ভালোবাসি তোমায় (১২তম খন্ড)

ইঞ্জা ২৯ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার, ১১:৩৯:১৮অপরাহ্ন গল্প ১৬ মন্তব্য

images (8)ম্যাম এর সাথে নিশ্চয় পরিচয় হয়েছে বাবা আর ইনি অভি স্যার আর উনার বোন প্রিয়ন্তী, অবণী ওর বাবার সাথে অভিদের পরিচয় করিয়ে দিলো। অবণীর মা বললো, কিসের ম্যাম, তোর ম্যাম উনার অফিসে, ওতো আমার প্রিয় বান্ধবী, এক সাথে স্কুল পাশ করার পর তোর নানু ট্রান্সফার হয় খুলনায় আর তাই আর দেখা হয়নি, জানিস যেদিন আমরা চলে যাচ্ছিলাম সেইদিন আমি আর তোর কুমু আন্টি, মানে তোর ম্যাম একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না আর এরপরে এই পেলাম। অবণী, অভি আর বাকিরা হা করে চেয়ে আছে।
তা বল তুই কেমন আছিস, মাশা আল্লাহ্‌ ছেলে মেয়ে তো অনেক সুন্দর, আর কোন বাচ্চা আছে? অবণীর মা এক নিশ্বাসে জিজ্ঞেস করলো
আসতে আসতে, তুই সব প্রশ্ন একবারে করলে কেমনে হবে? আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি, এই দুজনই আমার মানিক।
অবণী যা তুই কিচেনে, ওদের জন্য কিছু চা নাস্তার ন্যবস্থা কর, খেয়েছিস তোরা, ভাত দিতে বলি।
না না কিছু লাগবেনা, আমরা খেয়েই বেড়িয়েছি।
অবণী চলে গেল কিচেনে।
আমার না বিশ্বাস হচ্ছেনা, চিন্তাই করতে পারিনি তোর সাথে আবার দেখা হবে, অবণীর মা বলল।

অবণী চায়ের ব্যবস্থা করে এসে বসলো সবার মাঝে, কাজের লোক চা আর কিছু হাল্কা নাস্তা দিয়ে গেলো। অবণী সবাইকে চা এর কাপ এগিয়ে দিতে লাগলো।
তা বাবা তোমাদের কাজকর্ম কেমন চলছে? অবণীর বাবা জিজ্ঞেস করলো।
জি আনকেল ভালো।
তোমার কাছে আমিই যাওয়ার কথা ছিল।
কেন আনকেল, কোনো দরকার ছিল কিছুর, অভি জিজ্ঞেস করলো।
না না কোনো দরকারে না, শুধু চেয়েছিলাম তোমাকে ধন্যবাদ দেবো।
না না আনকেল কিসের ধন্যবাদ, অবণী তো নিজ যোগ্যতাতেই চাকরি পেয়েছে।
না বাবা অবণীর চাকরির বিষয় না, অন্য কারণে তোমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ছিল।
অভি অবাক হলো উনার কথা শুনে, জি আমি বুঝলাম না।
তোমাকে আসলে ধন্যবাদ টুকুও যদি না দিই তাহলে তোমাকে অসম্মান করা হতো বাবা, আমরা সবাই তোমার কাছে চির ঋণী হয়ে আছি কারণ গত সাত মাস আগে যদি তুমি আমার মেয়েকে না বাঁচাতে তাহলে আজ আমার এই মা আমাদের সামনে থাকতে পারতোনা, অবণীকে দেখি বলতে বলতে হু হু করে কেঁদে দিলেন।
অভি চমকে উঠে অবণীর দিকে তাকালো, অবণী তুমি কি আসলেই সেই মেয়েটি এই জিজ্ঞাসায় চেয়ে রইল আর অবণী মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে রইল।
অভির মা, প্রিয়ন্তী অবাক হয়ে ওদের কথা শুনছে তখন অবণীর মা তাদের বুঝিয়ে বলল।
অভি যেন ঘোরের মধ্যে ছিল, ঘোর কাটিয়ে বলল, আনকেল আমি জানতামনা মেয়েটিই অবণী আর সেই সময় আমি কাকে হেল্প করছি, কেন করছি সেটা ভাবিনি আর আপনারা আমার কাছে ঋণী হওয়ার মতই আমি কিছু করিনি, আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি।
অবণী তুমি এতোদিন আমার সাথে আছো কখনো তো বলনি এই কথা, তোমার কি বলা উচিত ছিলোনা?
অবণী চুপ করে রইল।

রাত দেড়টার সময় অভিরা বিদায় নিয়ে বের হয়ে এলো গাড়ী বারান্দায়, অবণীর ঘরের সবাই এলো বিদায় দিতে
যেহেতু তুমি আগে বলোনি তাই তুমি চিটাগাং থেকে আসো তারপর তোমার বিচার হবে, হেসে বলল অভি, অবণী হেসে তাদের বিদায় দিলো।
কি মা তুমি এখানে এসেও বান্ধবী পেয়ে গেলে, হেসে বললো প্রিয়ন্তী।
তোরা জানিসনা, হাসিকে হারিয়ে আমি অনেকদিন একা একা রুমে বসে কাঁদতাম, অভির মা বলল।
মা উনারা বেশ প্রাণবন্ত মানুষ, কেমন আদর যত্ন করলো দেখলে, প্রিয়ন্তী বলল।
তোর আন্টিটা ছোট বেলা থেকেই এমন প্রাণোচ্ছল, আসলে আল্লাহ্‌ টেনে এনেছে আমাদের নাহলে আমার বন্ধুটা যে ঢাকাতেই থাকে বুঝতে পারতামনা, ওকে মাঝে মাঝে বেশ মিস করতাম।

এক সপ্তাহ পর অবণী ফিরে এলো চট্টগ্রাম থেকে, যেদিন এলো পরের দিন মিঃ এন্ড মিসেস নরসিমাকে হোটেল থেকে উঠিয়ে নিয়ে এলো অফিসে, আগেরদিন সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আর অফিসে আসা হয়নি, হাসি মুখে অভির চেম্বারে নক করে ভিতরে প্রবেশ করলো। অভি আর জিএম বসা রুমে, ওরা উঠে রিসিভ করলো গেষ্টদের, অবণীকে বললো এগ্রিমেন্ট রিনিউ করার জন্য টাইপ করে রাখতে বলেছিলাম টাইপিস্টকে, নিয়ে এসো।
তা দিদি দাদু বাড়ী গিয়েছিলেন, সবার সাথে দেখা হয়েছে?
জি দাদা, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, দাদুর বাড়ী তো গ্রামে, সবাইকে প্রথম দেখলাম, উনারাও খুব খুশি আমাকে পেয়ে, ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বললেন মিসেস নরসিমা।
গুড, তা মিঃ নরসিমা আপনাদের নেক্সট প্লান কি?
আজকে যদি এগ্রিমেন্ট সাইন হয়ে যায় তাহলে আজ রাতেই চলে যাবো, টিকেট কনফার্ম করে দিয়েছেন মিস অবণী।
অবণী এগ্রিমেন্টের কাগজ নিয়ে এলে দুপক্ষই সাইন করে হেন্ডসেইক করলো।
তাহলে আজ আমরা এক সাথে লাঞ্চ করি মিঃ নরসিমা, how about some Srilankan food?
ওকে তাহলে তো ভালোই হয়, মিঃ নরসিমা বললেন, মিস অবণী Can you join with us?
অবণী বলার আগেই অভি বললো, সিউর মিস অবণীও আসবেন আমাদের সাথে, কি বলো অবণী?
জি, তাহলে আপনারা বসুন আমি আমার কাজ গুলোর অবস্থা একটু দেখে আসি।

দুপুরে অভি, অবণী মিঃ এন্ড মিসেস নরসিমাকে নিয়ে রেডিসনে গেলো লাঞ্চের জন্য, লাঞ্চ করে উনাদেরকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। অভি স্যার আপনার রিপোর্ট পেয়েছেন?
ওহ হাঁ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম,তাহলে চল একেবারে টেস্ট রিপোর্ট উঠিয়ে নিই, কি বল।
ঠিক আছে।
অভি গাড়ী ছুটালো।
দুজনেই নামলো, অভি রিপোর্ট ডেলিভারির সেকশনের উদ্দেশ্যে হাটতে লাগলো, ওখানে গিয়ে ওর মা আআর ওর ডেলিভারি স্লিপ দিয়ে দুজনেই অপেক্ষা করতে লাগলো, একটু পর ডাক এলে ওর মার রিপোর্ট গুলা দিয়ে বললো, ডক্টর শামসুল আলমের কাছে আপনার রিপোর্ট আপনাকে উনি দেখা করতে বলেছেন। অভি ঘড়ি দেখে ওয়েটিং চেয়ারে গিয়ে বসলো, বসেই সেলফোন বের করে ডাক্তার সাহেবকে কল দিলো, সালামালেকুম, ডক্টর সাহেব আমি অভি বলছি, ওকে আমি আসছি। ডাক্তার সাহেব মাত্র এসেছেন, চলো উনার চেম্বারে যায়। দুজনেই হেঁটে লিফটের সামনে এসে দাঁড়াল, লিফট নিচে নেমে আসলে দুজনেই উঠে এলো, অভি লিফটের ৭ চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।

চেম্বারের সামিনে এসে দরজায় নক করলো, প্লিজ কাম ইন শুনে ভিতরে প্রবেশ করলো। সালাম দিয়ে দুজনেই বসলো, আমার রিপোর্ট আপনার কাছে, এনিথিং সিরিয়াস? অভি জিজ্ঞেস করলো।
না না তেমন কিছুইনা, আপনার এই রিপোর্টে কিছুই নেই কিন্তু আমি চাই আপনার আরেকটু থরো চেকআপ করতে বলেই উনার প্যাডে কিছু চেকআপের কথা লিখে দিলেন, এগুলো আপনি আজই দিয়ে দিন, আর আপনার আম্মার হেলথ একদম ফিট এন্ড ফাইন।
এতোগুলা চেকআপ দিলেন, চিন্তিত মনে বললো অভি।
ইয়াং ম্যান নাথিং সিরিয়াস জাস্ট রুটিন চেকআপ।
ওকে দিয়ে যাচ্ছি, অভি বললো।
অবণীকে নিয়ে প্যাথলজি ডিপার্টমেন্টে গিয়ে অবণীকে বসিয়ে ভিতরে গেল, ব্লাড, ইউরিন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কবে রিপোর্ট পাবো?
এক সপ্তাহ পর।
অভি বের হয়ে আসলে অবণী জিজ্ঞেস করলো, কি চেকআপ করতে দিলো?
এই কিছু ব্লাড টাল্ড নিলো আরকি, চলো সন্ধ্যা হতে চললো আর অফিসে গিয়ে লাভ নেই, তোমাকে তোমার বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমি বাসায় চলে যাবো।
দরকার নেই আমি সিএনজি নিয়ে চলে যাবো।
হু তুমি সিএনজিতে যাও আর এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পড়ে থাকো নাহ, খোঁচা দিলো অভি।
অবণী দাঁত সব বের করে একটা হাসি দিলো তারপর বললো, ওকে তাহলে আপনার কাছে আরো ঋণী হওয়ার চাইতে আপনিই আমাকে ড্রপ করাটা বেটার তারপর নিচু স্বরে স্বগতোক্তি করলো, যেন মানুষ আর সিএনজিতে চড়েনা, প্রতদিন সব সিএনজি এক্সিডেন্ট করে।
কিছু বলছো মনে হয়?
না না কিছুনা, হেসে বললো অবণী।

____________ চলবে।

ছবিঃ Google.

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ