, নাহ চিন্তা ভাবনা করে লাভ নেই, এইবার অভির জন্য মেয়ে দেখা উচিত, মুখে হাসি নিয়ে উনি উঠে গেলেন ভিতরে।

ভাইয়া আমাদের কলেজ থেকে এইবার শিক্ষা সফরে আমরা সুন্দরবন যাবো, তুমি কিন্তু না করতে পারবেনা, প্রিয়ন্তী আদুরে গলায় অভিকে বললো।
না নাহ তুই কলেজ থেকে কোথাও যেতে পারবিনা, আমি এইভাবে একা তোকে যেতে দেবোনা।
ভাইয়া আমি এখন সেই ছোটটি নেয়, বড় হয়েছি।
বড় হয়েছিস এইটাই সমস্যা, এই বিষয়ে আর বলবিনা।
প্রিয়ন্তী গাল ফুলিয়ে বসে রইল দেখে অনামিকা বললো, অভি ও এখন বড় হয়েছে, কেনো বাধা দিচ্ছো, যেতে দাও না।
অনামিকা প্লিজ ডোন্ট আরগিউ উইত মি, তুমি যানোনা এই দেশে এখন কোনো মেয়েই সেইফ না, এখন মানুষ আর মানুষ নেই, মেয়ে দেখলেই হামলে পড়ে।
আমি কিছু শুনেছি বাট আই থিনক এইসব এতো বেশী না, অনামিকা সাফাই গাইল।
নো নো নো, ডু ইউ নো বাংলাদেশে এই মুহুর্তে রেইপ, খুন এগুলো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার আর আমার বোনকে আমি এই ভাবে একা পাঠাতে পারবোনা।
ঠিক আছে ভাইয়া তোমার চিন্তা করতে হবেনা, আমি যাবোনা, প্রিয়ন্তী বললো।
গুড, এর চাইতে তুই চাইলে বিদেশ ঘুরে আই।
না যাওয়া লাগবেনা।
কলেজের ভিতরে গিয়ে অভি প্রিয়ন্তীকে নামিয়ে দিয়ে অনামিকার অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল।
অভি তুমি কি আমার উপরে রেগে আছো?
না তোমার উপরে রাগ করার কি আছে, তুমি এই দেশে কাজে এসেছো, তোমার তো এইসব জানার কথা না।
হাঁ ঠিক বলেছো, আচ্ছা আজ তুমি আমার অফিসে আসবে, আসলে খুব খুশী হবো।
না আজ না, আজ অনেক কাজ, তুমি বাসায় চলে যেও, পরে দেখা হবে।

ব্রেকফাস্ট করতে অবণী যখন ডাইনিং টেবিলে এলো তখন শ্রাবণী আর ফাল্গুনী বেরিয়ে গেছে, অবণী ব্রেডে জেম মেখে কামড় দিল আর ওর মা হাত বাড়িয়ে জুসের গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, কিরে আজ অফিসে যাচ্ছিস বুঝি?
ছোট এক মাথা জাঁকিয়ে জবাব দিলো অবণী।
ভালো হয়েছে মা, যা যা অফিসে গেলে মন হাল্কা থাকবে, চায়ের কাপ তুলে নিয়ে অবণীর বাবা বললেন।
বাবা, একটা কথা বলতে চাইছিলাম।
বল মা, কিছু লাগবে?
না বাবা, বলতে চাইছিলাম আমি আর চাকরী করবোনা।
কি সব বলছিস, পাগল হয়ে গেলি নাকি, অবণীর মা বলে উঠলেন, এতো ভালো চাকরীটা করবিনা?
মা আমি কানাডাতেই চাকরী করবো।
তার মানে তুই ওখানে সেটেল্ড হয়ে যাবি?
হাঁ মা।
তুই এই সিদ্ধান্ত নিলি আমাদের জানালিনা, অবণীর বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
অবণী চুপ করে রইল।
এইটাই তোর শেষ ডিসিশন?
জি বাবা।
তুই বড় হয়েছিস তোর ডিসিশনের উপর আমাদের কিছু বলার নেই কিন্তু হটাৎ এই চিন্তা ভাবনা কেন জানতে পারি?
বাবা তোমরা চিন্তা করোনা, আমি উঠি, অফিসে দেরী হচ্ছে।

এইটা কি করলো মেয়েটা, অবণীর বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন অবণীর মা, তুমি বাধা দিলেনা কেন?
তুমি যানো ও খুব জেদি মেয়ে, ওকে কিছু বলে লাভ নেই।
তাই বলে মেয়েটার যা খুশী তাই করবে, এতো ভালো চাকরী ছেড়ে দিয়ে কেউ কি বিদেশে চলে যায়?
বুঝিনা তোমার মেয়ের ভাবসাব।
আচ্ছা অভির সাথে কিছু হয়নি তো?
না না অভির সাথে কি হবে আর হলেও আমরা জানতাম, আসলে তোমার মেয়ের মাথায় ভূত চেপেছে ও বিদেশে চলে যাবে।
আমার কিন্তু কিছুই ঢুকছেনা।
আর ঢুকিয়েও লাভ নেই, তোমার আবার প্রেশার উঠে যাবে, তুমি তোমার কাজে হাত দাও।
ধ্যাত তোমার সব ফালতু কথাবার্তা, মেয়ে এতো ভালো বেতনের চাকরী ছেড়ে দিয়ে বিদেশে চলে যাবে একি মেনে নেওয়া যায়?
তা তুমি কি করতে চাও বলো?
ও আসলে তুমি ওকে ধরবে আর বুঝাবে যেন চাকরী না ছাড়ে।
ঠিক আছে চেষ্টা করবো কিন্তু ও যথেষ্ট বড় হয়েছে, ওকে ওর মতোই চলতে দেওয়া উচিত, বলেই অবণীর বাবা উঠে নিজ রুমে চলে গেলেন আর অবণীর মা গজগজ করতে করতে কিচেনের উদ্দেশ্যে গেলেন।

অবণী এসেছে, অফিসে পোঁছেই জিজ্ঞেস করলো অভি।
না অভি স্যার, উনি এখনো আসেননি।
ঠিক আছে, অভি নিজ চেম্বারের উদ্দেছে চলে গেল, অফিসে প্রবেশ করেই কল দিলো অবণীকে, অবণীই রিসিভ করলো।
সালামালেকুম স্যার।
কেমন আছো তুমি?
জি ভালো।
অফিসে এলেনা আজ?
জি আসছি।
ওকে আসো বলেই ফোন কেটে দিলো অভি।
ঘন্টা খানেক পর অবণী অফিসে এসেই নিজ রুমে চলে গেল, ওখান থেকে কিছু ফাইল পত্র নিয়ে জিএমের রুমের দরজায় গিয়ে নক করে ভিতরে প্রবেশ করলো।
কি অবণী ম্যাডাম, বেশ কয়েকদিন এবসেন্ট শরীর ভালো তো, জিএম জিজ্ঞেস করলো।
জি স্যার একটু অসুস্থ ছিলাম।
হুম, তা বলুন শুনি।
স্যার আমি চাকরি আর করবোনা, তাই চাইছিলাম আমার কাজ গুলো বুঝিয়ে দিতে।
অবণীর কথা শুনে জিএম অবাক হয়ে গেল, জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার বলুন তো, কেন চাকরি ছাড়বেন, কোনো সমস্যা?
জি পারসোনাল প্রবলেম।
দেখুন মাত্র তো জয়েন করলেন, হয়ত ৭/৮ মাস হচ্ছে এত তাড়াতাড়ি চাকরি ছেড়ে দেওয়াটা কি ঠিক হবে?
অবণী চুপ করে রইল।
অভি স্যারকে বলেছেন?
জি না।
তাহলে আপনি আগে স্যারের সাথে কথা বলুন উনি রুমেই আছেন, যান দেখা করুন।

অবণী অভির চেম্বারে নক করে প্রবেশ করলে অভি বসতে বললো, কেমন আছো?
জি ভালো।
তা হঠাৎ বাইরে যাওয়ার প্ল্যান, কতদিন থাকবে গেলে?
জি আর আসবোনা।
একটা ধাক্কা খেলো অভি তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেনো জানতে পারি?
অবণী চুপ করে রইল।
কি কিছু বলবেনা?
স্যার আমার কাজ গুলো বুঝিয়ে দিতে চাইছি।
ওয়াট, ওয়াট ডু ইউ মিন অবণী?
একটা এনভেলপ এগিয়ে দিয়ে বললো, এইটা আমার রেজিগ্নেশন।
যেন তড়িতাহত হলো অভি, অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
স্যার আমি উঠি, কাজ গুলো বুঝিয়ে দিয়ে যায়।
বসো, আমার কথা শুনো, তোমার সমস্যাটা কি জানতে পারি, তুমি কানাডা যাবে যাও, মাস খানেক থেকে আসো, কিন্তু চাকরী ছাড়বে কেন?
জি, আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে ওখানে বললো অবণী।
বিয়ে?
জি স্যার।
থমকে গেলো অভি তারপর বললো, ঠিক আছে তাহলে আর কি বলার আছে।
আমি আসি স্যার বলেই অবণী উঠে চলে গেলো আর অভি বজ্রাহতের মতো চেয়ে রইল অবণীর গমনপথের দিকে।

 

________  চলবে

ছবিঃ Google

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ