বৌ দিবস

রোকসানা খন্দকার রুকু ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, শুক্রবার, ০৬:১২:৪৭অপরাহ্ন রম্য ২ মন্তব্য

এক্সকিউজ মিঃ আন্টি, একটু যেতে দিন বড্ড দেরী হয়ে গেছে। খুব তাড়া নিয়ে পাশ কাটিয়ে বিশ-বাইশ বছরের একটি ছেলে গায়ে প্রায় ধাক্কা লেগে পার হয়ে গেল। তমাল এজন্যই বাইরে আসা অপছন্দ করে।

-হলো তো এবার? তোমার নাকি বাইরে বের না হলে হচ্ছিল ই না। এনিভারসেরী বাইরে এসেই পালন করতে হবে এমন কি কোন রুলস আছে?

-হলো তো এবার, মানে কি? আমি আর কোথায় পুরো রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম যে এভাবে বলছে। আর আমি আসতেই পারি। তোমার সাথে আমার ঝগড়া করার মোটেও মুড নেই। প্লিজ!

ধরলা নদীর পাড়ে খরকুটোর মতো ছোট্ট এই রেষ্টুরেন্টে একদল ছেলেমেয়ে তাদের বন্ধুর থার্ড এনিভারসেরী পালন করছে। বেশ জমেছে তাদের মজা ও আড্ডা। দেখতে কৌতুহল হলো। কিছুটা আগ্রহ, কিছুটা মজা করার জন্য তাদের কাছাকাছি বসলাম। ছেলেমেয়েরা সবগুলো জোড়ায় জোড়ায়। খোলা আকাশ, চাঁদের ঝিলিক, নদীর চিকিমিকি পানি। রেষ্টুরেন্টের অল্প আলো সত্যিই মনোমুগ্ধকর ও মন ভরে যাবার মতো পরিবেশ।

তবুও তমালের কথায় আমার গা জ্বলছিল! কোথাও যেতে চাইলেই তার সমস্যা, বাইরে নাকি পরিবেশ নেই তাই যেতে দেবে না। আবার আলাদা করে আমি বন্ধুদের সাথে এনজয় করবো এটাও সে নিতে পারে না। বিয়েটা পুরুষকে স্বাধীনতা দেয় ঠিকই মেয়েদের স্বাধীনতা নষ্ট করে।

বিয়ের পর তুমি নতুন বউ, যেখানে সেখানে যাওয়া ঠিক নয় বলে বাচ্চার মা হয়ে যেতে হয়। এরপর বাচ্চাকে সময় দিতে দিতে মধ্যবয়স। তখন দিব্যি শুনতে হয় মধ্যবয়সী নারীর আর কি? সংসার সাথে পারলে আল্লাহ- খোদার নাম। কি অদ্ভূত পরিবর্তন, সকল সুবিধায় নারী বন্দি।

তমালকে খোঁচা দেবার জন্য বলেই ফেললাম, বাহ্ দারুন জমেছে! এরা কতো রোমান্টিক!

তমালও ঝটপট উত্তর দিলো, রোমান্টিক না ছাই! কাজ নেই কর্ম নেই, বাবা-মা মায়ের টাকায় ফুটানি মারায়। আর এদের কিসের এনিভারসেরী; অবশ্যই সব ভূয়া। এই হলো, আমার পার্টনার অলওয়োজ সন্দেহবাতিক মানুষ। তার ধারনা তাদের এসব অবশ্যই ফেইক। এতো ছোট ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়,যত্তোসব।

বছর বছর পহেলা ফাল্গুন যায়, ভ্যালেন্টাইন যায়, এরকম হাজারো অকেশন যায়, কাজের অজুহাতে তিনি আমাকে সময় দেননা। দূর্ভাগ্য বশত আজ ভুলে গিয়ে এনিভারসেরীর দিন আমার পাল্লায় পরে গেছেন। তাই আর কাজের অজুহাত দিতে পারেননি। জন সমাগম তার পছন্দ না তবুও তিনি বাধ্য হয়ে এসেছেন। না হলে বসে বসে টিভিতে খেলা ছিলো সেটা দেখতেন।

এককাপ কফির জন্য অযথাই আসার কোন মানে হয়? আর আমরা যে খোলা হাওয়া-বাতাস নেই, তাতে জীবনীশক্তি বাড়ে। কিংবা মন সতেজ হয় এসবে তার মোটেও বিলিভ নেই।

এগুলোর সবটাই তাদের কাছে যত্তসব। তর্কের এক পর্যায়ে তার সাথে আমার বাজি হয়ে গেল। এবার নেমে গেলাম গোয়েন্দাগিরিতে। যে কোন গোয়েন্দাগিরিতে একটু সময় লেগেই যায়। সো এখানে ও তাই হলো। অবশেষে জানা গেল আসলে এখানকার কেউই বিবাহিত না। আর যাদের আজ থার্ড এনিভারসেরী। আসলে সেটা তাদের ‘থার্ড প্রপোজাল’ এনিভারেরী॥

কান গরম হয়ে গেল। তের বছর ধরে নুনে- পানি একাকার করে সংসার করছি। ভ্যালেন্টাইন ডে- তে বেড়োতে পারিনি বলে আজ বেড়িয়েছি নিজেকে হ্যাপি কাপল তকমা লাগানোর আশায়। তাতে দেখছি একেবারেই গুঁড়ে বালি।এনিভারসেরী অন্যদের দখলে, যেখানে বিয়ে নামক কোন গন্ধই নেই।

মন খারাপ করে বাসায় ফিরতে হলো। আর সাথের জন আমার হেরে যাওয়ায় বেজায় আনন্দিত এবং এটা নিয়ে অবশ্যই অনেকদিন মজা নেবেন। এতো ছেলে মানুষদের মতো বাইরে না গেলে, না ঘুরলে হয় না। কোথাও কি কোন পরিবেশ আছে, না কিছু বাকি আছে!

কথা সত্যি! এই হচ্ছে আজকাল। কচি কচি ছেলেমেয়েদের দখলে এখন সব। তারা রীতিমতো ফাষ্ট কিস এনিভারসেরী, ফাষ্ট হাগ এনিভারসেরী, ফাষ্ট ডেট এনিভারসেরী, ফাস্ট কমিটমেন্ট এনিভারসেরী, ফাস্ট চোখাচোখি এনিভারসেরী, ফাষ্ট হাগু মুতু এনিভারসেরী সব দখলে নিয়ে নিয়েছে। ও বাই দ্যা ওয়ে, তারা ফাষ্ট—-এনিভারসেরীও পালন করে।

বিয়ে করে চরম ভুল করেছি বলে মনে হল। সেই দু:খে গোল হয়ে বারান্দা থেকে নড়ছি না। ওদিকে ভেতর থেকে তিনি ডেকেই চলেছেন। কারণ তার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে। পুরুষ মানুষের তিনটি জিনিসই কেবল পছন্দ-

ভালো খাবার

সেক্স

নীরবতা/ঘুম॥

মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আরে বিয়ে গোল্লায় যাক। আজ উঠবোই না। শুধু রান্না করে খাওয়াতে কি বিয়ে করেছি।

তমাল বরাবর ইন্টেলিজেন্ট। জানে কিভাবে গলাতে হবে। আমি প্রচন্ড রেগে গেলে সে বৌ, সোনা বৌ ডাকে। আজও সে প্রমিস করলো- সোনা বৌ যাও তোমাকে একটা ‘বৌ দিবস’ দিলাম। যেদিন আমরা খুব ঘুববো, মজা করবো। তুমি চাইলে তোমার বন্ধুদের সাথেও ঘুরতে পারো। এবার চলো ভীষন ক্ষিদে পেয়েছে।

এটাও পুরুষদের বড মাপের সমস্যা। তাদের পছন্দের তিনটি কাজ হাসিলের সময় তারা জীবন লিখে দিতেও রাজী হয়ে যায় এবং পরে তা অবশ্যই ভুলে যায় কিংবা অস্বীকার করে?

তবুও বেচারার ফেইক প্রমিস আর কাকুতী- মিনতীতে উঠতেই হলো। আমার এনিভারসেরী তখন পেছন থেকে কেঁদে কেঁদে চিৎকার করছে- বাঁচাও, বাঁচাও, বাঁচাও!

-সরি বাবা; তোমাকে বাঁচাতে পারলাম না। জামানাটাই যে এমন, ফেইক! সামনে ‘বৌ দিবস’ যদি পাই তোমাকে মনে রাখবো, বাঁচাতে চেষ্টা করবো।

ছবি- নেট থেকে।

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ