ভালোবাসি তোমায় (১১তম খন্ড)

ইঞ্জা ২৮ জুলাই ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ১১:২১:৩২অপরাহ্ন গল্প ১৩ মন্তব্য

সকালে অভি অফিসে এলো দেরীতে সাথে অভির মা, অভি ও অভির মাকে সবাই অভিবাদন দিলে অভির মা সবার খবরাখবর জিজ্ঞেস করতে লাগলেন আর শেষে অভির চেম্বারে প্রবেশ করলেন অভির সাথে। অভি মাকে নিয়ে নিজ চেয়ারে বসিয়ে দিলো তারপর জিএম আর অবণীকে ডেকে পাঠালো। অবণীর রুম থেকে যেহেতু বাইরের ডিপার্টমেন্ট দেখা যায়না, অভির রুমে প্রবেশ করে একটু থতমত খেয়ে গেলো একজন মহিলাকে অভির চেয়ারে বসে থাকতে দেখে, সবাইকে সালাম জানিয়ে অভিকে বললো, অভি স্যার আমাকে ডেকেছেন?
অবণী ইনি আমার মা আর এই কোম্পানির চেয়ারপার্সন
অবণী হাল্কা হেসে সালাম দিলো আবার অভির মাকে।
বসো, অভির মা বললেন অবণীকে।
জি ম্যাম বলে অবণী অভির পাশের খালি চেয়ারে বসলো।
তোমার পুরা নাম কি অবণী?
জি ম্যাম জেসমিন সুলতানা।
জিএম বললো, ম্যাডাম অনেকদিন পরে এলেন এইবার?
মা কি আর আসে, মার কিছু মেডিকেল চেকআপের দরকার ছিলো, তাই মাকে নিয়ে এস্কোয়েরে গিয়েছিলাম আর আসার পথে নিয়ে এলাম কারণ চেয়ারপার্সন যদি অফিসে না আসে তাহলে অফিস কিভাবে চলে, অভি নিজেই জবাব দিলো, সবাই হেসে দিলো অবণী ছাড়া।
আর আপনার চেকআপ গুলো করিয়েছেন?
হাঁ দিয়ে এসেছি।
অভির মা অবণীর দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
দুপুরের লাঞ্চ অভির মা অভি, অবণী আর জিএমকে নিয়ে সারলেন অফিস ক্যান্টিনে তারপর যাওয়ার আগে সবার কাছ থেকে বিদায় নিলেন, শেষে অবণীর কাছে এসে বিদায় নিলেন সাথে এয়ো বললেন, তুমি তো এখন অভির সারাক্ষনের সঙ্গি, তুমি ওকে খেয়াল রেখো।

অভির মা চলে গেলে অবণী অভির চেম্বারে নক করে ভিতরে প্রবেশ করলো, অভি স্যার একটা মেসেজ আছে।
কি মেসেজ।
কলম্বো থেকে মিঃ নরসিমা আসছেন আগামী সপ্তাহে, সাথে উনার ওয়াইফও আসবেন।
হুম, তাহলে উনাদের জন্য লা ভিঞ্চিতে রুম রিজার্ভেশন করে দাও আর হাঁ দাঁড়াও বলেই নিজের ব্রিফকেস থেকে দুইটা রেপিং করা বাক্স এগিয়ে দিলো, এগুলা তোমার বোনদের দিও।
কি এগুলা?
গতবার আমেরিকা থেকে আসার সময় কিছু চকলেট এনেছিলাম তার কিছু ওদের জন্য।
দরকার ছিলোনা।
দরকার আছে কি নেই আমি বুঝবো, তোমার বুঝার দরকার নেই, আর দরকার যখন ছিলো না তুমি ওখান থেকে চকোলেট ছুঁয়োনা, হেসে বললো অভি।
আমি সব খেয়ে ফেলবো বলেই রিনঝিন শব্দে হেসে দিলো অবণী।

সন্ধ্যার সময় অফিসের গাড়ী অবণীকে নামিয়ে দিয়ে গেলো, অভির নির্দেশ এখন থেকে অবণীকে অফিসের গাড়ী রেগুলার পিক এন্ড ড্রপ করবে। ড্রয়িং রুমে অবণীর বাবা মা সহ বোনরা বসে ছিলো, অবণী দুবোনকেই অভির দেওয়া বাক্সগুলো দিয়ে বললো অভি স্যার দিয়েছে তোদের জন্য আর এয়ো বলেছে দুজন থেকেই আমার ভাগ বুঝে নিতে। দুবোন এক সাথেই ভেংচি কেটে বাক্স নিয়ে দৌড় দিলো। অবণী বাবা মার সাথে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলো এরপর এসে নিজ রুমে ঢুকলো আর ঢুকেই দেখে দুই বোন তারিয়ে তারিয়ে চকলেট খাচ্ছে। অবণী একটা চকোলেট চুজ করে রেপ খুলে মুখে চালান করে দিলো।
তা আপু, তুই কি যাদু করেছিস অভি ভাইকে যে চকোলেট পাঠালো, ফাল্গুনীর প্রশ্ন।
দূর বাদর, আমি কি যাদু করবো?
তিন বোনই এক সাথে হেসে উঠলো।
যা তোরা পড়তে যা আমি একটু রেস্ট করি, দুবোন উঠে চলে গেল পড়ার রুমে আর অবণী ড্রেস চেইঞ্জ করে ওয়াস রুমে গেল।

এক সপ্তাহ পরঃ
অবণী নিজেই গেল কলম্বোর এজেন্টকে রিসিভ করতে, তাদের নিয়ে সোজা অফিসে এসে অভির চেম্বারের দরজা নক করে ভিতরে নিয়ে গেল।
হ্যালো মিঃ এন্ড মিসেস নরসিমা, হাউ আর ইউ বলে হেন্ড সেইক করে বসতে বললো।
তারপর ইংরেজিতে কথা বলতে লাগলো, সো বলুন কি খবর আপনাদের?
নরসিমাঃ জি আমরা এসেছি একটা গুড নিউজ শুনে, আপনারা তিনটা শীপ নিয়ে আসছেন?
হুম ঠিকই শুনেছেন, এতে আপনাদেরও বিজনেস বাড়বে, অভি বলল।
হাঁ আমরা তাই এসেছি, আমাদের এগ্রিমেন্ট শেষ হচ্ছে তা রিনিউ করবো আর সাথে আমার ওয়াইফের অরিজিনালিটি বাংলাদেশি, কিন্তু কখনো আসেনি কারণ জম্ম থেকেই ওখানে। কি বাংলায় কিছু বলো উনাদেরকে, বউকে বললো।
দাদা আমি চিটাগাংয়ের মেয়ে, ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো, ওকে ধরে ছিলাম এইবার দাদু বাড়ী দেখে আসবো।
নো প্রবলেম দিদি, আপনি অবণীর সঙ্গে যখন খুশি চট্টগ্রাম ঘুরে আসুন, কি অবণী পারবে তো?
হুম পারবো, কোনো সমস্যা হবেনা, অবণী হেসে জবাব দিলো।
মিসেস নরসিমা উনার হাসবেন্ডকে হেসে হেসে জানালো সিংহলী ভাষায়।
তাহলে আপনারা আজ রেস্ট করুন হোটেলে গিয়ে, রাতে আমার বাসায় ডিনারের আমন্ত্রণ আপনাদের, অবণী আপনাদের পিক করে নিয়ে আসবেন।

রাতে অবণী মিঃ এন্ড মিসেসকে হোটেল থেকে পিক করে অভির বাসায় যখন পোঁছাল তখন প্রায় রাত ৮টা। অভি, অভির মা আর প্রিয়ন্তী রিসিভ করলো তাদের, তাদেরকে নিয়ে সবাই বসলো অভিদের ড্রয়িং রুমে, প্রিয়ন্তী অবণীকে পেয়ে বেজায় খুশি, ভাইয়ের পারমিশন নিয়ে অবণীকে নিয়ে গেলো নিজ রুমে।
তোমাদের বাড়ীটি বেশ সুন্দর, অবণী বলল।
বাবা বানিয়ে ছিলেন খুব শখ করে।
আনকেল খুব সৌখিন ছিলেন বুঝা যায়।
তা আপু, এখন বলেন কেমন আছেন?
হুম ভালো।
আপনাকে দেখার পর থেকে আপনাকে এতো ভালো লেগেছে যেন আপনি অনেক আপন কেউ, আপনার হাসিটি বেশ চমৎকার, মন ছুঁয়ে যায়।
তাই, হেসে প্রশ্ন করলো অবণী।
আসলেই আপু আপনি বেশ মিষ্টি।
তা তোমাদের বাড়ীতে কে কে থাকেন?
আমি, মা, ভাইয়া আর কিছু কাজের লোক।
এর মধ্যে কাজের লোক এসে বললো, খাবার দেওয়া হয়েছে, ভাইয়া ডাকছে, দুজনে নিচে নেমে এলে সবাই মিলে খাবার টেবিলে খেতে বসলো,খেতে খেতে টুকটাক কথা বলতে লাগলো, অভির মা সবার পাতে খাবার তুলে দিতে লাগলো।

খাবার শেষে সবাই বসলো ড্রয়িং রুমে, মিঃ নরসিমা বললো অভিকে যে ওর ওয়াইফ কাল যেতে চাইছে চট্টগ্রাম। অভি অবণীর দিকে তাকালে অবণী সম্মতি দিলো।
তাহলে তো তোমাদের গাড়ী লাগবে, কয়টায় বেরুতে চাও অবণী?
সকাল সকাল হলে ভালো হয়, ৭টায় হলে সমস্যা হবে নাতো মিসেস নরসিমা?
সিতারা, আমাকে সিতারা নামেই ডাকলে আমি খুশি হবো।
ঠিক আছে, তাহলে কাল সকাল ৭টায় কি ঠিক আছে?
ওকে আমরা দুজনেই রেডি থাকবো আর তুমি ব্রেকফাস্ট আমাদের সাথে করবে।
ওকে নো প্রবলেম।
অভি অনেক রাত হয়ে গেছে এক কাজ কর, তোর জীপ বের করে নে, উনাদেরকে ড্রপ করে অবণীকে নামিয়ে দিয়ে আসবি, অভির মা বললো।
তাহলে মা এক কাজ করি, উনাদের ড্রাইভার দিয়ে পাঠিয়ে দিই আর আমরা তিনজন গিয়ে অবণীকে ড্রপ করে খালাম্মার বাসায় গিয়ে উনাকে দেখে আসি, উনি তো অসুস্থ নাকি।
মিঃ এন্ড মিসেস নরসিমাকে ড্রাইভারের সাথে পাঠিয়ে দিয়ে অভি নিজের বিএমডাব্লু এসইউভি নিয়ে বের হলো অবণীকে ড্রপ করতে, সাথে মা আর প্রিয়ন্তী।

বাসার দারোয়ান গেট খুলে দিলে গাড়ী ভিতরে নিয়ে গেল অভি, অবণী গাড়ী থেকে নেমে বললো, ম্যাম আসুন ভিতরে, প্রিয়ন্তী, অভি স্যার আসুন। এর মধ্যে অবণীর মা দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন। অভির মা অবণীর মার দিকে তাকিয়ে আছেন, তারপর বললো দাঁড়া আমি আসছি।
কই যাও তুমি, চলো অনেক রাত হয়েছে প্রায় বারটা।
উনাকে মনে হয় আমি চিনি, আসছি বলে নেমে গেলেন, সাথে অবণীও গেল।
অভির মা অবণীর মার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নাম কি হাসি? অবণী হা করে তাকিয়ে রইলো।
অবণীর মা হেসে বললো, তুই আবার কবে থেকে আপনি বলা শিখলি?
আরে হাসি তুই বলেই চিৎকার দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো, অভির মা অবণীর দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে বললো, তোমার মা?
অবণী হেসে মাথা নাড়ল।
আমরা দুজন কিন্তু ছোটবেলার বান্ধবী, বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে রাখা অবস্থায় অবণীর মা অবণীকে বললো।
চল চল ভিতরে চল, অবণী ওদের নিয়ে আয় ভিতরে।
অভি আর প্রিয়ন্তী এতক্ষন থ মেরে দেখছিলো, অবণী আসলে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে?
শুনলাম দুজনেই নাকি ছোটবেলার বান্ধবী।
এই সেরেছে, অভি বললো।
অভি স্যার আসুন ভিতরে, অভি আর কি করবে নেমে গেল গাড়ী থেকে প্রিয়ন্তীকে নিয়ে।

________ চলবে।
ছবিঃ google.

0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ